বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্যবহারকারী:Ariphin Sabbir

উইকিবই থেকে
          ভূত রহস্য

মধ্যরাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । তখন অনুভব করছি আমি কথা বলতে পারছি না । চিৎকার করার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি, চিৎকার করে বাবা মাকে ডাকার চেষ্টা করছে । কিন্তু কে যেন আমার গলাটা অনেকটা জোরে চেপে ধরে আছে আমাকে কথা বলতেই দিচ্ছে না। কিংবা কথা বললেও সে আওয়াজটা কে যেন বের হতে দিচ্ছে না । মনে হচ্ছে আওয়াজটা হয়তো সে গিলে খেয়ে ফেলছে। হাত পা গুলো নাড়ানোর অনেক চেষ্টা করলাম। ছুটে পালাতে চাচ্ছি এই অশরীরের কাছ থেকে । আমার হাত পা এত জোরে চেপে ধরে আছে যে নাড়ানো শক্তি টুকু আমার নেই।আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে। সারা শরীর থেকে ঘাম ঝরছে । আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মনে হলো এখনি হয়তো যাচ্ছি।কি করব বুঝতে পারছিলাম না। মনে মনে আয়াতুল কুরসী পড়ার চেষ্টা করছি তাও পারছি না। হঠাৎ আমার সামনে হাজির বিভৎস আকৃতির একটা লোক। আমার বুকটা খালি খালি লাগতেছিল। চোখ বড় বড় হয়ে আসছিল। আমার পাশেই শুয়ে ছিল আমার ছোট ভাই। তারও হঠাৎ কেন জানি ঘুম ভেঙে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পেরেছিল যে আমার সাথে কিছু একটা হচ্ছে। সে আমাকে ধাক্কা দিতে লাগল আর বলতে লাগল, "ভাইয়া কী হয়েছে তোমার"। তারপর আস্তে আস্তে নরমাল হতে লাগলাম। বুকটা তখনো ধরফর করছে।

এখন বলার চেষ্টা করব যে সে রাতে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ভুতুড়ে কাণ্ডের কারণ। আরে আমার বিশ্বাস এরকম ঘটনার সাক্ষী অনেকেই হয়তো রয়েছে। ধরনের ঘটনা কে বলে "বোবায় ধরা"। তবে বিজ্ঞান একে বলে " Slip Paralysis"। লন্ডনের গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানোম্যালিস্টিক সাইকোলজি রিসার্চ ইউনিটের প্রধান ড. ক্রিস ফ্রেঞ্চের এক গবেষণায় উঠে আসে যে, মানুষ যখন ঘুমাতে থাকে তখন মাঝে মাঝে এমন একটা বিশেষ মুহূর্তের আবির্ভূত হয় যাকে বলা হয় "Rapid Eye Movement"। এই মুহূর্তে মস্তিষ্ক মানুষের শরীরকে নাড়াচাড়া করার জন্য সংকেত পাঠায় না। ঠিক এই মুহূর্তে যদি মানুষের ঘুম ভাঙ্গে তাহলে সে মানুষটা নাড়াচাড়া করতে পারেনা । এবং তার কাছে মনে হয় যে তাকে কেউ একটা খুব জোরে চেপে রেখেছে। যেমনটার সাক্ষী আমি। এবার আসি সেই বীভৎস লোক দেখার কাহিনী নিয়ে। এই র‍্যাপিড আই মুভমেন্টৈর মুহূর্তে মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখে। তাই এই মুহূর্তে দৃষ্টিভ্রম বা Halusonia হয় অনেক বেশি। তখন মানুষ চোখে দেখতে পায় মানুষের আকৃতির বা বিভৎস ভূতের আকৃতির কিছু একটা । যেটাকে মানুষ ভূত হিসেবে ধরে নেয়। ভূত সম্পর্কিত এই আলোচনাগুলো এখনো গবেষণার বিষয় । তবে আপনি যদি বটগাছ থেকে ভূত নামতে দেখেন তারও একটা ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিয়েছে যে, ওই মুহূর্তে মানুষের মস্তিষ্কে Paradolia নামক একটি কার্যক্রম চলে যার ফলে মানুষ ভুতের অবয়বক খুঁজে পায় এবং যারা সবসময় ভূত নিয়ে ভয় পায় বা চিন্তা করে তাদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টা সবচেয়ে বেশি ঘটে।

আর এই ঘটনাগুলো যেভাবেই ঘটুক না কেন, সেই রাতের ভয়ানক কাহিনী আমি কখনো ভুলতে পারবো না। আজ এখানেই থামাচ্ছি আমার কলম এবং সবশেষে বলতে চাচ্ছি যে ভূতকে ভয় নয় ,”বিজ্ঞান দিয়ে সবকিছু করব জয় মোরা জয়”।

[ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য গুলি উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন সাইন্স পোর্টাল থেকে সংগ্রহিত]