বিষয়বস্তুতে চলুন

যোগাযোগ তত্ত্ব/উদ্ভাবনের বিস্তার

উইকিবই থেকে

বিস্তার দৃষ্টান্তের উৎপত্তি[সম্পাদনা]

রজার্সের (১৯৯৫) মতে, উদ্ভাবনের বিস্তার (ডিওআই) বিষয়ক গবেষণাটি ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল তার্দে-এর পরীক্ষার (পৃ. ৫২) সময় থেকে পাওয়া যেতে পারে। তার্দে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন কেন কিছু উদ্ভাবন গৃহীত হয় এবং সমাজে ছড়িয়ে পড়ে যখন অন্যগুলিকে উপেক্ষা করা হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, তার্দে অনেক নতুন উদ্ভাবনের বিকাশের সাক্ষী ছিলেন, যার মধ্যে অনেকগুলি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। তাঁর বই 'দ্য লজ অফ ইমিটেশন'-এ (১৯০৩), তিনি আর্থ-সামাজিক অবস্থার ভূমিকার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এস-আকৃতির বক্ররেখা এবং "মতামত নেতৃত্ব" প্রবর্তন করেছিলেন (উদাহরণস্বরূপ, একজন বিশ্বজনীন বা কসমোপলিটান ব্যক্তির নতুন পণ্য গ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি)। যদিও তিনি মূল বিস্তারের ধারণাগুলি নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট করে বলেননি, তাঁর অন্তর্দৃষ্টি ভূগোল, অর্থনীতি এবং নৃতত্ত্বের মতো অনেক সামাজিক বৈজ্ঞানিক শাখার বিকাশকে প্রভাবিত করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, সমাজবিজ্ঞানী এফ. স্টুয়ার্ট চ্যাপিন বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অনুদৈর্ঘ্য বৃদ্ধির ধরণগুলি অধ্যয়ন করেছেন, এবং দেখেছেন যে ইংরেজি এস-আকৃতির বক্ররেখা দিয়ে শহর সরকারের কমিশন গঠনের মতো ঘটমান বিষয়গুলি গ্রহণ করাকে সর্বোত্তমভাবে বর্ণনা করা যায় (লোয়ারি এবং ডিফ্লুর, ১৯৯৫, পৃ. ১১৮)।

উদ্ভাবনের বিস্তারের জন্য মৌলিক গবেষণার দৃষ্টান্ত[সম্পাদনা]

উদ্ভাবনের বিস্তারের জন্য মৌলিক গবেষণার দৃষ্টান্তটি আইওয়াতে সঙ্কর (হাইব্রিড) বীজ ভুট্টার অধ্যয়ন থেকে পাওয়া যেতে পারে। ব্রাইস রায়ান এবং নীল সি. গ্রস (১৯৪৩) আইওয়া কৃষকদের মধ্যে সঙ্কর বীজ ভুট্টার বিস্তারের বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। লোয়ারি এবং ডিফ্লুর (১৯৯৫)-এর মতানুযায়ী, কিভাবে এবং কেন সঙ্কর বীজ ভুট্টার অধ্যয়ন করা হয়েছিল তা নিয়ে আলোচনা করার আগে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের পটভূমি প্রথমে বোঝা উচিত। মরিল আইন "রাজ্যগুলিকে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে যা গ্রামীণ যুবকদের জন্য বিশেষ উপকারী হবে" (পৃ. ১২০)। দেশের কৃষি শিল্পের বিকাশ বাড়াতে এই ভূমি-অনুদান প্রতিষ্ঠানগুলিকে ফেডারেল তহবিল এবং অন্যান্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল (পৃ. ১২০)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণার মনোযোগ পরিবর্তন করে কৃষকদের মধ্যে মানব সমস্যার উপর নিবদ্ধ করেন কারণ নতুন কৃষি প্রযুক্তি যেমন নতুন কীটনাশক, নতুন ফার্ম মেশিন এবং সঙ্কর বীজ ভুট্টা এসে গিয়েছিল। কিন্তু এইসব উন্নয়ন সত্ত্বেও, কিছু কৃষক এই নতুন উদ্ভাবনগুলিকে উপেক্ষা করেছিলেন বা প্রতিরোধ করেছিলেন। আইওয়া স্টেট, মিশিগান স্টেট এবং ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটিগুলির মতো মিডওয়েস্টার্ন স্টেটের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন গ্রহণের কারণগুলি খুঁজে বের করার জন্য অনেকগুলি বিস্তৃত গবেষণা করেছেন। এই প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে একটি ছিল রায়ান এবং গ্রস (১৯৪৩) দ্বারা পরিচালিত সঙ্কর বীজ ভুট্টা নিয়ে গবেষণা। এই গবেষকরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন যে কেন কিছু কৃষক সঙ্কর বীজ ভুট্টা গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু অন্যরা তা করেননি।

ব্রাইস রায়ান এবং নীল সি. গ্রস[সম্পাদনা]

ব্রাইস রায়ান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে পিএইচ.ডি অর্জন করেছিলেন। ডক্টরেট অধ্যয়নের সময়, রায়ানকে অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান এবং সামাজিক মনোবিজ্ঞানে আন্তঃবিষয়ক পাঠ্যক্রম গ্রহণ করতে হয়েছিল। এই বুদ্ধিবৃত্তিক পটভূমি তাঁকে বিস্তার অধ্যয়ন নিয়ে কাজ করতে সাহায্য করেছিল। ১৯৩৮ সালে, রায়ান আইওয়া রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক নিযুক্ত হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষির দিকে মনোনিবেশের জন্য পরিচিত। সেই সময়, আইওয়া রাজ্যের প্রশাসকরা সঙ্কর বীজ ভুট্টার প্রসারের ক্ষেত্রে ধীর গতি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এই নতুন উদ্ভাবনের ব্যবহারের ফলে গুণমান এবং উৎপাদনের বৃদ্ধি হতে পারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও, আইওয়া কৃষকেরা এই সুবিধা গ্রহণে মন্থর ছিলেন। রায়ান সঙ্কর বীজ ভুট্টার বিস্তার নিয়ে অধ্যয়নের প্রস্তাব করেছিলেন এবং আইওয়া রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা আইওয়া কৃষি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তহবিল পেয়েছিলেন। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলিতে, গুণগত পদ্ধতি প্রয়োগ করে নৃবিজ্ঞান শৈলীর পন্থা ব্যবহার করা হয়েছিল, কিন্তু এর বিপরীতে রায়ান তাঁর গবেষণায় একটি পরিমাণগত জরিপ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। রজার্সের মতে (১৯৯৬), রায়ানকে এই পরিমাণগত পদ্ধতি ব্যবহার করতে "পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপকরা, যেমন পল জি. হোমমেয়ার, রে জে জেসেন এবং স্নেডেকর" (পৃ. ৪১৫) উৎসাহিত করেছিলেন।

রায়ান যখন আইওয়া রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন, নীল সি. গ্রস তখন একজন স্নাতক ছাত্র ছিলেন। তাঁকে শীঘ্রই রায়ানের গবেষণা সহকারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। রায়ান তাঁকে জরিপ গবেষণার মাধ্যমে আইওয়া কৃষকদের সাক্ষাৎকার নিতে বলেন। জেফারসন এবং গ্র্যাণ্ড জংশনের আইওয়া সম্প্রদায়ের কাছ থেকে গ্রস তথ্য সংগ্রহ করেন। রজার্স (১৯৯৬) উল্লেখ করেছেন যে "যেখানে তিনি একটি খামারে বড় হয়েছেন, কাকতালীয়ভাবে এই সম্প্রদায়গুলির বসতি তার ৩০ মাইলের মধ্যেই ছিল" (পৃ. ৪১৫)। একটি আকর্ষণীয় তথ্য হলো যে, রজার্স ১৯৫৭ সালে আইওয়া রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যানে পিএইচডি অর্জন করেন।

সঙ্কর বীজ ভুট্টার আইওয়া অধ্যয়ন: উদ্ভাবন গ্রহণ[সম্পাদনা]

ওপরে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচলিত বীজের তুলনায় সঙ্কর বীজ ভুট্টার অনেক সুবিধা ছিল, যেমন সঙ্কর বীজের উচ্চ প্রাণশক্তির সঙ্গে সঙ্গে খরা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। অবশ্য, আইওয়া কৃষকদের সঙ্কর বীজ ভুট্টা গ্রহণ না করার পেছনে কিছু বাধাও ছিল। একটি সমস্যা হল সঙ্কর ভুট্টা বীজ থেকে নতুন গাছ হয়না (পৃ. ১২২)। এর অর্থ হল সঙ্কর বীজ আইওয়া কৃষকদের জন্য তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছিল, বিশেষ করে মন্দার সময়ে। অতএব, যুক্তিসঙ্গত ভাবেই অনুমান করা যায় যে, সঙ্কর বীজ ভুট্টা অর্থনৈতিক মুনাফা নিয়ে এলেও, তার উচ্চ মূল্যের কারণে আইওয়া কৃষকদের মধ্যে এর গ্রহণ বিলম্বিত হয়েছিল।

লোয়ারি এবং ডিফ্লুরের মতানুযায়ী (১৯৯৫), রায়ান এবং গ্রস ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন যে কিভাবে সঙ্কর বীজ ভুট্টা নজরে আসে এবং কোন দুটি মাধ্যম (অর্থাৎ, সহ-সাথীদের সাথে গণ যোগাযোগ এবং আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ) কৃষকদের নতুন উদ্ভাবন গ্রহণ করতে পরিচালিত করেছে। তাঁরা দেখেন যে প্রতিটি মাধ্যম আলাদা আলাদাভাবে কাজ করেছে। গণযোগাযোগ প্রাথমিক তথ্যের উৎস হিসাবে কাজ করেছে এবং আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ কৃষকদের নতুন উপায় গ্রহণের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব হিসাবে কাজ করেছে (পৃ. ১২৫)। এই গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলির মধ্যে একটি হল "উদ্ভাবন গ্রহণ করা নির্ভর করে সুপ্রতিষ্ঠিত আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং গণ যোগাযোগের অভ্যাসগত প্রভাবের কিছু সংমিশ্রণের উপর" (পৃ. ১২৭)। রায়ান এবং গ্রস আরও দেখতে পান যে সঙ্কর বীজ ভুট্টা গ্রহণের হার একটি এস-আকৃতির বক্ররেখা অনুসরণ করেছে এবং চার ভিন্ন ধরনের কৃষক একে গ্রহণ করেছেন। রজার্সের মতে (১৯৯৫), রায়ান এবং গ্রস গ্রহণ প্রক্রিয়ার পাঁচটি প্রধান পর্যায় চিহ্নিত করে একটি অবদান রেখেছিলেন, পর্যায় গুলি ছিল সচেতনতা, আগ্রহ, মূল্যায়ন, বিচার এবং গ্রহণ। রায়ান এবং গ্রস সঙ্কর ভুট্টা নিয়ে গবেষণা করার পরে, এর বিস্তার সম্পর্কে ১৯৯৪ সালে প্রায় ৫,০০০ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল (রজার্স, ১৯৯৫)।

চিকিৎসা উদ্ভাবন: ডাক্তারদের মধ্যে একটি চিকিৎসা ওষুধের বিস্তার[সম্পাদনা]

রজার্সের মতে (১৯৯৬), ১৯৬৬ সালে জেমস এস. কোলম্যান, এলিহু কাটজ এবং হার্বার্ট মেনজেল, একটি নতুন চিকিৎসা ওষুধ "​​টেট্রাসাইক্লিন"-এর বিস্তারের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করার পরে বিস্তার তত্ত্বটি আরও ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। ফাইজার ওষুধ কোম্পানি এই সফল নতুন ওষুধটি উদ্ভাবন করেছিল এবং মেডিকেল জার্নালে তাদের দেওয়া টেট্রাসাইক্লিনের বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা অন্বেষণ করতে চেয়েছিল। এই সংস্থাটি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপককে পরীক্ষা করে দেখতে বলেছিল যে চিকিৎসকরা কিভাবে এই নতুন উদ্ভাবন গ্রহণ করেছেন এবং কিভাবে গণ যোগাযোগ এই গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে। তারা সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি জরিপ চালিয়েছিল। পূর্ববর্তী বিস্তার গবেষণায় উত্তরদাতারা কিভাবে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে তার ওপর নির্ভর করে গবেষণা চালানো হয়েছিল। এর বিপরীতে এই বারে চিকিৎসকদের প্রতিক্রিয়া এবং ডাক্তার-খানার প্রেসক্রিপশন উভয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই ছাড়াও, কোলম্যান এবং অন্যান্যরা (১৯৬৬) তাঁদের উত্তরদাতাদের আন্তঃব্যক্তিক সংযোগ তালিকাভুক্ত করতে বলেছিলেন, যাতে নতুন ওষুধ গ্রহণের সাথে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের প্রভাব নিয়ে তদন্ত করা যায়।

ফলাফল থেকে পাওয়া গিয়েছিল যে নতুন ওষুধ গ্রহণের শতাংশ একটি এস-আকৃতির বক্ররেখা অনুসরণ করেছে, কিন্তু দেখা গিয়েছিল টেট্রাসাইক্লিন গ্রহণের হার অন্যান্য উদ্ভাবন গ্রহণের হারের চেয়ে দ্রুত। গবেষকরা আরও দেখেছিলেন যে যাঁরা বিশ্বজনীন ডাক্তার তাঁদের এই নতুন ওষুধ গ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখা গিয়েছিল যে, যেসব ডাক্তারদের আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ কম, তাঁদের তুলনায় যাঁদের যোগাযোগ বেশি তাঁরা নতুন চিকিৎসা ওষুধ দ্রুত গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ এই যে, সহকর্মীদের সাথে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলি গ্রহণ প্রক্রিয়ার উপর একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। রজার্স (১৯৯৬) উল্লেখ করেছেন যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যয়নটি "সবচেয়ে প্রভাবশালী বিস্তার অধ্যয়নের মধ্যে একটি, যেটি দেখায় যে একটি উদ্ভাবনের বিস্তার মূলত একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যা আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটে"(পৃ. ৪১৯)। প্রকৃতপক্ষে, রজার্স (১৯৯৬) উল্লেখ করেছেন যে যদিও রায়ান এবং গ্রস-এর গবেষণা বিস্তার দৃষ্টান্তে একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছে, কিন্তু তাঁরা কৃষকদের মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলির পরিমাপ করেননি। এই ক্ষেত্রে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় 'ড্রাগ স্টাডি ডিফিউশন' প্রক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলির গুরুত্ব সনাক্ত করতে একটি অবদান রেখেছে।

এভারেট এম রজার্স[সম্পাদনা]

রজার্স ১৯৩১ সালে আইওয়ার ক্যারলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তাঁর বি.এ., এম.এ, এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। কোরীয় যুদ্ধের সময় দুই বছর তিনি মার্কিন বিমান বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। মজার বিষয় হল, ১৯৬৬ সালে, তিনি কোরিয়াতে কিছু পরিবার পরিকল্পনা যোগাযোগ প্রকল্পে কাজ করেছিলেন।

উল্লেখ করার মতো একটি মজার বিষয় হল যে রজার্সের বাবা একজন কৃষক ছিলেন যিনি সঙ্কর বীজ ভুট্টা গ্রহণে প্রতিরোধ করেছিলেন (সিংঘাল, ২০০৫, পৃ. ২৮৭)। ১৯৩৬ সালে আইওয়াতে খরার কারণে, রজার্সের খামার শুকিয়ে গিয়েছিল, এর পরেই রজার্স ব্যক্তিগতভাবে বিস্তার গবেষণায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯৫০ এর দশকে, আইওয়া রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবনের বিস্তার অধ্যয়নের জন্য উপযুক্ত জায়গা হয়ে উঠেছিল, কারণ এদের স্কুলের পাঠ্যক্রমটি গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান, কৃষি এবং পরিসংখ্যানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তৈরি হয়েছিল। সেখানকার অভিজ্ঞতার ফলে রজার্স এই গবেষণায় যোগ দিতে আগ্রহী হয়েছিলেন যে, কেন কিছু উদ্ভাবন গৃহীত হয় যখন অন্যগুলি উপেক্ষিত হয়। ১৯৬২ সালে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি দ্বারা নিয়োগ পেয়ে, রজার্স এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিস্তারের গবেষণার সুযোগ পান। ইতিমধ্যে তিনি "ডিফিউশন অফ ইনোভেশনস" বইটি প্রকাশ করেন, যা তাঁকে তাঁর অধ্যয়ন বিষয়ক খ্যাতি এনে দিয়েছিল। বইটিতে রজার্সের ব্যাপক অন্তর্দৃষ্টি এই বিস্তার তত্ত্বকে প্রসারিত করতে সাহায্য করেছে। বইটি বিস্তার তত্ত্বের একটি আদর্শ পাঠ্যপুস্তক হয়ে উঠেছে এবং এটি ভূগোল, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, এবং পূর্বে উল্লিখিত যোগাযোগের মতো ক্ষেত্রে বিস্তার তত্ত্বের প্রয়োগে সাহায্য করে। কিডনি জনিত অসুখে ভোগার কারণে রজার্স ২০০৪ সালে নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। তিনি ২০০৫ সালের ২১শে অক্টোবর মারা যান।

উদ্ভাবনের বিস্তারের সাধারণ ধারণা[সম্পাদনা]

রজার্সের মতে (১৯৯৬), বিস্তার বলতে "এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার সাহায্যে কোন উদ্ভাবন সময়ের সাথে সাথে একটি সামাজিক ব্যবস্থায় থাকা সদস্যদের মধ্যে কিছু যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। একটি উদ্ভাবন হল একটি ধারণা, অনুশীলন বা বস্তু যাকে কোন ব্যক্তি বা অন্যান্য গ্রহণ পদ্ধতিগুলি নতুন হিসাবে বিবেচনা করে। উদ্ভাবনের প্রসারে গণমাধ্যম এবং আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ মাধ্যম উভয়ই জড়িত” (পৃ. ৪০৯)। অর্থাৎ, আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ বা গণযোগাযোগের মতো যোগাযোগের মাধ্যমগুলিতে অংশ নিয়ে মানুষ একটি উদ্ভাবনের তথ্য পেতে পারে এবং এর উদ্ভাবনটিকে দরকারী হিসাবে উপলব্ধি করতে পারে। ল্যাসওয়েল (১৯৪৮) যোগাযোগের একটি সুপরিচিত মডেল উপস্থাপন করেছেন যাকে পাঁচটি অংশ হিসাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, 'এস-এম-সি-আর-ই' (যেমন, সেণ্ডার বা প্রেরক--মেসেজ বা বার্তা--চ্যানেল বা মাধ্যম--রিসিভার বা প্রাপক--এফেক্ট বা প্রভাব)। রজার্স (১৯৯৫) উল্লেখ করেছেন, "এই এস-এম-সি-আর-ই যোগাযোগ মডেলটি বিস্তারের উপাদানগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংগতিপূর্ণ হয়" (পৃ. ১৯)। বিশেষভাবে, (১) প্রেরক হতে পারেন উদ্ভাবক বা মতামত প্রদানকারী নেতা, (২) বার্তা একটি নতুন ধারণা বা পণ্য হতে পারে, (৩) মাধ্যমগুলি আন্তঃব্যক্তিক বা গণ যোগাযোগ হতে পারে, (৪) প্রাপক একটি সামাজিক ব্যবস্থার সদস্য হতে পারেন এবং অবশেষে (৫) প্রভাবগুলি ব্যক্তি দ্বারা গ্রহণ বা সামাজিক পরিবর্তন হতে পারে। বিস্তার তত্ত্বে, চলরাশি (ভেরিয়েবল) 'সময়' একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রজার্সের মতে (১৯৯৫), চলরাশি 'সময়' (১) উদ্ভাবন-সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া; (২) উদ্ভাবনশীলতা; এবং (৩) একটি উদ্ভাবন গ্রহণের হারের বিস্তারের সাথে জড়িত।

বেশিরভাগ উদ্ভাবনের গ্রহণের হারের লেখচিত্র এস-আকৃতির মতো হয়। বিস্তার গবেষণা সেই চলরাশিগুলিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে যাদের প্রভাবে, কিভাবে এবং কেন ব্যবহারকারী ও দর্শকরা ইন্টারনেটের মতো একটি নতুন তথ্য মাধ্যমকে গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যম প্রযুক্তির বিবর্তন অনুসারে, আন্তঃব্যক্তিক প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ যদিও অতীতে সাধারণত ব্যক্তিকে বিশ্লেষণের একক হিসেবে ধরা হত। এছাড়াও, নতুন মাধ্যম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সমালোচনামূলক জনমত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠে কারণ নতুন মাধ্যম হল পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগকারী একটি সাধন এবং অনেক ব্যবহারকারীর দক্ষতা অর্জনের জন্য একে প্রয়োজন। অর্থাৎ যত বেশি মানুষ ব্যবহার করবে, তত বেশি মানুষ সুবিধা পাবে। এই অর্থে, বিস্তার তত্ত্ব কেবল ব্যবহারিক জিনিসগুলিতেই প্রযোজ্য তাই নয়, ডিজিটাল বিভাজনের সাথেও এটি সম্পর্কিত হতে পারে।

উদ্ভাবনশীলতা অনুসারে, বিস্তার প্রক্রিয়াতে পাঁচটি ভিন্ন ধরণের গ্রহণকারী রয়েছে: “(১) উদ্ভাবক (উদ্যোগমূলক), (২) প্রারম্ভিক গ্রহণকারী (সম্মানজনক), (৩) প্রাথমিক সংখ্যাধিক্য (ইচ্ছামূলক), (৪) পরের সংখ্যাধিক্য (সন্দেহবাদী), এবং (৫) দীর্ঘসূত্রী (প্রথাগত)" (রজার্স, ১৯৯৫, পৃ.  ১৮৩-১৮৫)। রজার্স এই শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন "একজন ব্যক্তি তার সামাজিক ব্যবস্থার অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় নতুন ধারণা গ্রহণের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে আগে" (রজার্স, ১৯৯৫, p. ৪০) আছে বলে। চিত্র ১ অভিনবত্ব দ্বারা বিভক্ত গ্রহণকারীদের প্রকারের মধ্যে সম্পর্ক এবং গ্রহণ-বক্ররেখায় তাদের অবস্থান দেখায়। এছাড়াও, এই বিভাগগুলি একটি আদর্শ বিচ্যুতি বক্ররেখা অনুসরণ করে যার আকৃতি ঘণ্টার মতো।

উৎস: www2.gsu.edu/~wwwitr/docs/diffusion/

চিত্র ২ দেখায় যে কোন উদ্ভাবন একটি এস-আকৃতির বক্ররেখায় বিভিন্ন সময়ের মধ্যে সমাজে ছড়িয়ে পড়বে। যাইহোক, উপরে উল্লিখিত হিসাবে, বিভিন্ন ধরণের উদ্ভাবন (যেমন, সঙ্কর বীজ ভুট্টার চেয়ে টেট্রাসাইক্লিন গ্রহণের হার দ্রুত) ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব ভিন্ন হার থাকতে পারে।

চিত্র ২. উদ্ভাবনের জন্য বিস্তারের বক্ররেখার আকার

উৎস: www.mitsue.co.jp/english/case/concept/02.html

উদ্ভাবন-সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়ার কথা নিয়ে রজার্স (১৯৯৫) পাঁচটি পর্যায়ের উল্লেখ করেছেন।

  1. জ্ঞান + অথবা – (বাছাই করার সুবিধা বা খবরের সচেতনতা)
  2. মনোভাব + অথবা – (উদ্ভাবনের প্রতি মানুষের ইতিবাচক বা নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে কিনা)
  3. গ্রহণ (সিদ্ধান্ত): মানুষ উদ্ভাবন গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়
  4. বাস্তবায়ন (নিয়মিত বা সাধারণ অনুশীলন)
  5. নিশ্চিতকরণ (তুলনা এবং মূল্যায়ন)

উদ্ভাবনের যে অনুভূত বৈশিষ্ট্যগুলি রজার্স প্রবর্তন করেছিলেন সেগুলি হল (১) আপেক্ষিক সুবিধা (২) সামঞ্জস্যতা (৩) জটিলতা (৪) চেষ্টাযোগ্যতা (৫) পর্যবেক্ষণযোগ্যতা। এই পাঁচটি মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে, ব্যক্তি একটি উদ্ভাবনকে নতুন বা দরকারী হিসাবে উপলব্ধি করে এবং এটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। উদাহরণ স্বরূপ, রজার্স (১৯৯৫) আপেক্ষিক সুবিধাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন "যে ধারণাটি থেকে উদ্ভাবন হয়েছে, উদ্ভাবনের মাত্রা তার চেয়ে কতটা ভাল বলে মনে করা হয়" (পৃ. ১৫)। প্রচলিত মাধ্যম সিডি বা টেপগুলির জায়গা নেবে নতুন মাধ্যম- যেমন এমপি৩ (mp3)- যখন লোকেরা নতুন মাধ্যমকে সুবিধাজনক বলে মনে করবে (যেমন, কম খরচ হলে ঠিকঠাক আছে)। যখন একজন ব্যক্তি নতুন মাধ্যম গ্রহণ করে অথবা পুরানো মাধ্যমের বদলে নতুন মাধ্যম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন উদ্ভাবনের অনুভূত বৈশিষ্ট্যগুলি উদ্ভাবন সম্পর্কে কিছু অনিশ্চয়তা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিস্তার তত্ত্বের উপর বিশ্লেষণের একক[সম্পাদনা]

উদ্ভাবন তত্ত্বের বিস্তার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে যে কিভাবে একটি উদ্ভাবন ছড়িয়ে পড়ে এবং কেন এটি বিশ্লেষণের মাইক্রো এবং ম্যাক্রো উভয় স্তরেই গৃহীত হয়। রজার্স (১৯৯৬) উল্লেখ করেছেন, "সাধারণত ব্যক্তিই বিশ্লেষণের একক হয়, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশ কয়েকটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে যেখানে একটি পৃথক সংস্থাকে বিশ্লেষণের একক ধরা হয়েছে (ওয়াইল্ডেমাথ, ১৯৯২; জাল্টম্যান, ডানকান এবং হলবেক, ১৯৭৩)" (পৃ. ৪১৮)। বিশ্লেষণের এককের এই বৈশিষ্ট্যটি গবেষণা পদ্ধতির কারণে ব্যবহার করা হয়, যেমন একটি জরিপ ব্যবহার করে বিস্তার অধ্যয়ন করা। অনেক গবেষণা পৃথক সিদ্ধান্ত বা গ্রহণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। বিপরীতে, বিস্তার তত্ত্ব মাইক্রো-ব্যক্তি এবং ম্যাক্রো-সামাজিক উভয় স্তরেই বিশ্লেষণকে বিবেচনা করে। এর কারণ হল, বিস্তার অধ্যয়নের মধ্যে উদ্ভাবনের প্রভাব মাইক্রো স্তরের পাশাপাশি, ম্যাক্রো স্তরে প্রভাব যেমন সামাজিক পরিবর্তন, উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

রজার্স (১৯৯৫) প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে উদ্ভাবন প্রক্রিয়ার বিস্তারের চারটি প্রধান উপাদান হল উদ্ভাবন, যোগাযোগের মাধ্যম, সময় এবং সামাজিক ব্যবস্থা। ব্যক্তির উদ্ভাবনী ক্ষমতা অথবা যোগাযোগের প্রয়োজনের মতো মনস্তাত্ত্বিক কারণকে মাইক্রো-স্বাধীন চলরাশি হিসাবে বিশ্লেষণ করা হয়। ম্যাক্রো-সামাজিক স্তরে, এই তত্ত্বটি ধরে নেয় যে নিয়ম কানুনের মতো সামাজিক ব্যবস্থা একজন ব্যক্তির গ্রহণ বা উদ্ভাবনের ব্যবহারকে প্রভাবিত করতে পারে। যোগাযোগ মাধ্যমের পরিপ্রেক্ষিতে, একটি উদ্ভাবনের প্রসারে আন্তঃব্যক্তিক মাধ্যম (মাইক্রো) এবং গণ যোগাযোগ মাধ্যম (ম্যাক্রো) উভয়ই জড়িত। গণ যোগাযোগ এবং আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ এই দুই মাধ্যমকেই ব্যবহার করে মানুষ একটি উদ্ভাবন সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে এবং এর উপযোগিতা উপলব্ধি করতে পারে। অতএব, বিস্তার তত্ত্বের জন্য মাইক্রো-ব্যক্তি স্তরে এবং ম্যাক্রো-সামাজিক স্তরে বিশ্লেষণ, উভয়ই প্রয়োজনীয়।

বেশ কিছু বিস্তার গবেষণা ধারা[সম্পাদনা]

রাইস ও ওয়েবস্টার অনুযায়ী (২০০২), ["গবেষণা এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থায় গ্রহণ, বিস্তার ও নতুন যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারের মডেল বিভিন্ন গবেষণা প্রবাহ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, সেগুলি হল উদ্ভাবনের বিস্তার, পছন্দের মাধ্যম, এবং তথ্য ব্যবস্থার বাস্তবায়ন।" এই উইকিবইয়ের পূর্ববর্তী লেখকের মতে,] আমরা বিস্তার গবেষণা এবং মডেলগুলিকে তিনটি বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারি: (১) উদ্ভাবনের বিস্তার (যেমন, রজার্স, ১৯৯৫), (২) পছন্দের মাধ্যম (যেমন, ড্যাফট ও লেঞ্জেল, ১৯৮৬), এবং (৩) তথ্য ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ( যেমন, সাগা এবং জমুড, ১৯৯৪)। [দুর্ভাগ্যবশত, নতুন যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তারের ব্যাখ্যা দিয়ে সমস্ত বিস্তার গবেষণা এবং মডেলকে সাধারণীকরণ করা যায় না।] সারণী ১ দেখায় যে প্রতিটি নির্ভরশীল চলরাশি, বিস্তার অধ্যয়নের তিনটি প্রাথমিক প্রবাহ অনুসারে।

সারণী ১

উদ্ভাবনের বিস্তার পছেন্দের মাধ্যম তথ্য ব্যবস্থা
নির্ভরশীল চলরাশি মাধ্যম গ্রহণ ব্যবহার পছন্দ মূল্যায়ন গ্রহণ

ব্যবহারকারীর সন্তুষ্টি

উৎস: রাইস, আর., এবং ওয়েবস্টার, জে. (২০০২)। অ্যাডপশন, ডিফিউশন অ্যাণ্ড ইউজ অফ নিউ মিডিয়া। সি. লিন এবং ডি. অ্যাটকিনস (সম্পাদক), কমিউনিকেশন টেকনোলজি অ্যাণ্ড সোসাইটি।

অর্থাৎ, 'উদ্ভাবনের বিস্তার' নিয়ে গবেষণা জোর দেয় একটি উদ্ভাবনের বৈশিষ্ট্য এবং উদ্ভাবন গ্রহণে যোগাযোগের মাধ্যমগুলির ভূমিকার উপর। 'পছন্দের মাধ্যম' নিয়ে গবেষণা মনোনিবেশ করে উদ্ভাবন বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য এবং সামাজিক প্রভাবের সম্পর্কের ওপর এবং 'বাস্তবায়ন' গবেষণা অনুমান করে যে প্রযুক্তির নকশা বা ব্যবহারের সহজতার মতো চলরাশি মাধ্যম ব্যবহারকে প্রভাবিত করবে (রাইস ও ওয়েবস্টার, ২০০২, পৃ. ১৯২)।

বিস্তার ঐতিহ্য জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে এবং একটি উদ্ভাবন গ্রহণকে প্রভাবিত করে এমন চলরাশিকে ব্যাখ্যা করতে মানুষকে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। সেই কারণে, কিছু পণ্ডিত প্রায়শই সমালোচনা করেন যে কেন এবং কিভাবে লোকেরা নির্দিষ্ট প্রযুক্তি গ্রহণ করে, এই তত্ত্বটি তার একটি কার্যকারণ ব্যাখ্যা দিতে পারে না। তবুও, যখন পুরানো এবং নতুন মাধ্যমের ব্যবহার এবং পছন্দের কথা আসে, তখন কেন কিছু লোক পুরানো মাধ্যম বা নতুন মাধ্যম ব্যবহার করতে পছন্দ করে তা বিস্তার তত্ত্ব দিয়ে উপযুক্ত ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, কারণ কিছু প্রযুক্তি বা উদ্ভাবনের গ্রহণ বোঝার জন্য এই তত্ত্ব কিছু ধারণাগত দিকনির্দেশনা প্রদান করে। মাধ্যম প্রযুক্তির বিবর্তন অনুসারে, আন্তঃব্যক্তিক বা গণমাধ্যমের প্রভাব উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ, যদিও অতীতে সাধারণত বিশ্লেষণের একক ছিল ব্যক্তি। এছাড়াও, নতুন মাধ্যম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সমালোচনামূলক জনমত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠে কারণ নতুন মাধ্যমগুলি সরাসরি যোগাযোগের সাধন এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য অনেক ব্যবহারকারীর কাছে প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ যত বেশি মানুষ ব্যবহার করবে, তত বেশি মানুষ সুবিধা পাবে। মার্কাস (১৯৮৭) প্রস্তাব করেছিলেন যে একটি আন্তঃযোগাযোগ মাধ্যমের মান ব্যবহারকারীর সংখ্যার সাথে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, এমপি৩ ব্যবহারের ক্ষেত্রে, একটি সামাজিক চাপ যেমন বন্ধুবান্ধবের প্রভাব থাকে। তরুণ প্রজন্ম মর্যাদা (স্ট্যাটাস) অর্জনের জন্য এমপি৩ কে একটি উদ্ভাবন হিসাবে গ্রহণ করলে সমসাময়িক ব্যক্তি তা করতে প্ররোচিত হয়। এছাড়াও, যখন নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তির মতো সরাসরি যোগাযোগের উত্থানের কথা আসে, রজার্স (১৯৯৬) উল্লেখ করেছেন, “যখন বিস্তার প্রক্রিয়া নিজেই স্থায়ী হয়, একটি সমালোচনামূলক জনমত গড়ে ওঠে। সমালোচনামূলক ভর বিন্দুর পরে, একটি ধারার মধ্যে থাকা ব্যক্তিরা বুঝতে পারে যে "অন্য সবাই" এই উদ্ভাবন গ্রহণ করেছে। উদ্ভাবনের প্রতিটি নতুন গ্রহণকারীর সাথে সাথে, নতুন ধারণাটি আরও মূল্যবান হয়ে ওঠে, কেবল প্রতিটি ভবিষ্যত গ্রহণকারীর জন্য নয়, প্রতিটি পূর্ববর্তী গ্রহণকারীর জন্যও" (পৃ. ৪১৮-৪১৯)। যখন বিস্তার তত্ত্বের ভবিষ্যতের কথা আসে, আমরা আশা করি যে বিস্তার গবেষণার জনপ্রিয়তা বাড়বে কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রসারিত হয়েছে।

বিস্তার গবেষণা এবং দুই ধাপের প্রবাহ অধ্যয়ন[সম্পাদনা]

লোয়ারি এবং ডিফ্লুর (১৯৯৫)-এর মতানুযায়ী, যেহেতু বিস্তার অধ্যয়ন আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের ভূমিকার উপর জোর দেয়, তাই রায়ান এবং গ্রস-এর বিস্তার অধ্যয়ন "দ্য পিপলস চয়েস-এর একেবারে ভিন্ন বিন্যাসে দ্বি-ধাপ প্রবাহ প্রক্রিয়ার আবিষ্কারে ল্যাজারসফেল্ড এবং তার সহযোগীদের দ্বারা স্বাধীনভাবে যা পাওয়া গিয়েছিল তার সমান্তরাল" (পৃ. ১৩২)। "দ্য পিপলস চয়েস" দেখিয়েছে যে জনসাধারণ শক্তিহীন এবং নিষ্ক্রিয় নয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে আন্তঃব্যক্তিক মাধ্যম, যেমন মতামতপ্রদানকারী ব্যক্তি, গণমাধ্যমের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাজিক বুলেট তত্ত্বের বিপরীতে, এই উভয় গবেষণায় মতামতপ্রদানকারী ব্যক্তিদের ভূমিকা এবং আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেমন মুখোমুখি যোগাযোগ সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • Alexander, P. J. (1994). Entry barriers, release behavior, and multiproduct firms in the music recording industry. Review of Industrial Organization, 9, 85-98.
  • Allen, D. (1983). New telecommunication services: Network externalities and critical mass. Telecommunications Policy, 12, 57-271.
  • Crane, D. (1972). Invisible colleges. Chicago, IL: University of Chicago Press.
  • Coleman, J. S., Katz, E., & Mentzel, H. (1966). Medical innovation: Diffusion of a medical drug among doctors. Indianapolis, MN: Bobbs-Merrill.
  • Daft, R. L., & Lengel, R. H. (1986). A proposed integration among organizational information requirements, media richness, and structural design. Management Science, 32, 554-571.
  • Deutschmann, P. J., & Fals Borda, O. (1962). Communication and adoption patterns in an Andean villege. San Jose, Costa Rice: Programa Intermericano de Information Popular.
  • Chapin, F.S. (1928). Cultural change. New York: Century Company.
  • Lasswell, H. D. (1948). The structure and function of communication in society. In L. Bryson (Ed.), The communication of ideas. New York: Harper & Co, 33-51.
  • Lowery, S.A., & DeFleur, M.L. (1995). Milestones in Mass Communication research. White Plains, NY: Longman Publishers USA.
  • Markus, M.L. (1987). Toward a “critical mass” theory of interactive media: Universal access, interdependence and diffusion. Communication Research, 14, 491-511.
  • Rogers, E.M. (1976). New product adoption and diffusion. Journal of Consumer Research, 2, 290–301.
  • Rogers, E.M. (1994). A history of communication study: A biographical approach. New York: Free Press.
  • Rogers, E.M. (1995). Diffusion of Innovations (4th ed.). New York: Free Press.
  • Rogers, E., & Singhal, A. (1996). Diffusion of innovations. In Salwen and Stacks, op. cit., (pp. 409-420).
  • Ryan & Gross (1943), “The Diffusion of Hybrid Seed Corn in Two Iowa Communities, ” Rural Sociology 8 (March): 15.
  • Saga, V. L., & Zmud, R. W. (1994). The nature and determinants of IT acceptance, routinization, and infusion. In L. Levine (Ed.), Diffusion, transfer and implementation of information technology (pp. 67-86). Amsterdam: North-Holland.
  • Singhal, A. (2005). Forum: the life and work of Everett Rogers- some personal reflections. Journal of Health Communication, 10, 4.
  • Tarde, G. (1903). The laws of imitiation, (E. C. Parsons, Trans.). New York: Holt.
  • Wildemuth, B. M. (1992). An empirically grounded model of the adoption of intellectual technologies. Journal of the American Society for Information Sciences, 43, 210-224.
  • Zaltman, G., Duncan, R., & Holbek, J. (1973). Innovations and organizations. New York: Wiley.

আরও তথ্য[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Communication Theory/Navigation