উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/বৃহস্পতি
- বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্র শূন্য থেকে বিভিন্ন কণা আকর্ষিত করতে সক্ষম, বৃহস্পতির চতুর্দিকে রয়েছে খুব শক্তিশালী বিকিরণ বেষ্টনী, বৃহস্পতির দিকে ধাবমান যে কোন কিছুকে মুহূর্তে বিনষ্ট করার ক্ষমতা রাখে।
- মনে করা হয় বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার উপরিতলের নিচে রয়েছে বৃহৎ আকৃতির সমুদ্র।
- বৃহস্পতির উপগ্রহ গ্যানিমিড সমগ্র সৌরজগতের বৃহত্তম উপগ্রহ।
- বৃহস্পতি পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান রাতের আকাশে উজ্জ্বল তৃতীয় বৃহত্তম বস্তু, দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্থি হলো শুক্র এবং প্রথম বৃহত্তম পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ।
- সৌরজগতের অন্য সমস্ত গ্রহের সম্মিলিত ভরের তুলনায় বৃহস্পতির ভর দ্বিগুনেরও অধিক।
- বৃহস্পতিকে কখনো কখনো প্রায়-নক্ষত্র বলে বিবেচিত করা হয়। ক্ষুদ্রতম লাল বর্ণের বামন নক্ষত্র বৃহস্পতির ভরের মাত্র ৩০ শতাংশ অধিক।
- বৃহস্পতির দৃশ্যমান বৃহৎ লাল বিন্দু আকারে পৃথিবীর সমতুল্য। এর অর্থ বৃহস্পতি গ্রহে ক্রমাগত এমন একটি ঝড় হয়ে চলেছে যার আকার পৃথিবীর মতো বড়!
- ইংরেজিতে জোভিয়ান অর্থ বৃহস্পতি বা জুপিটার তথা গ্রহের দেবতা সম্পর্কিত শব্দ। কখনো কখনো সৌরজগতের চারটি বহির্মণ্ডলীয় গ্রহকে জোভিয়ান গ্রহো বলা হয়ে থাকে।
বৃহস্পতি হল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ যার আয়তন সৌরজগতের অন্যান্য সকল গ্রহের আয়তনের সমষ্টির দ্বিগুন এর থেকে কিছু বেশি (বা প্রায় আড়াই গুন)। সূর্য থেকে দূরত্ব বিচার করলে এটি পঞ্চম গ্রহ, এবং পৃথিবীর আকাশ থেকে উজ্জ্বল ভাবে দেখা যায় এমন গ্রহগুলির মধ্যে অন্যতম। বৃহস্পতির সাথে শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন এই চারটি গ্রহকে একত্রে "গ্যাস জায়েন্ট" বা গ্যাসীয় দৈত্য গ্রহ বলা হয়ে থাকে, কারণ এর প্রতিটি মূল উপাদান গ্যাসীয় এবং তরল পদার্থ।
বৃহস্পতি গ্রহ কত বড়?
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/02/SolarSystem_OrdersOfMagnitude_Sun-Jupiter-Earth-Moon.jpg/250px-SolarSystem_OrdersOfMagnitude_Sun-Jupiter-Earth-Moon.jpg)
বৃহস্পতির ব্যাস ১,৪২,৯৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রায় এগারোটি পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাসের সমষ্টির সমতুল্য। এর অর্থ বৃহস্পতির ব্যাস সূর্যের ব্যাস এর এক দশমাংশ! একটি বৃহস্পতি গ্রহে ১,৪০০ টি পৃথিবী এঁটে যেতে পারে। মেরু ব্যাস বরাবর দশটি পৃথিবী বা ১,৩৩,৭০৯ কিলোমিটার পরপর সাজানো যেতে পারে। বৃহস্পতির অতি দ্রুত আহ্নিক গতির (এটি নিজের অক্ষের চারদিকে একবার পাক খেতে সময় নেয় ১০ ঘন্টারও কম সময়ে যেখানে পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই সময়ের পরিমাপ হয় ২৪ ঘন্টা) ফলে গ্রহটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে অধিক স্ফীত।
বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্র সৌরজগতের একমাত্র বৃহত্তম গ্রহ সংক্রান্ত চৌম্বক ক্ষেত্র। ধস্ক তীরেই চৌম্বক ক্ষেত্রের বিস্তার ২৬ মিলিয়ন কিলোমিটার জুড়ে কুড়িটি সূর্যের আয়তনের সমান। এর একটি পুচ্ছ রয়েছে, যা পার্শ্ববর্তী শনি গ্রহের কক্ষ অতিক্রম করে। পৃথিবী থেকে যদি দেখা যেতে পারত তবে এর আকার হত বর্তমানে আমরা পূর্ণিমার সময়ে যেই চাঁদ দেখতে পাই তার আকারের পাঁচ গুণ।
বৃহস্পতির পৃষ্ঠতল কীরকম ?
[সম্পাদনা]![বৃহস্পতির আবহাওয়া](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/c/c8/Jupiter_from_Voyager_1.jpg/160px-Jupiter_from_Voyager_1.jpg)
আমরা বৃহস্পতির যে পৃষ্ঠতল দেখতে পাই তা কঠিন পদার্থ দ্বারা নির্মিত নয়। এই বৃহদাকৃতির গ্রহের কেন্দ্রীয় অংশ খুব ক্ষুদ্র কঠিন ও শিলাময়। এই শিলাময় অংশের চারদিকে রয়েছে বায়োবীয় এবং তরল পদার্থ যা ধীরে ধীরে বৃহস্পতির আবহাওয়ার সঙ্গে মিলিত হয়।
বৃহস্পতি মেঘাচ্ছন্ন, ঝড় ও ঝঞ্ঝা প্রবণ একটি গ্রহ। এটি সবসময় মেঘের একটি পুরু আস্তরণ দ্বারা আবৃত থাকে এবং বায়ুর গতি কমপক্ষে ৬০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ঝঞ্ঝার অবস্থান বাইরে থেকে ঘূর্ণি, পটি বা বিন্দু আকৃতির দাগ দ্বারা নির্দিষ্ট করা যায়। একটি নির্দিষ্ট বেগুনি বর্ণের বা লালচে বেগুনি বর্ণের ঝঞ্ঝা বাইরে থেকে সবসময় স্পষ্ট হয়, যার ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় তিনগুণ। এই ঝঞ্ঝার উপস্থিতি নিয়ে দুই ধরনের মতবিরোধ রয়েছে কারো মতে এর উৎপত্তি ১৮৩১ সালে আবার অন্য মতে ১৬৬৫ সালে। যদি এর উৎপত্তি ১৬৬৫ ধরা যায় সেক্ষেত্রে বলা যায় বৃহস্পতির এই বৃহৎ লাল বিন্দু তিনশ বছর পুরানো!
মেঘের স্তর বিভিন্ন রঙের পটি দ্বারা নির্দিষ্ট এবং বিভক্ত। হালকা রঙের পটিগুলি জোন এবং তুলনামূলক গাঢ় রঙের পটিকে বেল্টবলা হয়ে থাকে। উষ্ণতা ও রাসায়নিক পদার্থের তারতম্যের কারণে এই পটিগুলির রং ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রতিটি পটি তার নিকটবর্তী দুটি পটির বিপরীত আবর্তে আবর্তিত হতে থাকে। পরপর অবস্থিত এই পটিগুলির মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষের ফলে ছোট ছোট ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতির এই ঝঞ্ঝাময় আবহাওয়ার কারণে পৃথিবীর মতোই ওই গ্রহেও আলোর ঝলকানি দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে দেখতে পাওয়া এই আলোর ঝলকানি বা বিদ্যুতের তাপমাত্রা ৫০,০০০° সেন্টিগ্রেড এর কাছাকাছি হলেও বৃহস্পতির ক্ষেত্রে এই তাপমাত্রা হয় ৫০,০০,০০০° সেন্টিগ্রেড বা তার থেকেও বেশি, যা পৃথিবীর চেয়ে একশ গুন ও সূর্যের বহির্গাত্রের উষ্ণতার থেকেও অধিক। এই বিদ্যুৎ চুলকানি গুলি সাধারণত হয়ে থাকে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় পাশাপাশি থাকা একাধিক জলকণার কারণে।
বৃহস্পতির বলয় কীরকম দেখতে?
[সম্পাদনা]![ভয়েজার-২ মহাকাশযান থেকে তোলা বৃহস্পতির বলয়](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/c/c3/Jupiter_Ring.png/200px-Jupiter_Ring.png)
বৃহস্পতির বলয় গাঢ় বর্ণের ও সহজে দেখা যায় না। এগুলি হলো মূলত উল্কা ও বৃহস্পতির ছোট অভ্যন্তরীণ উপগ্রহের সংঘর্ষের ক্ষুদ্র কণা, ধূমকেতু ও অন্যান্য বস্তুর অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষ, বৃহস্পতির পৃষ্ঠের কাছাকাছি এসা কোন মহাজাগতিক বস্তুর ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে তৈরি। প্রসঙ্গত ভয়েজার মহাকাশযান বৃহস্পতির নিকট পর্যবেক্ষণ ও চিত্র সংগ্রহের পূর্ব পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এটাও জানতেন না যে বৃহস্পতিরও বলয় রয়েছে। এর মধ্যে দুটি বলয়ের উপাদান স্পষ্টভাবে ওই গ্রহের দুই সেট অভ্যন্তরীণ উপগ্রহ দ্বারা তৈরি।
বলয়সমূহের নাম ও আকার নিম্নরূপ:
বলয়ের নাম | আভ্যন্তরীণ ব্যাসার্ধ | বহিঃস্থ ব্যাসার্ধ |
---|---|---|
হালো | ১,০০,০০০ কিমি | ১,২২,০০০ কিমি |
মেইন | ১,২২,০০০ কিমি | ১,২৯,০০০ কিমি |
গসেমার (অন্তঃস্থ) | ১,২৯,০০০ কিমি | ১,৮২,০০০ কিমি |
গসেমার (বহিঃস্থ) | ১,৮২,০০০ কিমি | ২,২৫,০০০ কিমি |
ইংরেজিতে গসেমার অর্থ লূতাতন্তু, পাতলা বা হালকা কোনো বস্তু।
![]() |
সৌরজগৎ |
ভূমিকা |
গ্রহটির আবহাওয়া কি দিয়ে তৈরি?
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/75/Portrait_of_Jupiter_from_Cassini.jpg/220px-Portrait_of_Jupiter_from_Cassini.jpg)
বৃহস্পতির একেবারে বাইরের ঘরেই রয়েছে হিমায়িত অ্যামোনিয়ার কেলাস। (অ্যামোনিয়া হলো হাইড্রোজেন এবং নাইট্রোজেন নামক দুটি মৌলের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগ, এর রাসায়নিক সংকেত NH3।)
বৃহস্পতির পরিবেশ মূলত হাইড্রোজেন (H2) গ্যাস বহুল। পৃষ্ঠতলের কাছাকাছি অবস্থিত বায়বীয় ভাগের ৯০ শতাংশই হাইড্রোজেন। এছাড়া পরিবেশে রয়েছে হিলিয়াম নামক নিষ্ক্রিয় গ্যাস। অতিরিক্ত চাপের প্রভাবে হিলিয়াম তরলীকৃত অবস্থায় পাওয়া যায় যা তুলনামূলক নিচের দিকে অবস্থিত। এছাড়া বৃহস্পতিতে রয়েছে মিথেন (CH4)(০.৩%), হাইড্রোজেন ডিউটেরাইড(HD)(০.০০৩%), ইথেন(C2H6)(০.০০০৬%) এবং পরিমাণের সবচেয়ে কম রয়েছে জল (H2O)(০.০০০৪%).
বৃহস্পতির তাপমাত্রা যথেষ্ট বেশি। সম্ভবত এই কারনেই বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতি আর কি কি উপাদান দিয়ে গঠিত হতে পারে সেই বিষয়ে সঠিক তথ্য খুঁজে পান নি। বৃহস্পতির বহির্কেন্দ্রে রয়েছে হাইড্রোজেন। চাপের প্রভাবে গ্যাস ঘনীভূত অবস্থায় রয়েছে। আবার উষ্ণতার প্রভাবে ঘনীভূত গ্যাস তরলীকৃত ও বাষ্পায়িত হতে থাকে।
বৃহস্পতির উপগ্রহগুলি কীরকম?
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/3/30/Jupiter_moons_anim.gif/220px-Jupiter_moons_anim.gif)
এখন পর্যন্ত বৃহস্পতির ৮০ টি উপগ্রহ সম্পর্কে জানা গিয়েছে। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও বৃহস্পতির চারটি বড় উপগ্রহ আবিষ্কার করেন, এটিই ছিল প্রথম পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোনো গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার। এগুলি হল আইয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড এবং ক্যালিস্টো। প্রতিটি নাম গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী বৃহস্পতি সম্পর্কিত চরিত্রের নামে নামাঙ্কিত। এরা গ্যালিলীয় উপগ্রহ নামেও পরিচিত। গ্যালিলীয় উপগ্রহ দ্বারা বৃহস্পতি থেকে গ্রহণ প্রায়শই দৃশ্যমান হয়।
অ্যামালথিয়া শ্রেণি
[সম্পাদনা]চারটি ছোট উপগ্রহ আইয়োর কক্ষপথের কেন্দ্রভিমুখী নির্দিষ্ট কক্ষে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এই শ্রেণীর উপগ্রহকে অ্যামালথিয়া গোষ্ঠী বলা হয়ে থাকে কারণ এগুলির মধ্যে অ্যামালথিয়া আকারে সর্ববৃহৎ। এই শনির প্রতিটি উপগ্রহ ছোট এবং পিণ্ডময় আলুর আকৃতির। অ্যামালথিয়া উজ্জ্বল লাল বর্ণের। বৃহস্পতির বলয়ের উপাদান হলো সেই সমস্ত উল্কা বৃহস্পতির দিকে আকর্ষিত হয়ে এই সমস্ত উপগ্রহে এসে ধাক্কা খায় এবং ভেঙে যায়। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী অ্যামালথিয়া(গ্রীক :Ἀμάλθεια) ছিলেন বৃহস্পতির ধাত্রী মা।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/af/The_Galilean_satellites_%28the_four_largest_moons_of_Jupiter%29.tif/lossy-page1-220px-The_Galilean_satellites_%28the_four_largest_moons_of_Jupiter%29.tif.jpg)
আইয়ো বৃহস্পতির সবচেয়ে নিকটে অবস্থিত বৃহত্তম উপগ্রহ। এর ব্যাস চওড়ায় ৩৬৪৩.২ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের থেকে সামান্য বড়। এতে রয়েছে সৌরজগতের অন্যতম চমৎকার বেশকিছু আগ্নেয়গিরি' এবং গলিত সালফারের হ্রদ। উল্কার সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে যদি কোনো খাদ বা গর্তের সৃষ্টি হয় তবে তা অতি দ্রুত আগ্নেয়গিরির নির্গত লাভা দ্বারা আবৃত হয়ে যায়। আইয়োও কেন্দ্রক গলিত লোহা দ্বারা তৈরি যা পাথুরে আবরণ দ্বারা আবৃত। বৃহস্পতির অন্যান্য উপগ্রহের বিপরীতে আইয়োতে জলের পরিমাণ খুবই অল্প। বিজ্ঞানীদের মতে বৃহস্পতি উত্তপ্ত থাকা অবস্থায় তাপের প্রভাবে নিকটবর্তী এই উপগ্রহের জল বাষ্পীভূত হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু বাকি বৃহত্তম উপগ্রহ গুলির ক্ষেত্রে এই প্রভাব নগণ্য। রোমের পুরাণ অনুযায়ী, আইয়ো (প্রাচীন গ্রীক:Ἰώ) হলেন বৃহস্পতির প্রেয়সী এক সুন্দরী যুবতী অপ্সরা।
ইউরোপার ব্যাস চওড়ায় ৩,১২১.৬ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের ব্যাসের তুলনায় ১০ শতাংশ কম। এটি মূলত সিলিকেট উপাদান দ্বারা নির্মিত এবং স্থান বিশেষে ১০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পুরু বরফ দ্বারা আবৃত। বরফের স্তরে রয়েছে বড় বড় ফাটল এবং বেশ কিছু পাহাড় ও গর্ত। এগুলি পৃথিবীর সমুদ্রে ভাসমান বরফের মতো দেখতে। উচ্চতা অনুযায়ী বরফের চলন লক্ষ্য করা যায়। পুরু বরফের স্তরের নিচে জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকের অনুমান। পৃষ্ঠ বরাবর রয়েছে একাধিক বড় দাগ। রোমের পুরাণ অনুযায়ী, ইউরোপা বলদরূপে বৃহস্পতির অনুগ্রহপ্রার্থী হয়েছিলেন। গ্রীক পুরাণ অনুসারে ইউরোপা (প্রাচীন গ্রীক:Ευρώπη) ছিলেন এক ফিনিশীয় মহীয়সী নারী যিনি বৃহস্পতি দ্বারা ক্রিট দ্বীপে অপহৃত হন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/7d/Jupiter-moons.jpg/220px-Jupiter-moons.jpg)
গ্যানিমিডের ব্যাস ৫২৬২.৪ কিলোমিটার, অর্থাৎ এটি বুধ গ্রহে থেকে ব্যাস বরাবর ৩৮০ কিলোমিটার বেশি চওড়া। এটি বৃহস্পতির ও সমগ্র সৌরজগতের বৃহত্তম উপগ্রহ। পৃথিবীর মতো এই উপগ্রহে পৃষ্ঠত্বকীয় পাত সংস্থান রয়েছে। এতে রয়েছে পুরাতন গাঢ় বর্ণের অংশ আবার পাত সঞ্চালনের ফলে সৃষ্ট নতুন অংশের আগ্নেয়গিরি গর্ত। নতুন গর্ত থেকে উজ্জ্বল আলো বিচ্ছুরিত হতে থাকে, যা কাছাকাছি ধাবমান কোন বস্তুর ওপর প্রভাব ফেলে। পুরনো আগ্নেয়গিরি গর্ত মলিন হয়ে যায় কারণ, জমে থাকা বরফ সেই আকারের বিকৃতি ঘটায় এবং খাজের দুদিকের পাহান দীর্ঘ সময়ব্যাপী স্থায়ী হয় না। গ্যানিমিডের কেন্দ্রকে লৌহজাতীয়, সালফার সমৃদ্ধ সিলিকেট ম্যানটেল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এছাড়া এর উপরে রয়েছে বরফের আবরণ। বরফের আবরণ বাদ দিলে এটি খানিকটা আইয়োর মতো। রোমের পুরাণ অনুসারে, বৃহস্পতি সুদর্শন যুবক গ্যানিমিডকে অলিম্পাস পাহাড়ে অপহরণ করে নিয়ে যান এবং দেবতাদের পেয়ালাধারকের কাজ দেন।
ক্যালিস্টোর ব্যাস ৪৮২০.৬ কিলোমিটার, যা বুধের আকারের সমতুল্য। এতে অনেক গর্ত রয়েছে। গ্যানিমিডের মত এক্ষেত্রেও পুরাতন আগ্নেয়গিরি গর্ত বা খাঁজ গাঢ় বর্ণের। বৃহতৃতম গর্তটির নাম হলো ভালহাল্লা। এর কেন্দ্রক ৬০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং উজ্জ্বল, আবার এর চারদিকে রয়েছে তিন হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত একাধিক বলয় আকার। ক্যালিস্টো সিলিকেট এবং বরফ দ্বারা নির্মিত। এখানে রয়েছে ২০০ কিলোমিটার পুরু বরফের স্তর যার নিচে গলিত বরফের সমুদ্র থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। রোমের পুরাণ অনুযায়ী, বৃহস্পতির ঈর্ষান্বিত স্ত্রী জুনোর প্রভাবে ক্যালিস্টো ভাল্লুকে পরিণত হয়েছিলেন। পরে বৃহস্পতি তাকে বড় ভাল্লুকদের নক্ষত্রে স্থান দেন।
অন্যান্য উপগ্রহ
[সম্পাদনা]বৃহস্পতির অন্যান্য উপগ্রহগুলি তুলনামূলক ক্ষুদ্রতর এবং মূল উপগ্রহগুলির বাইরের কক্ষে অবস্থিত। কিছু ছোট উপগ্রহও রয়েছে যেমন থেমিস্টো, যেগুলি বৃহস্পতিকে দূরবর্তী কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে।
বৃহস্পতির একদিনের দৈর্ঘ্য কত?
[সম্পাদনা]বৃহস্পতির একটি দিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর ১০ ঘন্টার সমান। আবার বায়োবীয় বহিরাবরণ হওয়ার কারণে এই গ্রহের বিভিন্ন পটি নিজেদের মতো আলাদা আলাদা বেগে কক্ষের চারদিকে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। এর কারণ স্বরূপ বলা যায় গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ তাদের আণবিক ভর এর উপর ভিত্তি করে গতিবেগ ও দিক প্রদর্শন করে থাকে। বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির কেন্দ্রক তথা শিলাময় অংশের ঘূর্ণন বেগ নির্ধারণ করতে এখনো অবধি সফল হয়নি। গ্রহটির শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র এবং অতি শক্তিশালী বেতার শক্তি তরঙ্গ শক্তি মঙ্গল বা শুক্র গ্রহের বিমতে উহার কেন্দ্রকের গতিবিধি নির্ধারণকারী যন্ত্রে ত্রুটির সৃষ্টি করে।
বৃহস্পতির এক বছরের ব্যপ্তি কত?
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/e/ec/Great_Red_Spot_From_Voyager_1.jpg/220px-Great_Red_Spot_From_Voyager_1.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/f/f7/Hubble_Spies_Jupiter_Eclipses.jpg/220px-Hubble_Spies_Jupiter_Eclipses.jpg)
বৃহস্পতি নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় অনুসারে ৪,৩৩৫ দিন বা ১১.৮৭ বছর অতিবাহিত করে।
বৃহস্পতির একটি বছর শনি গ্রহের একটি বছরের দ্বি-পঞ্চমাংশ। অর্থাৎ শনি গ্রহ দুবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করলে ওই একই সময়ের মধ্যে বৃহস্পতি পাঁচবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। আবার ৫৯ বছর পর পর শনি ও বৃহস্পতি সূর্যের সাথে এক রেখায় প্রায় একই অবস্থানে আসে। যখন দুটি গ্রহের কক্ষপথ এরকম সরল অনুপাতের সূত্র অনুযায়ী প্রদক্ষিণ করে তখন তাকে রেজোনেন্স বলা হয়।
বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ আমার উপর কত পরিমাণ অভিকর্ষজ বল দেবে?
[সম্পাদনা]যদি কেউ বৃহস্পতির মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশের উপর ভাসমান অবস্থায় থাকেন তবে গ্রহটি তাকে তার কেন্দ্রের দিকে পৃথিবীর আড়াই গুণ বেশি অভিকর্ষজ ও বল প্রয়োগ করবে, অর্থাৎ বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর আড়াই গুণ।
বৃহস্পতির দ্রুত আহ্নিক গতির ফলে এর নিরক্ষীয় অঞ্চল তুলনামূলক স্ফীত। একই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বৃহস্পতির ১০ শতাংশ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রশমিত হয়। এই প্রশমনের পরিমাণ নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে কমতে থাকে।
এটি কার নামে নামাঙ্কিত?
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/c/c6/Statue_of_Zeus.jpg/170px-Statue_of_Zeus.jpg)
বৃহস্পতির ইংরেজি নাম জুপিটার (লাতিন ইউপ্পিতার) নামটি এসেছে রোমের দেবতাদের রাজার নাম অনুসারে, গ্রীসে তিনিই জিউস নামে পরিচিত। দেবতা জুপিটার পৃথিবীতে বজ্র প্রেরণের জন্য দায়ী ছিলেন। ঈগল পাখি ছিল তার বাহন এবং ওক গাছ তার চিহ্ন।