উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/কাইপার বেষ্টনী
কাইপার বেষ্টনী তথ্য:
কাইপার বেষ্টনী হল সৌরজগতের অতি সম্প্রতি আবিষ্কৃত অংশ।
নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে কাইপার বেষ্টনী অবস্থিত। এটি সূর্য থেকে বাইরের দিকে আরও তিরিশ কোটি কিলোমিটার দূরে প্রসারিত। এই বেল্টে বিভিন্ন আকারের বরফ মিশ্রণের চাঙ্গড় রয়েছে। এই চাঙ্গড়গুলিকে কাইপার বেষ্টনী বস্তু বলা হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়গুলিকে ছোট গ্রহ বা বামন গ্রহ বলা হয়। কাইপার বেষ্টনীের সৃষ্টি হয়তো বৃহস্পতি গ্রহের মাধ্যমে হয়েছিল, হতে পারে যে নবীন অবস্থায় বৃহস্পতি গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বস্তুগুলিকে এখন যেখানে আছে সেখানে ফেলে দিয়েছিল। কাইপার বেষ্টনীের নামকরণ করা হয়েছে জেরার্ড কুইপারের ("ভাইপার" এর সাথে মিলবিশিষ্ট উচ্চারণ) নামে। তিনি সেই বেশ কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম, যাঁরা নেপচুনের বাইরে ছোট বস্তুর ক্ষেত্র সম্পর্কে অনুমান করেছিলেন।
কাইপার বেষ্টনীের বস্তুগুলি কি কি?
[সম্পাদনা]কাইপার বেষ্টনীের বস্তুগুলি হল কাদা, বরফ এবং জৈব যৌগের হিমায়িত মিশ্রণ। এগুলি অনেকটা ধূমকেতুর মত। এখানকার কিছু বস্তুর রঙ লালচে এবং অন্যগুলি ধূসর।
সৌরজগৎ |
ভূমিকা |
কাইপার বেষ্টনীের বস্তুগুলি কত বড়?
[সম্পাদনা]বিজ্ঞানীরা প্লুটোকে সবচেয়ে বড় কাইপার বেষ্টনী বস্তু হিসেবে বিবেচনা করেন। এটি ২৩৯০ কিমি জুড়ে বিস্তৃত এবং একটি বামন গ্রহ। পরবর্তী বৃহত্তম পরিচিত কাইপার বেষ্টনী বস্তু হল অর্কাস, ২০০৩ ইএল৬১ এবং ২০০৫ এফওয়াই৯। অর্কাস প্রায় ১,৬০০ কিমি (১,০০০ মাইল) জুড়ে বিস্তৃত; ২০০৩ ইএল৬১ প্লুটোর আকারের ৭০% এবং ২০০৫ এফওয়াই৯ প্লুটোর আকারের প্রায় ৫০% থেকে ৭০%।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এরিস নামে আরেকটি বামন গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন যেটি প্লুটোর চেয়েও আকারে বড়। বিজ্ঞানীরা এর সঠিক আকার বুঝতে পারেন নি, কিন্তু তারা মনে করেন এটি প্লুটোর চেয়ে প্রায় ২০% বড়। যে সময় এটিকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল, সে সময় এটি সূর্যের থেকে পৃথিবীর যা দূরত্ব তার চেয়েও প্রায় ১০০ গুণ বেশি দূরে ছিল। প্লুটো সূর্যের থেকে যতটা দূরে এটি সূর্যের থেকে ততটা দূরত্বে আসতে পারে। এরিসের একটি চাঁদ আছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ডিসনোমিয়া। এরিসের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের তুলনায় প্রায় ৪৫ ডিগ্রী কাত হয়ে আছে। প্লুটোর কক্ষপথ শুধুমাত্র ১৭ ডিগ্রি দ্বারা কাত হয়ে থাকে।
অন্যান্য বড় কাইপার বেষ্টনী বস্তু যেগুলি আকারে প্রায় ১,০০০ কিমি জুড়ে বিস্তৃত আছে সেগুলি হল প্লুটোর চাঁদ চারন, কোয়াওর, বরুণ, ইক্সিয়ন, ১৯৯৬ টিএল৬৬, ২০০২ টিএক্স৩০০, ২০০২ টিসি৩০২, ২০০২ ইউএক্স২৫ এবং ২০০২ এডব্লিউ১৯৭। গ্রহাণুপুঞ্জ বলয়ের বৃহত্তম গ্রহাণু সেরেস প্রায় ৯৫০ কিমি জুড়ে বিস্তৃত।
আরও অনেক কাইপার বেষ্টনী বস্তু আছে যেগুলি আকারে মাত্র কয়েক কিলোমিটার বা কয়েক দশক কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।
কতগুলি কাইপার বেষ্টনী বস্তু আছে?
[সম্পাদনা]জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক হাজারেরও বেশি কাইপার বেষ্টনীের বস্তু খুঁজে পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন কাইপার বেষ্টনীে সত্তর হাজারেরও বেশি বড় বস্তু থাকতে পারে। যদিও কাইপার বেষ্টনীে অনেক বস্তু আছে, কিন্তু এটি খুব হালকা, এর ভর পৃথিবীর ভরের ১/২৫ থেকে ১/৩০ ভাগ।
কার নামে এর নামকরণ করা হয়েছে?
[সম্পাদনা]প্লুটো এবং তার চাঁদ চারন কে বাদ দিলে, ১৯৯২ সালে হাওয়াইয়ের মাউনা কেয়া মানমন্দির থেকে এই বেল্টে প্রথম বস্তুটি দেখা গিয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরার্ড কুইপারের নামে বেল্টটির নামকরণ করা হয়েছিল। অনেক আগে ১৯৫১ সালে এই বিজ্ঞানী লিখেছিলেন যে তিনি ধারণা করছেন এই রকম একটি বেল্ট বিদ্যমান থাকতে পারে, কিন্তু সেই সময় তার বক্তব্যের সাপেক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফ্রেডরিক লিওনার্ড, কেনেথ এজওয়ার্থ এবং জুলিও ফার্নান্দেজ সহ অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও মনে করেছিলেন যে এই রকম একটি বেল্টের অস্তিত্ব রয়েছে। এই কারণে কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী এটিকে এজওয়ার্থ-কাইপার বেষ্টনী বলে থাকেন।
কাইপার বেষ্টনীের বস্তুগুলির নামকরণ কি করে হল?
[সম্পাদনা]যখন মহাকাশে কোন বস্তু আবিষ্কৃত হয়, তাকে একটি অস্থায়ী নাম দেওয়া হয় যাকে বলা হয় "অস্থায়ী আখ্যা"। এই অস্থায়ী নামের প্রথমে থাকে বস্তুটি যে বছর আবিষ্কৃত হয়েছে সেই বছরের সংখ্যা, এর পরে কিছু অক্ষর এবং সংখ্যা থাকে যা থেকে বোঝা যায় এটি কোন মাসে এবং কোন ক্রমে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এর পরে, গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগুলিকে আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়, সেগুলি প্রায়শই কোন পৌরাণিক কাহিনী থেকে নেওয়া হয়।
কুইপার বেল্টের কিছু বস্তু, যেমন অরকাস, চারন এবং বরুণের নামকরণ করা হয়েছে পাতালের পৌরাণিক দেবতাদের নামে। পাতাল জগতের একজন পৌরাণিক ব্যক্তির নামানুসারে ইক্সিয়নের নামকরণ করা হয়েছিল। আদিবাসী আমেরিকান টোঙ্গবা জনজাতির সৃষ্ট একটি দেবতার নামে কোয়াওর এর নামকরণ করা হয়েছিল।