মঙ্গলকাব্য/শীতলামঙ্গল/শীতলা

উইকিবই থেকে
কালীঘাট পটচিত্রে দেবী শীতলা, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ

বসন্ত রোগের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শীতলা পৌরাণিক না লৌকিক দেবী এবং বৈদিক আর্যধর্মের তাঁর কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নগেন্দ্রনাথ বসু তাঁর বিশ্বকোষ-এ বৈদিক তক্সন ও শীতলার অভিন্নতার কথা উল্লেখ করেছেন। ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুরও শীতলার মূর্তি ও পিচ্ছিলতন্ত্রোক্ত ধ্যানমন্ত্রের এক আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা প্রদান করে বৈদিক অপ্ ও শীতলার অভিন্নতা প্রতিপাদনে প্রয়াসী হয়েছিলেন। অপ্ বা জল বসন্ত রোগের দেবতা নন, তাঁর কোনও মূর্তিও বেদে বর্ণিত হয়নি, এ কথা স্বীকার করেও ড. হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য জলকে "রোগ নিরাময়ের হেতু" বলে উল্লেখ করে অপ্ ও শীতলার পারস্পরিক সম্পর্কের কথাটি স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি শীতলার মূর্তিতে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গঙ্গা, ষষ্ঠী ও মনসার ন্যায় পৌরাণিক দেবীগণের বৈশিষ্ট্যগুলির কথাও বিশদে আলোচনা করেছেন। স্কন্দপুরাণের আবন্ত্যখণ্ড ও কাশীখণ্ডে শীতলার যে উল্লেখ পাওয়া যায়, সেখানেও শীতলার সঙ্গে জলের সম্পর্কে একটি আভাস রয়েছে। স্বামী নির্মলানন্দও শীতলার হাতে জলপূর্ণ ঘট ও জলমধ্যে শীতলার ধ্যানের বিধির প্রেক্ষিতে শীতলাকে "জলাভিমানিনী দেবী" বলে উল্লেখ করেন। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রমুখ গবেষকগণ শীতলার উপর বৌদ্ধ দেবী হারীতী অথবা পর্ণশবরীর প্রভাবের কথাও বলেছেন। তবে অধ্যাপক আশুতোষ ভট্টাচার্যের মতে, শীতলা প্রকৃতপক্ষে অনার্য সভ্যতাপ্রসূত এক লৌকিক দেবী। তক্সন অথবা অপ্-এর সঙ্গে শীতলার সম্পর্কের তত্ত্ব তিনি অস্বীকার করেন; পৌরাণিক সাহিত্যে শীতলার উল্লেখের প্রসঙ্গটিকেও তিনি প্রক্ষিপ্তাংশ বলে বর্ণনা করেন। অতীতে বাংলায় শীতলার মূর্তিপূজা হত না। শীতলার পূজারিগণ এক খণ্ড পাথরে সিঁদুরলিপ্ত করে শীতলা জ্ঞানে পূজা করতেন। ব্যোমকেশ মুস্তাফির বর্ণনা অনুযায়ী, এই শীতলা ছিলেন হস্তপদহীন, সিঁদুরলিপ্ত, শঙ্খ বা ধাতুখচিত ব্রণ-চিহ্নাঙ্কিত একটি মুখাবয়ব মাত্র। আশুতোষ ভট্টাচার্য এই জাতীয় শিলাপ্রতীককেই শীতলার প্রাচীনতম রূপ বলে মনে করতেন।

বৌদ্ধ প্রভাব[সম্পাদনা]

ইন্দোনেশিয়ার মেন্দুতের উত্তর দেয়ালের অভ্যন্তরীণ অংশে নিজের সন্তানদের সঙ্গে হারীতীর খোদাইকৃত মূর্তি, ৯ম শতাব্দী
বৌদ্ধ দেবী পর্ণশবরী