বিষয়বস্তুতে চলুন

রন্ধনপ্রণালী:মাইক্রোওয়েভ রন্ধন

উইকিবই থেকে

মাইক্রোওয়েভ রন্ধন হচ্ছে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার রান্না করা। এটি প্রায়শই ফোটানো বা সেঁকার মতো সমজাতীয় পদ্ধতির চেয়ে সময়সাশ্রয়ী এবং আরও সুবিধাজনক। উদাহরণস্বরূপ, অনেক সবজি সিদ্ধ বা ভাপে রান্না করার পরিবর্তে মাইক্রোওয়েভে রান্না করা যেতে পারে।

অন্যান্য রান্না করার যন্ত্রের মতো এটিরও কিছু যত্ন নিতে হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময়ের জন্য মাইক্রোওয়েভ করা থাকলে সেটিকে নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল এবং অন্যান্য ধাতব জিনিসপত্র কখনোই মাইক্রোওয়েভে রাখা উচিত নয়। খাবারে টক্সিন বা বিষক্রিয়া এড়াতে সবসময় "মাইক্রোওয়েভ নিরাপদ" লেবেলযুক্ত একটি পাত্র ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে ওভেনে রান্না করা খাবারের উপর ধাতব পদার্থের সজ্জা খাবারটি নষ্ট করতে পারে এবং খাবারটিকে বিকৃত করতে পারে।

মাইক্রোওয়েভ করার পরে খাবার প্রায়শই অত্যন্ত গরম থাকে, তাই সেগুলো সরানোর কাজটি যত্নসহকারে করুন।

সার্বিক ধারনা[সম্পাদনা]

মাইক্রোওয়েভ রান্নার বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো প্রথম দেখায় প্রচলিত ওভেনে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মতোই। সব পদ্ধতিগুলোই মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ব্যবহৃত হয়, হোক সেটি একটি সাধারণ মাইক্রোওয়েভ গরম করার যন্ত্র, অথবা যেটিতে স্টিমিং বা ভাপে রান্না করা, ক্রিস্পিং বা মচমচে করে ভাজা বা গ্রিলিংয়ের অতিরিক্ত কৌশলগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

যদিও মাইক্রোওয়েভ চুলা সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে এটির সাধারণত প্রচলিত ওভেনের চেয়ে ব্যবহারের সীমিত পরিসর থাকে বলে স্বীকার করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বলা যায়, যে সব কাজের জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী, সেগুলোর জন্য এটি শক্তি সাশ্রয় এবং এটির কাজ সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সময় উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষ।

সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবারে পানি চলাচলের মাধ্যমে গরম হয়। এই চলাচল রান্নার জন্য ব্যবহৃত তাপ উৎপন্ন করে। এই কৌশলটি ভালভাবে রান্নার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাই উপরে উল্লিখিত সমবায় কৌশলসম্পন্ন ওভেনগুলো অতিরিক্ত গরম করার যন্ত্র (গ্রিলিং) সহকারে নকশা করা হয়েছে। প্রচলিত চুলার মতো কিছু খাবার রান্নার সময় তাদের উপরিভাগ শুকিয়ে যায়, তাই এর সাথে পানি দেওয়া এবং বাষ্পে পরিণত করা উভয়ই সাধারণত ব্যবহৃত হয়। পিৎজা এবং ভাজা আলুর মতো খাবার তৈরিতে অতিরিক্ত ক্রিস্পিং প্লেট ব্যবহার করা হয়, যাতে এসব খাবারের উপরিভাগ মচমচে হয়।

মাইক্রোওয়েভ রন্ধনের পাত্র[সম্পাদনা]

  • ধাতব পাত্র কখনোই মাইক্রোওয়েভের সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়। মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ যে কোনও ধরনের ধাতুর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় এবং শক্তির মাত্রা বেশি হলে এটি বেশ ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটাতে পারে। স্পষ্টতই ধাতব পাত্রে থাকা খাবার কোন শক্তি পাবে না এবং তাই উল্লেখিত বিপদের বাইরেও খাবারটি ভালভাবে গরম হবে না। এই মন্তব্যটি এমন উপকরণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যেগুলোতে ধাতব চিহ্ন রয়েছে, যেমন কিছু গ্লাস এবং চিনামাটির বাসন, এবং নির্দিষ্ট জিনিস যেগুলোর একটি সুস্পষ্ট ধাতব বিন্যাস বা সাজসজ্জা রয়েছে৷
  • সাধারণভাবে, মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারের জন্য তৈরি পাত্রগুলোকে মাইক্রোওয়েভ নিরাপদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। চিহ্ন ছাড়া অন্যান্য পাত্র অবশ্যই ব্যবহার করা যেতে পারে তবে সেগুলো নিরাপদ কিনা তা যাচাই করার জন্য একটি পরীক্ষা প্রয়োজন। পরীক্ষাটি হল পানিপূর্ণ করে একটি কাপ এবং পাত্রটিকে মাইক্রোওয়েভে কয়েক মিনিটের জন্য উচ্চ তাপে গরম করার জন্য রাখা; যদি পানি গরম হওয়ার সময় খালি পাত্রটি ঠান্ডা থাকে, তাহলে সম্ভবত এটি মাইক্রোওয়েভের জন্য উপযুক্ত এবং ব্যবহার করা নিরাপদ হতে পারে; বিবেচনা করার অন্য বিষয়টি হলো পাত্রটি গরম খাবার থেকে সঞ্চালিত তাপ ধরে রাখতে পারে কিনা এবং সমবায় কৌশলসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভের অতিরিক্ত গ্রিলিং সুধিধা এটির ক্ষতি করবে কিনা। এজন্য বেশিরভাগ টেবিল প্লেট এবং পাইরেক্স, পাথরের পাত্র এবং মাটির পাত্র― যেগুলোতে বিস্তর সাজসজ্জা নেই সেগুলোকে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।
  • তাৎক্ষনিক পাতলা আবরণ দিয়ে মোড়ানো। মাইক্রোওয়েভে ব্যবহৃত যে কোনো ঢাকনা বা আবরণে বাতাস চলাচলের উপযোগিতা তৈরি করতে হবে, যাতে চাপ তৈরি না হয়। এমন একটি খাদ্য মোড়ানো উপাদান নির্বাচন করুন যা মাইক্রোওয়েভের জন্য উপযুক্ত বলে বিক্রি হয়। কিছু উপকরণ শুধু ঠান্ডা অবস্থায় মোড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়, এবং আজকাল সাধারণভাবে নন-পিভিসি উপকরণগুলো মাইক্রোওয়েভ ঢাকনার জন্য পছন্দ করা হয়। একটি সিল সহ নিষ্পত্তিযোগ্য মাইক্রোওয়েভ রান্নার ব্যাগ থাকতে হবে। এগুলো কার্যকরভাবে পাত্রের বিকল্প এবং মাইক্রোওয়েভ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করতে পারে।
  • মাইক্রোওয়েভের জন্য আনুষঙ্গিক প্যাকগুলো প্রায়শই কোন কোন নতুন খাদ্যপণ্যের সাথে সরবরাহ করা হয়। এগুলো মাইক্রোওয়েভ-নিরাপদ উপাদান দিয়ে তৈরি এবং এটিতে সাধারণত দুই অংশে বিভক্ত স্টিমার এবং ঢাকনা, একটি ক্রিস্পার প্লেট এবং একটি প্লেট কভার থাকে যার মধ্যে আগে থেকেই একটি বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে।
  • ব্যতিক্রম। কখনও কখনও অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ছোট টুকরো খাবারের কিছু কিছু অংশকে অতিরিক্ত রান্না হওয়া থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তাপ চলাচল[সম্পাদনা]

যেহেতু মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গগুলো প্রায় এক বা দুই ইঞ্চির বেশি প্রস্থের খাবারকে কার্যকরভাবে ভেদ করতে পারে না, তাই এই মাত্রার বেশি খাবার রান্না করার জন্য শোষণ অঞ্চল থেকে তাপ সঞ্চালনের উপর নির্ভর করে। এই কারণে মাইক্রোওয়েভ রান্নায় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী গ্রহণ করা হয়েছে।

  • রান্নার সময় প্রায়শই থামুন এবং নাড়ুন - খাবারের অপেক্ষাকৃত শীতল অংশগুলোতে যাতে তাপশক্তি পৌঁছায় এবং বিদ্যমান তাপ সমানভাবে ছড়িয়ে যায় তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্যভাবে নাড়তে হয়। রান্নার সময় খাবার অন্তত একবার এবং ক্ষেত্র বিশেষে আরও বেশি নাড়ানো স্বাভাবিক।
  • পাতলা স্তরে থাকা খাদ্য সবচেয়ে ভাল গরম হয়। যখন অল্প খাবার ঘন না করে পাতলা স্তরে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়। উপরন্তু যেহেতু একটি প্লেটের কেন্দ্রে থাকা খাবারটি প্রান্তের তুলনায় কম তাপ পায়, তাই খাবারের সবচেয়ে ঘন পদগুলো বাইরের দিকে রাখা হয়।
  • পানি তাপ পরিবহনে সাহায্য করে। তাপ সঞ্চালনে সহায়তা করার জন্য কিছু রন্ধনপ্রণালীতে এক বা দুটি টেবিল চামচ পানি যোগ করা হয়, উদাহরণস্বরূপয়: সবজি নরম করার জন্য।
  • ঘন পদগুলো ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। পাতলা স্তরে সজ্জিত খাদ্যে তরঙ্গের অনুপ্রবেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ কিন্তু খাদ্যের পুরু অংশের মধ্য দিয়ে সঞ্চালনে সময় লাগে, তাই খাবারের ঘন অংশ এবং যে খাবার সহজে নাড়ানো যায় না সেগুলো রান্নায় উপর্যুপরি কম শক্তির স্তরে বেশি সময় দেওয়া হয়; এতে সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়া যায় যখন বাইরের দিকে একই সময়ে খাবারের শুকিয়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করা হয়; উদাহরণস্বরূপ, একটি মাইক্রোওয়েভ ব্যাগে আবদ্ধ করে।

শক্তি স্তরের সাথে রান্নার সময় সমন্বয়[সম্পাদনা]

যদি রন্ধনপ্রণালীটির জন্য ব্যবহৃত মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ৭৫০ ওয়াট বা ৩৫০ ওয়াট সেটিং দেওয়া না থাকে, কিন্তু এর পরিবর্তে একটি ৬০০ ওয়াট এবং একটি ৩০০ ওয়াট সেটিং দেওয়া থাকে, তাহলে রান্নার পুরো সময়জুড়ে নতুন শক্তি স্তরের সাথে সামঞ্জস্য করা যেতে পারে। নতুন রান্নার সময় হয়ে যাবে (৭৫০/৬০০) গুণ ৬, এবং ৩৫০/৩০০ গুণ ১০। উদাহরণস্বরূপ:

আগে রান্নার সময় ছিল ৬ মিনিটে ৭৫০ ওয়াট এবং ১০ মিনিটে ৩৫০ ওয়াট।
অনুপাত সর্বদা হবে: "রন্ধনপ্রণালীতে উল্লিখিত শক্তি ও মেশিনের দ্বারা ব্যবহৃত শক্তির ভাগফল"
সুতরাং এই সময়গুলো হবে:
৬০০ ওয়াটে (৭৫০/৬০০)*৬ = ৭.৫ মিনিট এবং
৩০০ ওয়াটে (৩৫০/৩০০)*১০ = ১১.৯১ বা প্রায় ১২ মিনিট
তাই আগের রান্নার সময় শক্তি পরিবর্তনের অনুপাতে কিছুটা বাড়ানো হয়।

একই আনুপাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিবর্তনটি আরও শক্তিশালী ওভেনের ক্ষেত্রেও গণনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ, শক্তির পরিবর্তনগুলো সর্বদা আনুপাতিকতার অনুমানে গণনা করা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, রান্নার সময় পরিবর্তিত শক্তির সেটিং এবং উপাদানগুলোর পরিবর্তিত ওজন উভয়ের জন্যই সামঞ্জস্য করা হয়। এই ক্ষেত্রে পরবর্তী পরিচ্ছেদে দেওয়া সারণিটি দরকারী বলে প্রমাণিত হতে পারে।

পরিবর্তিত ওজনের সাথে রান্নার সময় সমন্বয়[সম্পাদনা]

রান্না করা খাবারের ওজন যদি রেসিপির তুলনায় অনেক বেশি হয় তবে রান্নার সময় ভুল হবে। এই পরিবর্তনগুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য রান্নার সময়গুলো সামঞ্জস্য করা সম্ভব, তবে পরিবর্তিত রান্নার সময় শক্তি স্তরের পরিবর্তনের উপায়ের মতো পরিবর্তনের অনুপাতে কাজ করে না। বিশেষ করে আপনি যদি একটি রেসিপির খাবারের পরিমাণ দ্বিগুণ করেন, তাহলে সময় দ্বিগুণ করা জরুরি নয়; এটি মূল রেসিপির সময়ের ১.৫ গুণের কাছাকাছি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি; দ্বিগুণ নয়।

রন্ধনপ্রণালীতে ওজন পরিবর্তনের সাথে আনুমানিক সমন্বয়
রেসিপির ওজন x ০.৫ রেসিপির ওজন x ০.৭৫ রেসিপি অনুযায়ী ওজন রেসিপির ওজন x ১.৫ রেসিপির ওজন x ২
রান্নার সময় ০.৬৬ গুণ কমান রান্নার সময় ০.৮৯ গুণ কমান কোন পরিবর্তন নেই-একই ওজন রান্নার সময় ১.৩৩ গুণ বাড়ান রান্নার সময় ১.৫ গুণ বাড়ান

সারণীতে দেওয়া পরিসংখ্যানগুলো ছোটখাটো পরিবর্তনের জন্য একটি আনুমানিক হিসাব, আর রেসিপির সময়কে এককভাবে দ্বিগুণ করার বেশি বা অর্ধেকরও কম করে ব্যবহার করা উচিত নয়; অর্থাৎ, আটগুণ বাড়ানোর জন্য এগুলো চারবার ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এতে বড় ধরনের ত্রুটি ঘটবে। যখন আনুমানিক সময়ের কাছাকাছি চলে আসে তখন প্রতি মিনিটে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করুন, এবং এটি সঠিক ফলাফল পেতে প্রতিবার রান্না পরীক্ষা করুন।

সাধারণ খাবারের মাইক্রোওয়েভ রন্ধনপ্রণালী[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • বাসমতি চাল রান্না করা  : একটি চাল প্রস্তুতকারকের ইন্টারনেট পাতা যাতে ভাত রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতির উপর মোটামুটি স্পষ্ট নির্দেশাবলী এবং বিভিন্ন ধরনের চালের জন্য রান্নার সময়গুলোর একটি সারণি রয়েছে।