মানব শারীরতত্ত্ব/রক্তের গঠন

উইকিবই থেকে

সাধারণভাবে রক্তের ধারণা[সম্পাদনা]

রক্তের প্রাথমিক কাজ হল কোষকলাতে অক্সিজেন, পুষ্টি ও প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করা এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করা। হরমোন এবং অন্যান্য পদার্থকে কলা এবং অঙ্গগুলির মধ্যে পরিবহন করে নিয়ে যায় রক্ত। রক্তের গঠন বা রক্ত সঞ্চালনায় সমস্যা হলে রক্তের স্রোত বরাবর কলায় ত্রুটি ঘটতে পারে। রক্ত ত্বকে তাপ স্থানান্তর করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। শরীরের পিএইচ-এর জন্য রক্ষক হিসেবেও কাজ করে শরীরের সুস্থিতি (শারীরবিজ্ঞান) বজায় রাখে রক্ত।

হৃদপিণ্ড পাম্প করে ফুসফুস ও শরীরে রক্ত ​​সঞ্চালিত করে। হৃদপিণ্ডের দক্ষিণ নিলয় (ভেন্ট্রিকল) থেকে ফুসফুসের কৈশিক নালীগুলির মাধ্যমে রক্ত ফুসফুসে যায় এবং বাম নিলয় রক্তকে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়। কৈশিকগুলির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় রক্তের চাপ কমে যায়, তাই মাধ্যাকর্ষণ এবং বিশেষ করে কঙ্কালের পেশীগুলির সংকোচন ও প্রসারণের ফলে রক্ত হৃদপিণ্ডে ​​​​প্রত্যাবর্তন করে।

হৃদপিণ্ড থেকে ফুসফুসে রক্ত ​​সঞ্চালন।

গ্যাসীয় বিনিময়[সম্পাদনা]

অক্সিজেন (O) হল প্রতিটি কোষের সবচেয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় উপাদান এবং রক্ত ​​সঞ্চালনের মাধ্যমে এটি সারা শরীরে বাহিত হয়। কোষীয় স্তরে ইলেকট্রন পরিবহন শৃঙ্খলে চূড়ান্ত ইলেকট্রন গ্রহণকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয় অক্সিজেন (কোষীয় প্রতিক্রিয়ার জন্য এটিপি তৈরির প্রাথমিক পদ্ধতি)। রক্তের একটি উপাদান লোহিত রক্তকণিকার মধ্যস্থিত হিমোগ্লোবিন অণুর সাথে আবদ্ধ অক্সিজেন সারা শরীরে বাহিত হয়। হিমোগ্লোবিন ফুসফুসের ক্ষুদ্র রন্ধ্রের (অ্যালভিওলি) মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় অক্সিজেনকে আবদ্ধ করে নেয় এবং পরিবহনের সময় শরীরের কলাগুলির আরও উষ্ণ ও অম্লীয় পরিবেশে, সহজ ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, অক্সিজেন ছেড়ে দেয়।

কলা থেকে রক্তের মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO) সংগৃহীত হয় এবং ফুসফুসের মাধ্যমে শরীর থেকে বাতাসে বেরিয়ে যায়। কোষীয় শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয় (বিশেষ করে ক্রেব চক্রে)। মূল গ্লুকোজ ভেঙে কার্বন থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের অণু উৎপাদিত হয়। বেশিরভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড জলের সাথে মিশ্রিত হয় এবং বাইকার্বোনেট আয়ন হিসাবে রক্তরসে বাহিত হয়। অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড (ব্যায়ামের মাধ্যমে বা শ্বাস আটকে রাখা থেকে উৎপন্ন) দ্রুত রক্তের পিএইচকে আরও অম্লীয় (অম্লরক্ততা) করে দেয়। মস্তিষ্কের কেমোরিসেপ্টর এবং প্রধান রক্তনালীগুলি এই পরিবর্তন সনাক্ত করে এবং মস্তিষ্কের শ্বাস কেন্দ্রকে (মেডুলা অবলংগাটা) উদ্দীপিত করে। এরপর, যত CO স্তর বাড়তে থাকে এবং রক্ত ​​আরও অম্লীয় হয়ে ওঠে, আমরা অজান্তেই দ্রুত শ্বাস নিতে থাকি, এইভাবে CO স্তর কমে যায় এবং রক্তের পিএইচ স্থিতিশীল হয়ে আসে। বিপরীত দিকে, একজন ব্যক্তি যিনি অস্বাভাবিক শ্বসন করছেন (যেমন আকস্মিক ভয়ের সময়) তিনি শরীরে যত CO উৎপন্ন হচ্ছে তার চেয়ে আরও বেশি CO ত্যাগ করবেন এবং এর ফলে রক্ত ​​খুব ক্ষারীয় (ক্ষারক) হয়ে যাবে।

রক্তের গঠন[সম্পাদনা]

রক্ত হল একটি সঞ্চালনকারী কলা, যাতে আছে তরল রক্তরস এবং কোষ (লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অনুচক্রিকা)। শারীরবৃত্তীয়ভাবে, রক্তকে একটি সংযোজক কলা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, এর উৎপত্তি হাড়ে এবং এর কার্যকারিতার কারণে এটি সংযোজক কলা। রক্ত হল দেহের পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যম, যার সাহায্যে রক্তনালীগুলির মাধ্যমে, বিভিন্ন উপাদান (যেমন পুষ্টি, বর্জ্য, তাপ) শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাহিত হয়।

রক্ত দুটি উপাদান দিয়ে তৈরি:

  1. রক্তরস (প্লাজমা) যেটি রক্তের আয়তনের ৫৫% নিয়ে গঠিত।
  2. গঠিত কোষীয় উপাদান (লোহিত এবং শ্বেত রক্ত ​​​​কোষ, এবং অণুচক্রিকা) যা রক্তের অবশিষ্ট ৪৫% আয়তন জুড়ে আছে।

রক্তরসের গঠন[সম্পাদনা]

রক্তরস ৯০% জল, ৭-৮% দ্রবণীয় প্রোটিন (অ্যালবুমিন রক্তের অভিস্রবণীয় ভারসাম্য এবং অন্যগুলি জমাট বাঁধায় সাহায্য করে), ১% কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং ১% পরিবহনীয় উপাদান দিয়ে গঠিত। রক্তরসের এক শতাংশ লবণ, যা রক্তের পিএইচ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। রক্তরসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন রয়েছে, যাদের নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। সেগুলি দ্রবীভূত অবস্থায় রক্তরসের বৃহত্তম অংশ নিয়ে রয়েছে। সেগুলি হল: অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন এবং তঞ্চন প্রোটিন

অ্যালবুমিন হল রক্তরসে প্রোটিনের সবচেয়ে সাধারণ দল এবং তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬০-৮০%) নিয়ে গঠিত। এগুলি যকৃতে উৎপন্ন হয়। অ্যালবুমিনের প্রধান কাজ হল রক্ত ​​এবং কলা তরলগুলির মধ্যে অভিস্রবণীয় ভারসাম্য বজায় রাখা এবং এটিকে বলা হয় কলয়েড অভিস্রবণীয় চাপ। এছাড়াও, বিভিন্ন উপাদান, যেমন ভিটামিন এবং নির্দিষ্ট অণু ও ওষুধ (যেমন বিলিরুবিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও পেনিসিলিন) পরিবহনে অ্যালবুমিন সহায়তা করে।

গ্লোবিউলিন হল প্রোটিনের একটি বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠী, যা তিনটি ভাগে বিভক্ত: গামা, আলফা এবং বিটা। তাদের প্রধান কাজ হল রক্তে বিভিন্ন পদার্থ পরিবহন করা। গামা গ্লোবিউলিন সংক্রমণ এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহায়তা করে।

তঞ্চন প্রোটিন প্রধানত যকৃতে উৎপন্ন হয়। কমপক্ষে ১২টি পদার্থ রয়েছে, যা "তঞ্চনের কারণ" নামে পরিচিত এবং সেগুলি জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে। এই গোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ তঞ্চন প্রোটিন হল ফাইব্রিনোজেন, যেটি রক্ত ​​জমাট বাঁধার অন্যতম প্রধান উপাদান। কলায় কোন ক্ষতি হলে তার প্রতিক্রিয়ায়, ফাইব্রিনোজেন ফাইব্রিন সুতো তৈরি করে, যা রক্ত ​​প্রবাহ বন্ধ করতে অনুচক্রিকা, লোহিত রক্তকণিকা এবং অন্যান্য অণুকে একত্র করে আঠার মত ব্যবহার করে এবং রক্ত পড়া বন্ধ করে। (এই অধ্যায়ে পরে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।)

রক্তরস শ্বাসযন্ত্রের গ্যাস, যেমন CO প্রচুর পরিমাণে (প্রায় ৯৭%) এবং O অল্প পরিমাণে (প্রায় ৩%), বিভিন্ন পুষ্টি (গ্লুকোজ, চর্বি), বিপাকীয় বিনিময়ের বর্জ্য (ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া), হরমোন এবং ভিটামিনও বহন করে।


লোহিত রক্ত ​​কণিকার ছবি।

লোহিত রক্ত ​​কণিকা[সম্পাদনা]

সাধারণভাবে ধারণা[সম্পাদনা]

লোহিত রক্ত ​​কণিকা (এরিথ্রোসাইট) "আরবিসি" নামেও পরিচিত। আরবিসিগুলি মাইলয়েড কলাতে গঠিত হয় যাকে সাধারণভাবে লাল অস্থি মজ্জা বলা হয়। শরীর যখন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় থাকে তখন হলুদ অস্থি মজ্জা, যা শরীরের মজ্জার চর্বিযুক্ত স্থানেও থাকে, সেখানেও আরবিসি তৈরি হয়। আরবিসি এর গঠনকে বলা হয় এরিথ্রোপোয়েসিস (এরিথ্রো/লোহিত বা লাল; পোয়েসিস/গঠন)। লোহিত রক্তকণিকা পরিপক্ক হওয়ার পর তার নিউক্লিয়াস নষ্ট হয়ে যায় এবং সেটি একটি দ্বি-অবতল, খাঁজযুক্ত আকৃতি ধারণ করে। তাদের ব্যাস প্রায় ৭-৮ মাইক্রোমিটার। শ্বেত রক্তকণিকার তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি লোহিত রক্তকণিকা থাকে। আরবিসি প্রায় ১২০ দিন বাঁচে এবং নিজেকে মেরামত করতে পারে না। আরবিসিতে হিমোগ্লোবিন থাকে যা ফুসফুস থেকে শরীরের বাকি অংশে, যেমন পেশীতে, অক্সিজেন পরিবহন করে। সেখানে এটি অক্সিজেন মুক্ত করে দেয়। হিমোগ্লোবিন তাদের শ্বসন কণার রঞ্জক থেকে লাল রঙ পায়।


আকার

আরবিসি-র আকার একটি চাকতির মত, যার মাঝখানে "চাপ পড়ে" প্রায় চ্যাপ্টা বলে মনে হয়; একে বলা হয় দ্বি-অবতল। এই বিশেষ আকৃতির সাহায্যে আরবিসি অক্সিজেন বহন করে ফুসফুসের ক্ষুদ্রতম কৈশিকগুলির মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারে। এই আকৃতির কারণে আরবিসিগুলি খাবারের থালার মত পরপর স্তূপের মত হয়ে শরীরের সংকীর্ণ রক্তনালীগুলির মধ্য দিয়ে মসৃণভাবে এবং প্রয়োজনমত বাঁক নিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আরবিসিগুলিতে কোন নিউক্লিয়াস থাকেনা (অর্থাৎ কোনও ডিএনএ নেই) এবং কোনও অঙ্গাণু (অর্গানেল) নেই, যার অর্থ এই কোষগুলি আমাদের ত্বক ও পেশীর কোষগুলির মতো নিজেদেরকে বিভক্ত করতে বা অবিকল অনুকৃতি নির্মাণ পারে না। আরবিসি-র আয়ু প্রায় ১২০ দিন, যাইহোক, যতক্ষণ আমাদের মাইলয়েড টিস্যু সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে, আমরা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২০-৩০ লক্ষ আরবিসি তৈরি করতে পারব। অর্থাৎ দিনে প্রায় ২০০০ কোটি! এর অর্থ দিনে যতগুলি নষ্ট হল তার থেকে বেশিই প্রতিস্থাপন করতে পারি।


প্রধান উপাদান

আরবিসি-র প্রধান উপাদান হল হিমোগ্লোবিন প্রোটিন, যেটি সংখ্যায় প্রতি কোষে প্রায় ২৫ কোটি থাকে। হিমোগ্লোবিন শব্দটি এসেছে "হিমো" অর্থ রক্ত ​​এবং "গ্লোবিন" অর্থ প্রোটিন থেকে। হিমোগ্লোবিন চার ধরণের প্রোটিন উপ এককের সমন্বয়ে গঠিত: চারটি পলিপেপটাইড গ্লোবিন শৃঙ্খল যাতে ১৪১ থেকে ১৪৬ অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। কোষের অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহনের ক্ষমতা আছে হিমোগ্লোবিনের। হিমোগ্লোবিন, লৌহ এবং অক্সিজেন একে অপরের সাথে ক্রিয়া ক'রে, আরবিসির উজ্জ্বল লাল রঙ তৈরি করে। আপনি এই ক্রিয়ার ফলে উপজাত পণ্যটিকে অক্সিহেমোগ্লোবিন বলতে পারেন। কার্বন মনোক্সাইড অক্সিজেনের চেয়ে দ্রুত হিমোগ্লোবিনের সাথে আবদ্ধ হয় এবং কয়েক ঘন্টা ধরে আবদ্ধ থাকে, যার ফলে হিমোগ্লোবিন সাময়িকভাবে অক্সিজেন পরিবহন করতে পারেনা। একটি লোহিত রক্তকণিকায় প্রায় ২০ কোটি হিমোগ্লোবিন অণু থাকে। যদি এত সংখ্যক হিমোগ্লোবিন কোষের ভেতরে না থেকে রক্তরসে থাকত তবে রক্ত ​​এত "ঘন" হত যে হৃদপিণ্ডের একে পাম্প করতে অসুবিধা হত। রক্তের ঘনত্বকে সান্দ্রতা বলে। রক্তের সান্দ্রতা যত বেশি হবে, তত বেশি ঘর্ষণ হবে এবং জোর করে রক্ত ​​পরিবহন করার জন্য আরও চাপের প্রয়োজন হবে।

স্বাভাবিক ক্রিয়া[সম্পাদনা]

এর প্রধান কাজ হল সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করা এবং রক্তের কার্বন ডাই অক্সাইডকে বহন করে শরীর থেকে বার করে দেওয়া। কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে যে যৌগ তৈরি হয় তাকে বলা হয় কার্বঅ্যামিনো – হিমোগ্লোবিন। রক্তের ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এই ভারসাম্য রক্তের অম্ল এবং ক্ষারের স্তর দ্বারা পরিমাপ করা যেতে পারে। একে বলা হয় পিএইচ। সাধারণভাবে রক্তের পিএইচ থাকে ৭.৩৫-৭.৪৫ এর মধ্যে; এই স্বাভাবিক রক্তকে বলা হয় ক্ষারীয় (জলের চেয়ে কম অম্লীয়)। পিএইচ-এর মান কমে গেলে তাকে বলা হবে অম্লীয়। এই অবস্থাকে অম্লরক্ততাও (অ্যাসিডোসিস) বলা হয়। পিএইচ ৭.৪৫ এর থেকে বেশি হলে তাকে "ক্ষাররক্ততা" (অ্যালকালোসিস) বলা হয়। সুস্থিতি (বা ভারসাম্য) বজায় রাখার জন্য রক্তে আরবিসি-র মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু থাকে যা ঝরে পড়া বা বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।

বাম থেকে ডানে দিকে এরিথ্রোসাইট, থ্রম্বোসাইট এবং লিউকোসাইট

বিনাশ

লোহিত রক্তকণিকা ভেঙ্গে গিয়ে হিমোগ্লোবিন মুক্ত হয়। হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন অংশটি অ্যামিনো অ্যাসিড উপাদানে ভেঙে যায়, যা শরীরে পুনর্ব্যবহৃত হয়। লৌহ অংশ উদ্ধার করা হয় এবং পুনরায় ব্যবহার করার জন্য অস্থি মজ্জাতে ফিরে আসে। অণুর হিম অংশটিতে একটি রাসায়নিক পরিবর্তন হয় এবং তারপর পিত্ত রস (বিলিরুবিন) হিসেবে যকৃৎ থেকে নির্গত হয়। ভেঙ্গে যাওয়ার পর হেম অংশ মলের রঙ এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থেঁতলে যাওয়ার পরে আপনার ত্বকের রঙ পরিবর্তনের জন্য দায়ী হয়।

শ্বেত রক্ত ​​কণিকা[সম্পাদনা]

আকার

শ্বেত রক্তকণিকা লোহিত রক্ত কণিকার থেকে বড় হয়, তারা সাধারণত ১০-১৪ মাইক্রোমিটার ব্যাসের আকারের হয়। শ্বেত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে না বলে সেগুলি স্বচ্ছ হয়। অনেক সময় রেখাচিত্র বা ছবিতে শ্বেত রক্তকণিকাগুলিকে নীল রঙের দেখানো হয়, তার প্রধান কারণ হল কোষগুলি দেখতে পাবার জন্য সেগুলি নীল রঙে রঞ্জিত করা হয়। শ্বেত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে, যা কিছুটা খণ্ডিত অবস্থায় থাকে এবং সেগুলি ঝিল্লির ভেতরে ইলেকট্রন দ্বারা বেষ্টিত থাকে।

স্বাভাবিক ক্রিয়া[সম্পাদনা]

শ্বেত রক্তকণিকা (লিউকোসাইট) "ডব্লিউবিসি" নামেও পরিচিত। শ্বেত রক্তকণিকা অস্থি মজ্জাতে তৈরি হয় তবে তারা রক্ত ​​এবং লসিকা তন্ত্রেও বিভাজিত হয়। এগুলিকে সাধারণত অ্যামিবয়েড (যারা অস্থায়ী প্রক্ষেপণের মাধ্যমে নড়াচড়া করে বা খাদ্য গ্রহণ করে, অস্থায়ী প্রক্ষেপণকে সিউডোপড বলা হয়, যার অর্থ "ছদ্ম পা") কোষ বলা হয় এবং কৈশিক নালীগুলির একটি অন্তর্নিহিত জালিকার মাধ্যমে সংবহনতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসে। ডব্লিউবিসি-এর বিভিন্ন প্রকার হল বেসোফিল, ইওসিনোফিল, নিউট্রোফিল, মনোসাইট, বি- এবং টি-কোষ লিম্ফোসাইট। বেসোফিল, ইওসিনোফিল এবং নিউট্রোফিল সবই দানাযুক্ত লিউকোসাইট। লিম্ফোসাইট এবং মনোসাইট হল দানা বিহীন লিউকোসাইট। বেসোফিল হিস্টামিন সঞ্চয় করে এবং সংশ্লেষ করে যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ। তারা কলায় প্রবেশ করে এবং "মাস্ট কোষ"এর মত ব্যবহার করে, এবং হিস্টামিন নিঃসরণের মাধ্যমে আহত কলায় রক্ত ​​​​প্রবাহে সাহায্য করে। ইওসিনোফিল হল কেমোটক্সিক এবং তারা পরজীবীগুলিকে হত্যা করে। সংক্রমণ হলে নিউট্রোফিলই প্রথম কাজ করে এবং এটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া শ্বেত রক্তকণিকা। নিউট্রোফিলগুলি ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সাথে লড়াই করে, যার অর্থ হল সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন জীবাণুগুলিকে তারা গ্রাস করে। একটি নিউট্রোফিলের জীবনকাল মাত্র ১২-৪৮ ঘন্টা। মনোসাইট হল শ্বেত রক্তকণিকাগুলির মধ্যে বৃহত্তম এবং দেহকে রক্ষা করার জন্য রক্ষাকারী কোষগুলির সমাবেশ ঘটায়। মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়া করে এবং এদের ম্যাক্রোফেজও বলা হয়। লিম্ফোসাইট আমাদের অনাক্রম্য (ইমিউন) প্রতিক্রিয়ায় সাহায্য করে। লিম্ফোসাইট দুটি ধরণের হয়: বি- কোষ এবং টি- কোষ। বি-লিম্ফোসাইটগুলি যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে তারা জীবাণু খুঁজে বার করে সেগুলিকে ধ্বংসের জন্য চিহ্নিত করে। টি-লিম্ফোসাইট শরীরের জন্য যাকেই অস্বাভাবিক মনে করে তাকেই মেরে ফেলে।

ডব্লিউবিসিগুলিকে ফেনোটাইপ (একটি জীবের পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্য) দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে ডব্লিউবিসিগুলি দেখে তাদের সনাক্ত করা যায়। দানাযুক্ত ফেনোটাইপগুলি নীল রঙে রঞ্জিত হতে পারে। দানা বিহীন ফেনোটাইপ লাল রঙে রঞ্জিত হতে পারে। দানাযুক্ত কোষগুলির মধ্যে নিউট্রোফিলের পরিমান ৫০-৭০%, ইওসিনোফিল ২-৪% এবং বেসোফিল ০-১%। দানা বিহীন কোষগুলির মধ্যে মনোসাইট আছে ২-৮%, বি এবং টি লিম্ফোসাইট আছে ২০-৩০%। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন, ডব্লিউবিসি-এর কোষগুলির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এই বিশেষ কোষগুলো আমাদের শরীরকে রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তারা যে শুধুমাত্র আমাদের অনাক্রম্যতাকে সাহায্য করে তাই নয়, এর সঙ্গে তারা দেহের অধিবিষ (টক্সিন), বর্জ্য এবং অস্বাভাবিক বা ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে বার করে দেয়। সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে ডব্লিউবিসি-এর প্রধান কাজ হচ্ছে ফ্যাগোসাইটিক যার অর্থ কোষকে গ্রাস করা বা গিলে ফেলা।

অণুচক্রিকা[সম্পাদনা]

সদ্য সংগৃহীত অণুচক্রিকার একটি ২৫০ মিলি ব্যাগ।

অণুচক্রিকা বা যাকে থ্রম্বোসাইটও বলা হয়, সেটি হল ঝিল্লি-আবদ্ধ বিভাজিত কোষ। অণুচক্রিকায় কোনো নিউক্লিয়াস থাকেনা, কোষের ব্যাস হয় এক থেকে দুই মাইক্রোমিটারের মধ্যে এবং সংখ্যায় লোহিত রক্ত ​​​​কোষের প্রায় ১/১০ থেকে ১/৩০ ভাগের মত হয়। পুরো রক্তের ১% এরও কম অণুচক্রিকা থাকে। এগুলি মেগাক্যারিওসাইট নামক বৃহৎ কোষের খণ্ডিত হওয়ার ফলে তৈরি হয়, - মেগাক্যারিওসাইট হল অস্থি মজ্জার মাতৃ কোষ থেকে প্রাপ্ত কোষ। প্রতিদিন ২০০০ কোটি হারে অণুচক্রিকা উৎপাদিত হয়। তাদের উৎপাদন থ্রম্বোপোয়েটিন নামক হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একটি অণুচক্রিকার জীবনকাল ৮-১০ দিন। অণুচক্রিকাগুলি খণ্ডিত রক্তনালীতে গিয়ে জড়ো হয় এবং তাদের আঠালো পৃষ্ঠ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এটি হেমোস্ট্যাসিস ("রক্ত বন্ধ করা") প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। অণুচক্রিকা থেকে 'থ্রম্বক্সেন এ' নিঃসরণের ফলে স্থানীয়ভাবে অণুচক্রিকাগুলি একত্রিত হয়, সেরোটোনিন নিঃসরণের ফলে রক্তনালীর সংকোচন ঘটে, এবং থ্রম্বোপ্লাস্টিন নিঃসরণের ফলে রক্ত ​​জমাট বাঁধে।

হেমোস্ট্যাসিস (তঞ্চন বা জমাট বাঁধা)[সম্পাদনা]

হেমোস্ট্যাসিস হল আঘাতের পর রক্তক্ষরণ বা রক্তের প্রবাহ বন্ধ করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। (হেমো = রক্ত; স্ট্যাসিস = স্থবির)। এর তিনটি পর্যায় রয়েছে: (১) রক্তনালীর তীব্র সংকোচন (ভাসোকনস্ট্রিকশন), (২) একটি অণুচক্রিকা বন্ধক গঠন এবং (৩) রক্ত জমাট বাঁধা বা তঞ্চন। একবার রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে, কলা মেরামত শুরু হয়ে যায়।

রক্তনালীর তীব্র সংকোচন বা ভাসোকনস্ট্রিকশন: একজন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে, একটি রক্তনালীর ছিঁড়ে যাওয়া এবং এন্ডোথেলিয়াল কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরপরই, রক্তনালীর সংকোচন ঘটে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রক্ত ​​​​প্রবাহ ধীর হয়ে যায়। রক্তনালীর দেওয়ালের মসৃণ পেশিগুলির খিঁচুনি বা তীব্র সংকোচন ঘটে, যার ফলে রক্তনালী সংকুচিত হয়। যদি রক্তনালী ছোট হয়, তাহলে খিঁচুনি ভিতরের দেয়ালগুলিকে একত্রে সংকুচিত করে এবং রক্তপাত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে সক্ষম হতে পারে। যদি রক্তনালীগুলি মাঝারি থেকে বড় আকারের হয়, তাহলে পেশি সংকোচনের ফলে রক্তের তাৎক্ষণিক বহিঃপ্রবাহ ধীর হয়ে যায়। এতে ক্ষতি কমে যায় কিন্তু তারপরও হেমোস্ট্যাসিসের পরবর্তী ধাপগুলির জন্য রক্তনালীটিকে প্রস্তুত করা হয়। এই রক্তনালীর তীব্র সংকোচন সাধারণত প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য স্থায়ী হয়, যা হেমোস্ট্যাসিসের পরবর্তী দুটি ধাপের কাজ করার জন্য যথেষ্ট সময়।

একটি অণুচক্রিকা বন্ধক গঠন: আঘাতের ২০ সেকেন্ডের মধ্যে, রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। অনেকেরই বিশ্বাস আছে, ত্বকের একটি কাটা অংশে জমাট বাঁধা শুরু হয় বাতাস লেগে বা শুকিয়ে গিয়ে। কিন্তু আসলে এটি অণুচক্রিকার কার্যপ্রণালী দ্বারা শুরু হয়। তারা রক্তনালীর এন্ডোথেলিয়ামের কোলাজেন দ্বারা সক্রিয় হয় এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত হয়। সক্রিয় অণুচক্রিকাগুলি তারপর তাদের ক্ষুদ্র দানার আধেয় মুক্ত করে দেয়। সেগুলিতে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ থাকে যা আরও অণুচক্রিকা সক্রিয়করণকে উদ্দীপিত করে এবং হেমোস্ট্যাটিক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।

যখন একটি রক্তনালীর আস্তরণ ভেঙ্গে যায় এবং এন্ডোথেলিয়াল কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন রক্তনালীর দেওয়ালের কোলাজেন প্রোটিন উন্মুক্ত হয়ে যায়, অণুচক্রিকাগুলি ফুলে যায়, তারা গোলাকার থেকে কাঁটাযুক্ত আকারে পরিবর্তিত হয়, ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালীর দেওয়ালের সঙ্গে এবং একে অপরের সঙ্গে লেগে একসাথে জমাট বাঁধতে শুরু করে। আরও অণুচক্রিকা একত্রিত হওয়া এবং একই রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এটি চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার ফলে একটি অণুচক্রিকা বন্ধক তৈরি হয় যা আহত স্থানটিকে বন্ধ করে দেয়। আঘাতটি ছোট হলে, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অণুচক্রিকা বন্ধক গঠন করে এটি বন্ধ করতে সক্ষম হতে পারে। যদি ক্ষতি আরও গুরুতর হয়, রক্ত ​​জমাট বাঁধার পরবর্তী ধাপ শুরু হয়। অণুচক্রিকার মধ্যে নিঃসরণকারী দানা থাকে। যখন অণুচক্রিকা রক্তনালীর দেওয়ালের প্রোটিনের সাথে লেগে যায়, তারা দানাগুলিকে মুক্ত করে দেয়, যাদের থেকে এডিপি (অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট), সেরোটোনিন এবং থ্রম্বক্সেন এ২ বেরিয়ে আসে।

রক্ত জমাট বাঁধা শুরু: অণুচক্রিকা বন্ধক রক্তপাত বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট না হলে, হেমোস্ট্যাসিসের তৃতীয় পর্যায় শুরু হয়: রক্ত ​​​​জমাট বাঁধা প্রক্রিয়া। প্রথমত, রক্ত ​​তরল থেকে জেলির মত বা আঠার মত থকথকে পদার্থে পরিবর্তিত হয়। রক্তে অন্তত ১২টি পদার্থ থাকে যাদের বলা হয় জমাট বাঁধার কারণ। তারা রাসায়নিক বিক্রিয়ার একটি ক্রমে অংশ নেয় যা অবশেষে রক্তের মধ্যে প্রোটিন তন্তুগুলির একটি জাল তৈরি করে। প্রতিটি জমাট বাঁধার কারণ এর একটি খুব নির্দিষ্ট কাজ আছে। আমরা এখানে তাদের মধ্যে মাত্র তিনটি পদার্থ নিয়ে আলোচনা করব: প্রোথ্রম্বিন, থ্রম্বিন এবং ফাইব্রিন। প্রোথ্রম্বিন এবং ফাইব্রিনোজেন হল এক ধরণের প্রোটিন যা যকৃতে উৎপন্ন হয়ে রক্তে জমা হয়।

  • প্রোথ্রম্বিন: যখন রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন রক্তনালী এবং আশেপাশের অণুচক্রিকাগুলি প্রোথ্রম্বিন সক্রিয়ক নামক একটি পদার্থ নির্গত করতে উদ্দীপিত হয়। এর ফলে রক্তরসের প্রোটিন প্রোথ্রোম্বিন থ্রম্বিন নামক উৎসেচকে রূপান্তরিত হয়। এই প্রতিক্রিয়ার জন্য ক্যালসিয়াম আয়ন প্রয়োজন।
  • থ্রম্বিন: এই থ্রম্বিন ফাইব্রিনোজেন নামক একটি দ্রবণীয় প্লাজমা প্রোটিনকে দীর্ঘ অদ্রবণীয় তন্তু বা প্রোটিনের সুতো ফাইব্রিন-এ রূপান্তরিত হতে সহায়তা করে।
  • ফাইব্রিন: ফাইব্রিনোজেন থ্রম্বিন দ্বারা বিভক্ত হয়ে তার সক্রিয় রূপ, "ফাইব্রিন" গঠন করে। ফাইব্রিন সুতোগুলি রক্তনালীর ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে অণুচক্রিকা বন্ধকের চারপাশে কুণ্ডলী করে সুতোগুলির একটি পরস্পর আবদ্ধ জালিকা তৈরি করে এবং তার ফলে রক্ত জমাট বাঁধার একটি কাঠামো তৈরি হয়। তন্তুর এই জালটি অণুচক্রিকা, রক্তকণিকা এবং অন্যান্য অণুগুলিকে ধরে নিয়ে আঘাতের জায়গায় শক্ত করে আটকে রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাথমিক জমাট বাঁধা হিসাবে কাজ করে। এই অস্থায়ী ফাইব্রিন গুচ্ছ এক মিনিটেরও কম সময়ে তৈরি হতে পারে এবং সাধারণত রক্ত ​​প্রবাহ কমাতে ভালো কাজ করে। এরপরে, গুচ্ছের অণুচক্রিকাগুলি সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। এর ফলে এই গুচ্ছ শক্ত হয়ে যায় এবং রক্তনালীর দেওয়ালগুলিকে একত্রিত করে ফেলে। সাধারণত, গুচ্ছ গঠন এবং শক্ত করার এই পুরো প্রক্রিয়াটি আধ ঘন্টারও কম সময় নেয়।

শোষণকারী রাসায়নিক, যেমন জিওলাইট এবং অন্যান্য হেমোস্ট্যাটিক মাধ্যম, ব্যবহার করেও গুরুতর আঘাতের স্থানগুলি দ্রুত বন্ধ করার ক্ষেত্রে অনুসন্ধান চলছে।

এবিও বিভাগ পদ্ধতি[সম্পাদনা]

এবিও রক্তের শ্রেণীবিভাগকে লোহিত রক্ত ​​কণিকার (আরবিসি) পৃষ্ঠতলে উপস্থিত পদার্থ দ্বারা উপস্থাপিত করা হয়। এই পদার্থগুলি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং কার্বোহাইড্রেটের নির্দিষ্ট ক্রম রয়েছে যা অ্যান্টিজেন জাতীয়। আরবিসির পৃষ্ঠতলে থাকার পাশাপাশি, এই অ্যান্টিজেনগুলির মধ্যে কিছু কিছু অন্যান্য কলার কোষেও উপস্থিত থাকে। একটি সম্পূর্ণ রক্তের নমুনা আরবিসি-র পৃষ্ঠতলে অবস্থিত ২৯টি পদার্থের একটি দলকে বর্ণনা করে, এবং একজন ব্যক্তির রক্তের প্রকার, রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেনের অনেক সম্ভাব্য সংমিশ্রণের মধ্যে একটি। সাধারণত শুধুমাত্র এবিও রক্তের শ্রেণী বিভাগ এবং রিসাস ডি অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি (এটি রিসাস ফ্যাক্টর বা আরএইচ ফ্যাক্টর নামেও পরিচিত) নির্ধারণ করা হয় এবং রক্তের ধরন বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। ৪০০ টিরও বেশি বিভিন্ন রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে অনেকগুলি খুবই বিরল। যদি কোন ব্যক্তি রক্তের গ্রুপের এমন অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে আসে যা তার শরীরে নেই, তাহলে সেই ব্যক্তির শরীর সেই অ্যান্টিজেনের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে; শরীরের অনাক্রম্যতা নির্দিষ্ট একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা একটি নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেনের সাথে বিশেষভাবে আবদ্ধ হয় এবং সেই অচেনা অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে একটি ইমিউনোলজিক্যাল (অনাক্রম্যতা এবং অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়ার কোষ-মধ্যবর্তী এবং জীবদেহ নিসৃত রসসংক্রান্ত দিক) স্মৃতি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডিগুলি সঞ্চারিত লোহিত রক্তকণিকার (বা অন্যান্য কলা কোষ) পৃষ্ঠতলের অ্যান্টিজেনের সাথে আবদ্ধ হতে পারে। এর ফলে অনাক্রম্যতার অন্যান্য উপাদানগুলি চলে এসে কোষগুলিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত কলা বা রক্ত সঞ্চারণের জন্য উপযুক্ত রক্ত ​​শনাক্ত করতে একজন ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

পৃষ্ঠতলের অ্যান্টিজেন[সম্পাদনা]

একটি অ্যালিল (বা খুব ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত জিন) থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন আরবিসি পৃষ্ঠতলের অ্যান্টিজেনকে সম্মিলিতভাবে একটি রক্তের গ্রুপ পদ্ধতি (বা রক্তের গ্রুপ) হিসাবে নাম দেওয়া হয়েছে। রক্ত সঞ্চারনের প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রক্তের গ্রুপ সিস্টেম আবিষ্কৃত হয়েছিল, ১৯০১ সালে এবিও গ্রুপ এবং ১৯৩৭ সালে রিসাস গ্রুপ। সাধারণ নামকরণে একটি রক্তের গ্রুপকে নাম দেওয়া হয়েছে এ পজিটিভ, ও নেগেটিভ ইত্যাদি অক্ষর দিয়ে, যাদের অক্ষরগুলি এবিও গ্রুপকে বোঝায় এবং অন্যটি রিসাস গ্রুপের আরএইচডি অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি/অনুপস্থিতিতে ইতিবাচক/নেতিবাচক। ১৯৪৫ সালে কুম্ব পরীক্ষার বিকাশ এবং রক্ত সঞ্চারন ওষুধ আসার পর আরও রক্তের গ্রুপ আবিষ্কৃত হয়েছে।

রক্তের প্রকারের সামঞ্জস্যতা

রক্তের গ্রুপ এবি যেসব ব্যক্তির আরবিসি-র পৃষ্ঠতলে এ এবং বি উভয় অ্যান্টিজেনই থাকে, এবং তাদের রক্তের সিরামে এ বা বি অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবডি থাকে না। অতএব, এবি রক্তের গ্রুপের একজন ব্যক্তি যে কোনো গ্রুপ থেকে রক্ত ​​গ্রহণ করতে পারে (যদিও এবি বাঞ্ছনীয়), কিন্তু শুধুমাত্র অন্য এবি রক্তের গ্রুপের কোন ব্যক্তিকে রক্ত ​​দিতে পারে। এবি রক্ত ​​"সার্বজনীন গ্রহীতা" নামেও পরিচিত।

রক্তের গ্রুপ এ যেসব ব্যক্তিদের আরবিসি-র পৃষ্ঠতলে শুধু এ অ্যান্টিজেনই আছে, এবং বি অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে আইজিএম (IgM) অ্যান্টিবডি ধারণকারী রক্তের সিরাম রয়েছে। অতএব, এ রক্তের গ্রুপের একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র এ বা ও গ্রুপের ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত ​​গ্রহণ করতে পারে (যদিও এ বাঞ্ছনীয়), এবং এ বা এবি গ্রুপের ব্যক্তিদের রক্ত ​​দিতে পারে।

রক্তের গ্রুপ বি যেসব ব্যক্তিদের আরবিসি-র পৃষ্ঠতলে শুধু বি অ্যান্টিজেনই আছে, এবং এ অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে আইজিএম (IgM) অ্যান্টিবডি ধারণকারী রক্তের সিরাম রয়েছে। অতএব, বি রক্তের গ্রুপের একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র বি বা ও গ্রুপের ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত ​​গ্রহণ করতে পারে (যদিও বি বাঞ্ছনীয়), এবং বি বা এবি গ্রুপের ব্যক্তিদের রক্ত ​​দিতে পারে।

রক্তের গ্রুপ ও যেসব ব্যক্তির আরবিসি-র পৃষ্ঠতলে এ অথবা বি কোন অ্যান্টিজেনই থাকেনা, কিন্তু তাদের রক্তের সিরামে এ এবং বি উভয় অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে আইজিএম (IgM) অ্যান্টিবডি রয়েছে। অতএব, ও রক্তের গ্রুপের একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র ও গ্রুপের ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত ​​গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু তারা যেকোন এবিও রক্তের গ্রুপের (যেমন এ, বি, ও বা এবি) ব্যক্তিদের রক্ত ​​দান করতে পারে। ও রক্তকে "সার্বজনীন দাতা" বলা হয়।

বংশগতি[সম্পাদনা]

রক্তের ধরন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায় এবং পিতামাতা উভয়ের রক্তের প্রকারই তাতে থাকে। এবিও রক্তের ধরন তিনটি অ্যালিল সহ একটি একক জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়: আই (i), আইএ (IA), এবং আইবি (IB)। জিনটি একটি উৎসেচককে এনকোড (তথ্যের কিছু অংশ যোগাযোগের এক পদ্ধতি থেকে অন্যটিতে রূপান্তর করা) করে যা লোহিত রক্তকণিকার অ্যান্টিজেনের কার্বোহাইড্রেট আধেয়কে সংশোধন করে।

আইএ টাইপ এ দেয়, আইবি টাইপ বি দেয়, আই টাইপ ও দেয়

রক্তের গ্রুপের বংশগতি
মা/বাবা বি এবি
ও, এ ও, বি এ, বি
ও, এ ও, এ ও, এ, বি, এবি এ, বি, এবি
বি ও, বি ও, এ, বি, এবি ও, বি এ, বি, এবি
এবি এ, বি এ, বি, এবি এ, বি, এবি এ, বি, এবি

'আই'-এর ওপর 'আইএ' এবং 'আইবি'-এর প্রাবল্য থাকে, তাই 'আই-আই' মানুষের রক্তের গ্রুপ 'ও', 'আইএ-আইএ' বা 'আইএ-আই' এর গ্রুপ 'এ', এবং 'আইবি-আইবি' বা 'আইবি-আই' এর গ্রুপ 'বি'। 'আইএ-আইবি' লোকেদের উভয় ফেনোটাইপ (একটি পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্য) রয়েছে কারণ এ এবং বি উভয়েই প্রবল, যার মানে হল যে এ গ্রুপ এবং বি গ্রুপের পিতামাতার একজন এবি গ্রুপের সন্তান থাকতে পারে। সুতরাং, এবি গ্রুপের পিতামাতার পক্ষে 'ও' গ্রুপের সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম (তবে এটি অবৈধতার সরাসরি প্রমাণ নয়): সিআইএস-এবি ফেনোটাইপের একটি একক উৎসেচক রয়েছে যেটি এ এবং বি উভয় অ্যান্টিজেন তৈরি করে। তৈরি হওয়া লোহিত রক্তকণিকাগুলি সাধারণত একই স্তরে এ বা বি অ্যান্টিজেনকে প্রকাশ করে না, যা সাধারণ এ বা বি গ্রুপের লোহিত রক্তকণিকায় প্রত্যাশিত। এই তত্ত্ব আপাতদৃষ্টিতে জিনগতভাবে অসম্ভব রক্তের গ্রুপের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে।

আরএইচ ফ্যাক্টর

অনেকের লোহিত রক্ত ​​কণিকায় আরএইচ ফ্যাক্টর থাকে। আরএইচ বাহকদের মধ্যে আরএইচ ফ্যাক্টরের জন্য কোন অ্যান্টিবডি থাকেনা, কিন্তু আরএইচ-এর সংস্পর্শে এলে সেগুলি তৈরি করতে পারে। সাধারণত আরএইচ দেখা যায় যখন অ্যান্টি-আরএইচ অ্যান্টিবডিগুলি শিশু জন্মের আগে মায়ের অমরা থেকে শিশুর মধ্যে প্রবেশ করে। আরএইচ ফ্যাক্টর শিশুর মধ্যে প্রবেশ করে শিশুর লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করে। একে বলা হয় হেমোলাইটিক ডিজিজ।

রক্ত/রক্তরস সঞ্চারনে সামঞ্জস্য[সম্পাদনা]

দাতা এবং গ্রহীতার রক্ত অসঙ্গতিপূর্ণ হলে রক্ত ​​​​সঞ্চারনের পর গুরুতর তীব্র শারীরিক প্রতিরক্ষাজনিত প্রতিক্রিয়া, লালিকানাশ (হেমোলাইসিস বা লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া), বৃক্কের (কিডনি) অকৃতকার্যতা, ধাক্কা এবং কখনও কখনও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অ্যান্টিবডিগুলি অত্যন্ত সক্রিয় হতে পারে এবং আরবিসি-কে আক্রমণ করতে পারে। এছাড়াও তারা পরিপূরক প্রণালীর উপাদানগুলিকে আবদ্ধ করতে পারে যাতে সঞ্চারিত রক্তের ব্যাপক লালিকানাশ হয়।

সঞ্চারিত রক্তের ফলে প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে আদর্শ পরিস্থিতিতে একজন রোগীকে তার নিজস্ব রক্ত ​​বা বিশেষ-নির্দিষ্ট রক্ত গ্রহণ করা উচিত। যদি সময় পাওয়া যায়, ​​গ্রহীতা এবং দাতা উভয়ের রক্তের গ্রুপ মেলানো ছাড়াও রক্তের ক্রস-ম্যাচিং-এর মাধ্যমে ঝুঁকি আরও হ্রাস পাবে। ক্রস-ম্যাচিং হল দাতার রক্তের নমুনার লোহিত রক্তকণিকার সাথে গ্রহীতার রক্তরস যোগ করে মিশ্রিত করা এবং মিশ্রণটি জমাট বেঁধে যাচ্ছে কিনা বা রক্তকে নষ্ট করে দিচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা। ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রকর্মীরা সাধারণত একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে অভিশ্লেষণ (অ্যাগ্লুটিনেশন) পরীক্ষা করে এবং যদি অভিশ্লেষণ ঘটে তবে সেই নির্দিষ্ট দাতার রক্ত ​​সেই নির্দিষ্ট গ্রহীতার কাছে সঞ্চারিত করা যাবে না। রক্ত সঞ্চারন একটি সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি এবং এটি অত্যাবশ্যক যে সমস্ত রক্তের নমুনা সঠিকভাবে যেন চিহ্নিত করা হয়, তাই ক্রস-ম্যাচিংয়ের ক্ষেত্রে লেবেলিং জরুরী এবং একে মানোপযোগী করা হয়েছে আইএসবিটি ১২৮ নামে পরিচিত একটি বারকোড পদ্ধতি ব্যবহার করে।

রক্তরস সামঞ্জস্য ছক
দাতা গ্রহীতা
বি এবি
ঠিক আছে ঠিক আছে ঠিক আছে ঠিক আছে
ঠিক আছে ঠিক আছে
বি ঠিক আছে ঠিক আছে
এবি ঠিক আছে

রক্তরস সঞ্চারণ করার সময়, এটা মনে রাখতে হবে যে রক্তরসে অ্যান্টিজেন থাকেনা কিন্তু সেটি অ্যান্টিবডি বহন করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি গ্রুপ এ, বি বা এবি কে ও গ্রুপের রক্তরস দিতে পারবে না, কারণ ও গ্রুপের একজন ব্যক্তির রক্তে এ এবং বি অ্যান্টিবডি রয়েছে এবং প্রাপকের একটি অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া থাকবে। অন্যদিকে একজন এবি দাতা যে কাউকে রক্তরস দিতে পারবে, যেহেতু তাদের রক্তরসে কোনো অ্যান্টিবডি নেই।

ডানদিকের ছকটি রক্তরস সঞ্চারণের জন্য, এবং এটি আরবিসি সঞ্চারণের ঠিক বিপরীত। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষেরই রিসাস ফ্যাক্টরের জন্য অ্যান্টিবডি থাকেনা (এটি শুধুমাত্র ঘটে হয় গর্ভাবস্থার মাধ্যমে বা রক্ত ​​সঞ্চারনের মাধ্যমে), তাই আরএইচ ফ্যাক্টরকে হিসেবে ধরা হয় না।

নবজাতকের হেমোলাইটিক রোগ[সম্পাদনা]

অনেক সময়েই একজন গর্ভবতী মহিলা তার নিজের রক্তের থেকে ভিন্ন রক্তের গ্রুপের একটি ভ্রূণ বহন করে, এবং কখনও কখনও মায়ের শরীর ভ্রূণের লোহিত রক্তকণিকার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যার ফলে ভ্রূণের লোহিত কণার সংখ্যা কমে যায়, এই অবস্থাটি নবজাতকের হেমোলাইটিক রোগ হিসাবে পরিচিত।

নবজাতকের হেমোলাইটিক রোগ, (এইচডিএন নামেও পরিচিত) হল একটি অ্যালোইমিউন (নিজের দেহের নয় এমন কোষকলাকে প্রত্যাখ্যান)। এটি একটি ভ্রূণে দেখতে পাওয়া যায় যখন মায়ের দেহে উৎপাদিত আইজিজি (IgG) অ্যান্টিবডি যেগুলি অমরার মধ্য দিয়ে ভ্রূণে সঞ্চালিত হয় তার মধ্যে কিছু লোহিত রক্ত ​​​​কোষকে আক্রমণ করে। ভ্রূণের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে যায় এবং ভ্রূণ রেটিকুলোসাইটোসিস (অপরিণত কোষযুক্ত) এবং অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ভ্রূণের রোগটি হালকা থেকে খুব গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে, এবং হাইড্রপস ফেটালিস (ভ্রূণের শরীরের দুই থেকে তিন স্থানে অতিরিক্ত জল জমে যাওয়া) / হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে ভ্রূণের মৃত্যু ঘটতে পারে। রোগটি মাঝারি বা গুরুতর হলে ভ্রূণের রক্তে অনেক এরিথ্রোব্লাস্ট উপস্থিত থাকে এবং তাই রোগের এই রূপকে এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফেটালিস বলা যেতে পারে।

জন্মের আগে, চিকিৎসার বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে জরায়ুর মধ্যে দিয়ে ভ্রূণে রক্ত সঞ্চারণ বা প্রসবের সময় এগিয়ে আনা। প্রসব আগে করাতে গেলে যেগুলি দেখতে হয় সেগুলি হল,- ভ্রূণের ফুসফুসের সম্পূর্ণ গঠন হয়েছে কিনা, গর্ভাবস্থার ৩৫ থেকে ৩৭ সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে কিনা এবং ভ্রূণের কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা। মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডির সঞ্চালনের মাত্রা ৭৫% কমাতে রক্তরস বিনিময়ও করা যেতে পারে।

জন্মের পরে, অসুস্থতার তীব্রতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসার অবস্থা, তবে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে তাপমাত্রা স্থিতিশীলকরণ এবং পর্যবেক্ষণ, আলোক চিকিৎসা, শিশুর দেহে সামঞ্জস্যপূর্ণ লোহিত রক্ত কণিকা সঞ্চারণ, শিশু এবং মা উভয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রক্তের বিনিময় সঞ্চারণ, শরীরে অতিরিক্ত অ্যাসিড জমা (অ্যাসিডোসিস) সংশোধনের জন্য সোডিয়াম বাইকার্বোনেটের ব্যবস্থা করা এবং / অথবা শ্বসনে বাইরে থেকে সাহায্য।

আরএইচ নেগেটিভ মায়েদের যাদের গর্ভাবস্থায় আরএইচ পজিটিভ শিশু আছে, তাদের আরএইচ ইমিউন গ্লোবিউলিন (RhIG) দেওয়া হয়, যেটি রোগঅ্যাম (একটি ওষুধ যা মায়ের রক্তের সেই অ্যান্টিবডি তৈরি করতে বাধা দেয় যেগুলি ভ্রূণের আরএইচ-পজিটিভ রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে) নামেও পরিচিত। এটি গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে ডি অ্যান্টিজেনের সংবেদনশীলতা রোধ করে। মায়ের শরীরে অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ার আগে এবং তার সঙ্গে অ্যান্টি-ডি আইজিজি (IgG) তৈরি করতে সক্ষম হওয়ার আগে এটি ভ্রূণের লোহিত রক্ত কোষগুলির সঙ্গে ডি অ্যান্টিজেনকে আবদ্ধ করে ফেলে। জন্মের পূর্বকালীন আরএইচআইজি-এর প্রয়োগের একটি ত্রুটি হল যে যখন মাকে পরীক্ষা করা হয় তখন এটি একটি পজিটিভ অ্যান্টিবডি স্ক্রীন সৃষ্টি করে যাকে অ্যান্টিবডি উৎপাদনের জন্য অনাক্রম্যতার কারণ থেকে আলাদা করা যায় না।

রক্তের ব্যাধি[সম্পাদনা]

ভন উইলেব্র্যান্ড রোগ[সম্পাদনা]

সবচেয়ে সাধারণ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রক্তপাতজনিত ব্যাধি, ভন উইলেব্র্যান্ড রোগ, পুরুষ এবং মহিলা উভয়কেই সমানভাবে প্রভাবিত করে। ভন উইলেব্র্যান্ড রোগে হিমোফিলিয়ার মতই রক্ত সঠিকভাবে জমাট বাঁধতে পারেনা। যারা ভন উইলেব্র্যান্ড রোগে আক্রান্ত তাদের শরীরে নিম্নলিখিত এক বা একাধিক জিনিস লক্ষিত হবে - কম মাত্রায় ভন উইলেব্র্যান্ড ফ্যাক্টর (একটি প্রোটিন যা রক্ত ​​​​জমাট বাঁধতে সাহায্য করে), এবং/অথবা তাদের ভন উইলেব্র্যান্ড ফ্যাক্টর সঠিকভাবে কাজ করে না। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটি রোগ (পিতা-মাতা উভয়েরই অবদান থাকতে পারে), বিরল ক্ষেত্রে এটি একটি নিজস্ব অর্জিত ব্যাধিও হতে পারে।

ভন উইলেব্র্যান্ড রোগ তিন ধরণের হতে পারে: প্রকার ১, যা রোগের সবচেয়ে হালকা এবং সবচেয়ে সাধারণ রূপ; প্রকার ২, যার চারটি উপপ্রকার রয়েছে (২এ, ২বি, ২এম, এবং ২এন) এবং এর তীব্রতা হালকা থেকে মাঝারি পর্যন্ত; এবং পরিশেষে, প্রকার ৩, যা খুবই বিরল এবং সবচেয়ে মারাত্মক রূপ।

প্রকার ১

প্রথম ধরণের ভন উইলেব্র্যান্ড রোগের ক্ষেত্রে, ভন উইলেব্র্যান্ড ফ্যাক্টরের মাত্রা খুব কম থাকে। ফ্যাক্টর ৮ (এক ধরণের প্রোটিন, রক্ত তঞ্চনে সহায়তা করে) এর মাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে পারে। এই ধরণটি এই রোগের সবচেয়ে হালকা এবং সবচেয়ে সাধারণ রূপ। নির্ণীত ভন উইলেব্র্যান্ড রোগীর ৪ জনের মধ্যে প্রায় ৩ জনই এই ব্যাধিতে আক্রান্ত।

প্রকার ২

দ্বিতীয় ধরণের ভন উইলেব্র্যান্ড রোগের ক্ষেত্রে, ভন উইলেব্র্যান্ড ফ্যাক্টরের কোন ত্রুটি থাকার ফলে এটি সঠিকভাবে কাজ করে না। এই প্রকারটি ২এ, ২বি, ২এম, এবং ২এন এ বিভক্ত। প্রতিটির চিকিৎসার ধরণ আলাদা, তাই সঠিক প্রকারটি জানা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম এবং দ্বিতীয় ধরণের ভন উইলেব্র্যান্ড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নোক্ত মৃদু থেকে মাঝারি রক্তপাতের লক্ষণ থাকতে পারে: অল্পেই কালশিটে পড়া, নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়া, দাঁতের কোন চিকিৎসার পরে মাড়ি থেকে রক্তপাত, মহিলাদের মধ্যে ভারী ঋতুস্রাব, মল বা প্রস্রাবে রক্ত ​​​​(অন্ত্র, পাকস্থলী, বৃক্ক অথবা মূত্রাশয় থেকে রক্তপাত), কেটে যাওয়া বা কোন দুর্ঘটনার পর অথবা অস্ত্রোপচারের পরে অতিরিক্ত রক্তপাত।

প্রকার ৩

তৃতীয় ধরণের ভন উইলেব্র্যান্ড রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত কোন ভন উইলব্র্যান্ড ফ্যাক্টরই থাকেনা এবং ফ্যাক্টর ৮ও খুব কম থাকে। এটি খুবই গুরুতর এবং বিরল ব্যাধি।

তৃতীয় ধরণের ভন উইলেব্র্যান্ড রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধরণের রোগের যে কোনও লক্ষণই অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, এবং তাছাড়াও অকারণে গুরুতর রক্তপাত ঘটতে পারে, অবিলম্বে যার চিকিৎসা না করা হলে জীবন-নাশ হতে পারে। নরম কলা বা সন্ধিস্থলগুলিতে রক্তপাত (হেমারথ্রোসিস), তীব্র ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া এই অসুখের আর একটি লক্ষণ।

চিকিৎসা

ভন উইলেব্র্যান্ড রোগে আক্রান্ত অনেক মানুষের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবুও, যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, এর তীব্রতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম চিকিৎসা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে রক্তে ভন উইলেব্র্যান্ড ফ্যাক্টরের মাত্রা বাড়ানোর ওষুধ (ডিডিএভিপি) প্রদান, তঞ্চনের ভাঙন রোধ করার ওষুধ (এটিকে অ্যান্টিফাইব্রিনোলাইটিক ওষুধ বলা হয়) প্রদান, মহিলাদের ভারী ঋতুস্রাব নিয়ন্ত্রণের ওষুধ (প্রায়ই জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি) প্রদান, বা তঞ্চনের উপাদানগুলির গাঢ় অবস্থার ইনজেকশন (যার মধ্যে আছে ভন উইলেব্র্যান্ড ফ্যাক্টর এবং ফ্যাক্টর ৮) দেওয়া।

রক্তনালী ব্যাপ্ত করে জমাট বাঁধা[সম্পাদনা]

ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন (ডিআইসি), যাকে ক্ষয়কারী তঞ্চনও বলা হয়, শরীরের একটি রোগগত প্রক্রিয়া যেখানে ​​পুরো শরীর জুড়ে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এই অসুখে শরীরের অনুচক্রিকা এবং জমাট বাঁধার উপাদানগুলি নিঃশেষিত হয়ে যায় এবং রক্তক্ষরণের একটি বিপরীতমুখী ঝুঁকি থাকে। এটি গুরুতরভাবে অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিশেষ করে যাদের গ্রাম-নেগেটিভ পচন (বিশেষত মেনিঞ্জোকোকাল পচন) এবং তীব্র প্রমাইলোসাইটিক লিউকেমিয়া রয়েছে।

হিমোফিলিয়া[সম্পাদনা]

হিমোফিলিয়া হল এমন একটি রোগ যেখানে রক্তে প্রোটিন কম থাকে বা একেবারেই থাকেনা, যার ফলে রক্ত ​​জমাট বাঁধতে পারেনা। হিমোফিলিয়া দুই ধরণের হয়: প্রকার এ, যা হল ফ্যাক্টর ৮ এর ঘাটতি, এবং প্রকার বি (ক্রিসমাস ডিজিজ), যা হল ফ্যাক্টর ৯ এর ঘাটতি। যেহেতু হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ত ​​জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যায়, খুব সামান্য কেটে যাওয়াও সম্পূর্ণরূপে জমাট বাঁধতে কয়েক ঘন্টা বা দিন লাগতে পারে, এবং একটি ছোট ধাক্কা বা ঝাঁকুনি শরীরে কালশিটের কারণ হতে পারে যা কয়েক মাস ধরে নিরাময় হয় না। যদিও অভ্যন্তরীণ পেশীর রক্তপাত হল সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ, যার ফলে ফোলাভাব এবং বিভিন্ন মাত্রার ব্যথা হয়।

মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে হিমোফিলিয়া সংক্রমণ হয়। কখনও কখনও হিমোফিলিয়াকে "রাজকীয় রোগ" বলা হয়। কারণ ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়া (১৮৩৭-১৯০১) ছিলেন হিমোফিলিয়ার বাহক। হিমোফিলিয়া রোগটি তাঁর পুত্র লিওপোল্ডের কাছে সংক্রামিত হয়েছিল এবং তিনি ৩১ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। রানি ভিক্টোরিয়ার দুই কন্যা ছিলেন এই রোগের বাহক। এই কন্যারা স্প্যানিশ, জার্মান এবং রাশিয়ান রাজপরিবারে হিমোফিলিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়েছিলেন। সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পগুলির মধ্যে একটি হল রাশিয়ান রাজপরিবারের। রানি ভিক্টোরিয়ার নাতনি আলেকজান্দ্রা বিবাহ করেছিলেন নিকোলাসকে (১৯০০-এর দশকে রাশিয়ার জার)। আলেকজান্দ্রা এই রোগের বাহক ছিলেন এবং এই রোগটি তাঁদের প্রথম পুত্র সারেভিচ আলেক্সির হয়েছিল, আলেক্সি রাশিয়ার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। পরিবারটি পুত্রের অসুখের কথা মানুষের কাছ থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আলেক্সি গুরুতর কালশিটে এবং চরম যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। পরিবারটি রাসপুটিন নামে এক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছিল, যিনি এই তথ্য গোপন রাখতে সাহায্য করেছিলেন এবং পরিবারের উপর প্রচুর ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। পরিবারটি মনে করত যে তিনিই তাদের একমাত্র আশা। রাশিয়ার বিরাট গোলযোগের সময়, নিকোলাস এবং আলেকজান্দ্রা তাঁদের বেশিরভাগ মনোযোগ পুত্রের দিকে ব্যয় করেছিলেন, মানুষের দিকে নয়। ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লব শুরু হতে খুব বেশি সময় লাগেনি।

উপাদান ৫ লিডেন[সম্পাদনা]

হিমোফিলিয়ার বিপরীতে, উপাদান ৫ লিডেন (রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানগুলির একটির পরিব্যক্তি) হল মানব শরীরের উপাদান ৫ এর একটি রূপান্তর যা হাইপারকোয়াগুলেবিলিটি ব্যাধির (জমাট বাঁধা রক্ত শিরা বা ধমনী আটকে দেয়) সৃষ্টি করে। এই ব্যাধিতে উপাদান ৫-এর লিডেন রূপ, সক্রিয় প্রোটিন সি দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা যায় না। উপাদান ৫ লিডেন হল ইউরেশীয়দের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ বংশগত হাইপারকোয়াগুলেবিলিটি ব্যাধি। এর নামকরণ করা হয়েছে লিডেন (নেদারল্যান্ড) শহরের নামানুসারে, যেখানে এটি ১৯৯৪ সালে প্রথম অধ্যাপক আর. বার্টিনা এবং অন্যরা চিহ্নিত করেছিলেন। যাদের এই অসুখ আছে তাদের রক্ত ​​জমাট বাঁধার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় একটু বেশি। যাদের শরীরে উপাদান ৫ আছে তাদের মৌখিক গর্ভনিরোধক, স্থূলতা, ধূমপান এবং উচ্চ রক্তচাপ এড়ানো উচিত।

রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)[সম্পাদনা]

গ্রীক শব্দ (Ἀναιμία) থেকে অ্যানিমিয়া কথাটি এসেছে, যার অর্থ "রক্ত ছাড়া", লোহিত রক্ত ​​​​কোষ (আরবিসি) এবং/অথবা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি। এর ফলে কোষকলায় রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন স্থানান্তর করার ক্ষমতা হ্রাস পায়, যার ফলে অক্সিজেন স্বল্পতা (হাইপোক্সিয়া) হয়। যেহেতু সমস্ত মানব কোষ বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের উপর নির্ভর করে, তাই রক্তশূন্যতার বিভিন্ন মাত্রার চিকিৎসাগত ফলাফল বিভিন্ন হতে পারে। শরীরের সমস্ত কলা এবং অঙ্গগুলির পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য হিমোগ্লোবিনের (লোহিত রক্তকণিকায় অক্সিজেন বহনকারী প্রোটিন) উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন।

রক্তশূন্যতার তিনটি প্রধান শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে অত্যধিক রক্তক্ষরণ (তীব্র রক্তক্ষরণ বা দীর্ঘস্থায়ীভাবে অল্প অল্প ক্ষয়), অত্যধিক রক্তকণিকা ধ্বংস (হেমোলাইসিস) বা লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনে ঘাটতি (অকার্যকর হেমাটোপয়েসিস)। ঋতুমতী মহিলাদের মধ্যে, খাদ্যতালিকায় লৌহের ঘাটতি লোহিত রক্ত ​​কণিকার ঘাটতির একটি সাধারণ কারণ।

কাস্তে-কোষ[সম্পাদনা]

কাস্তে-কোষ (সিকল সেল) পরিব্যক্তি সহ আরবিসি-এর চিত্র।

কাস্তে-কোষ ব্যাধি হল কাস্তে আকৃতির হিমোগ্লোবিন (এইচজিবি এস বা এইচবি এস) দ্বারা সৃষ্ট জিনগত ব্যাধিগুলির একটি সাধারণ প্রতিশব্দ। এই রোগের অনেক প্রকারের মধ্যে, অস্বাভাবিক কাস্তে আকৃতির হিমোগ্লোবিনের পলিমারকরণ বিক্রিয়ার কারণে অক্সিজেন অপসারিত হয়ে লাল রক্তকণিকা আকৃতি পরিবর্তন করে। এই প্রক্রিয়াটি লোহিত রক্তকণিকাগুলির ঝিল্লির ক্ষতি করে এবং সেগুলি রক্তনালীতে আটকে যেতে পারে। এর ফলে রক্তের নিম্ন প্রবাহের কলাগুলি অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হয় এবং ইস্কেমিয়া (স্থানীয়ভাবে রক্তহীনতা) ও ইনফার্কশনের (কলাবিনষ্টি) কারণ হয়। রোগটি দীর্ঘস্থায়ী এবং সারা জীবনব্যাপী। ব্যক্তিরা অনেক সময়ই হয়তো ভাল থাকে, কিন্তু তাদের জীবনে পর্যায়ক্রমিক বেদনাদায়ক আক্রমণ ঘটতে থাকে। পর্যায়ক্রমিক ব্যথা ছাড়াও, অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির ক্ষতি এবং/অথবা স্ট্রোক হতে পারে। রোগীরা স্বল্পায়ু হয় এবং তাদের গড় জীবনকাল ৪০ বছরের মত হয়। যেখানে ম্যালেরিয়া খুব সাধারণ ছিল বা আছে, বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকায় বা সেই সব লোকদের বংশধরদের মধ্যে এই ব্যাধি বেশি দেখা যায়।

বংশ-গতিবিদ্যা: কাস্তে-কোষ ব্যাধিটি অটোজোমীয় (একটি জিনগত বৈশিষ্ট্য বা অবস্থা যা পিতামাতা থেকে সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হয়) প্রবাহের আকারে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয়, এটি উপরে বর্ণিত। কাস্তে-কোষ রক্তশূন্যতার জন্য দায়ী অ্যালিল হল অটোজোমীয় বৈশিষ্ট্যযুক্ত। যে ব্যক্তি পিতা এবং মাতা উভয়ের কাছ থেকে ত্রুটিপূর্ণ জিন পায় তার দেহে রোগটির বিকাশ ঘটে; একজন ব্যক্তি যে একটি ত্রুটিযুক্ত এবং একটি সুস্থ অ্যালিল গ্রহণ করে সে সুস্থ থাকে কিন্তু সে রোগটির বাহক হিসাবে কাজ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রোগটি প্রবাহিত করতে সক্ষম। দুজন বাবা-মা যদি বাহক হয় এবং তাদের যদি একটি সন্তান থাকে, তাহলে তাদের সন্তানের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৪-এর মধ্যে-১ এবং সন্তানের কেবল শুধুমাত্র বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ২-এর মধ্যে-১।

পলিসিথেমিয়া[সম্পাদনা]

পলিসিথেমিয়া হল এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের মোট সঞ্চালনকারী এরিথ্রোসাইট (লোহিত রক্তকণিকা) ভরের প্রকৃত বৃদ্ধি ঘটে। পলিসিথেমিয়া বিভিন্ন ধরনের আছে।

প্রাথমিক পলিসিথেমিয়া

প্রাথমিক পলিসিথেমিয়ায়, প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে ৮০ থেকে ৯০ লাখ এবং মাঝে মাঝে ১১০ লাখ এরিথ্রোসাইট থাকতে পারে (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি স্বাভাবিক সীমা ৪০-৫০ লাখ), এবং হেমাটোক্রিট (রক্তে লোহিত রক্তকণিকার (আরবিসি) আয়তনের শতাংশ) ৭০ থেকে ৮০% পর্যন্ত হতে পারে। উপরন্তু, মোট রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। পুরো সংবহন তন্ত্র স্পষ্টতই রক্তে নিমজ্জিত হতে পারে এবং সারা শরীরে রক্ত ​​সঞ্চালনের সময় স্বাভাবিক মানের দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এরিথ্রোসাইটের বর্ধিত সংখ্যা রক্তের সান্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। কৈশিকনালীগুলি খুব সান্দ্র রক্ত ​​দ্বারা প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং রক্তনালীর মধ্য দিয়ে রক্তের প্রবাহ অত্যন্ত মন্থর হতে থাকে।

উপরোক্ত ফলস্বরূপ, চিকিৎসা না করা পলিসিথেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার মত বিভিন্ন ঘটনার ঝুঁকি থাকে (গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা, ফুসফুসের ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধা), হৃৎপেশীর রক্তাভাবজনিত মৃত্যু (হার্ট অ্যাটাক) ও স্ট্রোক, এবং বুড-চিয়ারি সিন্ড্রোম (জমাট বাঁধা রক্ত দ্বারা অবরুদ্ধ বা সংকুচিত হেপাটিক শিরা) এর যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে। এটি বার বার ঘটতে পারে; এর কোন নিরাময় বিদ্যমান নেই। লক্ষণগত চিকিৎসা (নীচে দেখুন) রক্তের গণনাকে স্বাভাবিক করতে পারে এবং বেশিরভাগ রোগী বছরের পর বছর ধরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত পলিসিথেমিয়া

দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত পলিসাইথেমিয়া ঘটে এরিথ্রোপোয়েটিন উৎপাদনে যথাযথ বা অনুপযুক্ত বৃদ্ধির কারণে এবং যার ফলে এরিথ্রোসাইটের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এই ধরণের পলিসিথেমিয়ায়, প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে ৬০ থেকে ৮০ লাখ এবং মাঝে মাঝে ৯০ লাখ এরিথ্রোসাইট থাকতে পারে। যে ধরণের পলিসিথেমিয়ায় এরিথ্রোপয়েটিনের উৎপাদন যথাযথভাবে বৃদ্ধি পায় তাকে শারীরবৃত্তীয় পলিসিথেমিয়া বলে। শারীরবৃত্তীয় পলিসিথেমিয়া অতি উচ্চতায় (৪২৭৫ থেকে ৫২০০ মিটার) বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ঘটে, যেখানে অক্সিজেনের প্রাপ্যতা সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে কম। অনেক ক্রীড়াবিদ এই প্রভাবের সুবিধা নিতে অতি উচ্চতায় প্রশিক্ষণ নেয় — এটি রক্তের ডোপিংয়ের একটি আইনী রূপ। প্রকৃত পলিসিথেমিয়া আক্রান্তরা তাদের অবস্থাকে আরও বেশি সহনশীলতা পাবার অ্যাথলেটিক সুবিধা হিসাবে ব্যবহার করার জন্য পরিচিত।

দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত পলিসিথেমিয়ার অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ধূমপান, বৃক্ক বা যকৃতের স্ফীতি (টিউমার), বা হার্ট বা ফুসফুসের রোগ যার ফলে হাইপোক্সিয়া হয়। প্রধানত ফিওক্রোমাসাইটোমা (অ্যাড্রিনাল মেডুলার নালিকায় ছোট স্ফীতি) সহ অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা এবং কুশিং সিন্ড্রোমের (দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে কর্টিসল হরমোনের অত্যধিক পরিমাণ উৎপাদনের ফলে সৃষ্ট অবস্থা) সাথে অ্যাড্রিনাল স্ফীতিও গৌণ কারণ। অ্যাথলিট এবং বডি বিল্ডার যারা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড বা এরিথ্রোপয়েটিনের অপব্যবহার করে তাদের এই দ্বিতীয় পর্যায়ের পলিসিথেমিয়া হতে পারে।

আপেক্ষিক পলিসিথেমিয়া

আপেক্ষিক পলিসিথেমিয়া হল রক্তে এরিথ্রোসাইট স্তরের একটি আপাত বৃদ্ধি; কিন্তু, এর অন্তর্নিহিত আসল কারণ হল রক্তরসের প্লাজমা হ্রাসপ্রাপ্তি। আপেক্ষিক পলিসাইথেমিয়া প্রায়শই শরীর থেকে তরল বেরিয়ে যাওয়ারর কারণে হয়, কারণগুলি হতে পারে যেমন পুড়ে যাওয়া, জলশূন্যতা এবং মানসিক যন্ত্রনা হেতু পলিসিথেমিয়া।

লিউকেমিয়া[সম্পাদনা]

লিউকেমিয়া হল রক্ত ​​বা অস্থি মজ্জার একটি কর্কটরোগ (ক্যান্সার) যা রক্তের কোষের, বা বলা যায় সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকার (লিউকোসাইট) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দ্বারা চিহ্নিত। এটি হেমাটোলজিক্যাল নিউওপ্লাজম নামক রোগের বিস্তৃত গোষ্ঠীর অংশ। অস্থি মজ্জার ক্ষতির ফলে রক্তে অনুচক্রিকার অভাব হয়, যা রক্ত ​​জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক মজ্জা কোষগুলি ক্রমবর্ধমান ম্যালিগন্যান্ট কোষ দ্বারা স্থানচ্যুত হয়ে এই ক্ষতি হয়। এর মানে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কালশিটে হতে পারে, অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে বা পিন-ফোটানো রক্তপাত (পেটেকিয়া) হতে পারে।

যে শ্বেত রক্ত ​​কণিকাগুলি রোগজীবাণুগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে, সেগুলি দমিত বা অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে, যা রোগীকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে।

লোহিত রক্ত ​​কণিকার ঘাটতির ফলে রক্তাল্পতা ঘটে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এই সমস্ত লক্ষণ অন্যান্য রোগের জন্যও দায়ী হতে পারে; রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত ​​পরীক্ষা এবং অস্থি মজ্জার বায়োপসি প্রয়োজন।

শব্দকোষ[সম্পাদনা]

অ্যালবুমিন: রক্তে আস্রবণশীল (জল) চাপ বজায় রাখার জন্য দায়ী রক্তের একটি প্রধান প্রোটিন

অ্যানিমিয়া: খাদ্যে লৌহ, ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি ১২ এর অভাব বা লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংসের কারণে লাল রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি; এটি রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা হ্রাসের সাথে যুক্ত

বি-সেল: অ্যান্টিবডি বিতরণের জন্য দায়ী কোষ

বেসোফিল: এই শ্বেত রক্তকণিকা ক্ষতিগ্রস্ত কলায় প্রবেশ করে এবং হিস্টামিন ও অন্যান্য রাসায়নিক নির্গত করে যা রোগজীবাণুগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরে প্রদাহ বাড়ায়।

রক্ত: পুষ্টি, বর্জ্য, তাপ এই উপাদানগুলি বহন করার মাধ্যম হিসেবে এবং শরীরের পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়, রক্তনালীগুলির মাধ্যমে শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়।

ইওসিনোফিল: শ্বেত রক্তকণিকা যা পরজীবী কৃমির (যেমন টেপওয়ার্ম এবং রাউন্ডওয়ার্ম) এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এটিকে লাল রঞ্জক "ইওসিন" দিয়ে রঞ্জিত করা হয় তাই এই নামকরণ করা হয়েছে।

উপাদান ৫ লিডেন সবচেয়ে সাধারণ জিনগত হাইপারকোয়াগুলেবিলিটি ব্যাধি।

গঠিত উপাদান: রক্তে থাকা লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা

হেমাটোক্রিট: রক্তে থাকা লোহিত রক্তকণিকার শতাংশের পরিমাপ

হিমোগ্লোবিন (এইচবি): লোহিত রক্ত ​​কণিকায় লৌহযুক্ত রঞ্জক যা অক্সিজেন পরিবহন করে

হিমোফিলিয়া: জিনগত ব্যাধি যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত হতে পারে; রক্ত জমাট বাঁধে না

হেমোস্ট্যাসিস: যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত ​​প্রবাহ বন্ধ করা হয়; এছাড়াও রক্তের ​​জমাট বাঁধা বর্ণনা করে

লিম্ফোসাইট: লসিকা তন্ত্রের কোষ, নির্দিষ্ট জীবাণু বা বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা প্রদান করে

মনোসাইট: বৃহত্তম শ্বেত রক্তকণিকা। সক্রিয় হলে ম্যাক্রোফেজ হয়ে যায়। ফ্যাগোসাইটোসিসের মাধ্যমে জীবাণু এবং ধ্বংসাবশেষকে গ্রাস করে, এছাড়াও বি এবং টি লিম্ফোসাইটগুলিতে অ্যান্টিজেন উপস্থাপনের সাথে জড়িত।

নিউট্রোফিলস: সবচেয়ে সাধারণ শ্বেত রক্তকণিকা; তারা ফ্যাগোসাইটিক এবং কলার জীবাণু বা ধ্বংসাবশেষ গ্রাস করে; এছাড়াও জীবাণু মারতে তাদের জন্য বিষাক্ত (সাইটোটক্সিক) উৎসেচক এবং রাসায়নিক নির্গত করে

এনকে-কোষ: প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ নামেও পরিচিত, এই টি লিম্ফোসাইটগুলি নজরদারি করে অস্বাভাবিক কলা কোষের সনাক্তকরণের জন্য দায়ী; ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ

ফ্যাগোসাইটোসিস: যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামিবয়েড-সদৃশ কোষগুলিকে গ্রাস করা ও হজম করা হয় এবং এর ফলে বহিরাগত ক্ষতিকর পদার্থ বা উপাদান ধ্বংস করা হয়

টি-সেল: কোষ যা অনাক্রম্যতাকে সমন্বয় করে মধ্যস্থতা করে এবং প্রান্তীয় কলায় প্রবেশ করে। তারা সরাসরি বহিরাগত কোষকে আক্রমণ করতে পারে এবং অন্যান্য লিম্ফোসাইটের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ,

পর্যালোচনা প্রশ্ন[সম্পাদনা]

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে এখানে

১. প্রতিদিন অ্যাসপিরিন গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় কারণ:

ক) এটি একটি শক্তিশালী ভাসোডিলেটর (যে ওষুধগুলি রক্তনালী প্রসারিত করে)
খ) এটি হৃৎপিণ্ডের কলার ব্যথা অনুভবকারী গ্রাহককে আটকায়
গ) এটি ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন (হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ছন্দ) বন্ধ করে
ঘ) এটি ধমনীর দেয়ালের অযাচিত আস্তরণ আলগা করে
ঙ) এটি অনুচক্রিকা জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে

২. হেমাটোক্রিট দিয়ে যার শতাংশ পরিমাপ করা হয়:

ক) শ্বেত রক্ত কণিকা
খ) রক্তরস
গ) অনুচক্রিকা
ঘ) লোহিত রক্ত কণিকা

৩. ফ্রেডের রক্তের গ্রুপ ও- এবং জিঞ্জারের বি+। ফ্রেড এবং জিঞ্জারের একটি ছেলে আছে যে এবি+। আপনি কি বলবেন?

ক) তাদের দ্বিতীয় সন্তান হলে জিঞ্জারকে রোগ্যাম ইঞ্জেকশন দিতে হবে
খ) দ্বিতীয় সন্তানের কোন ঝুঁকি নেই, যদি না তার রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ থাকে
গ) যদি শিশুর রক্ত ​​​​সঞ্চারনের প্রয়োজন হয় তবে ফ্রেড নিরাপদে তা করতে পারে, কিন্তু জিঞ্জার নয়
ঘ) ফ্রেড ছেলেটির বাবা নয়

৪. রক্তের অভিস্রবণীয় চাপ বজায় রাখতে রক্তের কোন উপাদান সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে?

ক) অ্যালবুমিন
খ) কার্বন - ডাই - অক্সাইড
গ) শ্বেত রক্ত কণিকা
ঘ) ফাইব্রিনোজেন
ঙ) গ্লোবিউলিন

৫. আপনি যদি এক মিনিটের জন্য আপনার শ্বাস আটকে রাখেন

ক) বৃক্ক সোডিয়াম আয়ন পুনর্শোষণ বৃদ্ধি করবে
খ) রক্তে হাইড্রোজেন-আয়নের ঘনত্ব বাড়বে
গ) আপনার হৃদস্পন্দন অনেক ধীর হয়ে যাবে
ঘ) হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সাথে আরও দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হবে

৬. কলা দ্বারা উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইডের বেশিরভাগই ফুসফুসে পরিবাহিত হয়:

ক) রক্তরসে গ্যাসের ছোট বুদবুদ
খ) লোহিত রক্ত ​​কণিকায় হিমোগ্লোবিনের সাথে গ্যাস আবদ্ধ
গ) প্লাজমাতে বাইকার্বনেট আয়ন
ঘ) শ্বেত রক্তকণিকা এবং অ্যালবুমিনের সাথে গ্যাস আবদ্ধ
ঙ) লসিকা তন্ত্রের মাধ্যমে গ্যাস পরিবাহিত হয়

৭. একটি কলায় আঘাতের পরে রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করার জন্য, প্রথমে রক্তনালীগুলি

ক) একটি অনুচক্রিকা বন্ধক গঠন করে
খ) একটি ক্লট গঠন করে
গ) তঞ্চন প্রক্রিয়া শুরু করে
ঘ) সংকুচিত হয় এবং বাধা তৈরি হয়

৮. আপনি দীর্ঘ রেসের শেষে একজন পুরুষ সাইক্লিস্টের কাছ থেকে রক্তের নমুনা নিন। হেমাটোক্রিট ৬০%। সবচেয়ে সম্ভবত উপসংহার হয়:

ক) এটি বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক সীমার মধ্যে
খ) এই সাইক্লিস্ট রক্তশূন্যতায় ভুগছেন
গ) এত কম হেমাটোক্রিট লিভারের ক্ষতি বা লিউকেমিয়ার জন্য হতে পারে
ঘ) সাইক্লিস্ট জলশূন্যতায় ভুগছেন
ঙ) সাইক্লিস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল এরিথ্রোপয়েটিন গ্রহণ করছেন

৯. একটি সাধারণ রক্তের নমুনায়, নিম্নলিখিত কোষগুলির মধ্যে কোনটি প্রচুর পাওয়া যাবে?

ক) নিউট্রোফিল
খ) বেসোফিল
গ) ইওসিনোফিল
ঘ) মনোসাইট
ঙ) লিম্ফোসাইট

১০. দান করা রক্তের ব্যাগে রক্ত জমাট বাঁধে না কারণ

ক) পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়না
খ) এটি শুকিয়ে যেতে পারে না
গ) এটি ফ্রিজে রাখা হয়
ঘ) কোন মুক্ত ক্যালসিয়াম থাকেনা
ঙ) ওপরের সবগুলো

১১. রক্তের প্রাথমিক কাজ কি?

ক) কলায় পুষ্টি সরবরাহ করা
খ) বর্জ্য অপসারণ
গ) শরীরের তাপমাত্রায় সামঞ্জস্য রাখা
ঘ) ক এবং খ
ঙ) খ এবং গ

১২. লোহিত রক্ত ​​কণিকার প্রধান উপাদান কি??

ক) অ্যালবুমিন
খ) গ্লোবিউলিন
গ) হিমোগ্লোবিন
ঘ) নিউক্লিয়াস