উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ধূমকেতু
ধূমকেতু তথ্য | |
১) ধূমকেতুগুলিকে প্রায়ই দৈত্যাকার "নোংরা তুষার বল" হিসাবে বর্ণনা করা হয় কারণ এগুলি বেশিরভাগ বরফ এবং কিছু ধুলো ময়লা দিয়ে তৈরি। |
ধূমকেতু কি?
[সম্পাদনা]মনে করে নাও ধূমকেতু হল একটি বড়, কর্দমাক্ত, গ্যাসে পূর্ণ বরফের বল। পাথর, ধুলো এবং বরফের বলয়ে ধূমকেতু গঠিত হয়। এরাও অন্যান্য গ্রহের মতই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এদের কক্ষপথ প্লুটোর কক্ষপথের থেকেও দূরে অবস্থিত এবং তাকে বলা হয় কুপার বেল্ট। শিলা, ধুলো এবং বরফ ঘনীভূত হলে ধূমকেতু তৈরি হয় – অর্থাৎ এগুলি একসাথে মিশে গিয়ে ধূমকেতুর আকার দেয়। ধূমকেতু যত বড় হতে থাকে, এটি সূর্যের দিকে টান অনুভব করে এবং তার চারপাশে ঘুরতে শুরু করে। কক্ষপথ অনেক বড় হবার কারণে আমাদের সৌরজগতে ধূমকেতু সাধারণত সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসতে অনেক বছর সময় নেয় – কয়েক ডজন বছর থেকে হাজার হাজার বছরও সময় নিতে পারে। এর কারণ হল তারা সূর্যকে অনেক দূর থেকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে। গ্রহের মত প্রায় বৃত্তাকার কক্ষপথের পরিবর্তে, তারা লম্বা, ডিমের আকৃতির কক্ষপথ তৈরি করে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে।
ধূমকেতু কেমন দেখতে?
[সম্পাদনা]সৌরজগৎ |
ভূমিকা |
যদিও মহাবিশ্বে ধূমকেতু সব থেকে বড় এবং উজ্জ্বল মহাকর্ষীয় বস্তু, তবুও দূরবীক্ষণ যন্ত্র (টেলিস্কোপ) ছাড়া আকাশে ধূমকেতু দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিক। তুমি তোমার সারা জীবনে একবার বা দুবার হয়তো কোন ধূমকেতুকে দেখার সুযোগ পেতে পার। বেশিরভাগ ধূমকেতু কেবল দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েই দেখা যায়। খালি চোখে যা দেখতে পাওয়া যায় সেগুলি সাধারণত রাতের আকাশে কেবল অস্পষ্ট রেখার ঝলক বা বিবর্ণ ধোঁয়া।
যখন ধূমকেতু সূর্য থেকে অনেক দূরে থাকে, তারা বরফ, কালো পাথর এবং ধূলিকণার আবরণে আবৃত থাকে। কক্ষপথে আবর্তন করতে করতে যখনি একটি ধূমকেতু সূর্যের কাছাকাছি এসে যায়, তার বরফ অংশ গলতে শুরু করে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ এবং গ্যাস তৈরি হয়, যা ওই আবরণ ভেঙে বেরিয়ে আসে এবং এর সঙ্গে কিছু ধুলো ও পাথরও মুক্ত হয়। কখনও কখনও এই জল, গ্যাস, শিলা, এবং ধুলো পৃথিবী থেকে দেখা যায়, এগুলিকেই দেখে মনে হয় ধূমকেতুর একটি বা দুটি লেজ, প্রবাহিত হয়ে চলে যাচ্ছে। এমনকি যখন শুধুমাত্র একটি লেজ দেখা যায়, সেখানে আসলে দুটি লেজ থাকে, একটি হাল্কা গ্যাস এবং জল থেকে তৈরি, এবং অন্যটি পাথর, ধুলো এবং বরফের অংশ থেকে তৈরি হয়।
ধূমকেতুগুলির দৈর্ঘ্য সাধারণত কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েকশ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে, কিন্তু তাদের লেজ কয়েক কোটি কিলোমিটার দীর্ঘ হতে পারে।
আকাশে ধূমকেতু দেখা
[সম্পাদনা]"বিশাল ধূমকেতু", যাদের বিশেষভাবে দর্শনীয় লেজ তৈরি হয়, সেগুলি আমাদের সৌরজগতের কিছু বিরলতম বস্তুর মধ্যে পড়ে। সাধারণত এগুলি মোটামুটি প্রতি একশ বছরে মাত্র একবার দেখা যায়, তাই এই ধূমকেতু দেখতে পাওয়া খুব বিরল ঘটনার মধ্যে পড়ে। শেষ বিশাল ধূমকেতু ১৯১০ সালে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু পৃথিবীর কাছাকাছি আরেকটি ধূমকেতুর আসতে আরও একশ বছর সময় লাগার সম্ভাবনা। কিন্তু একটি ধূমকেতু যে ঠিক কিভাবে বা কখন আবির্ভূত হবে তা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একেবারে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন না কারণ আমাদের সৌরজগতের এখনও এমন কিছু আছে যা তারা বুঝতে পারেন নি। যদি তুমি শীঘ্রই আকাশে ধূমকেতু আসার কথা শুনতে পাও, তাহলে এটি দেখতে নিচের নির্দেশাবলী অবশ্যই অনুসরণ করো!
- তোমার অঞ্চলের আকাশে ধূমকেতু দেখা যাবে কিনা তার সম্বন্ধে খোঁজ নাও।
- এটি দেখার জন্য একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা দূরবীন যোগাড় করো এবং চেয়ার নিয়ে বসে পড়ো। সবচেয়ে বড় ধূমকেতুগুলির অনেকগুলিকেই দেখার জন্য কখনোই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে নি।
- তোমার বাবা -মাকে বলো তোমাকে কোন পার্ক, জঙ্গল বা শহরের আলো থেকে দূরে কোন অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যেতে, যেখান থেকে আকাশ পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়।
- আকাশের দিকে দেখতে থাকো এবং এই আশ্চর্যজনক দৃশ্য উপভোগ করো।
সাধারণত ধুলো দিয়ে তৈরি হওয়া ধূমকেতুর লেজ এতই অস্পষ্ট, যে তোমার তা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু, যখন এই লেজের কোন অংশ পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়ে, তখন ধুলো ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণের ফলে আগুন জ্বলে ওঠে এবং সেই অংশটি পুড়ে যায়। এইগুলিকে বলা হয় উল্কা বৃষ্টি যা কখনো কখনো ঘটে। দেখা গেছে যে বেশিরভাগ প্রধান প্রধান উল্কা বৃষ্টি, হয়ত কোন একটি বিদ্যমান ধূমকেতু থেকে হয়েছে অথবা আগে দেখা ধূমকেতুর অবশিষ্টাংশ থেকে হয়েছে, সেগুলি সাধারণত আগের কোন শতাব্দীতে এসেছিল। যখন পৃথিবী এই পিছনে ফেলে রাখা ধুলোর "ঝাঁক" এর মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করে, তখন তুমি রাতে উল্কা পাত বা উল্কা বৃষ্টি দেখতে পাবে।
কতগুলি ধূমকেতু আছে?
[সম্পাদনা]সত্যিই কেউ জানে না। সমস্ত ধূমকেতু তাদের কক্ষপথের বেশিরভাগ সময় সূর্য থেকে এতটা দূরে থাকে যে তাদের দেখা যায় না -- এমনকি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না। তবে প্রতি বছর অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা[১] এমন ১০০টির ও বেশি ধূমকেতু আবিষ্কার করেন যাদের আগে কখনও দেখা যায়নি, কিন্তু পৃথিবীর যথেষ্ট কাছাকাছি চলে আসার ফলে তাদের দেখতে পাওয়া গেছে[২]। ২০০৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২,৮৫৭টি ধূমকেতু আবিষ্কার করেছেন[৩]. বেশিরভাগ ধূমকেতু যেগুলি আমরা দেখি, হয় সূর্যের মধ্যে গিয়ে ধাক্কা খায়, অথবা আমাদের সৌরজগৎ পুরোপুরি ছেড়ে চলে যায়। এই রকম লক্ষ লক্ষ ধূমকেতু থাকতে পারে যেগুলি শীঘ্রই বা পরে হয়তো আমাদের দূরবীক্ষণ যন্ত্রের পরিসরে আসবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এত দিন পর্যন্ত যে সমস্ত ধূমকেতু দেখা গেছে তার মধ্যে, কেবল ২৫৩টি ধূমকেতু আবার ফিরে আসতে পারে[৪].
কিভাবে একটি ধূমকেতুর নামকরণ করা হয়?
[সম্পাদনা]সাধারণত একটি ধূমকেতুর নামকরণ করা হয়, যে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন তার নামেই। যদি এমন হয় যে অনেক মানুষ একটি ধূমকেতু আবিষ্কারের সাথে জড়িত, কখনও কখনও তুমি একটি ধূমকেতুতে একাধিক নাম দেখতে পাবে, যেমন ধরো হেল বপ ধূমকেতু, বা শুমেকার লেভি ধূমকেতু। সাধারণত কারোর নামে ধূমকেতুর নাম রাখা হলে সেটি একটি বড় সম্মানের ঘটনা বলে মনে করা হয়।
ইতিহাসের কিছু বিখ্যাত ধূমকেতু কি কি?
[সম্পাদনা]১) হ্যালির ধূমকেতু - সম্ভবত সব ধূমকেতুর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত, এবং এটি ছিল প্রথম এমন ধূমকেতু, যে একটি পুনরাবৃত্ত ধূমকেতু (অর্থাৎ আবার ঘুরে আসার মত) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
২) এনকে ধূমকেতু - দ্বিতীয় ধূমকেতু যেটিকে পুনরাবৃত্ত ধূমকেতু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
৩) শুমেকার লেভি ৯ ধূমকেতু - এটি প্রথম ধূমকেতু, যাকে দেখা গিয়েছিল সৌরজগতের অন্য একটি বস্তুকে আঘাত করতে। সেই সময়, এটি বৃহস্পতি গ্রহে গিয়ে ধাক্কা মেরেছিল, যা সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি অধ্যয়ন করার মত জ্যোতির্বিজ্ঞান ঘটনা।
ধূমকেতু কি দুর্ভাগ্য বয়ে আনে?
[সম্পাদনা]প্রাচীনকালের মানুষের, ধূমকেতু আসলে কি বা কোথা থেকে এসেছে, সে সম্পর্কে খুব ভালো বোধগম্যতা ছিল না। আকাশে তাদের খুব অস্বাভাবিক বস্তু হিসাবেই দেখা হয়েছিল, এবং এটুকু বোঝা গিয়েছিল যে প্রকৃতিতে এদের খুব সাময়িকভাবেই দেখা যায়। কিছু সমাজে একে প্রায়শই ভবিষ্যতের খারাপ কোন ঘটনার একটি সংকেত বলে মনে করা হত, হয়তো একটি ধূমকেতু আসার পর কোন রাজার মৃত্যু ঘটেছিল বা কোন উল্লেখযোগ্য যুদ্ধে পরাজয় ঘটেছিল। আবার অন্য কোন দেশে ধূমকেতুকে সৌভাগ্যের চিহ্ন বলে বিবেচনা করা হত, উর্বরতা বৃদ্ধি এবং আরও খাদ্যের ফলনের সঙ্গে একে সংযুক্ত করা হত। প্রাচীন চীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রকৃতপক্ষে ধূমকেতু নিয়ে সেরা কাজটি করেছেন বলে মনে হয়। আকাশে ধূমকেতু উপস্থিত হলে তা নথিবদ্ধ করে রাখা, তারা দেখতে কেমন ছিল এবং আকাশে কোথায় কোন ধূমকেতুটি দেখা গিয়েছিল তার বিস্তারিত বিবরণ লিখে রাখা, এই কাজটি তারা করে গিয়েছিলেন।
এমনকি সম্প্রতি ১৯১০ সালে হ্যালির ধূমকেতুর আবির্ভাবের পরও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল, যখন বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন যে পৃথিবী সেই ধূমকেতুর লেজের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। ধূমকেতু থেকে গ্যাসের বিষে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বিষাক্ত হবার সম্ভাবনা নিয়ে আতঙ্ক ছিল। বাস্তবতা এই যে, যখন এরকম কোন ঘটনা ঘটে, ধূমকেতুর লেজে এত কম গ্যাস থাকে যে তাতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কোন পরিমাপযোগ্য প্রভাব পড়ে না।