বিষয়বস্তুতে চলুন

হাঁস-মুরগি পালন/মুরগির বাসস্থান

উইকিবই থেকে

মুরগি থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন পেতে হলে তাদের জন্য আরামদায়ক উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। মুরগিকে আভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ সব ধরনের শত্রু হতে একমাত্র নিরাপদ বাসস্থান রক্ষা করতে পারে। মুরগির ঘর এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন ঘরের ভিতর অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকে।

যেমন:

  • ঘরের ভিতর উৎপাদিত বিষাক্ত গ্যাস অপসারিত হয়;
  • ঘরে ব্যবহৃত লিটার আর্দ্রতামুক্ত থাকে;
  • ঘরের ভিতর পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ বাতাস চলাচল করতে পারে;
  • এক ঘর হতে অন্য ঘরের মধ্যে জীবাণু সংক্রমণ না হতে পারে;
  • সব ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে মুরগি রক্ষা পায়।

মুরগির বসবাস ও উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ঘর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

উন্মুক্ত ঘর

[সম্পাদনা]

এই ঘর প্রাকৃতিক আলো বাতাস চলাচলের জন্য চারদিকে অথবা উত্তর দক্ষিণে উন্মুক্ত রাখা হয়। এই প্রকৃতির ঘর পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বি ভাবে স্থাপন করা হয়। উন্মুক্ত ঘর নির্মাণ খরচ কম। পশুপাখির প্রবেশ ও আক্রমণ হতে রক্ষার জন্য উন্মুক্ত স্থান তারের জাল দিয়ে ঘিরে বেড়া দিতে হয়। ঘরের ভিতর লিটার অথবা মাঁচা ব্যবহার করা যায়। এই প্রকৃতির ঘর সর্বাধিক ৩০ ফুটের (৯.০ মিটার) বেশি প্রশস্ত হলে ভেন্টিলেশন সমস্যা হয়। ঘরের লিটার ব্যবহার করলে খোলা স্থানের নিচের অংশ ১ হতে ১.৫ ফুট (৩০-৪৫ সে.মি. উঁচু দেয়াল থাকে মাঁচা বা খাঁচা ব্যবহার করলে কোনো দেয়াল থাকে না। দোচালা ঘরের চালের ছাচ ৮ ফুট (২.৪ মিটার) এবং উভয় চালের শীর্ষ দেশ ১৪ ফুট (৪.২ মিটার) উঁচ হয়। ছোট ঘর হলে ছাদ ৬ ফুট এবং শীর্ষদেশ ১২.০ ফুট হতে পারে। বৃষ্টির ছাট ঘরে প্রবেশ বন্ধ করার জন্য চালের ছাট ২.৫ হতে ৪ ফুট বাড়তি রাখা হয়। কংক্রিট ছাট হলে বহুতল ঘর নির্মাণ করা যায়। ঘরের দৈর্ঘ্য ইচ্ছেমতো লম্বা করা যায়। ঘরে। স্বয়ংক্রিয় খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলে সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক্রমে ঘরের দৈর্ঘ্য তৈরি করতে হয়। ঘরে বাতাস চলাচলের গতি সারের জন্য বাতাসের অনুকূলে ব্লেয়ার বা প্যাডেইল ফ্যান ব্যবহার করা হয়। খামারের একাধিক শেষ থাকলে পরস্পর শেষের দূরত্ব কমপক্ষে শেডের গ্রন্থের ১.৫ গুণ হওয়া প্রয়োজন। ঘরের মেঝে ইঁদুর প্রতিরোধক হওয়া উচিত।

পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘর

[সম্পাদনা]

পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘরে মুরগির বয়স ও উপযোগিতা অনুসারে ঘরে তাপ আর্দ্রতা ও আলোক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কৃত্রিম ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা থাকার কারণে প্রয়োজনমতো ঘরের গ্রন্থ ও দৈর্ঘ্য কমবেশি করে ঘর নির্মাণ করা যায়। পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘরে খাদ্য ও পানি প্রদান যান্ত্রিক পদ্ধতিতে করা সহজ। এই ঘরে পালিত মুরগির মধ্যে রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা কম, ফলে মৃত্যু হারও কম। তাই, মুরগি অনেক বেশি উৎপাদশীল হয়।এছাড়াও খাদ্য রূপান্তর হার অনেক বেশি হয়। মুরগি অত্যধিক আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। খামারে কম দূরত্বে একাধিক শেড নির্মাণ করা যায়। তবে ঘরের ভিতর থেকে দূষিত বাতাস নির্গমণ পথ বরাবর কোনো শেড নির্মাণ করা উচিত নয়। তবে এ ধরণের ঘর নির্মাণ খরচ বেশি। এছাড়াও যান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি নির্ভরশীল থাকতে হয়। কোনো কারণে ১৫ মিনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে মুরগি মারা যায়।

হাইরাইজ ঘর

[সম্পাদনা]

এই ঘর দ্বিতল বিশিষ্ট হয়। উপরের তলায় মুরগি থাকে এবং নিচ তলায় মুরগির পরিত্যক্ত মল জমা হয়। প্রতি উচ্চতা ৭ ফুট হিসেবে মোট ১৪ ফুট উঁচু হয়। নিচ তলায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে যাতে মন ভিজে না যায় তার জন্য নিচতলার মেঝে ১ ফুট উঁচু তৈরি দেয়াল করা হয়। এই ঘর উন্মুক্ত অথবা পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। প্রতি ব্যাচ মুরগি পালন অথবা একাধারে ৫-৬ বছর মুরগি পালন শেষে নিচে জমে থাকা মল পরিষ্কার করা যায়। উন্নত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার কারণে পরিত্যক্ত মল দ্রুত শুকায়, ফলে দুর্গন্ধ হয় না। ঘনঘন মল পরিষ্কার করার প্রয়োজন না থাকায় শ্রমের সাশ্রয় হয়। এই ঘরে মাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন সহজ। তবে এই ঘরে লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পালন করা যায় না। এছাড়াও এ ঘর নির্মাণে খরচ বেশি।

খামারে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি

[সম্পাদনা]

খামারে মুরগি পালনের সময়ে নানান উপকরণ ও সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়। এসব উপকরণের মাঝে রয়েছে ব্রুডার, পানির পাত্র, খাবার পাত্র, ক্যাচিং হুক ইত্যাদি।

  1. ব্রুডার: এর মাধ্যমে মুরগির ছানাকে তাপ দেওয়া হয়। ব্রুডারের তিনটি অংশ: ক) হোভার, খ) ব্রুডার হিটার, গ) ব্রুডার গার্ড
  2. পানির পাত্র: ছোট বাচ্চা, বাড়ন্ত বাচ্চা ও বিভিন্ন বয়সের মুরগির জন্য আজকাল বিভিন্ন ধরনের পানির পাত্র পাওয়া যায়। যেমন: ঝর্ণা ড্রিংকার, নিপল ড্রিংকার, কাপ ড্রিংকার, বেলটাইপ ড্রিংকার, ট্রাফ ড্রিংকার।
  3. খাবার পাত্র
    1. প্রথম খাবার পাত্র: কাগজ, চিক বক্সের ঢাকনি, প্লাস্টিক, থালা ইত্যাদি।
    2. দ্বিতীয় খাবার পাত্র: প্লাস্টিক বা কাঠের তৈরি ট্রাক ফিডার, গ্রিল সংযুক্ত ট্রাফ ফিডার, প্লাস্টিকের তৈরি টিউব ফিডার, স্বয়ংক্রিয় ফিডার ইত্যাদি।
  4. মুরগি ধরার জন্য (ক্যাচিং) হুক: ক্যাচিং হুক মুরগির পায়ে আটকে মুরগি ধরা হয়। ১৪ গেজ তারের সাহায্যে এ হুক তৈরি করা যায়।
  5. মুরগি ধরার হার্ডল: হার্ডল স্থানান্তর যোগ্য এক ধরনের বেড়া। হার্ডলের সাহায্যে মুরগিকে একত্রে জমা করে ধরা হয়। হার্ডলের গায়ে দরজা থাকে। দরজার ভেতর হাত ঢুকিয়ে জমা করা মুরগি করতে সুবিধা হয়। হার্ডল সাধারণত প্লাস্টিকের সাহায্যে তৈরি করা হয়। এর আকার ৪ ফুট থেকে ৫ ফুট অথবা সুবিধামতো মাপের পাওয়া যায়। একাধিক হার্ডল পরস্পর সংযুক্ত করে প্রয়োজন মতো একে বড় করা যায়।