ক্যালকুলাস/অন্তরীকরণ/অন্তরীকরণের সংজ্ঞায়ন
একটি নির্দিষ্ট চলকের সাপেক্ষে অন্য কোনো চলকের পরিবর্তনের হার নির্ণয় করারকে অন্তরীকরণ বলে। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, কোনো ফাংশন -এর লেখচিত্রের একটি বিন্দু যদি হয় , তবে উক্ত বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক রেখার ঢাল নির্ণয় করাই হলো অন্তরীকরণ। এক্ষেত্রে আমরা জানি, ঢাল হলো স্থানাঙ্কের পরিবর্তনের সাপেক্ষে স্থানাঙ্কের পরিবর্তনের হার।
স্পর্শক রেখা (Tangent line)
[সম্পাদনা]স্পর্শক রেখার সংজ্ঞায়নের পুর্বে সিকেন্ট রেখার (Secant line) সংজ্ঞায়ন করে নেওয়া ভালো। মনে করি, একটি ফাংশন, যার লেখচিত্র ডানের চিত্রের ন্যায়। এবং যদি দুটি বিন্দু হয়, যাদের স্থানাঙ্ক যথাক্রমে এবং , তবে ও গামী সরলরেখা, অর্থাৎ , -এর একটি সিকেন্ট লাইন হবে। স্থানাঙ্কের পরিবর্তন বা পার্থক্য ; তাই, ধরি, এ সরলরেখার ঢাল
স্পর্শক রেখার ক্ষেত্রে, এর সিকেন্ট লাইন এর ও বিন্দুদ্বয়ের স্থানাঙ্কের অন্তর শূন্যের নিকটবর্তী হলে তা বিন্দুতে অঙ্কিত এর স্পর্শক রেখা। এ সরলরেখার ঢাল,
কোনো বিন্দু -এ ফাংশনের লেখচিত্রের ঢাল,
সীমা বা লিমিট বিদ্যমান না থাকলে (Limit DNE) ফাংশনটির ঢাল অসংজ্ঞায়িত।
ঢাল, সংজ্ঞায়িত হলে বিন্দুতে -এর লেখচিত্রের স্পর্শকের সমীকরণ নিম্নরূপ:
উল্লেখ্য, বিন্দুতে স্পর্শক রেখার ঢালই উক্ত বিন্দুতে ফাংশনটির ঢাল (slope).
কোনো বিন্দুতে ফাংশনের পরিবর্তনের হার
[সম্পাদনা]কোনো ফাংশন, -এর লেখচিত্রে অবস্থিত দুইটি বিন্দুর -স্থানাঙ্কের সাপেক্ষে -স্থানাঙ্কের পরিবর্তনের হারকে আমরা এভাবে লিখতে পারি, , যা উক্ত বিন্দুদ্বয়গামী ছেদক সরলরেখার (Secant line) ঢাল। এটি ফাংশনের স্থানাঙ্কের একটি নির্দিষ্ট ব্যাপ্তির (এক্ষেত্রে ) দুই প্রান্তের জন্য পরিবর্তনের হার নির্নয়ের একটি সূত্র।
তবে, আমরা যদি তাৎক্ষণিক পরিবর্তন বের করতে চাই, তবে আমাদের ফাংশনের স্পর্শক সরলরেখার ঢাল বের করতে হবে। কেননা, তাৎক্ষণিক পরিবর্তন হলো অবস্থানের পরিবর্তন, যখন স্থানঙ্কের পরিবর্তন শূন্যের নিকটবর্তী। অর্থাৎ, তাৎক্ষণিক পরিবর্তন, । এক্ষেত্রে আমরা লিখতে পারি।
মনে করি নির্দিষ্ট সময়, এ একটি গাড়ির অতিক্রান্ত দূরত্ব । তবে আমরা বলতে পারি, নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট সময়, -এ ফাংশনের স্পর্শকের ঢাল । আমরা জানি কোনো বস্তুর সময়ের সাপেক্ষে অবস্থানের পরিবর্তনের হারকে দ্রুতি বলে। সুতরাং গাড়িটির ক্ষেত্রে দুটি অবস্থানের মধ্যবর্তী গড় দ্রুতি (Average speed), এবং সময়ের ব্যবধান, শূন্যের কাছাকাছি হলে হবে তাৎক্ষণিক দ্রুতি।
সুতরাং গাড়ির গতিপথের একটি নির্দিষ্ট বিন্দু -এ গাড়িটির তাৎক্ষণিক দ্রুতি হবে
অন্তরজের ধারণা
[সম্পাদনা]আমরা এতক্ষণ এর স্পর্শক রেখার ঢাল নির্ণয় করেছি। এ পদ্ধতিতে আমরা যে ঢাল পাই, তা এর উপর নির্ভর করে, যাকে একটি নতুন ফাংশন আকারে প্রকাশ করা যায়। কোনো ফাংশনের স্পর্শক রেখার ঢাল নির্ণয় করার পদ্ধতিকে অন্তরীকরণ বলে। একে অন্তরকলন, ব্যবকলন, বা আবকলনও বলা হয়, এবং এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নতুন ফাংশনটি, অর্থাৎ কে এর অন্তরজ বলা হয়।
মনে করি, একটি ফাংশন। তবে যেখানেই লিমিট বিদ্যমান, সেখানে । এক্ষেত্রে, আমরা বলতে পারি, বিন্দুতে অন্তরীকরণযোগ্য এবং বিন্দুতে এর অন্তরজ ।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধি
[সম্পাদনা]অন্তরজের সংজ্ঞা ব্যবহার করে কোনো ফাংশনের অন্তরজ নির্ণয় করা অনেক ফাংশনের ক্ষেত্রে একটি সময়সাপেক্ষ কাজ হতে পারে। এক্ষেত্রে, দ্রুততার সাথে কোনো ফাংশনের অন্তরজ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই কিছু বিধির প্রয়োগ করা হয়। এ সকল বিধি প্রমাণিত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে একই বিধি প্রতিটি সমস্যার সমাধানে নতুন করে প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় না। নিম্নে ব্যবকলনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধি তুলে ধরা হলো:
ধ্রুবক ফাংশনের অন্তরজ
[সম্পাদনা]মনে করি, একটি ফাংশন। এই ফাংশনটি একটি সরলরেখা, যা অক্ষের সমান্তরাল। এ সরলরেখার ঢাল । সুতরাং, এর স্পর্শক রেখারও ঢাল হওয়া উচিত?
প্রমাণ:
[সম্পাদনা]অন্তরজের সংজ্ঞা অনুযায়ী,
মনে করি, সকল এর জন্য । তাহলে, । অতএব,
- ; [যেহেতু ]
ধ্রুবক ফাংশনের (অর্থাৎ, যে ফাংশনের ঢাল ) অন্তরজ .
ধ্রুবক গুণিতক বিধি
[সম্পাদনা]মনে করি, , যেখানে একটি ধ্রুব সংখ্যা। এক্ষেত্রে, .
প্রমাণ:
[সম্পাদনা]অন্তরজের সংজ্ঞা অনুযায়ী,
, যখন .
অন্তরীকরণের সংযোগ বিধি
[সম্পাদনা]হলে,
প্রমাণ:
[সম্পাদনা]এখানে,
অন্তরীকরণের ঘাত বিধি
[সম্পাদনা]এই বিধিটি অন্তরীকরণের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধিসমূহের একটি। মনে করি, , তবে, .
প্রমাণ:
[সম্পাদনা]দ্বিপদী উপপাদ্য অনুসারে, , যেখানে হলো সম্বলিত পদসমূহের সমষ্টি, যখন । এখন,
হলে,
[এই বিধি এর সকল বাস্তব মানের জন্য সত্য, তবে এখানে শুধুমাত্র এর জন্য প্রমাণ দেখানো হলো, পরবর্তীতে সূচকীয় ও লগারিদমীয় ফাংশনের অন্তরজ অংশে এর জন্য প্রমাণ দেখানো হবে।]
উদাহরণ
[সম্পাদনা]অন্তরীকরণের কয়েকটি উদাহরণ নিম্নরূপ:
উদাহরণ 1:
এর অন্তরজ,
যেহেতু এখানে লিমিট নেওয়া হচ্ছে, সুতরাং , তবে , অর্থাৎ,
সুতরাং, , যখন .
এতক্ষণ আমরা দেখেছি কিভাবে এর অন্তরজ নির্ণয় করতে হয়। এর জন্য আমাদের একটুখানি বীজগণিত এবং লিমিটের কিছু ধারণার প্রয়োগ করতে হয়েছে। পূর্বে প্রমাণিত (যদিও এই কেইসটি প্রমাণ করা হয় নি) ঘাত বিধি প্রয়োগ করেও এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
যদি কোনো ফাংশনের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে ফাংশনটির অন্তরজ কত তা নির্ণয় করতে হয়, তাহলে আমরা শুধুমাত্র সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করেই ওই বিন্দুতে ফাংশনটির অন্তরজ বের করতে পারবো।
উদাহরণ 2:
কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু, বিন্দুতে এর অন্তরজ বা স্পর্শক রেখার ঢাল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে এর অন্তরজের ফাংশন নির্ণয় করে -স্থানাঙ্কের মান ইনপুট করলে নির্ণেয় ঢাল পাওয়া যাবে। এর অন্তরজ,
সুতরাং, , যখন ; যা অন্তরীকরণের ঘাত বিধি প্রয়োগ করেও সমাধান করা সম্ভব। এখন, হলে অন্তরজ, বা স্পর্শক রেখার ঢাল,
বিকল্প পদ্ধতি: যেহেতু -স্থানাঙ্কের অতি ক্ষুদ্র পরিবর্তনের সাপেক্ষে -স্থানাঙ্কের পরিবর্তনের হারকে অন্তরজ বলা হয়, তাই নির্দিষ্ট বিন্দু দেওয়া থাকলে সুবিধামতো এর মান ধরে নিয়ে ওই বিন্দুতে অন্তরজের মান নির্ণয় করা সম্ভব। এ উদাহরণের ক্ষেত্রে, মনে করি, , যা শূন্যের নিকটবর্তী।
সুতরাং,
উদাহরণ 3:
কে সরলরেখার সমীকরণ বা ফাংশন বলা হয়, যেখানে সরলরেখাটির ঢাল এবং রেখাটি -অক্ষকে বিন্দুতে ছেদ করে। এ ফাংশনটির অন্তরজ,
এখান থেকে আমরা বলতে পারি, কোনো সরলরেখার অন্তরজ উক্ত সরলরেখার ঢালের সমান। এ যুক্তির মাধ্যমেও বলা যায়, ধ্রুবক ফাংশনের অন্তরজ .
উদাহরণ 4:
একটি বহুপদী। অন্তরীকরণের সংযোগ বিধি, ঘাত বিধি এবং ধ্রুবক গুণিতক বিধি প্রয়োগ করে পাই, .