ব্যবহারকারী:S.M.M.Musabbir Uddin
আলজাইমার রোগ হলো বার্ধক্যজনিত ও সুস্পষ্টবিহীন স্নায়ুবিক অবক্ষয়মূলক রোগ। ১৯০৬ সালে জার্মানের মনোচিকিৎসক ও স্নায়ুবিজ্ঞানী আলইস আলজাইমার সর্বপ্রথম এই রোগ সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তার নাম অনুসারে রোগের নাম রাখা হয়। যাদের বয়স ৬০-৭০ বছরের কাছাকাছি তাদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
যদিও এই রোগ বিভিন্নজনে বিভিন্নভাবে বিকশিত হয় তথাপি এর কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়। প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে প্রায়শ বার্ধক্যজনিত সমস্যা বা মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ বলে করে ভুল করা হয়। প্রারম্ভিক অবস্থায় প্রকাশিত উপসর্গসমূহের সবচেয়ে সাধারণ রূপ হল সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া, কিন্তু অতীতের ঘটনার (যা স্বাভাবিকভাবে মনে থাকে না) পূর্ণ স্মৃতিচারণ। রোগের অবনতির সাথে সাথে রোগী দ্বিধাগ্রস্ততা, অস্থিরতা, রোষপ্রবণতা, ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা, দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিভ্রংশতা এবং ক্রমান্বয়ে শারীরিক ক্রিয়াকর্মের বিলুপ্ততা দেখা দেয় ও অবশেষে সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
আলজাইমার রোগের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা এখনও সম্ভব হয় নি। তবে গবেষণায় এটি নিরূপিত যে, এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বিটা-অ্যামিলয়েডের চাপড়া (প্লাক) ও স্নায়ুতন্তুজটের (যা হাইড্রোফসফোরাইলেটেড টাউ প্রোটিনের সমষ্টি) সাথে সংশ্লিষ্ট রোগ। ৫-১০% ক্ষেত্রে বংশগতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এই রোগে আক্রান্তের মস্তিষ্কে তিনটি উপাদানের অস্বাভাবিক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছেঃ
বিটা-অ্যামিলয়েড চাপড়া
স্নায়ুতন্তুজট (নিউরোফাইব্রিলারি ট্যাঙ্গেল, যা টাউ প্রোটিন দ্বারা গঠিত এক ধরনের আঁশ)
অ্যাসিটাইলকোলিন
এই রোগের মূল ঘটনার সূত্রপাত হয় অ্যামিলয়েড বিটা নামক একধরনের প্রোটিন উৎপাদনের মাধমে যা পরবর্তীতে মস্তিষ্কের রক্তকণিকার ভেতরে দলা পাকিয়ে অ্যামিলয়েড চাপড়া গঠন করে। এই অ্যামিলয়েড চাপড়াই স্নায়ুকোষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
কিছু ঔষুধের মাধ্যমে এই রোগের লক্ষণ কিছুটা লাঘব হবে।
১) অ্যাসিটাইলকোলিন ইনহিবিটর।
২) ম্যমাটাইন।
৩) অ্যান্টি ডিপ্রেশন ঔষুধ।
কখনো কগনিটিভ থেরাপি দিতে হবে। এতে রোগীর কিছুটা হলেও উপকৃত হয়।
• হৃদরোগজনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে হবে।
আমাদেরকে নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তন মাধ্যমে হৃদরোগে ঝুঁকি কমে যায়। ফলে আলজাইমার রোগের সম্ভাবনা কমে যায়।
• মানসিক ও সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকা
সম্প্রতি গবেষণা জানা যায়, যারা বিভিন্ন ভলিন্টারির বা সমাজ সেবা কার্যক্রম সাথে জড়িত, তাদের মধ্যে আলজাইমার রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
কালা জ্বর এক ধরণের রোগ যা প্রোটোজোয়া পরজীবী মাধ্যমে ঘটে থাকে। ইংরেজীতে বলা হয় Visceral Leishmaniasis। এটি বেলে মাছি (Sand fly) কামড়ের মাধ্যমে এই রোগটি ছড়ায়। সাধারণত ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ইত্যাদি কালা জ্বরের রোগী বেশি পাওয়া যায়। সবার প্রথম এই রোগটি দেখা দেয় ১৮২৪ সালে যশোরে। পরে এটি এখন ময়মনসিংহ এবং জামালপুরে ছড়িয়ে গেছে।
১) জ্বর (১০২-১০৫° ফারেনহাইট) ২) ওজন কমে যাওয়া। ৩) রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ৪) প্লীহা এবং যকৃত বড় হতে থাকে। ৫) চামড়া: শুকনো, পাতলা এবং কালো দেখায়।
প্রতিকার যদি যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে রোগী মারা যেতে পারে। তাই চিকিৎসা করাতে হবে। সবার প্রথম চিকিৎসার জন্য লিপসোমাল AmB দেওয়া হয়, এই ঔষুধটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। তারপর আরো ঔষুধ দেওয়া হয়। যেমন: প্যারামোমাইসিন, মিলিটোফোসিন ইত্যাদি। এই গুলো কালা জ্বরের জীবাণু নির্মূল হয়ে যায়।
১) বেলে মাছি নিধন করতে হবে। ডিডিটি বা ম্যালাথিয়ন দিয়ে নিধন করতে হবে।
২) গোয়াল ঘরের বেলে মাছি বেশি পাওয়া যায়। তাই গোয়াল ঘর পরিষ্কার করতে হবে।
৩) ইঁদুরের গর্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেলে মাছি বাস করে। ইঁদুরের গর্তগুলো ভরাট করতে হবে।
২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সরকার কালা জ্বরকে নির্মূল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো।
স্তন ক্যান্সার হলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষগুলো স্তনে বৃদ্ধি হয়। স্তন ক্যান্সার সাধারণত ২০-৭০ বছর বয়সী মহিলাদের হয়ে থাকে।তবে কিশোরীদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। ত্বক ক্যান্সারের পর সবচেয়ে বেশি যে ক্যান্সার হয় সেটা হলো স্তন ক্যান্সার। ৩৫০০ বছর আগে মিশরীয়রা সর্বপ্রথম এই রোগটি আবিষ্কার করেছিলেন। Edwen Smith & George Ebers Papyri দুই গবেষক স্তন ক্যান্সার নিয়ে সঠিক তথ্য উত্থাপন করেছিলেন। এখন এটি মারত্নক রূপ ধারণ করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ১ লাখের মধ্যে ২৩ মহিলার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
১) স্তনের কোনো অংশ চাকা হয়ে যাওয়া।
২) স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
৩) স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল জাতীয় জিনিস বের হওয়া।
৪) স্তনবৃন্তের আশেপাশে র্যাশ দেখা দেওয়া
৫) বগলের চাকা মতো ফুলে যাওয়া।
১) স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য ম্যামোগ্রাফি করতে হবে।
২) স্তন ক্যান্সার জন্য বিভিন্ন রকম থেরাপি এবং সার্জারী করা লাগবে। যেমন:
লাম্পেকটমি : টিউমার এবং আশপাশের কিছু টিস্যু অপসারণ করা হয়।
মাস্টেকটমি : এক্ষেত্রে পুরো স্তন অপসারণ করা হয়। ডাবল মাস্টেকটমি মানে উভয় স্তন অপসারণ।
বিকিরণ থেরাপি : এ পদ্ধতিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণ রশ্মি ক্যানসার কোষগুলোকে লক্ষ্য করে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়। এ চিকিৎসায় সাধারণত একটি বড় মেশিন ব্যবহার করা হয়।
কেমোথেরাপি: এ পদ্ধতিতে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ চিকিৎসা প্রায়ই ক্যানসার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের সাথে ব্যবহৃত হয়। ক্যানসার কোষগুলোকে সঙ্কুচিত করার জন্য অস্ত্রোপচারের আগে কেমোথেরাপি করা যেতে পারে, যাতে পরবর্তীতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেগুলো সহজেই অপসারণ করা যায়।
লক্ষ্যযুক্ত বা টারগেটেড থেরাপি: এ পদ্ধতির চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
১) ধূমপান বা মদ্যপান ধেকে বিরত থাকতে হবে। ২) চিকিৎসকের পরামর্শে পোস্ট-মেনোপজাল হরমোন থেরাপি সীমিত আকারে ব্যবহার করতে হবে। ৩) নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। ৪) ফলমূল বা শাকসবজি বেশি পরিমানে খেতে হবে। ৫) যোসব মা তার শিশুকে দুধ পান করান, তাদের ক্যান্সারে ঝুঁকি থাকে না।
অক্টোবর মাসকে ‘পিংক মাস' বলি। তাই অক্টোবর মাসে স্তন ক্যান্সার নিয়ে নানা রকম সেমিনার, সভা, র্যালি ইত্যাদি আয়োজন করে থাকি।
ফ্যাটি লিভার হলো লিভার বা যকৃতে চর্বি বা ফ্যাট জমা থাকা। ফ্যাটি লিভারের আরেক নাম "হেপাটিক স্টোটোসিস"। আমাদের দেশে প্রায় ২৫% মানুষের মধ্যে এই রোগ আক্রান্ত। বিশ্বে প্রায় প্রতি হাজারে ৪৭ জন ফ্যাটি লিভারের আক্রান্ত হচ্ছে।
ফ্যাটি লিভার ২ প্রকার। যথা:
১) অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
২) নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার: যাদের অনেক দিন ধরে মদ্য পানের অভ্যাস আছে, তাদের অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হয়৷ ৮০ বা ৯০ দশকে বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভার হলে চিকিৎসকরা অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার মনে করতো।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার: যারা ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খায়, অতিরিক্ত চিনি খাই, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভাসের কারণে এই ধরণের লিভার হয়ে থাকে। কখনো কখনো স্টেরয়েড জাতীয় ঔষুধ সেবণের মাধ্যমে হতে পারে।
||লক্ষণ||
১) পেট ব্যথা হয়।
২) কালো রংয়ের প্রস্রাব বের হয়।
৩) চোখের সাদা অংশে বা চামড়াতে হলুদাভ রং দেখা দেয়। (জন্ডিস)
৪) পেট ফুলে যায়।
৫) যকৃত ও প্লীহা (Spleen) বড় হয়ে যায়।
||কারণ||
অনেক কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। বাংলাদেশে ৪ টি কারণে ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে।
১) উচ্চ রক্তচাপ।
২) স্থুলতা।
৩) রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি।
৪) টাইপ ২ ডায়বেটিস।
এসব কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে৷
||জটিলতা||
ফ্যাটি লিভারের রোগ নিরাময় করা না যায়, সেক্ষেত্রে লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সমস্যা দেখা দিবে।যেমন: নন অ্যালকোহলিক স্টোটোহেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, লিভার ফাইব্রোসিস ইত্যাদি হতে পারে। অনেক সময় লিভারের ক্যান্সার হতে পারে।
রোগ নির্ণয় জন্য লিপিড প্রোফাইল এবং লিভার এনজাইম টেস্ট করতে হবে। এমআরআই বা আলট্রাসাউন্ড করে রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য লিভার বায়োপসি করা হয়। এই লিভার বায়োপসি পরে মাইক্রোস্কোপ মাধ্যমে বুঝা যায় যে রোগী ফ্যাটি লিভারের আক্রান্ত কি না।
ফ্যাটি লিভারের কোনো ঔষুধ নাই। তবে সম্প্রতি এক সূত্রে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন ঔষুধ আবিষ্কার করেছে। ঔষুধের নাম হলো রেসমেটিরম। তবে এই ঔষুধের গবেষণা চলছে। তাই ঔষুধ বাংলাদেশে আসে নাই। তবে কিছু পদক্ষেপ নিলে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
১) তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকবেন।
২) নিয়মিত শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করবেন। যেমন: দিনে ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাঁটা ইত্যাদি
৩) চিনি যত টুকু সম্ভব কম খাবেন৷
৪) শাক সবজী বা ফলমূল বেশি খাবেন, বিশেষ করে ফাইবার যুক্ত।
৫) অ্যালকোহল সেবন বন্ধ করতে হবে।
৬) যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত, তারা ডাক্তারের পরামর্শ ঔষুধ সেবন করবেন।