বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্যবহারকারী:Mizan Muhammad Hasan

উইকিবই থেকে

স্বামীর আনুগত্যে ইবাদতের তৃপ্তি


আমাদের কর্মব্যস্ততা যখন বেড়ে চলছে। তখন স্বভাবতই নারী ও পুরুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। আলহামদুলিল্লাহ,বর্তমান সময়ে ইলমে দীন তথা কুরআন ও হাদিসের ইলম–শিক্ষা অর্জনের সহজলভ্যতা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে আমল ও ইবাদতের প্রতিও অনেক বেশি আগ্রহী করে তুলছে। এটি একটি ভালো দিক এবং আশা জাগানিয়া সংবাদ।

অনেক নারীই পর্দা হিজাব নিকাবে আগ্রহী হচ্ছেন। দীন মেনে চলার চেষ্টা করছেন। ইলম–জ্ঞানচর্চা সহ অনেক দীনি খেদমত (যেমন— মাদরাসায় শিক্ষকতা ও দাওয়াতি কাজ ইত্যাদি)  ইবাদতও করছেন। ঘরের কাজের পাশাপাশি কেউবা বাইরে কর্মের জন্য ছুটছেন। কর্মব্যস্ততার পরও আবার ক্লান্তিহীন ইবাদতের দিকে ঝুঁকছেন। নফল নামাজ রোজা কুরআন তেলাওয়াত ও দান সদকা ইত্যাদি করছেন। কিন্তু এ জাতীয় নফল নামাজ রোজা ও ইবাদত করার পর অনেক নারীই স্বামী সংসার সন্তানের প্রতি যত্নশীল হবার সুযোগ পাচ্ছেন না। হয়তবা নফল ইবাদতগুলোকে প্রাধান্য দিতে গিয়েই ; অজ্ঞতাবশত কিছুটা উদাসীনতা তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ, স্বামীর প্রতি আনুগত্য না করা। সন্তানের হক আদায়ে ত্রুটি করা ইত্যাদি। 

আল্লাহর কাছে পানাহ চাইছি! আর যদি এমন হয় যে, আল্লাহর অবাধ্যতা নেই এমন কাজে স্বামীরও আনুগত্য করা হচ্ছে না। নিয়মিত সন্তানের হক আদায় করা হচ্ছে না। তাদের লালন–পালন ও দেখাশোনা করা হচ্ছে না। নিকটতম মাহরাম ও প্রবীণ আত্মীয়দেরও সেবা যত্ন সম্পর্কে উদাসীনতা প্রকাশ পাচ্ছে। তবে এ জাতীয় বিষয় যদি না জানার কারণে। কিংবা অজ্ঞতার কারণে হয়ে থাকে, তবে আমাদের জন্য আবশ্যক হবে– এ জাতীয় বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগী হওয়া এবং আমল করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দীনি বোনদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও অর্পিত দায়িত্ব আদায় করার তাওফিক দান করুন। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা এ বিষয়ে কিছু আলোচনার প্রয়াস রাখব ইনশাআল্লাহ!

সহিহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমদের বর্ণনা এসেছে। সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত— একবার ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি নারীদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন– হে নারী সমাজ! তোমরা দান-সাদকা করতে থাকো। কারণ, আমি দেখেছি– জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমাদের সংখ্যাই অধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন– কী কারণে, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন– তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো। আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হও। (বর্ণনাটি সংক্ষিপ্ত) এ ছাড়া সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে– তোমরা নারীরা খুব বেশি অভিযোগ ও আপত্তি করে থাকো। স্বামীর অবাধ্য হয়ে থাকো। এজন্য তোমরা দান সাদকা করো,,,,,


এ হাদিস দুটি থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই, তা হচ্ছে – নারীদের জন্য সাধ্যমতন নফল দান সাদকা করা এবং নিজ নিজ স্বামীর আনুগত্য করা জরুরি। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্যতা নেই– এমন কাজে– স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা উচিত। এখন একটি প্রশ্ন হলো, শতকরা কতজন নারী আনুগত্যের এ বিষয়টি জানেন। আর আমল করেন!? কতজন নারী তাদের স্বামীর আনুগত্য স্বীকার করেন? বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দীনি ঘরানার মধ্যেই এর প্রচুর অভাব রয়েছে। এ কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। এজন্য হয়ত তাদের সঠিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। নয়ত আমাদের অবহেলা রয়েছে। আমরা কেন তাদেরকে সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি? কোথায় আমাদের আসল দুর্বলতা?

সাধারণ মানুষ ও দুনিয়াবি শিক্ষা অর্জন করেছেন। এমন লোকদের ঘর সংসারগুলো দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে তাদের দাম্পত্য জীবন। ভ্রষ্ট হচ্ছে তাদের সন্তানেরা। গবেষকরা দাবি করেছেন, একমাত্র অভিভাবক হিসাবে মা বাবার সঠিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদাসীনতা ও অবহেলার কারণেই এমনটা ঘটছে। কারণ, তাদের মা বাবা কর্মব্যস্ত। অথবা তাদের মধ্যে দীনের সঠিক বুঝ নেই। সঠিক জ্ঞানের অভাব ও সদিচ্ছার কারণেই এমনটা হচ্ছে প্রতিনিয়ত প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে। আফসোসের বিষয় হচ্ছে, আামাদের দীনি কমিউনিটিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে অনেক নারীরাই এখন স্বামী সংসার সন্তানের প্রতি চরম উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। এজন্য আমাদের কর্তব্য হলো- নারীদেরকে তথা আমাদের মা বোন স্ত্রী ও কন্যাদেরকেও যেখানে দীনি পরিবেশ নেই। এমন পরিবেশ থেকে বিরত রাখা। তাদেরকে বদদীনের কালো থাবা থেকে বাঁচানো। নয়ত তারাও দীনের নামে আমাদের গৃহ সংসার সন্তানের জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। উদাহরণত, প্রতিবেশীর ঘরে, কোনো আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে তাদের আচার আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। মেয়েরা স্কুল কলেজে বান্ধবীদের মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পারে। ফলে আমরা আজ এমন কিছু নারীর দেখা পাচ্ছি, এমন কিছু পরিস্থিতি সামনে আসছে যে, অনেক নারী; যারা অনেক বেশি ইবাদতের প্রতি যত্নশীল। কিন্তু তারা স্বামী সংসার সন্তান ও বয়োবৃদ্ধ আত্মীয়দের প্রতি উদাসীন। যেন এগুলো তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয় নয়। হ্যাঁ, কারও অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আছে। কাজের লোক রাখার সামর্থ্য আছে। তার কথা ভিন্ন।

তবে হাদিসের ভাষ্য কী? সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তাদের অধীনস্থদের (দায়িত্ব সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তাঁকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারবর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। খাদেম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। হাদিসের শেষাংশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আবারও উঠে এসেছে তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং সকলকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। –সহিহ বুখারি : ৮৯৩


এ হাদিস থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে, একজন নারীকে তার স্বামী সংসার সন্তান সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে। কাজেই নারীদের জন্য আবশ্যক হবে– তারা নিজ স্বামী সংসার সন্তানদের বিষয়ে সচেতন হবেন। তাদের প্রত্যেকের হক যথাযথ আদায় করবেন। মনে রাখতে হবে, এটাও আপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ইবাদত।

‎সাহাবি হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, আমার কাছে ফাতেমা রা. অভিযোগ করেন যে, গম পেষানোর চাকতি ঘোরানোর ফলে তার প্রত্যেক হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। আমি বললাম, তুমি তোমার বাবা (রাসুলুল্লাহর) কাছে গিয়ে যদি তাঁর কাছে একজন খাদেম চেয়ে আবেদন করতে। (ফাতিমা রা. আবেদন জানানোর পর) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন— আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস বলে দেব না? যা তোমাদের জন্য দাস–খাদেম অপেক্ষা ভালো হবে! তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে, তখন ৩৩ বার "আলহামদু লিল্লাহ", ৩৩ বার "সুবহানাল্লাহ " এবং ৩৪ বার "আল্লাহু আকবার " বলবে। –সুনানে তিরমিজি : ৩৪০৮ এ হাদিসে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো– নবীকন্যা ফাতেমা রা. ঘরের কাজ কেমন ছিল? নবীজি যাকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। তাকেও তিনি ঘরের কাজে সহযোগিতা করার জন্য কাজের লোক থেকে নিরুৎসাহিত করছেন। বরং আমলের বিনিময় এর চেয়ে উত্তম প্রতিদানের ঘোষণা করেছেন। এতে পরোক্ষভাবে এ বিষয়টিও উঠে এসেছে যে, ঘরের কাজ নিজ হাতে করা এটাই উত্তম আমল। তবে সাধ্য ও সামর্থ্য থাকলে, ঘরের কাজে সহযোগিতার জন্য লোক রাখা দোষনীয় নয়। বরং এরও অনুমতি আছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো— এ বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করা যে, গৃহস্থালি কাজ নিজ হাতে করাই উত্তম।


একবার এক নারী শায়েখ নাসির উদ্দীন আলবানি রহ. কে জিজ্ঞেস করেন— শায়েখ, আমি বিয়ের আগে অনেক বেশি নামাজ, রোজা আদায় করতাম। কুরআন তিলাওয়াত করে শান্তি অনুভব করতাম। নেক আমলে শান্তি পেতাম। কিন্তু এখন আমি এসবের মধ্যে ঈমানের স্বাদ খুঁজে পাই না!

আলবানি রহ. ওই নারীকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মুসলিম বোন,! তুমি তোমার স্বামীর হক আদায় করা এবং তাঁর আনুগত্যের প্রতি কেমন মনোযোগী?

এ কথা শুনে, মহিলা একটু বিরক্তবোধ করলেন। বললেন, শায়েখ আমি আপনাকে নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের কথা জিজ্ঞেস করেছি। আর আপনি আমাকে আমার স্বামীর ব্যাপারে বলছেন!

শায়েখ আলবানি রহ. বলেন, হে আমার বোন! অধিকাংশ নারী এ কারণে ঈমানের স্বাদ ও আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে ইবাদতে তৃপ্তি পায় না। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো নারী ঐ সময় পর্যন্ত ঈমানের স্বাদ বা তৃপ্তি পাবে না। যতক্ষণ সে নিজ স্বামীর হক আদায় না করবে । –কানযুল উম্মাল : ৪৪৮০০

আশা করি আমরা আমাদের মূল বক্তব্যটি তুলে ধরতে পেরেছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। বিশেষ করে আমাদের মা বোনদেরকে তাদের সাংসারিক গুরুত্ব বোঝার তাওফিক দান করুন। তবেই আমরা হয়ত পেতে পারি, সোনালি যুগের সোনালি সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধময় সুখী দাম্পত্য জীবনের অনাবিল আনন্দ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হন। যাবতীয় অনাকাঙ্খিত সাংসারিক ও পারিবারিক বিশৃঙ্খলা থেকে হেফাজত করুন আমাদের মুসলমানদের এক একটি পরিবারকে। আমিন।