হাঁস-মুরগি পালন/হাঁস-মুরগির রোগ ও তার প্রতিকার
প্রতি বছর বিভিন্ন রোগে বহু মোরগ-মুরগি মারা যায়। এ সকল রোগের মধ্যে প্রধান হচ্ছে রানিক্ষেত, মুরগির বসন্ত, মুরগির কলেরা, গামবোরো, ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস, রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস ইত্যাদি প্রধান।
হাঁস-মুরগির রোগসমূহ
[সম্পাদনা]রানিক্ষেত
[সম্পাদনা]রানিক্ষেত রোগের জীবাণু একপ্রকার ভাইরাস। সাধারণত সকল ব্যাসের ও সকল জাতের মোরগ-মুরগিই রানিক্ষেত রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। মোরগ-মুরগি ছাড়াও কবুতর, দোয়েল, কোয়েল, কাক, পেঁচা, ঘুঘু, চড়ুই, শালিক, ময়ূর, কাকড়ুয়া, টিয়া, ময়না ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার পাখি এই রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। হাঁস (পাতি হাঁস) বা রাজ হাঁসের সচরাচর এই রোগ দেখা যায় না।
রানিক্ষেত রোগের লক্ষণগুলোর মাঝে চুনা বা সবুজ রং এর রক্তাক্ত কিংবা তরল পায়খানাই প্রধান। রোগাক্রান্তপাখির শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হয়, বাচ্চা মোরগ-মুরগি হা করে শ্বাস নেয় মাঝে মাঝে আক্রান্ত মোরগ-মুরগি ঘাড় বাঁকা হয়ে যায় তাছাড়া আক্রান্তপাখির পাখা ছেড়ে দিয়ে ঝিমাতে থাকে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে খাওয়াদাওয়া ও ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগাক্রান্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মাঝেই মৃত্যু ঘটে থাকে। আবার কোনো কোনো সময় রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই হঠাৎ মৃত্যু ঘটে।
মুরগির বসন্ত
[সম্পাদনা]মুরগরি বসন্ত রোগের জীবাণু একপ্রকার ভাইরাস। অনেক সময় রোগের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মুরগির বসন্ত রোগকে কন্টাজিয়াস ইপিথেলিওমা ও এভিয়ান ডিপথেরিয়া বলা হয়।
সাধারণত মোরগ-মুরগি, কবুতর এই রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ ছাড়াও চড়ুই, ময়ূর, টিয়া ও অন্যান্য পোষা পাখি মাঝে মাঝে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যে কোনো বয়সের মোরগ-মুরগিই বসন্ত রোগ যারা আক্রান্ত হতে পারে।
বসন্ত রোগে মোরগ-মুরগির একমাত্র পালক বিহীন স্থানে লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিশেষত এই রোগের মাথায় বিভিন্ন জায়গায় যেমন- কুটি, লতি, মুখের কোণায়, চোখের পাতায় এবং মাঝে মাঝে পায়ে ছোট ছোট আঁচিলের মতো গুটি দেখা যায়। গুটি হওয়ার আগে প্রথমে লাল হয় এবং রস জমা হয়। পরে কালকাল গুটি তৈরি হয়। মাথার বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের গুটিই মুরগির বসন্ত রোগ নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট। এই রোগে মোরগ-মুরগি খাওয়া থেকে বিরত হয়ে যায়। ডিম পাড়া কমে যায়। এই রোগে বয়স্ক মোরগ-মুরগির মৃত্যুর হার কম। বাচ্চা মোরগ-মুরগির মৃত্যুর হার সাধারণত কিছুটা বেশি। ৩-৪ সপ্তাহ অসুখে ভোগার পর আপনা থেকেই বড় মোরগ-মুরগি ভালো হয়ে উঠে।
মুরগির কলেরা
[সম্পাদনা]এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা মুরগির কলেরা হয়ে থাকে এই ব্যাকটেরিয়া মুরগির দেহে প্রবেশ করে রক্তের সাথে মিশে এক প্রকার বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং রক্ত চলাচলের সাথে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সকল বয়সের মোরগ-মুরগির এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
আক্রান্ত মুরগির মল দ্বারা মুরগির খাদ্য ও পানি দূষিত হয় এবং রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বন্য পাখি, কুকুর, বিড়াল, ইত্যাদি প্রাণির দ্বারাও এ রোগ এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় বিস্তার লাভ করে। বাজার থেকে রোগাক্রান্ত মোরগ-মুরগি কিনে আনলেও এ রোগ হয়ে থাকে।
এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মোরগ-মুরগি খেতে চায়না, পালকগুলো খসখসে হয়ে যায়, চেহারায় অবসন্ন নেমে আসে ও রক্তশূন্য মনে হয়ে। মোরগ-মুরগির পিপাসাও বেড়ে যায়। পায়খানার রং সবুজ এবং সাদা ও ফেনাযুক্ত মনে হয়। চলাফেরা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ঝিমাতে থাকে এবং অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায়।
রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস
[সম্পাদনা]এ রোগ ইমেরিয়া নামক এক প্রকার পরজীবি দ্বারা হয়ে থাকে। মোরগ- মুরগির অস্ত্রের মধ্যে এই রোগ বিস্তার লাভ করে এবং হজম করার শক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। এই রোগ মোরগ-মুরগির মলের সাহায্যে বিস্তার লাভ করে। এই রোগের পরজীবি মুরগির অস্ত্রে প্রচুর ডিম দিয়ে থাকে। এক চা চামচ মলে প্রায় ৭০ লক্ষ ডিম থাকতে পারে। রোগাক্রান্ত মুরগির মল ভেজা মাটিতে পড়লে এ রোগের ডিম দীর্ঘ সময় জীবন্ত থাকে ও কোনো রকমে অন্য কোনো সুস্থ মুরগির পেটে খাবারের সাথে প্রবেশ করতে পারলে পুণরায় রোগ বিস্তার শুরু করতে পারে।
এ রোগে আক্রান্ত হলে মোরগ-মুরগি ঝিমাতে থাকে। চোখ বন্ধ করে রাখে ও গায়ের পালক ঝুলে পড়ে। পায়খানার সাথে রক্ত মিশানো আম পড়তে থাকে। খাবার খেতে চায় না। কারণ, খাদ্য হজম না হওয়ায় খাদ্য থলি পূর্ণ থাকে।
ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস
[সম্পাদনা]এই রোগের জীবাণু এক প্রকার ভাইরাস। এই রোগ সংক্রামক ও মারাত্মক ছোঁয়াছে প্রকৃতির। সাধারণত শ্বাস যন্ত্রই এই রোগে আক্রান্ত হয়।
একটু বয়স্ক মোরগ-মুরগির এই রোগ দেখা দেয়। তবে সকল জাতের মোরগ মুরগিরই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বছরের সব সময়ই এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগের জীবাণু দ্বারা শ্বাসযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার ফলে নানা ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। যেমন- ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস, কফ হাঁচি, নাক দিয়ে রক্ত মিশ্ৰিত শেস্না পড়ে, হা করে নিশ্বাস নেয় এবং ঠোঁট দিয়ে পানি পড়ে। রক্ত মিশ্রিত কফ ট্রাকিয়া ও ল্যারিংসের পথ বন্ধ করায় শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। সেই কারণে মাঝে মাঝে আক্রান্ত পাখিকে প্রচণ্ড জোরে মাথা ঝাকানোর সাথে সাথে গড় গড় বা ফিস ফিস শব্দ করতে দেখা যায়।
গামবোরো রোগ
[সম্পাদনা]গামবোরো রোগকে ইনফেকস বার্সাল ডিজিজ ও বলা হয়। সাধারণত ৩-৮ সপ্তাহ বয়সের মোরগ-মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত মোরগ-মুরগির কুচকানো পালক, অবসন্নতা, ময়লাযুক্ত পায়ুস্থান, উচ্চ তাপমাত্রা, কাঁপুনি ও পানির মতো ডায়রিয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। এ রোগের ভ্যাকসিন এন্টিনিউয়েটেড ও লাইভ আকারে পাওয়া যায়। প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান করতে হয়। বয়স্ক প্যারেন্ট মুরগির কিন্তু ভ্যাকক্সিন প্রদান করতে হয়।
রোগের কারণ ও বিস্তারের মাধ্যম
[সম্পাদনা]সাধারণ কারণসমূহ
[সম্পাদনা]নানা কারণে হাঁস-মুরগির রোগ হতে পারে। হাঁস-মুরগির রোগের কিছু সাধারণ কারণসমূহ নিম্নোরূপ:
- সুষম খাদ্যের অভাব।
- সীমাবদ্ধ স্থানে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত হাঁস-মুরগির অবস্থান।
- অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান বা পরিবেশ।
- রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু, পরজীবী, ছত্রাক ইত্যাদির আবির্ভাব।
- রোগজীবাণুর বিষয়ে খামারীর অসতর্কতা, অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতা।
- দূষিত ও ভেজাল খাদ্য।
রোগ বিস্তার প্রক্রিয়া
[সম্পাদনা]অসুস্থ হাঁস-মুরগির মল, কফ, সর্দি, ক্ষত হতে বের হতে হওয়া রক্ত ও পুঁজ ইত্যাদির মাধ্যমে সুস্থ দেহে রোগ বিস্তার লাভ করে।
- পানি: কৃমির ডিম অসুস্থ হাঁস-মুরগির শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়া পালক, ময়লা বিভিন্ন প্রকার জীবাণু অনুজীবাণু ইত্যাদি দ্বারা দূষিত পানির মাধ্যমে রোগ বিস্তার লাভ করে।
- বাতাস: দূষিত বাতাসের মাধ্যমে অণুজীবাণু ও শ্বাসযন্ত্রে রোগ জীবাণু বিস্তার লাভ করে।
- মাটি: অনেক রোগ অনুজীবি ও কৃমির ডিম ভেজা মাটির মধ্যে অনেক কাল পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। পরিচর্যাকারী দূষিত মাটি মাড়িয়ে ঘরে ঢুকলে পায়ে পায়ে ঐ জীবাণু মুরগির ঘরে বিস্তার লাভ করতে পারে।
- সংস্পর্শ: রোগাক্রান্ত হাঁস-মুরগি বা মুরগি পালকের সংস্পর্শে থেকে সংক্রামক রোগের জীবাণু সংক্রমিত হয়। হ্যাচারিতে অসুস্থ মুরগির ডিম থেকেও এ সমস্ত রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে।
- বাহক: অনেক সময় সুস্থ হাঁস-মুরগি নিজে অসুস্থ না হয়ে রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণি, খামারের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি রোগের বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। এজন্য খামারে হাঁস-মুরগির চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উত্তম। মনে রাখা উচিত অসুস্থ হাস-মুরগি চিকিৎসার পর পূর্বের মতো উৎপাদনশীল থাকে না।
খামারের জৈব নিরাপত্তা
[সম্পাদনা]নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে খামারে সঠিকভাবে রোগ জীবাণু প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
- প্রতিপালন পদ্ধতি ও উপযোগিতানুসারে হাঁস-মুরগির ঘর/শেড নির্মাণ করতে হবে।
- বয়স ও উপযোগিতা অনুসারে নির্ধারিত নিয়মে খাদ্যের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- বয়স, উপযোগিতা এবং সংখ্যানুপাতে ঘরে থাকার স্থান দিতে হবে।
- বয়স, উপযোগিতা ও হাঁস-মুরগির সংখ্যানুপাতে খাদ্যের পাত্র, পানির পাত্র, ডিম পাড়ার স্থান দিতে হবে।
- ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- নিয়মিত হাঁস-মুরগির বয়স লিঙ্গ ও উপযোগিতা অনুসারে নমুনা ওজন গ্রহণ করতে হবে।
- বয়স, লিঙ্গ ও উপযোগিতা অনুসারে পাখির ওজন নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
- পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
- ঘরে বা পাখির দেহে উকুনের উপদ্রব বন্ধ করতে হবে।
- লিটার প্রথায় হাঁস-মুরগি পালন করলে লিটারের পরিচর্যা করতে হবে।
- খাদ্য ও পানি দেয়ার সময় হাঁস-মুরগি আচরণ কিছুক্ষণ লক্ষ্য করতে হবে।
- পরিচর্যাকারী স্বাস্থ্যপ্রদ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করতে হবে।
- মুরগির ধকল বা পীড়ন সৃষ্টি হয় এমন ব্যবস্থা বা পরিবেশ কখনও তৈরি করা যাবে না।
- খামারে পরস্পর শেডের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে শেড নির্মাণ করতে হবে।
- বছরে অন্তত ১ বার এবং নতুন পালের হাঁস-মুরগি পরিবর্তনের সময় সমস্ত ঘর, ঘরের সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক।
- ঘরে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রাখা আবশ্যক।
- খামারের অঙ্গিনার মধ্যে পোষা বা বণ্য পশুপাখি এবং বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- বিভিন্ন জাত, বয়স ও উপযোগিতা অনুসারে হাঁস-মুরগি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থায় প্রতিপালন করতে হবে।
- মৃত হাঁস-মুরগি যথাযথ ব্যবস্থায় সৎকার করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- নিয়মিতভাবে প্রতিষেধক টিকা ব্যবহার করা দরকার।
- টিকা প্রদানের নিয়মাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।
- বাচ্চা এবং বাড়ন্ত বাচ্চা সংগ্রহ করার সময় পরিচিত, বিশ্বস্ত এবং রোগমুক্ত হ্যাচারি বা খামার হতে ক্রয় করতে হবে।
- হ্যাচারি উপজাতসমূহ অপসারণ করার প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করতে হবে।
- হাঁস-মুরগির পায়খানা এবং লিটার অপসারণ করার প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করতে হবে।
- খামারের কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা অবলোকন, পরিদর্শন, অনুসরণ, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করার পদ্ধতিগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
- খাদ্যের পুষ্টিমান যথাযথ থাকতে হবে।
- খাদ্যের উৎস ও প্রস্তুত পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন।
- পানির উৎস স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন।
হাঁস-মুরগির টিকাদান কর্মসূচি
[সম্পাদনা]রোগ প্রতিরোধ করতে টিকা প্রদান করতে হয়। হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধেও বিভিন্ন সময়ে নানা টিকা দিতে হয়। কেবলমাত্র সুস্থ ও সবল বাচ্চা/পাখিকে টিকা দিতে হবে। টিকা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন- সিরিঞ্জ, সুঁচ, বিকার ইত্যাদি পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কোনো ক্রমেই জীবাণুমুক্ত করার জন্য জীবানুনাশক ব্যবহার করা যাবে না। আবার টিকা ব্যবহারের পর অতিরিক্ত টিকা পুড়িয়ে ফেলতে হবে অথবা জীবানুনাশক দ্বারা নষ্ট করে ফেলতে হবে। লাইভ ভাইরাস ভ্যাক্সিন চোখে ড্রপ দেয়ার সময় নিচে কাগজ বিছিয়ে নেয়া ভালো। অসাবধানতাবশত টিকা বীজের ফোঁটা কাগজে পড়তে পারে। পরবর্তীতে কাগজ পুড়িয়ে ফেলতে হয়। হ্যাচারি বা অন্যান্য উৎস হতে বাচ্চা সংগ্রহের সময় প্যারেন্ট মুরগিকে কী কী টিকা প্রদান করা হয়েছে তা জেনে নিতে হবে।
ব্রয়লার মুরগির জন্য মারেক্স, গামবোরো ও রানিক্ষেত রোগের ভ্যাক্সিন ব্যবহার করতে হয়। এলাকায় অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব না থাকলে ভ্যাকসিন ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এ বিষয়ে স্থানীয় পশুসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা বাঞ্ছনীয়।
বয়স | রোগের নাম | ভ্যাক্সিনের নাম | টিকা প্রদানের পদ্ধতি |
---|---|---|---|
১ দিন | মারেক্স রোগ | মারেক্স ভ্যাকসিন | চামড়ার নিচে ইনজেকশন |
২ দিন | গামবোরা রোগ | গামবোরা ভ্যাকসিন (লাইভ) | চোখে ফোঁটা (প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান না করা থাকলে) |
৩-৫ দিন | রানিক্ষেত রোগ | বি.সি.আর.ডি.ভি. | দুই চোখে ফোঁটা (প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান করা থাকলে ৭-১০ দিন বয়সে) |
৭ দিন | সংক্রামক ব্রংকাইটিস | আই.বি. | চোখে ফোঁটা |
১০-১৪ দিন | গামবোরা রোগ | গামবোরা ভ্যাকসিন | এক চোখে ফোঁটা |
২১-২৪ দিন | রানিক্ষেত রোগ | বি.সি.আর.ডি.ভি. | দুই চোখে ফোঁটা |
২৪-২৮ দিন | গামবোরা রোগ | গামবোরা ভ্যাকসিন | এক চোখে ফোঁটা |
৩৫ দিন | মুরগির বসন্ত | ফাউল পক্স ভ্যাকসিন | চামড়ার নিচে সুচ ফুঁটিয়ে |
৬০ দিন | রানিক্ষেত রোগ | বি.সি.আর.ডি.ভি. | চামড়ার নিচে/মাংসে ইনজেকশন |
৮০-৮৫ দিন | কলেরা | ফাউলকলেরা ভ্যাকসিন | চামড়ার নিচে/মাংসে ইনজেকশন |
১১০-১১৫ দিন | কলেরা | চামড়ার নিচে/মাংসে ইনজেকশন | চামড়ার নিচে/মাংসে ইনজেকশন |
১৩০-১৩৫ দিন | সংক্রামক ব্রংকাইটিস | সমন্বিত টিকা | চামড়ার নিচে/মাংসে ইনজেকশন |
টিকাদান ব্যর্থ হওয়ার কারণ
[সম্পাদনা]নিম্নোক্ত কারণে টিকা প্রদান কর্মসূচি ফলপ্রসু না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- টিকাবীজ সঠিকভাবে সংরক্ষিত না থাকলে
- ব্যবহারের সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে।
- প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশাবলী সঠিকভাবে পালন না করা হলে।
- সাত দিন বা তার কম সময়ের মধ্যে অন্য কোনো রোগের টিকা প্রদান করলে।
- দুপুর বেলা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে টিকা প্রদান করা হলে।
- টিকা বীজ সরাসরি সূর্যকিরণে থাকলে।
- টিকা বীজ তরলকৃত করার পর নির্ধারিত সময়ের পরে ব্যবহার করলে।
- ব্যবহৃত পানি পরিশুদ্ধ না হলে।
- ভ্যাকসিনগুলানোর জন্য নির্দিষ্ট ডাইলুয়েন্ট ব্যবহার না করলে।
- টিকা বীজ শরীরের মধ্যে পরিমাণমতো প্রবেশ না করলে।
- নির্দিষ্ট স্ট্রেইন এর টিকাবীজ ব্যবহার না করলে।
- টিকা প্রদানকারী পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত না থাকলে।
- টিকা প্রদানের সময় টীকা প্রদানের সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত ও পরিশুদ্ধ না থাকলে।
- গামবোরো রোগে অথবা মাইকো প্লাজামা রোগে আক্রান্ত হলে।