ভাষা ও ব্যাকরণ

উইকিবই থেকে

ভাষা[সম্পাদনা]

বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকেই ভাষা বলে। ভাষা হলো পরস্পর ধ্বনি ব্যবহার করে অর্থ প্রকাশের মানবিক উপায়। বিভিন্নভাবে ভাষাবিজ্ঞানীগণ ভাষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন: ভাষাতাত্ত্বিক ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগ্‌যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।” ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষার সংজ্ঞা নিরূপণ করতে গিয়ে বলেছেন “মনুষ্যজাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে তাহার নাম ভাষা।” ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে, “মানুষ তাহার মনের ভাব প্রকাশ করিবার জন্য কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, ওষ্ঠ, দন্ত, নাসিকা, মুখবিবর প্রভৃতি বাগ্‌যন্ত্রের অপরের বোধগম্য যে ধ্বনি ধ্বনিসমষ্টির উচ্চরণ করিয়া থাকে, সেই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলে।” ড. সুকুমার সেনের মতে, “মনের ভাব প্রকাশ করার নিমিত্ত বিভিন্ন জাতির বা সমাজের সকল সভ্যের বোধগম্য বাক্যসমূহের সমষ্টিকে সেই জাতির ভাষা বলে।” বহুভাষাবিদ পণ্ডিত জ্যোতিভূষণ চাকী বলেন, “ভাষা মনের ভাবপ্রকাশের জন্যে বাগ্‌যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন এমন শব্দসমষ্টি বা স্বতন্ত্রভাবে বিশেষ কোনও জনসমাজে ব্যবহৃত।” ভাষাবিদ মুহম্মদ আবদুল হাই এর মতে, “এক এক সমাজের সকল মানুষের অর্থবোধক ধ্বনির সমষ্টিই ভাষা।” ভাষাবিদ অশোক মুখোপাধ্যায় এর মতে, “কণ্ঠনিঃসৃত অর্থবহ ধ্বনি সমষ্টির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ ও আদান প্রদানের স্বাভাবিক মাধ্যমের নাম ভাষা।” উপরোক্ত সংজ্ঞার্থের পরিপ্রেক্ষিতে ভাষার বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ: ক. ভাষা কণ্ঠ্যনিঃসৃত ধ্বনির সাহায্যে গঠিত। খ. ভাষার অর্থদ্যোতকতা বিদ্যমান গ. ভাষা একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ও ব্যবহৃত। ভাষা বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন জাতির ও বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের জন্য বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, বাংলাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অধিকারী বাঙালিরা বাংলা ভাষায় কথা বলে। আবার বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। বর্তমানে পৃথিবীতে ভাষা আছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি।

ভাষাক্রম[সম্পাদনা]

১৯৫১ সালে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞরা শিক্ষায় মাতৃভাষার স্থান সম্বন্ধে যে রিপোর্ট তৈরী করেন তাতে ভাষার বিভাজন ও ক্রমনির্দেশ ছিল এরকম:

  1. ভৌম ভাষা: অঞ্চলবিশেষের আদি বাসিন্দারা যে ভাষায় কথা বলে। যেমন: উপভাষা
  2. সর্বভাষা: বহুভাষী জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যোগাযোগের সাধারণ ভাষা।
  3. মাতৃভাষা: জন্মগত বা মায়ের মুখ থেকে শেখা ভাষা
  4. জাতীয় ভাষা: একটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর ভাষা।
  5. সরকারি বা প্রশাসনিক ভাষা: যে ভাষার সাহায্যে সরকারে প্রশাসন, আইনসৃজন ও বিচারকার্য পরিচালিত হয়।
  6. বাণিজ্যবুলি
  7. আঞ্চলিক ভাষা
  8. দ্বিতীয় ভাষা: মাতৃভাষার পরে শিশু যে ভাষা শেখে তাই তার দ্বিতীয় ভাষা।
  9. গৌণ ভাষা: যে ভাষার মানুষেরা মানুষেরা অন্যভাষার মানুষদের রাজনৈতিক অধীনতা স্বীকার করে নেয়। তবে এক রাষ্ট্রের গৌণ ভাষা যদি অন্য রাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হয় তবে তা আর গৌণ ভাষা থাকে না।
  10. বিশ্বভাষা: পৃথিবীর নানা দেশে যে ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ইংরেজি ভাষা এই স্থান দখল করে আছে।
ভাষাক্রমের ছক

ভাষাক্রম অন্তর্ভুক্ত ভাষা বৃহৎ ভাষা ইংরেজি, ফরাসি আঞ্চলিক ভাষা আরবি, ইংরেজি, চিনা, ফরাসি, জার্মান, রুশ, স্প্যানিশ জাতীয় ভাষা ১৮০টি রাষ্ট্রের ৮০টি ভাষা সরকারি ভাষা ৬০০টির মতো ভাষা স্থানীয় ভাষা অবশিষ্ট ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যার ভিত্তিতে ভাষার শতকরা হার নিম্নের ছকে প্রদত্ত হলো: ব্যবহারকারীর সংখ্যা ভাষার সংখ্যা হার ১০ কোটির উপরে ৯ ০.১৫ ১-১০ কোটি ৭২ ১.২ ১০ লাখ-১ কোটি ২৩৯ ৩.৯ ১ লাখ-১০ লাখ ৭৯৫ ১৩.১ ১০ হাজার-১ লাখ ১৬০৫ ২৬.৪ ১ হাজার-১০ হাজার ১৭৮২ ২৯.৪ ১ শ-১ হাজার ১০৭৫ ১৭.৭ ১০-৯৯ ৩০২ ৫.০ ১-৯ ১৮১ ৩.০ =৬০৬০ =৯৯.৮৫ বেশিরভাগ দেশে একটা ভাষা প্রচলিত থাকে। অর্থাৎ দেশের সব মানুষ একই ভাষায় কথা বলেন। তবে কিছু দেশে একাধিক ভাষা প্রচলিত আছে। কখনো কখনো এদের সংখ্যা শতাধিক হতে দেখা যায়। যেমন: দেশ প্রচলিত ভাষার সংখ্যা

  1. পাপুয়া নিউগিনি ৮১৭
  2. ইন্দোনেশিয়া ৭১২
  3. নাইজেরিয়া ৪৭০
  4. ভারত ৪০৭
  5. মেক্সিকো ২৮৯
  6. ক্যামেরুন ২৭৯
  7. অস্ট্রেলিয়া ২৩৯
  8. কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ২২১
  9. গণচীন ২০৫

ভাষাগোষ্ঠী[সম্পাদনা]

ভাষাতাত্ত্বিকেরা ধ্বনি ও ব্যাকরণের লক্ষণ অনুসারে পৃথিবীর সমস্ত ভাষাকে বারটি গোষ্ঠীতে ভাগ করেছেন। এগুলো হলো: ১. ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী: এশিয়া ও ইউরোপের প্রাচীন ভাষা ও তাদের আধুনিক শাখা-প্রশাখা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ভাষাগুলোর ক্রমপরিবর্তিত আধুনিক রূপ ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, গ্রিক, ইতালিয়ান, নরওয়েজিয়ান, রুশ, ওলন্দাজ, সুইডিশ, হিন্দি, বাংলা, গুজরাটি, অসমিয়া, ওড়িয়া, রাজস্থানি, সিন্ধি প্রভৃতি আধুনিক ভাষা। ২. সেমিটিক-হেমিটিক: সেমিটিক শাখার অন্তর্গত ভাষা আরবি, হিব্রু, আবসিনিয়ার ভাষা আর হেমিটিক ভাষা থেকে এসেছে ইজিপশিয়ান ভাষা। ৩. দ্রাবিড়: প্রধানত দক্ষিণ ভারতেই দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা। ৪. বান্টু: আফ্রিকার কাফির, জুলু, সোয়াহিলি ইত্যাদি ভাষা। ৫. তুর্ক-মোঙ্গল-মাঞ্চু: তুর্ক-তাতারের অন্তর্গত তুর্কি, তাতার, কিরিগিজ, উজবেক; মোঙ্গল শাখার অন্তর্গত ভাষা হচ্ছে মঙ্গোলিয়ান ভাষাগুলো আর মাঞ্চুশাখার অন্তর্গত মাঞ্চুরিয়ার মাঞ্চু ও সাইবেরিয়ার তুঙ্গুজ ভাষা। ৬. ককেশিয়ান ভাষা: প্রধান ভাষা জর্জিয়ার জর্জিয়ান। ৭. ফিন্নো-উগ্রিক: প্রধান ভাষা ফিনল্যান্ডের ফিনিশ, ল্যাপ্পোনিক, হাঙ্গেরিয়ান, এস্তোনিয়ান ৮. অস্ট্রিক: অস্ট্রো-এশিয়াটিক বর্মা, মালয়, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কোনো কোনো ভাষা এবং অস্ট্রোনেশিয়ান মালয়ি, ভাভানিজ, বালিনিজ, হাওয়াইয়ান, সামোয়ান, ফিলিপাইন ও তাহিতি দ্বীপের ভাষা অস্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। ৯. টিবেটো-চাইনিজ বা সিনো-টিবেটান: চৈনিক শাখার চীনা, থাই শাখার শিয়ামি এবং টিবেটোবার্মিজ শাখার তিব্বতি, বর্মি, বোড়ো ইত্যাদি টিবেটো-চাইনিজ শাখার অন্তর্গত। ১০. এসকিমো: অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সীমানার মধ্যে প্রচলিত ভাষাগুলো ১১. হাইপারবোরিয়ান: চুকচি-এশিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল ১২. আমেরিকার আদিম অধিবাসীদের ভাষা: সিউয়ান, পিমান, ইরোকইয়ান, আথাবাস্‌কান ইত্যাদি।

বাংলা ভাষা[সম্পাদনা]

বাঙালি সংস্কৃতির অধিকারী বাঙালি জাতি যে ভাষায় তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটিই বাংলা ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর ৪র্থ বৃহৎ মাতৃভাষা। বর্তমানে, বাংলা ভাষাভাষী জনসংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি। বাংলা ভাষাভাষীরা থাকে- বাংলাদেশে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং ভারতের ত্রিপুরা, উড়িষ্যা, বিহার ও আসামের কিছু অংশে। তবে এখন প্রবাসী বাংলাদেশি ও প্রবাসী ভারতীয় বাঙালিদের কল্যাণে পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষ থাকে।

বাংলা ভাষার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস[সম্পাদনা]

খ্রিষ্ট্রপূর্ব প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়ার মানুষের যে ভাষায় কথা বলত তার নাম ছিল ইন্দো-ইউরোপীয় মূলভাষা। পরবর্তীকালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের পক্ষে একস্থানে বসবাস করা সম্ভব হয়নি। তাই তারা ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এদের একদল এসে ভারতে প্রবেশ করে। স্থানবদলের কারণে মূলভাষা থেকে তাদের ভাষায় তারতম্য সৃষ্টি হয় যা পরিচিতি পায় আর্যভাষা নামে। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকেই আর্যরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে ভারতে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় অনার্য অধিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি আত্মসাৎ করে তারা আর্যভাষার একাধিপত্য প্রতিষ্টায় সক্ষম হয়। কালক্রমে ভারতে বসবাসকারী আর্যদের ভাষা জলবায়ুগত প্রভাবে, অনার্য ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশ্রণের ফলে এক ভিন্ন রূপ লাভ করে। ফলশ্রুতিতে ভাষা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। মোটামুটি খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ থেকেই শুরু হয় সে প্রচেষ্টা। এরপর খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে পাণিনি নামক একজন প্রাচীন ব্যাকরণবিদ তাঁর ‘অষ্টাধ্যায়ী’ নামক গ্রন্থে এলোমেলো ভাষাগুচ্ছকে সংস্কার করে সর্বভারতীয় একটা সুস্থির রূপ দান করেন। এর নাম রাখা হল সংস্কৃত ভাষা। কিন্তু এ ভাষা তথাকথিত বিদগ্ধ ও অভিজাত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল। আর সাধারণ মানুষের ভাষা বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন রূপে অগ্রসর হতে লাগল। এসকল ভাষাকে বলা হয় আদিম প্রাকৃত ভাষা বা মধ্যভারতীয় আর্যভাষা। পরবর্তীকালে এই প্রাকৃত ভাষাই আঞ্চলিক বিভিন্নতা, উচ্চারণের তারতম্যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করল। তাদের নামও হলো ভিন্ন ভিন্ন। যেমন: মাগধী প্রাকৃত, মাহারাষ্ট্রি প্রাকৃত, শৌরসেনি প্রাকৃত, পৈশাচি প্রাকৃত। মাগধী প্রাকৃতের অপভ্রংশ (বা অবহট্‌ঠ অর্থাৎ যা খুব বিকৃত হয়ে গেছে) থেকে কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে উৎপত্তি লাভ করেছে বাংলা ভাষা।

বাংলা ভাষারীতি[সম্পাদনা]

ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল। প্রতিটি মুহুর্তে ভাষা একটু একটু করে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি ভাষাভাষী লোকজন তাদের ভাষার কঠিন শব্দটিকে পাল্টে সহজ করে নিচ্ছে, ছোট করে নিচ্ছে, আবার প্রয়োজনে অন্য ভাষা থেকে নতুন নতুন শব্দ গ্রহণ করছে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে নানা কৌশল প্রয়োগ করে নতুন নতুন শব্দও তৈরি করছে। এমনকি পুরোনো কোনো শব্দ নতুন অর্থে ব্যবহার করেও শব্দটির নতুন অর্থদ্যোতকতা তৈরি করে নতুন শব্দ তৈরি করা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় এই কৌশলে নতুন অর্থপ্রাপ্ত বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দ হচ্ছে- কঠিন ও চরম। ভাষার এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই একদিন অপভ্রংশ থেকে জন্ম নিয়েছিলো আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। আবার এই পরিবর্তনের কারণে বাংলা ভাষায় কিছু পৃথক ভাষারীতিও জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে ব্যবহৃত বাংলা ভাষারীতি ২টি- আঞ্চলিক কথ্য রীতি ও প্রমিত চলিত ভাষারীতি। প্রমিত চলিত ভাষারীতি: দেশের সকল মানুষ যে আদর্শ ভাষারীতিতে কথা বলে, যেই ভাষারীতি সকলে বোঝে, এবং যে ভাষায় সকলে শিল্প-সাহিত্য রচনা ও শিক্ষা ও অন্যান্য কাজকর্ম সম্পাদন করে, সেটিই প্রমিত চলিত ভাষারীতি। এই ভাষায় যেমন সাহিত্য সাধনা বা লেখালেখি করা যায়, তেমনি কথা বলার জন্যও এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সকলে বোঝে বলে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে, যেমন কোনো অনুষ্ঠানে বা অপরিচিত জায়গায় বা আনুষ্ঠানিক (formal) আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে এই ভাষারীতি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, এই রীতি লেখ্য ও কথ্য উভয় রীতিতেই ব্যবহৃত হয়। বাংলা প্রমিত চলিত ভাষারীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভাগীরথী-তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষার উপর ভিত্তি করে। তবে, পূর্বে এই ভাষা সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। তখন কেবল সাধু ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করা হতো। এ কারণে বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও ছোটগল্পকাররা সাধু ভাষায় উপন্যাস, নাটক ও গল্প লিখেছেন। পরবর্তীতে, প্রমথ চৌধুরী চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনার উপর ব্যাপক জোর দেন এবং তাঁর ‘সবুজপত্র’ (১৯১৪) পত্রিকার মাধ্যমে চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আঞ্চলিক কথ্য রীতি: বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজেদের মধ্যে যে বাংলা ভাষায় কথা বলে, তাকেই আঞ্চলিক কথ্য রীতি বা আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে। সকল ভাষাতেই আঞ্চলিক ভাষা থাকে। এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এগুলো কোনোভাবেই বিকৃত ভাষা নয়, এগুলো শুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক ভাষারীতি। প্রকৃতঅর্থে, প্রমিত চলিত ভাষারীতিও একটি অঞ্চলের কথ্য রীতির উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেবল- ভাগীরথী-তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষাকে তখন প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, অন্যগুলোকে প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। তবে আঞ্চলিক কথ্য রীতি লেখ্য ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেটি সর্বজনগ্রাহ্য নয়, সকল অঞ্চলের মানুষ কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা বুঝবে না। তবে কোনো অঞ্চলকে কেন্দ্র করে কোনো সাহিত্য রচিত হলে সেখানে আঞ্চলিক ভাষা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। সম্পূর্ণ বা পুরোটুকুই আঞ্চলিক ভাষায় রচিত একটি শিল্পসম্মত উপন্যাস হলো হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’। বাংলা ভাষায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষারীতি আছে; যেটি এখন মৃতপ্রায়, আর ব্যবহৃত হয় না- সাধু ভাষারীতি বা সাধু রীতি। সাধু রীতি: পূর্বে সাহিত্য রচনা ও লেখালেখির জন্য তৎসম শব্দবহুল, দীর্ঘ সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ সম্পন্ন যে গুরুগম্ভীর ভাষারীতি ব্যবহৃত হতো, তাকেই সাধু ভাষা বলে। এই ভাষা অত্যন্ত গুরুগম্ভীর, দুরূহ এবং এতে দীর্ঘ পদ ব্যবহৃত হয় বলে এই ভাষা কথা বলার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক না। তাই এই ভাষায় কথাও বলা হয় না। এই ভাষা কেবল লেখ্য রীতিতে ব্যবহারযোগ্য। তাও বহু আগেই লেখ্য রীতি হিসেবে চলিত রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় সাধু রীতি এখন লেখ্য ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় না। কেবল সরকারি দলিল-দস্তাবেজ লেখা ও অন্যান্য কিছু দাপ্তরিক কাজে এখনো এই রীতি ব্যবহৃত হয়। নিচে বাংলা ভাষারীতিগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো: আঞ্চলিক কথ্য রীতি প্রমিত চলিত রীতি সাধু রীতি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা সকলের দ্বারা স্বীকৃত সাহিত্য রচনা, আলাপ-আলোচনা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভাষারীতি পূর্বে সাহিত্য রচনা ও লেখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত গুরুগম্ভীর ও দুরূহ ভাষারীতি শুধু কথ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় কথ্য ও লেখ্য উভয় মাধ্যমেই বহুল ব্যবহৃত শুধু লেখ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় নির্দিষ্ট অঞ্চলে ব্যবহৃত হয় বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত; সকল স্তরে ব্যবহৃত হয় বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না উপভাষা/নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভাষা সর্বজনস্বীকৃত আদর্শ চলিত রূপ সর্বজনস্বীকৃত লেখ্য রূপ নিচে সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্যগুলো সংক্ষেপে দেয়া হলো: চলিত ভাষা সাধু ভাষা তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। গুরুগম্ভীর তৎসম শব্দ যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া হয়। যেমন- রক্ষা (পরিত্রাণ), সঙ্গে (সমভিব্যাহারে), তীর সংযোগ (শরসন্ধান), আমগাছের নিচে (সহকার তরুতলে) তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন- পরিত্রাণ (রক্ষা), সমভিব্যাহারে (সঙ্গে), শরসন্ধান (তীর সংযোগ), সহকার তরুতলে (আমগাছের নিচে) সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সহজ ও সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়, যেটি উচ্চারণ ও ব্যবহার করা আরামদায়ক ও সহজ। যেমন- তার (তদীয়), এরা (ইহারা), আপনার (আপনকার), তাদের (তাহাদিগকে) হলে (হইলে), লাগিলেন (লাগলেন), জিজ্ঞাসিলেন (জিজ্ঞাসা করলেন) সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দীর্ঘ পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন- তদীয় (তার), ইহারা (এরা), আপনকার (আপনার), তাহাদিগকে (তাদের) হইলে (হলে), লাগলেন (লাগিলেন), জিজ্ঞাসা করলেন (জিজ্ঞাসিলেন) অপেক্ষাকৃত সহজ বিশেষণ পদ ব্যবহার করা হয়। যেমন- অত্যন্ত (অতিমাত্র), এরূপ (এ রকম), এইরকম (ঈদৃশ), মাদৃশ (আমার মতো), এই অনুযায়ী (এতদনুযায়ী) অপেক্ষাকৃত কঠিন, দীর্ঘ (বিশেষত তৎসম) বিশেষণ পদ ব্যবহার করা হয়। যেমন- অতিমাত্র (অত্যন্ত), এ রকম (এরূপ), ঈদৃশ (এইরকম), আমার মতো (মাদৃশ), এতদনুযায়ী (এই অনুযায়ী) সন্ধি ও সমাসবদ্ধ পদকে প্রায়ই ভেঙে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বনের মধ্যে (বনমধ্যে), ভার অর্পণ (ভারার্পণ), প্রাণ যাওয়ার ভয় (প্রাণভয়) সন্ধি ও সমাসবদ্ধ পদ বেশি ব্যবহার করা হয়। যেমন- বনমধ্যে (বনের মধ্যে), ভারার্পণ (ভার অর্পণ), প্রাণভয় (প্রাণ যাওয়ার ভয়) উল্লেখ্য যে, সাধু ও চলিত রীতিতে কেবলমাত্র অব্যয় পদ অপরিবর্তিতভাবে ব্যবহৃত হয়। সাধু ও চলিত রীতি ভেদে অব্যয় পদের কোনো পরিবর্তন হয় না। এছাড়া আর প্রায় সবধরনের পদ-ই পরিবর্তিত হয়। এমনকি কিছু কিছু অনুসর্গও সাধু ও চলিত রীতিতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়।

ব্যাকরণ[সম্পাদনা]

ব্যাকরণ শব্দটি এসেছে কৃষ্ণযজুর্বেদ থেকে। যেখানে দেবতারা ইন্দ্রকে বললেন, আমাদের এই ভাষাকে আপনি ব্যাকৃত করুন। এই ভাষার ব্যাকরণ নির্দেশ করুন। এ ছাড়া ৬টি বেদাঙ্গের মধ্যে শিক্ষা, নিরুক্ত, ব্যাকরণ, ও ছন্দ এ চারটিই ভাষাবিজ্ঞানের অঙ্গ।এই অঙ্গগুলোর মধ্যে ব্যাকরণই স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। ব্যাকরণ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়- বি+আ+কৃ+অন = ব্যাকরণ। যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে। সুতরাং, যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে। বাংলা ব্যাকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পর্তুগিজ ধর্মযাজক মানোএল দ্য আসসুম্পসাঁউ (Manoel da Assumpcam) বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন। ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের লিসবন শহর থেকে রোমান হরফে মুদ্রিত তাঁর লেখা Vocabolario em idioma Bengalla, e Portuguez dividido em duas partes শীর্ষক গ্রন্থটির প্রথমার্ধে রয়েছে একটি সংক্ষিপ্ত, খন্ডিত ও অপরিকল্পিত বাংলা ব্যাকরণ। এর দ্বিতীয়াংশে রয়েছে বাংলা-পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ-বাংলা শব্দাভিধান। মানোএল ভাওয়ালের একটি গির্জায় ধর্মযাজকের দায়িত্ব পালনের সময় নিজের ও ভবিষ্যত্ ধর্মযাজকদের প্রয়োজনে এই ব্যাকরণ রচনা করেন; বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটানো তাঁর লক্ষ্য ছিল না। লাতিন ভাষার ধাঁচে লেখা এই ব্যাকরণটিতে শুধু রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব আলোচিত হযেছে, কিন্তু ধ্বনিতত্ত্ব নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয় নি। এছাড়া পুরো আঠারো ও উনিশ শতকে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় এই গ্রন্থটি বাঙালি ও বাংলা ভাষার কোনো উপকারেও আসেনি তখন। বাংলা ভাষার দ্বিতীয় ব্যাকরণটি রচনা করেন ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড (Nathaniel Brassey Halhed)। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংসের (Warren Hastings) অনুরোধে তরুণ লেখক হ্যালহেড বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনায় হাত দেন। তাঁর লেখা A Grammar of the Bengal Language গ্রন্থটি ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। এ ব্যাকরণটি অনেক কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পূর্বের পর্তুগিজ ধর্মযাজকদের মতো নিজ প্রয়োজনে নয়, নিঃস্বার্থ বুদ্ধিজীবী হ্যালহেডের ইচ্ছা ছিল বাংলা ভাষাকে একটি বিকশিত ভাষাতে পরিণত করা। ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা : ১. ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন-প্রকৃতি জানা ২. ভাষার বিভিন্ন উপাদানের সুষ্ঠু ব্যবহার করা ৩. ভাষা ব্যবহারের সময় শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় করতে পারা বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় : প্রতিটি ভাষারই ৪টি মৌলিক অংশ থাকে- ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ। আর তাই সব ভাষার ব্যাকরণই প্রধানত এই ৪টি অংশ নিয়েই আলোচনা করে। অর্থাৎ, ব্যাকরণের বা বাংলা ব্যাকরণের মূল আলোচ্য বিষয়/ অংশ ৪টি- ১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology) ২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology) ৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) ৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics) এছাড়াও ব্যাকরণে আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অভিধানতত্ত্ব (Lexicography), ছন্দ ও অলংকার, ইত্যাদি। নিচে বাংলা ব্যাকরণের এই ৪টি মূল বিষয় সংশ্লিষ্ট কিছু সংজ্ঞা দেওয়া হলো : ধ্বনি: কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো সেই ভাষার ধ্বনি। ধ্বনি ভাষার মূল উপাদান। ধ্বনিমূল: ধ্বনির সূক্ষ্মতম মৌলিক অংশকে বা একককে বলা হয় ধ্বনিমূল বা phoneme। এই ধ্বনিমূল বা phoneme থেকেই ধ্বনিতত্ত্বের নাম হয়েছে Phonology। বর্ণ: বিভিন্ন ধ্বনিকে লেখার সময় বা নির্দেশ করার সময় যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্ণ বলে। শব্দ: একটি ধ্বনি বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে যখন কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে, তখন সেই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। বাক্যের মূল উপাদান শব্দ। রূপ: শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় রূপ বা morpheme। রূপ শব্দের ক্ষুদ্রতম একক। এই রূপ বা morpheme থেকেই শব্দতত্ত্বের নাম হয়েছে রূপতত্ত্ব বা Morphology। বাক্য: কতোগুলো পদ সুবিন্যস্ত হয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করলে তাকে বাক্য বলে। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য। বাংলা ব্যাকরণের মূল ৪টি অংশে যে সব বিষয় আলোচনা করা হয়, সেগুলো নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেয়া হলো: ব্যাকরণের অংশ আলোচ্য বিষয় ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology)

(ধ্বনি সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়)
	ধ্বনির উচ্চারণবিধি

ধ্বনি পরিবর্তন সন্ধি/ধ্বনিসংযোগ (সন্ধি ধ্বনির মিলন। তাই এটি ধ্বনিতত্ত্বে আলোচিত হয়) ণত্ব ও ষত্ব বিধান শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology)

(শব্দ সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়)
	সমাস  (সমাস শব্দের মিলন। তাই এটি শব্দতত্ত্বে আলোচিত হয়)

প্রকৃতি-প্রত্যয় (প্রকৃতি-প্রত্যয় শব্দ নিয়ে কাজ করে। মনে রাখা দরকার, প্রকৃতি মাত্রই প্রাতিপদিক বা ক্রিয়াপদ, অর্থাৎ স্বাধীন শব্দ) উপসর্গ (উপসর্গ নিজে শব্দ না হলেও শব্দ ছাড়া এর কোনো প্রয়োজন নেই। উপরন্তু উপসর্গ নতুন শব্দ তৈরির একটি উল্লেখযোগ্য হাতিয়ারও বটে) বচন পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ দ্বিরুক্ত শব্দ সংখ্যাবাচক শব্দ পদাশ্রিত নির্দেশক ধাতু শব্দের শ্রেণীবিভাগ বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax)

(বাক্য সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়)
	পদ প্রকরণ  (শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তখনই সেটাকে পদ বলে। তাই পদ বাক্যের ও পদ প্রকরণ বাক্যতত্ত্বের অন্তর্গত)

ক্রিয়াপদ কারক ও বিভক্তি (বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে। বাক্যের অন্তর্গত পদ নিয়ে কাজ করে বলে কারকও বাক্যতত্ত্বের অন্তর্গত) কাল পুরুষ অনুসর্গ বাগধারা বাচ্য উক্তি যতি ও ছেদ চিহ্ন (বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে যতি বা ছেদ চিহ্ন ব্যবহার হয়। অর্থাৎ, এরা বাক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত) বাক্যের প্রকারভেদ বাক্যে পদ-সংস্থাপনার ক্রম বা পদক্রম অর্থতত্ত্ব (Semantics)

(অর্থ সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়)	শব্দের অর্থবিচার

বাক্যের অর্থবিচার অর্থের প্রকারভেদ; মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ