বাংলা লিপি ও অক্ষর
বাংলা লিপি
[সম্পাদনা]বাংলা লিপি হল একটি লিখন পদ্ধতি যেটা ব্যবহৃত হয় বাংলা, অসমীয়া (অসমীয়া লিপি), মণিপুরি ও সিলেটি ভাষায়। বাংলা লিপির গঠন তুলনামূলকভাবে কম আয়তাকার ও বেশি সর্পিল। বাংলা লিপিটি সিদ্ধং লিপি থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। অসমীয়া ও অন্যান্য ভাষায় বাংলা লিপির যে সংস্করণগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলোতে কিছু ছোটখাটো পার্থক্য রয়েছে৷ যেমন: (বাংলা র; অসমীয়া ৰ) এবং (অসমীয়া ৱ; কোন বাংলা প্রতিলিপি নেই)। বাংলা লিপি হল বিশ্বের ৬ষ্ঠ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতি।
বাংলা অক্ষর
[সম্পাদনা]কোনো শব্দের যতটুকু অংশ একটানে বা এক ঝোঁকে উচ্চারিত হয়, তাকে বাংলা ভাষায় অক্ষর বলে। যেমন- 'চিরজীবী' শব্দে ৪টি অক্ষর রয়েছে: চি, রো, জী, বী এবং নির্জন শব্দে ২টি অক্ষর: নির্-জন, ইংরেজি ভাষায় অক্ষরকে syllable বলা হয়।[১] [২]
স্বরবর্ণ
[সম্পাদনা]বাংলা লিপিতে বর্তমানে ১১টি স্বরবর্ণ অক্ষর আছে যা ৭টি প্রধান স্বর উচ্চারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সাতটিকে মৌলিক স্বরবর্ণ বলে ৷
- বাংলা লিপিতে ই এবং উ উচ্চারণের জন্য ২টি করে বর্ণ ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রভাবিত বলে সংস্কৃত ভাষার মতনই বাংলা লিপিতে ই এবং উ উচ্চারণের জন্য উচ্চারণের তারতম্যের ভিত্তিতে হ্রস্ব (ই এবং উ) এবং দীর্ঘ (ঈ এবং ঊ) এই দুই রকম বর্ণ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আধুনিক বাংলা উচ্চারণে হ্রস্ব আর দীর্ঘ উচ্চারণে কোনো পার্থক্য নেই।
- যখন কোনো স্বরবর্ণ শব্দ বা শব্দাংশের প্রথমে বসে অথবা অন্য কোন স্বরবর্ণের পরে বসে, তখন তাকে আলাদা বর্ণ হিসেবে লেখা হয়। কিন্তু কোনো স্বরবর্ণ কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বসলে, তখন নির্দিষ্ট চিহ্ন (বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন) দিয়ে একে প্রকাশ করা হয়। এই চিহ্নকে কার বলা হয়। যেমন, ক ব্যঞ্জনবর্ণের পরে এ স্বরবর্ণ বসলে তখন ে চিহ্ন বা এ-কার ব্যবহৃত হয়ে কে লেখা হয়।
- এই নিয়মের একমাত্র ব্যতিক্রম হল অ স্বরবর্ণ। এই বর্ণের কোনো চিহ্ন নেই কারণ এটি পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ।
- ব্যঞ্জনবর্ণের পরে অ বা কোনো স্বরবর্ণ না থাকলে ব্যঞ্জনবর্ণটির সাথে হসন্ত চিহ্ন (্) ব্যবহার করা হয়, যেমন ক্।
নিম্নে আধুনিক বাংলা স্বরবর্ণের তালিকা ও উচ্চারন প্রণালী দেখানো হল। এই ১১টি স্বরবর্ণ ছাড়াও ৠ, ঌ এবং ৡ এই তিনটি স্বরবর্ণ পূর্বে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এদের ব্যবহার করা হয় না, এবং "অ" হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাবে স্বতন্ত্র স্বরবর্ণ এবং পুরো বাংলা লিপির পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ, তাই তার বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন নেই।
|
|
ব্যঞ্জনবর্ণ
[সম্পাদনা]বাংলা ভাষার ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ আছে। এগুলো হচ্ছে— ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ ষ স হ ড় ঢ় য় ৎ ং ঃ ঁ।
- আধুনিক বাংলা উচ্চারণে কিছু ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে উচ্চারণে পার্থক্য নেই, যেমন "ন" (দন্ত্য-ন), "ণ" (মূর্ধন্য-ণ) আর "ঞ" (ঞীয়/ইঙ)।
- "শ" (তালব্য-শ) আর "ষ" (মূর্ধন্য-ষ) আধুনিক বাংলা উচ্চারণে একই রকম উচ্চারণ করা। "স" (দন্ত্য-স)-এর উচ্চারণ শব্দের উপর নির্ভর করে।
- অর্ধ-স্বরবর্ণ: "ঙ" (উঙ/উম/উঁঅ) শব্দের প্রথমে আসতে পারে না। তেমনই "য়" (অন্তঃস্থ অ) শব্দের প্রথমে আসতে পারে না।
- "ড়" (ডয় শূন্য ড়) আর "ঢ়" (ঢয় শূন্য ঢ়), মনে করা হয় কমপক্ষে ব্যবহৃত এবং প্রায় অপ্রচলিত ব্যঞ্জনবর্ণ।
- "য" (অন্তঃস্থ-য) আর "জ" (বর্গীয়-জ)-এর মধ্যে উচ্চারণগত কোনো পার্থক্য নেই।
ক | খ | গ | ঘ | ঙ | |||
চ | ছ | জ | ঝ | ঞ | |||
ট | ঠ | ড | ঢ | ণ | |||
ত | থ | দ | ধ | ন | |||
প | ফ | ব | ভ | ম | |||
য | র | ল | |||||
শ | ষ | স | হ | ||||
য় | ড় | ঢ় |
চিহ্ন | চিহ্নের নাম | কাজ |
---|---|---|
্ | হসন্ত | ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বর "অ" উচ্চারিত হয় না |
ৎ | খণ্ড ত | "ত" এর খণ্ড রূপ |
ং | অনুঃস্বর | "ঙ" এর খণ্ড রূপ |
ঃ | বিসর্গ | "হ্" এর আরেকটি রূপ, এছাড়া সংক্ষেপের জন্যেও ব্যবহৃত |
ঁ | চন্দ্রবিন্দু | সানুনাসিক স্বর |
সংখ্যা
[সম্পাদনা]বাংলা সংখ্যা পদ্ধতি | ০ | ১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
---|
বিরামচিহ্ন ও অন্যান্য ব্যবহৃত চিহ্ন
[সম্পাদনা]চিহ্ন | চিহ্নের নাম |
---|---|
। | দাড়ি |
' | ঊর্ধ্বকমা |
৳ | টাকা |
, | কমা |
; | যতিচিহ্নবিশেষ / সেমিকোলন |
: | কোলন |
? | প্রশ্নচিহ্ন |
! | বিস্ময়বোধক চিহ্ন |
- | ড্যাশ / হাইফেন |
" | উদ্ধৃতি চিহ্ন |
... | উপবৃত্ত |
/ | স্ল্যাশ চিহ্ন |
[ ] ( ) { } ⟨ ⟩ | বন্ধনী |
° | তাপাঙ্ক / ডিগ্রী |
% | শতাংশ চিহ্ন |
~ | টিল্ড চিহ্ন |
যুক্তাক্ষর
[সম্পাদনা]কোনো স্বরবর্ণ দ্বারা পৃথক না থাকলে সর্বাধিক চারটি ব্যঞ্জনবর্ণ পরস্পর যুক্ত হয়ে যুক্তাক্ষর তৈরী করতে পারে। সাধারণতঃ প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্তাক্ষরের ওপরের দিকে বা বাম দিকে দেখা যায়। যুক্তাক্ষরে অনেক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যঞ্জনবর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মূল ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে তার কোনো সাদৃশ্য থাকে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ অবস্থায় ব্যঞ্জনবর্ণের যা উচ্চারণ, যুক্তাক্ষরে ব্যবহৃত হলে তার উচ্চারণের পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন জ এবং ঞ এর মিলনের ফলে তৈরী জ্ঞ যুক্তাক্ষরের উচ্চারণ জিণ না হয়ে হয় গ্গ।
নিলীন রূপ
[সম্পাদনা]- উচুনিচু: ক্ক, গ্ন, গ্ল, ন্ন, প্ন, প্প, ল্ল, ইত্যাদি...
- বফলা: গ্ব, ণ্ব, দ্ব, ল্ব, শ্ব
- পাশাপাশি: দ্দ, ন্দ, ব্দ, ব্জ, প্ট, শ্চ, শ্ছ, ইত্যাদি...
আনুমানিক রূপ
[সম্পাদনা]- পাশাপাশি: দ্গ
- বফলা: ধ্ব, ব্ব, হ্ব
সঙ্কুচিত রূপ
[সম্পাদনা]- পাশাপাশি: ঙ্ক্ষ, ঙ্খ, ঙ্ঘ, ঙ্ম, চ্চ, চ্ছ, চ্ঞ, ড্ড, ব্ব
- উচুনিচু: ত্ন, ত্ম, ত্ব
- "ম", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ম্ন, ম্প, ম্ফ, ম্ব, ম্ভ, ম্ম, ম্ল
- "ষ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ষ্ক, ষ্ট, ষ্ঠ, ষ্প, ষ্ফ, ষ্ম
- "স", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: স্ক, স্খ, স্ট, স্ত, স্থ, স্ন, স্প, স্ফ, স্ব, স্ম, স্ল
সংক্ষিপ্ত রূপ
[সম্পাদনা]- "জ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: জ্জ, জ্ঞ, জ্ব
- "ঞ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ঞ্চ, ঞ্ছ, ঞ্জ, ঞ্ঝ
- "ণ" ও "প", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ণ্ঠ, ণ্ড, প্ত, প্স, প্ট, ণ্ট, ণ্ঢ
- "ত" ও ভ, আকৃতি পরিবর্তন: ত্ত, ত্থ, ত্র, ভ্র
- "থ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ন্থ, স্থ, ম্থ
- "ম", উচুনিচুতে নিচে (নিজের উপরের আকার প্রায় হারিয়ে দেয়): ক্ম, গ্ম, ঙ্ম, ট্ম, ণ্ম, ত্ম, দ্ম, ন্ম, ম্ম, শ্ম, ষ্ম, স্ম
- "স", উচুনিচুতে নিচে (নিজের উপরের আকার হারিয়ে দেয়): ক্স
বৈকল্পিক রূপ
[সম্পাদনা]- "ঙ", আকৃতি পরিবর্তন: ঙ্ক, ঙ্গ
- "ধ", আকৃতি পরিবর্তন করে "ঝ"-র মতন রূপ নেয়: গ্ধ, দ্ধ, ন্ধ, ব্ধ
- রেফ: র্ক, র্খ, র্গ, র্ঘ, ইত্যাদি...
- রফলা: খ্র, গ্র, ঘ্র, ব্র, জ্র, ট্র, ঠ্র, ড্র, ম্র, স্র, ইত্যাদি...
- রফলা যুক্ত হলে আকৃতি পরিবর্তন হয়: ক্র, ত্র, ভ্র
- যফলা: ক্য, খ্য, গ্য, ঘ্য, দ্য, ন্য, শ্য, ষ্য, স্য, হ্য, ইত্যাদি...
ব্যতিক্রমসমূহ
[সম্পাদনা]- "ক", "ত"-র মতন রূপ নেয়: ক্র, ক্ত
- "চ", "ব"-র মতন রূপ নেয়: ঞ্চ
- "ট"+"ট" (নিজের নিচে একটি বক্ররেখা তৈরি করে): ট্ট
- "ষ"+"ণ" -তে "ণ" নিজেকে ২বার বক্র করে: ষ্ণ
- "হ"+"ন" -তে "ন" নিজেকে বক্রের মতন করে নেয়: হ্ন
- "হ"+"ম" (আকৃতি পরিবর্তন): হ্ম
ব্যতিক্রমী ব্যঞ্জনবর্ণ-স্বরবর্ণ সমন্বয়
[সম্পাদনা]- উ
- "গ" আর "শ" -র সঙ্গে "উ" যুক্ত হলে "ও"- র মতন নিচে বক্র তৈরি করে: গু, শু
- "ত"-তে "উ-কার" -র সঙ্গে যুক্তাক্ষর "প", "ন" বা "স"। তখন "তু", "ও"- র মতন নিচে বক্র তৈরি করে: ন্তু, স্তু, প্তু
- ব্যঞ্জনের ডানে বক্র তৈরি করে: রু, গ্রু, ত্রু, থ্রু, দ্রু, ধ্রু, ব্রু, ভ্রু, শ্রু
- "হ"-র সঙ্গে উপরে বক্র তৈরি করে: হু
- ঊ
- যুক্ত হলে ডানে ঘাই তৈরি করে: রূ, গ্রূ, থ্রূ, দ্রূ, ধ্রূ, ভ্রূ, শ্রূ
- ঋ
- "হ" -র সঙ্গে যুক্ত হলে ডানে ঘাই তৈরি করে: হৃ
কিচ্ছু উদাহরণ: স+ত +র=স্ত্র, ম+প+র=ম্প্র, জ+জ+ব=জ্জ্ব, ক্ষ+ম=ক্ষ্ম
- তাত্ত্বিকভাবে, চার-ব্যঞ্জনবর্ণের যুক্তাক্ষর তৈরি করা যেতে পারে, যেমন র+স+ট+র=র্স্ট্র, কিন্তু বাস্তবীয় শব্দে পাওয়া যায় না।
লিপি বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]বাংলা অক্ষরগুলির উপর মাত্রা অর্থাৎ একটি আনুভূমিক রেখা দেয়া হয়। বাংলাতে মাত্রার প্রদর্শন পরিমাণ অনেক কম। খ, শ, ণ, প, ইত্যাদি বাংলা হরফে মাত্রার পরিমাণ খুব কম। বাংলাতে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু স্বতন্ত্র জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য এই প্রাক-মুদ্রণ যুগেই নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এগুলির মধ্যে নিচেরগুলি উল্লেখযোগ্য
- অনুভূমিক মাত্রা এবং বিভিন্ন হরফে এর পরিমাণ
- বেশির ভাগ বাংলা হরফে ব্যবহৃত উল্লম্ব রেখাকৃতি অংশটি।
- ক, ঝ, ধ, ব, র, ইত্যদি হরফে ব্যবহৃত ত্রিভুজাকৃতি রূপটি। একই ত্রিভুজটির খানিকটা বিকৃত রূপ খ, ঘ, থ, ফ, য, ষ, ইত্যাদিতে দেখতে পাওয়া যায়।
- লেখার দিকের সাথে অর্ধ-সমকোণে অংকিত বিভিন্ন রেখাংশ বিভিন্ন হরফে দেখতে পাওয়া যায়। ই, ছ, হ, ইত্যাদির নিচের অংশে, এবং গ, প, শ, ইত্যাদিতে উল্লম্ব রেখার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এরকম রেখাংশ দেখতে পাওয়া যায়।
উপরের সবগুলিই বাংলা হরফকে নিজস্ব জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে এবং অন্যান্য লিপি থেকে আলাদা করেছে।
এসময়কার বাংলা হরফে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যেগুলি বর্তমান বাংলা হরফে অনুপস্থিত। যেমন -
- "র" হরফটিকে "ব"-এর পেটে দাগ কেটে দেখানো যেত। অর্থাৎ পেট-কাটা "ব" (ৰ) দিয়ে এটি নির্দেশ করা হত। বর্তমানে এটি অসমীয়া ভাষাতে প্রচলিত হলেও বাংলায় আর প্রচলিত নেই।
- বর্তমান বাংলা বেশ কিছু হরফের নিচে ফুটকি বা বিন্দু দেয়া হয়। এই ফুটকিগুলি এই যুগে প্রচলিত ছিল না। "র"-কে পেটকাটা ব দিয়ে নির্দেশ করা হয়। "য়"-এর নিচে কোন বিন্দু ছিল না; এটি শব্দে অবস্থানভেদে ভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হত। আবার "ড়" এবং "ঢ়"-এরও কোন অস্তিত্ব ছিল না। "ড" এবং "ঢ" শব্দের মাঝে বসলে "ড়" এবং "ঢ়"-এর মতো উচ্চারিত হত।
- ত+উ ব্যঞ্জন-স্বর সমবায়টি "ত্ত" দিয়ে প্রকাশ করা হত। আজও কোন কোন আধুনিক বাংলা যুক্তাক্ষরে, যেমন স+ত+উ = "স্তু" (যেমন- বস্তু) এবং ন+ত+উ = "ন্তু" (যেমন- কিন্তু) --- এই দুইটি যুক্তাক্ষরের ত+উ অংশে এর ফসিল দেখতে পাওয়া যায়।
এ সময় বাংলা ছাপা বইও বের হয়েছে। এগুলিতে বইয়ের একটি পাতা প্রথমে হাতে লেখা হত। তারপর সেই পুরো পাতার একটি প্রতিলিপি কাঠে বা ধাতুতে খোদাই করে নেওয়া হত। শেষে এই কাঠ বা ধাতুর ফলকে কালি লাগিয়ে একই পাতার অনেক কপি ছাপানো হত। একই লোকের হাতের লেখাতে যে বৈচিত্র্য থাকতে পারে, সেগুলি এই ছাপায় শুধরানো যেত না।
বাংলা মুদ্রিত হরফের জ্যামিতিক গড়ন
[সম্পাদনা]প্রতিটি মুদ্রিত বাংলা হরফ একটি অদৃশ্য চতুর্ভুজের মধ্যে বসানো থাকে। হরফের এই অদৃশ্য নকশাতে অনুভূমিক বরাবর প্রসারিত বেশ কিছু রেখা বাংলা হরফের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছে।
মাত্রা বরাবর যে রেখাটি চলে গেছে, যা থেকে বেশিরভাগ হরফ ঝুলে থাকে বলে মনে হয়, তাকে মাত্রারেখা বলে। বেশির ভাগ হরফের নিচ যেখানে ঠেকে যায়, সেই বরাবর কল্পিত অনুভূমিক রেখাটিকে ভূমিরেখা বলে। রোমান হরফগুলির মূল অংশ সর্বদা একটি অদৃশ্য ভূমিরেখার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলা হরফগুলি মাত্রা নামের একটি দৃশ্যমান রেখা থেকে নিচে ঝুলে থাকে। ফিওনা রস তাই বাংলা হরফের ভূমিরেখাকে "ধারণাগত ভূমিরেখা" আখ্যা দিয়েছেন। মাত্রারেখা থেকে ভূমিরেখার ব্যবধানকে "হরফের মূল উচ্চতা" বলে।
মাত্রারেখার কিছু উপরে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যাতে ই-কার, ঈ-কার, ঐ-কার, রেফ ইত্যাদির মাথা গিয়ে ছুঁয়েছে; এটিকে শিরোরেখা বলে। একইভাবে ভূমিরেখার খানিকটা নিচে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে উ-কার, ঊ-কার, ঋ-কার, ইত্যাদির নিচের প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে; একে পাদরেখা বলে। পাদরেখা থেকে শিরোরেখার ব্যবধানকে "হরফের উচ্চতা" হিসেবে ধরা যায়। মাত্রারেখার খানিকটা নিচে আরেকটি রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে বহু হরফের অংশবিশেষ দিক পরিবর্তন করে; একে মধ্যরেখা বলে।
প্রতিটি হরফ যে অদৃশ্য চতুর্ভুজাকৃতি স্থানে বসে, তার দুইপাশে খানিকটা খালি জায়গা থাকে, একে পার্শ্বস্থান বলে। দুপাশের পার্শ্বস্থান বাদ দিলে হরফের মূল প্রস্থ পাওয়া যায়। আর পাশাপাশি দুইটি হরফের প্রতিটির পার্শ্বস্থান যোগ করলে পাওয়া যায় ঐ দুই হরফের মধ্যে ফাঁক। [১][২]
- ↑ আবু জার মোঃ আককাস। হরফের রেখা আর চতুষ্কোণ (ব্লগ ভুক্তি)। ১১ মার্চ ২০০৮।
- ↑ Ross