হাঁস-মুরগি পালন/মুরগির আলোক ব্যবস্থাপনা
হাঁস-মুরগির জন্য আলোক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চা আলোর সাহায্যে পানি পান ও খাদ্য চিনে খেতে পারে। আলো পুলেটের যৌন পরিপূর্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম উৎপাদনে হরমোন নিঃসরণ ঘটায়। আবার খাদ্য রূপান্তরে আলো ভূমিকা রাখে। তাই, সঠিক আলোক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনিয়ন্ত্রিত আলোক সময়ের অসুবিধা
[সম্পাদনা]পুলেটের জন্য অলোক সময় বেশি হলে যৌন পরিপক্কতা তাড়াতাড়ি হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বয়সের পূর্বে ডিম দিতে শুরু করে। পুলেটের ওজন বেশি হয়। ডিমের আকার ছোট হয়। ডিম উৎপাদন হার হ্রাস পায়। ডিম উৎপাদন সময়কাল কমে যায়। সর্বোচ্চ ডিম উৎপদন সকয়কালের পরিবর্তন হয়। ডিমের থলি প্রলাপসের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। পরস্পরের মধ্যে ক্যানাবলিজম সৃষ্টি হয়।
পুলেটের যৌন পরিপূর্ণতায় আলোক সময় নিয়ন্ত্রণ
[সম্পাদনা]ব্রুডডিং হতে শুরু করে ক্রমান্বয়ে পুলেটের জন্য আলোক সময় কমাতে হয়। উন্নতজাতের পুলেট উৎপাদনের জন্য বাড়ন্তবয়সে ৮ ঘণ্টা আলোক সময় প্রয়োজন। এই সময় শুধুমাত্র পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘরে প্রদান সম্ভব। উন্মুক্ত ঘরে রাত্রে অন্ধকার এবং দিনের আলো ব্যবহার করা হয়। উন্মুক্ত ঘরে পুলেটের জন্য সর্বনিম্ন আলোক সময় প্রদান করতে হলে মৌসুমী বাচ্চা পালন করা যায়।
ডিম উৎপাদনে আলোক সময় নিয়ন্ত্রণ
[সম্পাদনা]- আলোর তীব্রতা, আলোক দৈর্ঘ্য, এবং প্রত্যহ আলোক সময়ের পরিবর্তন মুরগির ডিম উৎপাদন প্রভাবিত করে।
- আলোকরশ্মি মুরগির চোখের মণিতে প্রতিফলিত হলে মস্তিকের পিটুইটারী গ্রন্থিতে জৈবিক অনুভূতি সৃষ্টি হয়। ফলে ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন নিঃসৃত হয়।
- ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন ডিম্বাশয়ের ডিম্ব কোষ পরিপক্ক হতে সাহায্য করে। ডিম্ব কোষ পরিপক্ক হলে পিটুইটারী গ্রন্থি হতে লুটিনাইজিং হরমোন নিঃসৃত হয়ে ডিম্বাণুর স্খলন ঘটায়।
- মস্তিকের পিটুইটারী গ্রন্থিতে এই সংবেদনশীল প্রক্রিয়া সংঘটনের জন্য কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা আলোক সময় প্রয়োজন।
- আলোক সময় ১২ ঘণ্টার উর্দ্ধে বাড়ানো হলে পুনরায় কমানোর পর ডিম উৎপাদনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ কারণে আলোক সময় বৃদ্ধি করা হলে কোনোক্রমেই কমানো যাবে না।
- মৌসুমের বিভিন্ন সময়ে আলোক সময়ের পরিবর্তন হয়। যেমন- ২৩শে জুন দিনের দৈর্ঘ্য ১৪ ঘণ্টার উর্দ্ধে এবং ২৩ ডিসেম্বর ১০ ঘণ্টার নিচে।
- মৌসুমের দীর্ঘ আলোক সময় ধরে লেয়ার মুরগির জন্য আলোক সময় নির্ধারণ করা হয়।
- লেয়ার মুরগির জন্য ১৫-১৬ ঘণ্টা আলোক প্রদানের জন্য দিনের আলোক দৈর্ঘ্যের সাথে কৃত্রিম আলো সংযোজন করতে হয়।
- দিনের আলো যদি ১২ ঘণ্টা হয় তার সাথে সন্ধ্যার পর অথবা ভোরের পূর্বে ৪ ঘণ্টা কৃত্রিম আলোক সময় যোগ করেত হয়। ৪ ঘণ্টা আলোক সময় সন্ধ্যা ও ভোরের পূর্বে ভাগ করেও দেয়া যায়।
আলোর তীব্রতা
[সম্পাদনা]বাচ্চা, পুলেট ও লেয়ার মুরগি এবং ব্রয়লারের জন্য আলোর তীব্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মুরগির বয়স ও উপযোগিতা অনুসারে আলোক রশ্মির তীব্রতা ভিন্নতর হয়। আলোর তীব্রতা বেশি হলে ক্যানবলিজম বৃদ্ধি পায়, খাদ্য রূপান্তর হার হ্রাস পায়, মুরগির চোখে যন্ত্রণা হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়।
আলোর তীব্রতা এমন পর্যায়ে থাকা উচিত যেন মুরগির পানি পান ও খাদ্য চিনে খেতে অসুবিধা না হয় এবং তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবস্থান করতে পারে।
থাম্ব রুল অনুসারে ১ ওয়াট ইনকানডিসেন্ট বাল্ব থেকে ১২.৫৬ লমেন আলো বিচ্ছুরিত হয় এবং ১ ওয়াট ফ্লোরেসেন্ট বাল্ব থেকে ইনকানডিসেন্ট বাল্বের তুলনায় ৩ গুন বেশি আলো বিচ্ছুরিত হয়। ১ ওয়াট ফ্লোরেসেন্ট বাল্ব (১২.৫৬ x ৩ ) =৩৭.৬৮ লুমেন।
ইনকানডিসেন্ট বাল্ব লিটার ঘরে ৭-৮ ফুট (২.১০ মিটার থেকে ২.৪ মিটার) উঁচুতে স্থাপন করা হয়। ঘরের আয়তন হিসাব করে ইনকানডিসেন্ট বাল্বের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ ওয়াটের ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব ব্যবহার করলে সমপরিমাণ আলোর লুমেন পাওয়া যায়।
ব্যবহৃত বাল্বের শক্তি | ঘরের মেঝে থেকে বাল্বের উচ্চতা (খাঁচাযুক্ত ঘরে) | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
০.৫-১.০ ফুট ক্যান্ডেল লুমেন | ১.০-১.৫ ফুট ক্যান্ডেল লুমেন | |||||||
রিফ্লেক্টরসহ | রিফ্লেক্টর বাদে | রিফ্লেক্টরসহ | রিফ্লেক্টর বাদে | |||||
ওয়াট | ফুট | মিটার | ফুট | মিটার | ফুট | মিটার | ফুট | মিটার |
২৫ | ৬.৫ | ২.০ | ৪.৫ | ১.৪ | ৪.৫ | ১.৪ | ৩.০ | ০.৯ |
৪০ | ৯.০ | ২.৭ | ৬.৫ | ২.০ | ৬.৫ | ২.০ | ৪.৫ | ১.৪ |
৬০ | ১৪.০ | ৪.৩ | ১০.০ | ৩.১ | ১০.০ | ৩.১ | ৭.০ | ২.১ |
৭৫ | ১৫.৫ | ৪.৭ | ১০.৫ | ৩.২ | ১০.৫ | ৩.২ | ৭.৫ | ২.৩ |
১০০ | ১৯.০ | ৫.৮ | ১৩.৫ | ৪.১ | ১৩.৫ | ৪.১ | ৯.৫ | ২.৯ |
লেয়ার মুরগির ঘরে আলোকদান কর্মসূচি
[সম্পাদনা]০-৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত
[সম্পাদনা]বয়স | দৈনিক আলোক সময় | প্রতি বর্গফুট স্থানে ওয়াটের পরিমাণ ও লুমেন | ||
---|---|---|---|---|
পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘর | উন্মুক্ত ঘর | ওয়াট | ফুট ক্যান্ডেল | |
১-৩ দিন | ২৪ ঘণ্টা | ২৪ ঘণ্টা | ০.৫৬ | ৩.৪৫ |
৪-৬ দিন | ২৩ ঘণ্টা | ২৩ ঘণ্টা | ০.৫০ | ৩.০৭ |
৭-৮ দিন | ২৩ ঘণ্টা | ২৩ ঘণ্টা | ০.৩৭ | ২.৩০ |
২ সপ্তাহ | ২৩ ঘণ্টা | ২৩ ঘণ্টা | ০.২৫ | ১.৫৪ |
২-৩ সপ্তাহ | ২২ ঘণ্টা | ২২ ঘণ্টা | ০.২৫ | ১.৫৪ |
৩-৪ সপ্তাহ | ১৮ ঘণ্টা | ১৮ ঘণ্টা | ০.১৯ | ১.১৫ |
৪-৫ সপ্তাহ | ১৬ ঘণ্টা | ১৬ ঘণ্টা | ০.১৯ | ১.১৫ |
৫-৬ সপ্তাহ | ১৪ ঘণ্টা | ১৪ ঘণ্টা | ০.১৯ | ১.১৫ |
পুলেট ও লেয়ার মুরগির ঘরে আলোকদান
[সম্পাদনা]বয়স | দৈনিক আলোক সময় | প্রতি বর্গফুটে ওয়াটের পরিমাণ ও লুমেন | ||
---|---|---|---|---|
পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘর | উন্মুক্ত ঘর | ওয়াট | ফুট ক্যান্ডেল | |
৬-৭ সপ্তাহ | ১২ ঘণ্টা | রাতে অন্ধকার | ০.১৯ | ১.১৬ |
৭-৮ সপ্তাহ | ১০ ঘণ্টা | |||
৮-১০ সপ্তাহ | ৯ ঘণ্টা | ০.০৯৫ | ০.৫৮ | |
১০-১১ সপ্তাহ | ৮ ঘণ্টা | |||
১১-১২ সপ্তাহ | ||||
১২-১৩ সপ্তাহ | ||||
১৩-১৪ সপ্তাহ | ||||
১৪-১৫ সপ্তাহ | ||||
১৫-১৬ সপ্তাহ | ||||
১৬-১৭ সপ্তাহ | ||||
১৭-১৮ সপ্তাহ | ৯ ঘণ্টা | ০.১৯ | ১.১৫ | |
১৮-২০ সপ্তাহ | ১১ ঘণ্টা | ১১ ঘণ্টা | ||
২০-২১ সপ্তাহ | ১২ ঘণ্টা | ১২ ঘণ্টা | ০.২৫ | ১.৫৪ |
২১-২২ সপ্তাহ | সাড়ে ১২ ঘণ্টা | সাড়ে ১২ ঘণ্টা | ||
২২-২৩ সপ্তাহ | ১৩ ঘণ্টা | ১৩ ঘণ্টা | ||
২৩-২৪ সপ্তাহ | সাড়ে ১৩ ঘণ্টা | সাড়ে ১৩ ঘণ্টা | ||
২৪-২৫ সপ্তাহ | ১৪ ঘণ্টা | ১৪ ঘণ্টা | ||
২৫-২৬ সপ্তাহ | সাড়ে ১৪ ঘণ্টা | সাড়ে ১৪ ঘণ্টা | ||
২৬ সপ্তাহের উর্ধ্বে | ১৫ ঘণ্টা | ১৬ ঘণ্টা |
ব্রয়লার মুরগির ঘরে আলোকদান কর্মসূচি
[সম্পাদনা]বয়স | দৈনিক আলোক সময় | প্রতি বর্গফুট স্থানে ওয়াটের পরিমাণ ও লুমেন | ||
---|---|---|---|---|
পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘর | উন্মুক্ত ঘর | ওয়াট | ফুট ক্যান্ডেল | |
১-৩ দিন | ২৪ ঘণ্টা | ২৪ ঘণ্টা | ২.৫৬ | ৩.৪৫ |
৪-৭ দিন | ২৩ ঘণ্টা | ২৩ ঘণ্টা | ২.৫০ | ৩.০৭ |
৮-১৪ দিন | ২০ ঘণ্টা | ২০ ঘণ্টা | ০.০৫৭ | ০.০৩৫ |
১৫-২১ দিন | ১৮ ঘণ্টা | ১৮ ঘণ্টা | ০.০৫৭ | ০.০৩৫ |
২২-২৮ দিন | ১৮ ঘণ্টা | রাতে ৮ ঘণ্টা | ০.০৫৭ | ০.০৩৫ |
২৯-৩৫ দিন | ১৮ ঘণ্টা | রাতে ৮ ঘণ্টা | ০.০৫৭ | ০.০৩৫ |
৩৬-৪২ দিন | ১৮ ঘণ্টা | রাতে ৮ ঘণ্টা | ০.০৫৭ | ০.০৩৫ |