হাঁস-মুরগি পালন/ব্রয়লার মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা
ব্রয়লার পালন করার জন্য অল-ইন-অল আউট কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘরে মালটিপল রিয়ারিং কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচির অধীনে চক্রাকারে এশাধিক শেডে বিভিন্ন বয়সের ব্রয়লার পালন করলে সারা বৎসর উৎপাদন ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়।
ব্রয়লার কাম গ্রোয়ার হাউজে ব্রয়লার পালন করা হয়। ঘরের আয়তন অনুসারে বাচ্চা প্রতি ১ বর্গফুট হিসেবে বাচ্চার সংখ্যা নির্ধারণ করতে হয়। বাণিজ্যিক খামারে ব্রয়লার ঘরের আয়তন এমন হওয়া উচিত যেখানে একজন পরিচর্যাকারীর সার্বক্ষণিক কর্মসময়ের পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। অন্যথায় শ্রমের অপচয় হয়। একজন পরিচর্যাকারী দৈনিক ৫০০০ বাচ্চার পরিচর্যা করতে পারে। যেখানে আধুনিক ব্যবস্থার অভাব ও দক্ষতা কম সেখানে সার্বাধিক ২,৫০০ বাচ্চা পালন করার জন্য ১ জন পরিচর্যাকারী প্রয়োজন।
অল-ইন-অল আউট কর্মসূচির অধীনে প্রতি ব্যাচ ৫ সপ্তাহ হিসেবে একই শেডে সর্বোচ্চ ৭ ব্যাচ ব্রয়লার পালন করা যায়। প্রতি ব্যাচ ব্রয়লার উৎপাদন শেষে ২/৩ সপ্তাহ ঘর খালি রাখলে মোট ১৭ সপ্তাহ ঘর খালি থাকে। ঘর খালি সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, জীবাণুমুক্তকরণ, সংস্কার ইত্যাদি কাজ করা হয়। পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘরে মাল্টিপল কর্মসূচি অনুসারে বিভিন্ন শেডের ধারণ ক্ষমতা হিসেব করে প্রতি ব্যাচে বাচ্চার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘর ছাড়া উন্মুক্ত ঘরে মালটিপল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত নয়।
ব্রয়লারের উদরে চর্বি গঠন
[সম্পাদনা]ব্রয়লার খাদ্যে চর্বি/তৈল উপকরণ হার বৃদ্ধি করা হলে উদর বা তলপেটে চর্বি জমতে শুরু করে। খাদ্যে বিপাকীয় শক্তি কমানো হলে আমিষ ও অন্যান্য পুষ্ট উপাদান গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধিপায়। কিন্তু খাদ্য রূপান্তর হার কমে যাওয়ার ফলে তলপেটের চর্বির স্তর বড় হয়। এই স্তর বৃদ্ধির পরিমাণ খাদ্য রূপান্তর হারের সাথে সম্পৃক্ত। কারণ মাংস বৃদ্ধির তুলনায় চর্বির স্তর বৃদ্ধির জন্য বেশি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। খাদ্য রূপান্তর হার কম হলে দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। খাদ্য রূপান্তর হার বৃদ্ধির জন্য সমাপ্তি খাদ্যে বিপাকীয় শক্তির হার বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বছরের বিভিন্ন সময় বাণিজ্যিক ব্রয়লার উৎপাদন, শারীরিক বৃদ্ধি ও খাদ্য রূপান্তর হার বৃদ্ধির জন্য খামারীদেও প্রচেষ্টার অন্ত থাকে না। এই প্রচেষ্টার ফলে ব্রয়লারের দেহে চর্বির পরিমাণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় এবং সমস্ত দেহে বন্টন হয় তলপেটে চর্বি বৃদ্ধির পরিমাণ এত ব্যাপক যে প্রক্রিয়াজাত করার সময় চর্বি বাদ দিতে হয়। সাপ্তাহিক ওজন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা খাদ্য ও ওজন বৃদ্ধির পরিমাণ হাঁস-মুরগির খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক অধ্যায় অনুসারে করা বাঞ্চনীয়।
ব্রয়লার প্রক্রিয়াজাতকরণ
[সম্পাদনা]ব্রয়লার প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজারে উন্নত মানের মাংস নিশ্চিত করা। এই ধরনের প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংসে কোনো রকমের ত্রুটি না থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয় যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, রোগজীবাণুমুক্ত, সুষমভাবে কাটা ইত্যাদি বিষয়াদি নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যেই প্রক্রিয়া জাতকরণ করা হয়।
ব্রয়লার প্রক্রিয়াজাত করার জন্য ধরার ২/৩ ঘণ্টা পূর্ব থেকে খাদ্য বন্ধ রাখতে হয়। ফলে পরিপাকতন্ত্রের সালমোনিলা জীবাণুর পরিবৃদ্ধি কমে যায়। খাদ্য বন্ধ রাখার ফলে ব্রয়লার মুরগি কিছুটা ওজন হারায়। ব্রয়লার মুরগি দুই পর্যায়ে অনাহারে থাকে। যেমন- খামারে অবস্থানকালে ধরার পূর্ব এবং খামার থেকে প্রক্রিয়াজাত কারখানায় পৌঁছানো পর্যন্ত। ২ পর্যায়ে মোট ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার অতিরিক্ত অভুক্ত রাখা উচিত নয়। অভুক্ত সময়ে ২ থেকে ৩ ভাগ ওজন হারানো উচিত। বেশি সময় অভুক্ত থাকলে বেশি পরিমাণ ওজন হারাবে ইহা ব্রয়লারের গুণগত মান নষ্ট করে। মুরগি ধরে খাঁচায় ঢোকানোর পূর্ব পর্যন্ত পানি প্রদান করা হয়। এরপর আর পানি প্রদান করা হয় না। প্রক্রিয়াজাত করার পর মাংস পরিচর্যা ও চিলিং করার সময় ২/৩ অংশ ওজন উন্নত হয়। খাঁচায় বা ক্রেটের ভিতরে ঢোকানোর পর প্রক্রিয়াজাত করা পর্যন্ত আর পানি প্রদান করা হয় না।
ব্রয়লার মাংস থেতলানো বা বিবর্ণতা
[সম্পাদনা]ব্রয়লার মাংস উৎপাদন এক জিনিস এবং মাংসের গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে বাজারজাতকরণ আলাদা জিনিস। ব্রয়লার ধরা বা হাতানোর সময় অত্যন্ত সতকর্তা অবলম্বন না করলে মাংস থেতলানো হয়, বিবর্ণতা সৃষ্টি হয় এবং মাংসের গুণগত মান ক্ষুন্ন হয়। ব্রয়লার ধরার জন্য পরিচর্যাকারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও কলাকৌশল বিষয়ে অবহিত করতে হয়। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রয়ের ৫ দিন পূর্বে ব্রয়লার খাদ্যের সাথে কাঁকর প্রদান বন্ধ রাখতে হয়। ফিনিশার খাদ্যের সাথে সমস্ত প্রকার ঔষধ ব্যবহার প্রক্রিয়াজাত করার ৫ দিন পূর্বে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। রাত্রে যখন মুরগি শান্তথাকে তখন ধরতে হয় এবং ক্রেট বা খাঁচার মধ্যে ভরতে হয়। মুরগি ধরার ২ ঘণ্টা পূর্বে খাদ্য প্রদান বন্ধ রাখতে হয়।
মাংস থেতলানো ও বিবর্ণতা পরিহার ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]- লিটার ভিজতে অথবা দলা বাধতে দেয়া যাবে না।
- লিটারের অর্দ্রতা শতকরা ২৫-৩০ ভাগের বেশি বা কম রাখা যাবে না।
- ঘরে এমোনিয়া সৃষ্টি হতে দেয়া যাবে না।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- ব্রয়লার মুরগি প্রতি যথেষ্ট পরিমাণ মেঝেতে স্থান থাকতে হবে।
- মুরগি ধরা, ক্রেটে ভরা পরিবহন করা, ক্রেটে থেকে বের করা, জবেহ করা ইত্যাদি সময়ে অতিযত্ন ও সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।
- মুরগি ধরার পূর্বে উত্তেজিত করা যাবে না। উত্তেজিত হলে খাবার পাত্র, পানির পাত্র, দেয়াল ইত্যাদির সাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং দেহের চামড়া হুড়ে যায়, দেহ থেতলে যায়, ফলে মাংস বিবর্ণ হয়।
- ব্রয়লার পরিবহনের জন্য ট্রাক অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত ঘরের কাছে নেয়া উচিত নয়। দিনের আলোয় ট্রাকের শব্দে মুরগি উত্তেজিত হয়।
- ব্রয়লার মুরগি ধরার কৌশল সম্বন্ধে পরিচর্যাকারীদের সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হয়।
- মুরগি ধরার সময় অন্ধকারের পূর্বেই ঘরের সমস্ত সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলতে হয়।
- মুরগি ধরার সময় ঘরে ডিমলাইট অথবা লাল অল্প পাওয়ারের লাইট ব্যবহার করতে হয়। দিনের বেলা মুরগি ধরার প্রয়োজন হলে ঘর অন্ধকার করে নিতে হয়।
- মুরগি ধরার পর এক সাথে বেশি বহন করা উচিত নয়। একসাথে বেশি মুরগি ধরে বহনের সময় দেহ থেতলে যায় ও মাংস বিবর্ণ হয়।
- অত্যন্ত সর্তকর্তার সাথে ক্রেট বা কুপের ভিতর মুরগি ঢোকাতে হয়।
- ট্রাকের উপর সতকর্তার সাথে মুরগির ক্রেট বা কুপ সাজাতে হবে। কখনও জোরে ক্রেটে রাখা অথবা ক্রেট ফেলে দেয়া যাবে না।
- মুরগির চামড়া ছিঁড়ে যাওয়া, দেহ থেতলানো এবং মাংস বিবর্ণ হওয়ার কারণগুলো অত্যন্ত যত্নের সাথে অবলোকন করতে হয় এবং সেই মতো ব্যবস্থা নিতে হয়।