হাঁস-মুরগি পালন/লেয়ার মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা
ডিম পাড়া শুরু হওয়ার পর হতে (১৮ সপ্তাহ) ডিম পাড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের মুরগিকে লেয়ার মুরগি হিসাবে গণ্য করা হয়। বাস্তাবে ডিম পাড়া মুরগিকেই ডিম পাড়া মুরগি হিসেবে আমরা মনে করি। ডিম উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য তাই ১৮ সপ্তাহ বয়স হতে মুরগিকে লেয়ার খাদ্য দেয়া হয়।
লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]লেয়ার মুরগি ২০ সপ্তাহ বয়সে শতকরা ৫ ভাগ ডিম পাড়তে শুরু করে। ২১ সপ্তাহ বয়সে শতকরা ১০ ভাগ ডিম উৎপাদন শুরু হয়। ২৬ হতে ৩২ সপ্তাহ বয়সে সর্বোচ্চ ডিম উৎপাদন হয়। সর্বোচ্চ ডিম উৎপাদন শুরুর পর তা কিছুদিন স্থিতিশীল থাকে। এ সময় ডিমের আকার তেমন বড় হয় না। পরবর্তীতে উৎপাদন হার কমতে থাকে এবং ডিমের আকার বড় হতে থাকে। ৫০ সপ্তাহ বয়সের পর ডিমের আকার স্থিতিশীল হয় এবং ৪০ সপ্তাহ বয়সের পর ডিমের ওজন বৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়।
লেয়ার মুরগির খাদ্য প্রদান
[সম্পাদনা]ডিম উৎপাদন শুরু হওয়ার ২ সপ্তাহ পূর্ব থেকে লেয়ার মুরগির খাদ্যের মধ্যে শতকরা ২ ভাগ ঝিনুক চূর্ণ ব্যবহার এবং ২০ সপ্তাহ বয়স হতে লেয়ার খাবার প্রদান শুরু করতে হয়। ডিম উৎপাদন শুরুর ৪/৫ দিন পূর্ব থেকে পুলেটের খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ করতে থাকে এবং শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। আবার ডিম উৎপাদনের শুরুর পর ৪/৫ দিন পর্যন্ত দ্রুত খাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থেকে এবং পরবর্তীতে এই বৃদ্ধি কমে আসে।
লেয়ার মুরগির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় মুরগির আচরণ পরীক্ষা করতে হয়। আবহাওয়ার তারতম্য অনুসারে পানি পান করার পরিমাণ যাচাই করা প্রয়োজন। খাদ্য খাওয়া ও পানি পান করার পরিমাণের উপর মুরগির স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্ভর করে। ঘরে মুরগির মৃত্যু হলে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে হয় এবং দ্রুত মৃত মুরগির সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত টিকা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শক্রমে খাদ্য বা পানির সাথে ঔষধ সেবনের ব্যবস্থা নিতে হবে। মুরগির পালন পদ্ধতি অনুসারে মেঝের স্থান নির্ধারণ হতে হবে। আবার খামারের জৈব নিরাপত্তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
ডিম সংগ্রহ ও বাছাই ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]লেয়ার মুরগির ডিম পাড়ার জন্য বাক্সের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ডিমপাড়া বাক্সের ধরন হলো ডিম পাড়ার জন্য প্রতিটি খোপের স্থান ১২ ইঞ্চি x ১৪ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ১৪ ইঞ্চি। এই বাক্স একক বা কলোনি টাইপ হতে পারে। ৪-৫ টি মুরগির জন্য একটি খোপ ব্যবহার করা যাবে এই অনুপাতে ঘরে বাক্স দিতে হয়। বাক্সে যথেষ্ট ভেন্টিলেশন যুক্ত কিন্তু অন্ধকার হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাক্সের সম্মুখে মুরগি উঠার জন্য প্লাটফরম থাকবে। প্লাটফরম তুলে দিলে বাক্সে ঢোকার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন প্রকার ডিম পাড়ার বাক্সব্যবহার করা হয়। ডিম উৎপাদন শুরু করার ১ সপ্তাহ আগে ঘরে ডিমের বাক্স স্থাপন করতে হয় এবং ডিমের বাক্সের দরজা দিনের বেলায় খোলা রাখতে হয়। বাক্সের নিচে ৬ ইঞ্চি হতে ১ ফুট উঁচু থাকা প্রয়োজন, অন্যথায় লিটার পরিচর্যায় অসুবিধা হয়। ডিমের বাক্সের ভিতর ডিম পাড়ার জন্য আরামদায়ক বিছানা অর্থাৎ লিটার সামগ্রী ব্যবহার করতে হয়। মুরগিকে ডিমের বাক্সের ভিতর ডিম পাড়ার জন্য অভ্যস্ত করতে পূর্ব থেকে ১টি ডিম স্থাপন করলে ভালো হয়। ডিমের বাক্স ঘরের ভিতর কিছুটা অন্ধাকার স্থানে স্থাপন করা উচিত।
ডিম সংগ্রহ
[সম্পাদনা]শীতের সময় সকাল ১০ থেকে ১১টা এবং বিকাল ৪টা থেকে ৪.৩০ টার সময় ডিম সংগ্রহ করতে হয়। গরমের সময় সকাল-বিকাল ছাড়াও দুপুরে আর একবার ডিম সংগ্রহ করতে হয়। সন্ধ্যার সময় বাক্সের ভিতর কোন ডিম না রেখে সকালে দরজা খোলার সময় ১টি করে ডিম রাখা হয়।
ডিম বাছাই ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]ডিম সংগ্রহের সময় ডিমের ট্রেতে ডিম সংগ্রহ করা উচিত। ডিম সংগ্রহের সময় স্বয়ক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে একটি পরীক্ষা করা উচিৎ। সংগ্রহের সময় ফাটা ডিম আলাদা করতে হবে। ফাটা ডিম সাথে সাথে পৃথক না করলে ট্রে বা ঝুড়ির অন্যান্য ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ডিম সংগ্রহের সময় ডিমের মোটা মাথা উপরের দিকে এবং গুরুত্বপূর্ণ মাথা নিচের দিকে থাকবে। ডিমের খোসা পাতলা হলে মুরগির খাদ্যের পুষ্টি মান পরীক্ষা করাতে হয়। ডিমপাড়া বাক্সের বিছানা প্রতিদিন পরিষ্কার ও প্রয়োজনে নতুন লিটারসামগ্রী যোগ করতে হবে। অসুস্থ ও অনুৎপাদনশীল মুরগিকে পৃথক করতে হবে।
ডিমের গ্রেডিং
[সম্পাদনা]- ডিম বাজার জাত করার পূর্বে ডিম বাছাই ও গ্রেডিং করতে হয়।
- ডিমের আকার ও ওজন অনুসারে ডিম গ্রেডিং করতে হয়।
- দুই কুসুম বিশিষ্ট ডিম গুলোকে আলাদা করতে হয়।
ডিম বাজারজাতকরণ
[সম্পাদনা]উন্নত মানের পুলেট তৈরি করার লক্ষ্যে বাচ্চা পালন থেকে শুরু করে ডিম পাড়ার শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রকার ত্রুটি করা যাবে না। ঠিকমতো ব্রুডডিং, টিকা প্রদান, খাদ্য ও পানি সরবরাহ, ঘরের পরিচর্যা, মুরগি ছাঁটাই প্রক্রিয়া পালন করতে হবে। কোনো অবস্থাই মুরগিকে ধকলের সম্মুখীন হতে দেয়া যাবে না।
খামারের নির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে মুরগি ও ডিম বাজার জাত করতে হয়। সঠিক সময়ে বাজার জাত করতে না পারলে খামারের অনেক ক্ষতি হয়। অনেক সময় ডিম বেশি পুরনো হয়ে গেলে পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাতে আর্থিক যথেষ্ট ক্ষতি হয়। অনেক সময় ফুটানো ডিমের চাহিদা থাকে। ফুটানো ডিম বিক্রয় করতে হলে মুরগির সাথে আনুপাতিক হারে মোরগ রাখতে হবে। ফুটানো ডিমের দাম অবশ্যই খাবার ডিমের চেয়ে অনেক বেশি হবে। স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাপনানুসারে ডিম বাজার জাত করাই শ্রেয়।