বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্যবহারকারী:তুষার কান্তি ষন্নিগ্রহী

উইকিবই থেকে

লেখক পরিচতি

তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

Tushar Kanti Sannigrahi

জন্ম তারিখ: ১ মার্চ ১৯৫৩। জন্মস্থান: পুটিয়াদহ, বাঁকুড়া।

স্থায়ী ঠিকানা: মদনবাগ, সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন- ৭২২১৫১

পিতা: বারিদবরণ ষন্নিগ্রহী, মাতা: সুষমা দেবী।

তুষারকান্তি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন মেদিনীপুর কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সায়েন্স (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে। সহ-শিক্ষক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেন এই সব স্কুলে; কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ। বাসন্তী হাইস্কুল, বাসন্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগণা। রাজবলহাট হাইস্কুল, রাজবলহাট, হুগলি। সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুল, সিমলাপাল, বাঁকুড়া। লেখক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন দুটি স্কুলে - কমলপুর নেতাজি হাইস্কুল, কমলপুর, বাঁকুড়া এবং ভূতশহর হাইস্কুল, ভূতশহর, বাঁকুড়া। লেখক প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসর নেন ২০১৩ সালে। তারপর আরো তিন বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের (বাঁকুড়া জেলা) একাডেমিক সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন। লেখক পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য। লেখালেখি এবং সাংবাদিকতা করা লেখকের অন্যতম নেশা। তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দশটি। তার সম্পাদিত পত্রিকা পাঁচটি। তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী একজন ভারতীয় উইকিপিডিয়ান। উইকিপিডিয়াতে সম্পাদিত নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজারের উপর।

তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী: অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, প্রাক্তন সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির মুখপত্র শিক্ষা ও শিক্ষক, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি,সদস্য: পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি, সম্পাদক: কৃষ্টি কিরণ। ঠিকানা: মদন বাগ,সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন: ৭২২১৫১। ছোটবেলা থেকেই তুষারকান্তি লেখালেখি শুরু করেন। স্কুলে পড়াশোনা করার সময় তার লেখা প্রবন্ধ প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ সালে ব্যানার্জিডাঙ্গা হাই স্কুলের বার্ষিক পত্রিকা 'মুকুলিকা' তে তার প্রথম লেখা প্রবন্ধ ছিল'চাঁদা মামা'। ১৯৭২-১৯৭৩ সালের মেদিনীপুর কলেজ পত্রিকায় তার লেখা 'ভিটামিন ও তার প্রয়োজনীয়তা' প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্ত পুনর্মিলন স্মরণীতে প্রবন্ধ 'প্রাণ রসায়নের গোড়ার কথা'প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬-১৯৭৭ সালের প্রেসিডেন্সি কলেজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় 'বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি'প্রবন্ধটি। তখনকার দিনে এই প্রবন্ধ প্রকাশের পরে কলকাতার বুকে লেখক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেক লেখক এবং গবেষক এই প্রবন্ধ থেকেই ভাদু গান, টুসু গান এবং লোকসংস্কৃতির উপাদান সংগ্রহ করে তাদের রচনাতে স্থান দেন। ১৯৮৫-১৯৮৬ সালে নিখিল বঙ্গ শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় 'সিমলাপালের লোকসংস্কৃতি' প্রবন্ধ।

শিক্ষকতার সাথে সাথে তুষারকান্তি সাংবাদিকতাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকা, ভূমিলক্ষ্মী, যুগান্তর, দৈনিক বসুমতী, দি স্টেটসম্যান ,অমৃতবাজার পত্রিকা, দক্ষিণবঙ্গ সংবাদ, বাঁকুড়া বার্তা সাপ্তাহিক পত্রিকা ইত্যাদিতে অনেক প্রতিবেদন, খবরাখবর, চিঠিপত্র, নিবন্ধ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদন এবং চিঠিপত্রের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। তিনি প্রায় ১০০ টি কবিতাও লিখেছেন। সেগুলিও সংবাদপত্র, সাময়িকী ইত্যাদিতে প্রকাশিত হয়েছে।

আমার গর্ব

[সম্পাদনা]

লেখক: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী। এই বইয়ে তিনজন মনীষীর জীবনী আছে। এরা হলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দ।

ভূমিকা

[সম্পাদনা]

উনবিংশ শতাব্দীর নব জাগরণের পথিক পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। দারিদ্র, কুশিক্ষা, দুঃখ দুর্দশার বিরুদ্ধে তিনি জীবন পণ সংগ্রাম করেছিলেন। নারী শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে তাঁর মতো দৃঢ়চেতা মানুষ বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত কবি। এছাড়াও তিনি ঔপন্যাসিক, ছোটো গল্পকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী এবং সঙ্গীত বিদ। তাঁর সৃষ্টি সাগরের মতোই বিশাল। তাঁর সাহিত্য কর্ম বিশ্বজগতে পরিব্যাপ্ত।

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের ভাব শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ জড় গ্রস্ত জাতির জীবনে এনে দিলেন উদ্দীপনা ও কর্ম চাঞ্চল্য। তিনি বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছেন, "সব ধর্মই সমান, জীব সেবাই ঈশ্বরসেবা"। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দ এই তিনজন মনীষী নিয়েই তুষারকান্তি যন্নিগ্রহীর লেখা প্রবন্ধ সংকলন 'আমার গর্ব' প্রকাশ করা হল। এই মনীষীগণের উজ্জ্বল আদর্শ নতুন ভারত গঠনে আমাদের প্রেরণা দেবে-এটা আমরা আশা করি।

বিনীত- প্রকাশক: মীরা ষন্নিগ্রহী, সঙ্গীতা ষন্নিগ্রহী (পাত্র), স্বাগত ষন্নিগ্রহী। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

পরম পরশ

[সম্পাদনা]

তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী তাঁর ছাত্রাবস্থায় এবং শিক্ষকতার জীবনে প্রবন্ধ লিখেছেন অনেক। তার মধ্যে বাছাই করা তিরিশটি প্রবন্ধ নিয়ে এই সংকলন। নাম দেওয়া হয়েছে 'পরম পরশ'। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, শিল্প ইত্যাদি বিষয় সমূহ উদ্ভাসিত হয়েছে প্রবন্ধ গুলিতে। সহৃদয় পাঠকবর্গ এই প্রবন্ধ পাঠে যদি আনন্দ পান তাহলে আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

মদনবাগ, সিমলাপাল, বাঁকুড়া পিন-৭২২১৫১ জানুয়ারি-২০০৯

পরম পরশ (প্রবন্ধ সংকলন)

ISBN 978-93-341-3673-9

সূচিপত্র

প্রবন্ধের নাম ।। পৃষ্ঠা সংখ্যা

১) আ-মরি বাংলা ভাষা ১

২) শিক্ষার বিবর্তন ৬

৩) জীবন, মানুষ এবং শিক্ষা ১০

8) প্রকৃতি এবং শিক্ষা ১৩

৫) শিক্ষার উদ্দেশ্য। ১৫

৬) শিক্ষার লক্ষ্য ১৮

৭) শিক্ষার আলো ২০

৮) সর্বশিক্ষা অভিযান ২৫

৯) বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি ২৮

১০) সিমলাপালের লোকসংস্কৃতি ৩৪

১১) লোকউৎসব ভাদু ৪০

১২) বাংলার লোকসাহিত্য। ৪৫

১৩) ছোটগল্প ৪৯

১৪) বই চাই বই ৫২

১৫) আমার বইমেলা ৫৫

১৬) আলোকময় জীবনশৈলী ৫৬

১৭) নেতাজি ও আমরা ৫৯

১৮) চাঁদা মামা ৬০

১৯) বিজ্ঞান বিচিত্রা ৬২

২০) বেগুন মোটেই নির্গুণ নয় ৬৫

২১) প্রাণরসায়নের গোড়ার কথা ৬৬

২২) সয়াবিন কথা ৬৮

২৩) আত্মরক্ষার সূঁচ র‍্যাফাইড ৬৯

২৪) মানুষের বিপদ এইডস্ ৭০

২৫) ২০০০ খ্রিস্টাব্দে সবার জন্য স্বাস্থ্য ৭৩

২৬) ভিটামিন ও তার প্রয়োজনীয়তা ৭৫

২৭) ডিমের কথা ৭৯

২৮) ধূমপান না স্বাস্থ্য ৮১

২৯) রেশম শিল্পের সেকাল ও একাল ৮৫

৩০) জোয়ার আসুক রেশম ও লাক্ষা

শিল্পে ৮৮

কমলকলি

[সম্পাদনা]

কমলকলি (কবিতা সংকলন): এই কবিতা সংকলনে মোট সাতজন কবির কবিতা আছে। কবিরা হলেন;

১) তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

২) মীনা ঠাকুর

৩) অজিতকুমার দাশ

৪) মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়

৫) নীলাঞ্জন ষন্নিগ্রহী

৬) শোভনা মিশ্র

৭) মালবিকা পণ্ডা

কমলকলি সম্পাদনা করেছেন তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

প্রকাশক: কৃষ্টি কিরণ (প্রকাশন বিভাগ),সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন- ৭২২১৫১

কমলকলি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় ২০২২ সালের বাঁকুড়া জেলা বই মেলাতে।

স্বর্ণকুমারী দেবী

[সম্পাদনা]

তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

ঊনবিংশ শতাব্দীর সমাজ সচেতনতার ক্ষেত্রে বাংলার বুকে ঠাকুর পরিবারের যে কন্যা অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি স্বর্ণকুমারী। সাহিত্য, রাজনীতি জনকল্যাণ, নারীর শিক্ষা বিস্তার ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান খুবই উল্লেখযোগ্য। স্বর্ণকুমারী দেবী প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্রি এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাদেবীর একাদশতম সন্তান। তাঁর ভাই রবীন্দ্রনাথ স্বর্ণকুমারীর থেকে ছয় বছরের ছোট। উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথ হলেন দেবেন্দ্রনাথ-সারদা দেবীর চর্তুদশতম সন্তান। এঁদের মোট সন্তান ছিল পনের জন। এ ব্যাপারে একটু আলোকপাত করলে সুবিধে হয়।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সারদা দেবীর সন্তানদের তালিকা-

১) প্রথম সন্তান (কন্যা):

শিশু অবস্থাতেই মারা যায়।

২) দ্বিতীয় সন্তান (পুত্র):

দ্বিজেন্দ্র (১৮৪০-১৯২৬)

৩) তৃতীয় সন্তান (পুত্র)

সত্যেন্দ্র (১৮৪২-১৯২৩)

8) চতুর্থ সন্তান (পুত্র) হেমেন্দ্র (১৮৪৪-১৮৮৪)

৫) পঞ্চম সন্তান (পুত্র)

বীরেন্দ্র (১৮৪৫-১৯১৫)

৬) ষষ্ঠ সন্তান (কন্যা)

সৌদামিনী (১৮৪৭-১৯২০)

৭) সপ্তম সন্তান (পুত্র) জ্যোতিরিন্দ্র (১৮৪৯-১৯২৫)

৮) অষ্টম সন্তান (কন্যা) সুকুমারী (১৮৫০-?)

৯) নবম সন্তান (পুত্র)

পূণ্যেন্দ্র (১৮৫১-১৮৮৭)

১০) দশম সন্তান (কন্যা)

শরৎকুমারী (১৮৫৪-১৯২০)

১১) একাদশ সন্তান (কন্যা)

স্বর্ণকুমারী (১৮৫৫-১৯৩২)

১২)দ্বাদশ সন্তান (কন্যা)

বর্ণ কুমারী (১৮৫৮-১৯৪৮)

১৩) ত্রয়োদশ সন্তান (পুত্র)

সোমেন্দ্র (১৮৫৯-১৯২২)

১৪) চতুর্দশ সন্তান (পুত্র)

রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১)

১৫) পঞ্চদশ সন্তান (পুত্র)

বুধেন্দ্র (১৮৬৩-১৮৬৪)

স্বর্ণকুমারীর জন্ম তারিখ ২৮ আগস্ট ১৮৫৫। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পরিবেশেই বাড়িতেই তাঁর শিক্ষা শুরু হয়। মাত্র তের বছর বয়সে ১৮৬৮ সালে নদীয়া জেলার জমিদার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জানকীনাথ ঘোষালের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। জানকীনাথ বিদেশে ভ্রমণ করার সময় স্বর্ণকুমারী বেশিরভাগ সময় ঠাকুর বাড়িতেই থাকতেন। অবশ্য জানকীনাথ সব সময়ই স্বর্ণকুমারীকে সাহিত্য চর্চা ও সমাজসেবার কাজে উৎসাহ দিতেন। ঠাকুর বাড়ির পরিবেশ এবং জানকীনাথের উৎসাহ স্বর্ণকুমারীকে সমাজ ' সচেতনতার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। কবিতা, সঙ্গীত, নাটক, সাহিত্য ও সমাজ সেবায় স্বর্ণকুমারী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। তিনি হয়ে ওঠেন ঔপন্যাসিক, বিশিষ্ট কবি, সঙ্গীতকার এবং অন্যতম সমাজ সংস্কারক। সূত্র-কৃষ্টি কিরণ,২০২৩ পৃঃ ৭

কৃষ্টি কিরণ

[সম্পাদনা]

সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল থেকে প্রকাশিত হয়েছে কৃষ্টি কিরণ সাহিত্য পত্রিকার ষোড়শ বর্ষ, ষোড়শ সংখ্যা। এতে প্রচ্ছদ নিবন্ধ হিসেবে স্থান পেয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের নীল দংশন ও মৃগয়ার কালক্ষেপ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলনের ওপরে একটি গবেষণাধর্মী লেখা। লেখক: মোরশেদুল আলম, সহকারী অধ্যাপক এবং গবেষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবংশ নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন পত্রিকার সম্পাদক তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী। গ্লুকোমা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনা করেছেন বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ডা. অনুপ মণ্ডল। এছাড়াও কৃষ্টি কিরণে স্থান পেয়েছে অন্যান্য প্রবন্ধ,চারটি ছোটো গল্প এবং সাতাশটি কবিতা।

কড়চা তে প্রকাশিত

[সম্পাদনা]

বাঁকুড়ার সিমলাপাল থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে "কৃষ্টি কিরণ"(সম্পাদক: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী)সাহিত্য পত্রিকার ষোড়শ সংখ্যা।এই সংখ্যায় প্রবন্ধ লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোরশেদুল আলম, চিকিৎসক অনুপ মণ্ডল, রাহুল কর প্রমুখ।এছাড়াও রয়েছে চারটি ছোট গল্প ও ২৭টি কবিতা।

৪ জানুয়ারি ২০২৫ ।। আনন্দবাজার পত্রিকা,পুরুলিয়া- বাঁকুড়া সংস্করণ।

ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ

[সম্পাদনা]

এই বইটির লেখক তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী। প্রকাশক: কৃষ্টি কিরণ প্রকাশন বিভাগ, ঠিকানা: মদনবাগ, সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ,ভারত, পিন- ৭২২১৫১

বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবংশ

[সম্পাদনা]

।। বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবংশ।।

তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

দশম শতাব্দীতে বেশ কিছু বৈদিক ব্রাহ্মণ কনৌজ ত্যাগ করে বৈতরণী নদী পার হয়ে জগন্নাথ দেবের 'চৌদ্দক্রোশী' এলাকায় বসবাস শুরু করেন বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন। তখনকার দিনে এঁদের অধিকাংশরেই পদবি বা উপাধি ছিল দেবশর্মা। দেবশর্মা বা দেবশর্মনঃ ব্রাহ্মণদের সাধারণ উপাধি।

শ্রীপতি মহাপাত্র ছিলেন 'চৌদ্দক্রোশী' এলাকার অর্ন্তভূক্ত বীররামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কনৌজ ব্রাহ্মণদের বংশধর। তাঁর পূর্বপুরুষের উপাধি ছিল দেবশর্মা।

জানা যায় পুরীর গজপতিরাজ মুকুন্দদেবের রাজসভায় প্রধান সেনাপতি ও রাজপুরোহিত হিসেবে শ্রীপতি মহাপাত্র দায়িত্ব পান।

রাজা মুকুন্দদেবের দুই পুত্র নকুড় তুঙ্গ এবং ছকুড় তুঙ্গ পুরী এলাকা ত্যাগ করে শ্রীপতি মহাপাত্রকে সঙ্গে নিয়ে এসে পৌঁছেছিলেন রাইপুর এলাকার শ্যামসুন্দরপুরে। শ্যামসুন্দরপুরের এলাকা দখল করে রাজা হন ছকুড়তুঙ্গ। ফুলকুশমা এলাকা দখল করে রাজা হন নকুড়তুঙ্গ। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো অজ্ঞাত কারণে ছকুড় তুঙ্গকে হত্যা করা হয়। ফলে নকুড় তুঙ্গ নিজের নাম পরিবর্তন করে নাম নেন ছত্রনারায়ণ দেব। ছত্রনারায়ণ দেব হিসেবেই তিনি এই রাজ্য শাসন করতে থাকেন।এই ঘটনার গোড়াতেই নকুড়তুঙ্গ তথা ছত্রনারায়ণ দেব শ্রীপতি মহাপাত্রের পৌরোহিত্যে পুত্রোষ্টি যজ্ঞ করার ফলেই তাঁর সন্তান জন্মগ্রহণ করে বলে ধারণা। নাম রাখা হয় চৈতঙ্গ তুঙ্গ। সেই সময় রাজা নকুড় তুঙ্গ বা ছত্র নারায়ণ দেব স্থির করেন সিমলাপাল এলাকা শ্রীপতি মহাপাত্রকে দান করার জন্য।

গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাক্ষী রেখে একটি তাম্রপট্টে উড়িয়া হরফে স্বাক্ষর করে সিমলাপাল পরগণা তিনি দান করেন শ্রীপতি মহাপাত্রকে।

তাম্রপট্টের অনুলিপি-

উড়িয়া হরফে লেখা-বাংলা অনুবাদ,

শ্রীশ্রীজগন্নাথদেব জিউ:

রাজনগর রাজা নকুড়তুঙ্গদেবের পুত্রষ্টি যজ্ঞকরণ কারণ পুত্র জন্মিল চৈতন্য তুঙ্গ। কারণ-শ্রীপতি মহাপাত্র কুলগুরু প্রধান সেনাপতি। শ্রীশ্রীজগন্নাথদেব পদতলে রক্ষিত তাম্রপট্ট দিয়ে নিষ্কর ব্রহ্মোত্তর সিমলাপাল দানপত্র করিলেন। আমত্য বিশ্বম্ভর মহাপাত্র, রঘুনাথ পণ্ডা, জগন্নাথ ত্রিপাঠী, পুরুষোত্তম কর, পীতাম্বর মিশ্র দেবগণ, মামা সূর্যকান্ত রায়, সেনাপতি বিজয় সিংহ, চাঁদ সিংহ, ঈশ্বর ভট্ট, কৃষ্ণ নাপিত, বাসুদেব করণ, শুকদেব করণ। দামোদর করণ ও প্রজাদিগের সামনে গুরুবরণ করিলেন রাজা নকুড় তুঙ্গদেব।

(৮৭০সাল, দোল পূর্ণিমা)

দোল পূর্ণিমার দিন ৮৭০ বঙ্গাব্দে শ্রীপতি মহাপাত্র দানপত্রের মাধ্যমে সিমলাপাল পরগণা পান ঠিকই। কিন্তু সেই সময়ে সিমলাপালের শিলাবতী তীরবর্তী এলাকা ঘন অরণ্যে পরিপূর্ণ ছিল। জনবসতি খুব একটা ছিল না। কেবলমাত্র শিলাবতী নদীর তীরে বাউরি, খয়রা ইত্যাদি সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ বসবাস করতেন।

নদীর তীরের জঙ্গল এলাকা পরিষ্কার করতে, কিছু বাড়ি ঘর তৈরি করতে প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। ফলে গড় সিমলাপালের প্রতিষ্ঠা হয় ৮৭৫ বঙ্গাব্দ বা ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে।

সিমলাপাল রাজবংশে প্রায় ৪৯০ বছরের রাজত্বকালে সিমলাপালে জমিদার বা রাজা ছিলেন মোট ১৮জন।


।।বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবংশ।।

      তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী 
        (দ্বিতীয় পর্ব)

আদি সিমলাপালের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন সিমলাপালের রাজ পরিবারের সদস্যরা। আগেকার দিনে গড় সিমলাপাল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৮৭৫ বঙ্গাব্দে বা ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন দিল্লির সুলতান ছিলেন বহলাল খান লোদি, উড়িষ্যার গজপতি ছিলেন পুরুষোত্তম দেব , বাংলার শাসক ছিলেন রুকনুদ্দিন বারবক শাহ, এবং বন বিষ্ণুপুরের রাজা ছিলেন চন্দ্র মল্ল। প্রাচীন কালে এই সিমলাপাল এলাকা কলিঙ্গ ও উড্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৪৫০ সাল নাগাদ নকুড় তুঙ্গ রাইপুর এলাকায় দলবল সমেত আসেন। তাঁর সেনাপতি ও প্রধান পুরোহিত ছিলেন উৎকল ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের শ্রীপতি মহাপাত্র। শ্রীপতি মহাপাত্রের বিভিন্ন কর্মকুশলতা ও পুত্রোষ্টি যজ্ঞে সন্তুষ্ট হয়ে নকুড় তুঙ্গ তাকে সিমলাপাল পরগনা দান করেন। সিমলাপাল বা গড় সিমলাপালের প্রথম রাজা শ্রীপতি মহাপাত্র। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ৮৭৫ থেকে ৯০২ বঙ্গাব্দ। দ্বিতীয় রাজার নাম রাধামাধব মহাপাত্র। রাজত্বকাল ৯০২ থেকে ৯৩১ বঙ্গাব্দ। পরবর্তী তৃতীয় রাজার নাম জগন্নাথ মহাপাত্র। রাজত্বকাল ৯৩১ থেকে ৯৫২ বঙ্গাব্দ। চতুর্থ রাজা ছিলেন বাসুদেব মহাপাত্র, রাজত্বকাল ৯৫২ থেকে ৯৬৫ বঙ্গাব্দ। বাসুদেব ছিলেন অপুত্রক। তাই বাসুদেবের মৃত্যুর পর তাঁর কাকা বা খুড়া রাজা হন। তাই সিমলাপাল রাজবংশের পঞ্চম রাজা হিসেবে আমরা পাই বলরাম মহাপাত্রকে। ওঁকে বলা হতো খুড়া বলরাম। রাজত্বকাল ছিল ৯৬৫ বঙ্গাব্দ থেকে ৯৮৭ বঙ্গাব্দ। খুড়া বলরামের পর রাজা হন তাঁর পুত্র মোহনদাস। সেই সময় বনবিষ্ণুপুরের রাজা ছিলেন বীর হাম্বীর। রাজা মোহনদাস মহাপাত্র পদবি না নিয়ে গ্রহণ করলেন সিংহচৌধুরী পদবি। তিনি হয়ে গেলেন মোহনদাস সিংহচোধুরী এই সময় থেকেই সিমলাপাল রাজবংশে বিশেষ প্রথা চালু হলো। রাজার বড় ছেলের পদবি হবে সিংহচৌধুরী পরবর্তী পুত্রের পদবি হবে সিংহহিকিম, তার পরের পুত্রের পদবি হবে সিংহবড়ঠাকুর। তারপর আরো যদি পুত্র থাকে তাঁদের পদবি হবে সিংহবাবু। সিমলাপালের ষষ্ঠ রাজা মোহনদাস সিংহচৌধুরীর রাজত্বকাল ছিল ৯৮৮ থেকে ১০০০ বঙ্গাব্দ। পরবর্তী রাজা চিরঞ্জীব সিংহচৌধুরী (১ম)। রাজত্বকাল ১০০১ থেকে ১০২২ বঙ্গাব্দ। রাজা চিরঞ্জীব সিংহচৌধুরীর পুত্র ছিলেন তিনজন। এঁদের নাম লক্ষ্মণ, লস্কর এবং বিক্রম। ১০২৩ বঙ্গাব্দে সিমলাপালের জমিদারী তিনভাগে বিভক্ত হয়। সিমলাপালে লক্ষণ পান ৬ আনা অংশ, ভেলাইডিহাতে লস্কর পান ৬ আনা অংশ, বাকি ৪ আনা অংশ পান বিক্রম, যার মৌজার নাম বিক্রমপুর। এটা ১০২৩ বঙ্গাব্দ বা ১৬১৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। পরবর্তী পর্যায়ে বিক্রমপুরের চার আনা অংশ সিমলাপালের সাথে যুক্ত হয়। ফলে সিমলাপালের অংশ দশআনা হয়ে যায়। তাই গড় সিমলাপালকে বলা হয় দশ আনি আর ভেলাইডিহা অংশকে বলা হয় ছয় আনি। লক্ষণের রাজত্বকাল ১০২৩-১০৫৯ বঙ্গাব্দ। লক্ষণের পর সিমলাপালের রাজা হন কৃষ্ণ দাস সিংহচৌধুরী তাঁর রাজত্বকালে ১০৬০ থেকে ১১০০ বঙ্গাব্দ। তারপরে রাজা হন রাধানাথ, রাজত্বকাল ১১০১ থেকে ১১৩৫ বঙ্গাব্দ। এর পরের রাজার নাম বলরাম (দ্বিতীয়)। রাজত্বকাল ১১৩৫ থেকে ১১৮২ বঙ্গাব্দ। পরের রাজা জগন্নাথ, রাজত্বকাল ১১৮২ থেকে ১২০৭ বঙ্গাব্দ। তারপরের রাজা চিরঞ্জীব (দ্বিতীয়) রাজত্বকাল-১২০৭-১২৩৭ বঙ্গাব্দ। পরের রাজা নটবর সিংহচৌধুরী, রাজত্বকাল ১২৩৭-১৩১০ বঙ্গাব্দ। পরবর্তী রাজা হন মানগোবিন্দ, রাজত্বকাল ১৩১০-১৩১৫ বঙ্গাব্দ। সিমলাপাল রাজবংশের পরের রাজা জগবন্ধু সিংহচৌধুরী। রাজত্বকাল ১৩১৬ থেকে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ। তারপর রাজা হন মদনমোহন সিংহচৌধুরী। রাজত্বকাল ১৩৩৪ থেকে ১৩৬১ বঙ্গাব্দ। উল্লেখ্য, সিমলাপালের রাজা মদনমোহনের নামেই সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজা মদনমোহন ১৩৬১ বঙ্গাব্দের ২৩ আশ্বিন ইহলোক ত্যাগ করেন। ফলে তাঁর পুত্র শ্যামসুন্দর সিংহচৌধুরী পরবর্তী রাজা হিসেবে গণ্য হন। সিমলাপালের সর্বশেষ রাজার রাজত্বকাল মাত্র ছয় মাস স্থায়ী ছিল কারণ, ১৩৬২ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে জমিদারী প্রথা রদ হয়ে যায়। সিমলাপালের শেষ রাজা ছিলেন শ্যামসুন্দর সিংহচৌধুরী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে সিমলাপাল এলাকার সভ্যতার বিকাশ,শিক্ষা এবং সংস্কৃতির উন্নয়ন, কৃষি ও সেচের ব্যবস্থাপনা, মন্দির ও আশ্রম নির্মাণ অনেকাংশেই রাজ পরিবারের হাত ধরেই হয়েছিল। (তথ্য সূত্র: স্মারকগ্ৰন্থ, প্রথম বর্ষ- সিমলাপাল বই মেলা: ২০০৮। কৃষ্টি কিরণ, ষোড়শ সংখ্যা,২০২৪,পৃ.১১-১৪)


সিওল থেকে সিমলাপাল

[সম্পাদনা]

।। সিওল থেকে সিমলাপাল ।।

     তুষারকান্তি যন্নিগ্রহী               সিমলাপাল,            বাঁকুড়া            

ছোট্ট দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। জনসংখ্যা মাত্র ৫ কোটি। রাজধানী সিওল। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে পরাজিত হয় জাপান। কোরিয়ার উত্তর ও দক্ষিণে দখল নেয় যথাক্রমে রুশ ও মার্কিন সেনা। ১৯৪৮ সালে তখনকার কোরিয়া দুটি আলাদা রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়। রুশ সেনাদের দখলকৃত এলাকার নাম হয় উত্তর কোরিয়া। মার্কিন সেনার দখলে থাকা দক্ষিণ অংশের নাম হয় দক্ষিণ কোরিয়া।

ভারতের স্বাধীনতা দিবস ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাধীনতা দিবসের কি মিল। তারিখটি ১৫ আগস্ট। শুধু একবছর বাদে প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (দক্ষিণ কোরিয়া) আত্মপ্রকাশ করে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল থেকে পাড়ি দিয়ে সোজা সিমলাপাল আসেন কিম হুন। পেশায় সাংবাদিক। তিনি কাজ করেন সিওলের মুনহা ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে। বিমান যোগে দমদম। তারপর গাড়িতে করে সিমলাপাল। গত ২০০৭ সালের মার্চ মাসে সিমলাপালের চাঁদপুর গ্রামে গরুর মুরগি খাওয়ার খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদ পত্রে। টেলিভিসনের বিভিন্ন চ্যানেলেও তা দেখানো হয়। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই সংবাদ। মূলত এই সংবাদের জন্যই এই মহিলা সাংবাদিক এখানে আসেন। কার্তিক ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য, কার্তিক ঘোষের বাড়ি চাঁদপুরে। তিনি পেশায় সাংবাদিক। তিনিই গরুর মুরগি খাওয়ার ঘটনা প্রথম জানতে পারেন। ২০০৭ সালের ৩ অক্টোবর সিমলাপালের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেন সাংবাদিক কিম হুন। সঙ্গে এনেছিলেন দোভাষী। তাই ভাষাগত বাধা অনেকটাই অতিক্রম করা যায়। তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন বি ডি ও মতীন্দ্রচন্দ্র দেবনাথ। সিমলাপাল ফরেস্ট বাংলোতে। একদিন বাদেই ফিরে যান তিনি। সিওলে ফিরে যেয়ে তিনি কি খবর পরিবেশন করলেন তা আমাদের এখনো অজানা।

ফিরে দেখা:১৯৬৮-১৯৬৯

[সম্পাদনা]

ফিরে দেখা।।১৯৬৮ - ১৯৬৯।। ব্যানার্জিডাঙ্গা হাই স্কুল,ফতেসিংপুর, আমলাগোড়া, মেদিনীপুর ছাত্রসংসদের বিভিন্ন শাখার ভার যার যার কাছে। সাল-১৯৬৮- ১৯৬৯

সাধারণ সম্পাদক- শিবদাস মুখোপাধ্যায় (একাদশ শ্রেণী)

সহঃ সাধারণ সম্পাদক- হরেরাম দত্ত (দশম শ্রেণী)

গ্রন্থাগার বিভাগ- কাশীনাথ চ্যাটার্জ্জী (দশম শ্রেণী) . তুষারকান্তি দাস (নবম শ্রেণী)

সংস্কৃতি বিভাগ- শিবশংকর প্রামাণিক (একাদশ শ্রেণী)। , তরুণ কুমার রায় (নবম শ্রেণী)

পত্রিকা বিভাগ- গোবিন্দকুমার মণ্ডল (একাদশ শ্রেণী) , বুদ্ধদেব ব্যানার্জ্জী ( একাদশ শ্রেণী), তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী (দশম শ্রেণী)

ক্রীড়া বিভাগ- রতনচন্দ্র দাস (একাদশ শ্রেণী) . হীরালাল ব্যানার্জ্জী (দশম শ্রেণী)

কমনরুম বিভাগ- অজয়কুমার বাগচি (দশম শ্রেণী) , দিলীপ কুমার প্রতিহার (নবম শ্রেণী)

ব্যায়ামাগার বিভাগ- শ্যামসুন্দর দে (একাদশ শ্রেণী) রামশঙ্কর সিংহ (নবম শ্রেণী)

ফিরে দেখা:১৯৭৮

[সম্পাদনা]

সিমলাপাল মদন মোহন হাই স্কুল

তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগ। আমি তখন হুগলি জেলার রাজবলহাট হাইস্কুলের সহ শিক্ষক। থাকতাম স্কুলের মেসে। একদিন ইংরেজি দৈনিক অমৃত বাজার পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখলাম। সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুলের উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে দুজন সহ- শিক্ষক চাই। বিষয় রসায়ন এবং শারীর বিদ্যা। আমার শারীরবিদ্যা। তাই দরখাস্ত পাঠালাম ডাকযোগে। স্কুলটির নাম ছোটবেলা থেকে শুনেছি। এমনকি স্কুলের, পাকাবাড়ি, কাঁচাবাড়ি সবই দেখেছি। আমার মামাবাড়ি শুক্লাবাইদ যাওয়ার সোজা রাস্তা ছিল স্কুলের মাঝ দিয়েই। আমাদের বাড়ি পুটিয়াদহ থেকে গরুর গাড়িতে করে আসতাম শীলাবতী নদী পেরিয়ে লক্ষ্মণপুর। ওখানে বাস ধরে নামতাম স্কুল মোড়ে। তারপর স্কুলের মাঝদিয়ে হেঁটে মামাবাড়ি। ছোটবেলায় আমরা মামাবাড়িতে দেড়- দুমাস ধরে থাকতাম। জগন্নাথপুর প্রাইমারি স্কুলে আমরা নিয়মিত ক্লাশও করতাম। বিকেলে দল বেঁধে চলে আসতাম বড় স্কুল লাগোয়া জঙ্গলে। বনের পালকুল, সিয়াকুল, ভুড়রু, জাম, কুসুম আমরা অনেক খেয়েছি। বনের ধারে ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা লাল মাটির ওপরে এই বড় স্কুল। এই স্কুলে যে শিক্ষকতা করব তা আগে ভাবিনি। একদিন ইন্টারভিউ লেটার পেলাম। ইন্টার ভিউর দিন আমি রাজবলহাট থেকে ভোরে বেরিয়ে তিন-তিনটে বাস বদলাবদলি করে যখন সিমলাপাল এলাম তখন সূর্য মধ্যগগনে। প্রধান শিক্ষক মহাশয় আমাকে আগেই খেয়ে নিতে বললেন। আমার ভাত, মাংস, সবজি ঢাকা দেওয়া ছিল। খেলাম। শারীর বিদ্যা শিক্ষকের প্রার্থী আমি একা। ইন্টারভিউ দিলাম।

একদিন চিঠি এল। চিঠি খুলে দেখি নিয়োগ পত্র। তাতে স্বাক্ষর স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক কল্যাণীপ্রসাদ সিংহচৌধুরীর। চিঠির সাথে মুড়ে দেওযা হয়েছে পরিচালন সমিতির কার্যবিবরণীর হাতে লেখা হুবহু নকল। ৯ নভেম্বর (১৯৭৮) ইস্তাফা দিলাম আগের স্কুলের সহ-শিক্ষকের পদ থেকে। পরদিন ১০ নভেম্বর সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুলের সহ-শিক্ষকের পদে যোগ দিই। একই দিনে এই স্কুলে যোগ দেন রসায়নের শিক্ষক বঙ্কিমচন্দ্রসিংহমহাপাত্র। তখন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৬০০। দশম শ্রেণিতে ৩৮ জন, একাদশ শ্রেণিতে ৪২ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। স্কুলের হস্টেলে থাকত প্রায় ৫০জন ছাত্র।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রচন্দ্র রায়। বেঁটে খাটো মানুষ। নতুন শিক্ষকদের খুব স্নেহ করতেন। স্কুলই ওঁর ধ্যান জ্ঞান। বিদ্যালয়ই মন্দির। সকাল-সন্ধ্যা উনি প্রণাম করতেন এই মন্দিরকে। চরকির মতো গোটা স্কুল পরিদর্শন করতেন। আমরা ক্লাশে কি পড়াতাম তা উনি বারান্দায় পায়চারি করতে করতে লক্ষ্য করতেন।

একদিন আমি হেড স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্যার আপনি "রবীন্দ্রনাথ" না লিখে "রবীন্দ্র চন্দ্র" লেখেন কেন? উনি বললেন, আরে "রবীন্দ্রনাথ" একজনই, অন্য কারও নাম "রবীন্দ্রনাথ" হয় না। "তাই আমি রবীন্দ্রচন্দ্র"। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে উনি রবীন্দ্র জীবনী নিয়ে বক্তব্য রাখতেন এমন কি হারমোনিয়ামের একটি মাত্র রিড টিপেই অক্লেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে দিতেন।

সহকারী প্রধানশিক্ষক রাজীবলোচন সিংহমহাপাত্র। বিশাল চেহারা। ভোজনপ্রিয় মানুষ। জল ও পান খেতে খেতে প্রভিশন্যাল রুটিন করতেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় ওঁর মাইক লাগত না। ক্লাশে পড়ানোর সময় বহুদূর থেকেও ওঁর গলা শোনা যেত। রাজীব বাবুর চেহারা ও ব্যক্তিত্ব দেখে বই কোম্পানীর লোক ওঁনাকেই প্রধান শিক্ষক বলে মনে করত। হাতে ধরিয়ে দিত বইয়ের নমুনা কপি। বাইরের লোক রাজীব বাবুকেই "স্যার-স্যার" করত। পাশে বসা প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রচন্দ্র রায় রাগে গর গর করতেন, অথচ কিছুই প্রকাশ করতে পারতেন না।

সহ-শিক্ষক গোলোকবিহারী সিংহমহাপাত্র, জয়দেব হোতা, রঘুনন্দন সৎপতি প্রমুখ স্কুলের হস্টেলে থাকতেন।

জয়দেববাবু ছিলেন হৃষ্ট পুষ্ট ও বেশ লম্বা। ধীর গতিতে ক্লাসে পড়াতেন। ছাত্রদের ফুটবল খেলাতেন। কেবলমাত্র গোলের সময় লম্বা বাঁশী বাজাতেন।

"ব্রুশ" কোম্পানীর একজন ভদ্রলোক মোটর বাইকে স্কুলে স্কুলে এসে ফুটবল, নেট, বুট, জার্সি ইত্যাদি বিক্রি করতেন। খেলাধূলার শিক্ষককে ওই কোম্পানী গেঞ্জি উপহার দিত। জয়দেব বাবু সেদিন স্কুলে ছিলেন না। ব্রুশ কোম্পানীর গেঞ্জি গায়ে পরে তার দখল নিয়েছিলেন গোলোকবাবু। জয়দেব বাবু স্কুলে এসে "গেঞ্জি" গায়ে গোলোকবাবুকে দেখে বেজায় চটেছিলেন। গোলোক বাবুর হস্টেলের রুমে কোনদিন তালা পড়ত না। চোরের ভয়ে নয়-কেবলমাত্র কুকুরের ভয়ের জন্য দরজার শেকল তোলা থাকত। রুমের মধ্যে মাটির দেওয়ালের একটি কাঠের গোঁজ গাঁথা ছিল। তাতেই ঝোলানো থাকত স্কুলের চাবির গোছা। গোলোক বাবুর ছিল একটি দড়ির খাট। মাঝে কাঁথা, সামনে বালিশ পিছনে পাতা থাকত দু-তিনটে চটের বস্তা। দড়িতে ঝোলানো থাকত ধুতি জামা। ছিল পান, পানের বাটা, সুপারি। আর ছিল একটা বিষ্ণুপুরের লণ্ঠন।

আমিও মাঝে মধ্যে স্কুলের হস্টেলে থাকতাম। একদিন রাতে দেখছি গোলোকবাবু লণ্ঠন জ্বালেন নি। স্যারকে জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন জ্যোৎস্না রাত। তাই জ্বালিনি। হস্টেলের রুম থেকে রঘুনন্দনবাবুর নেওয়া দুধ বেশ কয়েকবার চুরি হয়ে যায়। উনি কিন্তু বেড়ালকে সন্দেহ করেননি।

ভবসুন্দর সিংহ বড়ঠাকুর। দুর্দান্ত চেহারা। খুব সুন্দর কথা বলতেন। পড়াতেনও। থিয়েটার নাটকে দারুণ অভিনয় করতেন। রাজবাড়ি থেকে স্কুল হেঁটেই যাতায়াত করতেন। মূল রাস্তার একদম বাঁয়ে সব সময়ই চলতেন- যাতে বিপদ না হয়। সাইকেল জানতেন। তবে চালাতেন কম। শম্বুক গতি। কালীকিঙ্কর সিংহমহাপাত্র পড়াতেন সংস্কৃত, বাংলা, অভিনয়েও পারদর্শী। সুধীর রঞ্জন রায় বাংলার শিক্ষক। লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত।

হিন্দির শিক্ষক প্রবোধচন্দ্র মহান্তি। তীক্ষ্মস্বরে পড়াতেন ক্লাশে। কুলডোবা থেকে যাতায়াত করতেন।

হরিশচন্দ্র সিংহমহাপাত্র। ইংরাজির শিক্ষক। প্যান্ট শার্ট পরে ক্লাশে শুধু ইংরাজি পড়াতেন না এই ভাষার উচ্চারণও শেখাতেন। হরিশবাবু আবার ছিলেন এন-সি- সি অফিসার। ওঁর স্কুলে আসা, খাওয়া দাওয়া ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় বাঁধা ছিল। এদিক ওদিক হওয়া চলত না। তখন বিজ্ঞানের বিষয়গুলি পড়াতেন গিরিধারী সৎপথী, শ্রীবাসচন্দ্র সিংহমহাপাত্র, বনমালী সিংহমহাপাত্র, বনমালী দাস, রাধারমণ পাত্র এবং দীপ্তেন্দুবিকাশ চট্টোপাধ্যায়।

গণিতের শিক্ষক বনমালী দাস বাবু মনে করতেন উচ্চমাধ্যামিক স্তরে কেবলমাত্র ভালো ছাত্ররাই "গণিত" বিষয় পাবে। তাই জটিল অঙ্ক দিয়ে তিনি এমন শুরু করতেন যার ফলে সাধারণ ছাত্ররা গণিত বিষয় ছেড়ে দিত।

সরস্বতী পূজার টাকা পয়সার হিসাব রাখতেন বনমালী দাস বাবু। ১টাকার গোলমাল ধরার জন্য উনি গোটা রাত কাবার করেছিলেন। শশাঙ্ক বাবু বলেছিলেন বরং ১ টাকা দিচ্ছি হিসাব ছাড়ুন। বনমালী দাস বাবু কিন্তু হিসাব ছাড়েননি। পরদিন ভোর পাঁচটায় হিসাব মিলেছিল।

ইতিহাস-ভূগোল বিষয়গুলি পড়াতেন নলিনীরঞ্জন সিংহবাবু,কিরীটিভূষণ সিংহমহাপাত্র, সুধীরকুমার লাহা এবং শশাঙ্কশেখর সিংহমহাপাত্র। এঁরা যখন বিভিন্ন ক্লাশে পড়াতেন স্কুল গম্ গম্ করত। লাহাবাবু, শশাঙ্কবাবু দারুণ বক্তৃতা দিতেন। কিরীটিবাবু মৌখিক পরীক্ষা এমন নিখুঁত নিতেন যার ফলে ছাত্রছাত্রীদের লাইন দিয়ে প্রায় সন্ধ্যে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত।

এছাড়াও সহ-শিক্ষক ছিলেন মুরলীমোহন সিংহবাবু এবং অনিলবরণ মহাপাত্র। মুরলীবাবু ধীর স্থির, অন্যদিকে অনিলবাবু ছিলেন কিছুটা ছটফটে। ছাত্রদের পড়াতেন দরদ দিয়ে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন মোট ছয় জন। এঁরা হলেন, কিরীটিভূষণ নায়ক, অনিলবরণ মহান্তি, অনাদি চরণ সিংহমহাপাত্র, গোকুল চন্দ্র মহান্তি, আনন্দমোহন সিংহ এবং গজানন রায়। এঁরা সকলেই আন্তরিকতার সাথে স্কুলে কাজ করতেন। এঁদের মধ্যে অনাদিচরণ, ডবল বেঞ্চ নীচতলা থেকে উপর তলা ছুটে ছুটে একাই নিয়ে যেতেন। সবাই স্কুলে থাকতেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আমরা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সবাই ছিলাম যেন একই পরিবারের সদস্য। আমাদের রাজনীতির রঙ আলাদা ছিল। মত আলাদা ছিল। কিন্তু শিক্ষা ও শিক্ষকের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে মতভেদ হয়নি। উন্নয়নের স্বার্থে আমরা সবাই এক। এটাই ছিল সেদিনের ব্রত।

২১ মার্চ ২০২৪

ব্যানার্জীডাঙ্গা হাই স্কুল। গড়বেতা স্টেশন এর পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফতেসিংপুর এলাকায় অবস্থিত এই প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্কুলে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। আমি ১৯৬৫ সালে এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। হোস্টেলেই থাকতাম। তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কৃষ্ণদাস পণ্ডা। আমি এই স্কুল থেকে ১৯৭০ সালে একাদশ শ্রেণির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করি। এক বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য স্কুলের পাশ দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছিল ফেরার পথে হঠাৎই আমি এই স্কুলে প্রবেশ করি। স্কুলের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করি। বর্তমান প্রধান শিক্ষক প্রদ্যোৎ চক্রবর্তী মহাশয় এবং ইংরেজির শিক্ষক সুব্রত চক্রবর্তী মহাশয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। স্কুলে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মূর্তি বসেছে এবং একটি ভবন প্রয়াত প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণদাস পণ্ডার নামে উৎসর্গ করা হয়েছে দেখে খুব ভালো লাগলো।

ফিরে দেখা

[সম্পাদনা]

ফিরে দেখা++++চিঠি # নিজের জীবনের কথা লিখেছেন সত্যনারায়ণ সিংহমহাপাত্র। কয়েক বছর আগেই তিনি প্রয়াত হয়েছেন তার প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা।

প্রতিঃ : তুষারকান্তি যন্নিগ্রহী সম্পাদক, কৃষ্টি কিরণ মদনবাগ, পোঃ-সিমলাপাল জেলা-বাঁকুড়া পিন-৭২২১৫১ তাং-১লা মাঘ, ১৪২১( 16.01.2015)

প্রিয় তুষারবাবু, প্রথমেই জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রীতি শুভেচ্ছা ও নমস্কার। হঠাৎ কয়েকদিন আগে আপনার সম্পাদিত "কৃষ্টি কিরণ”, ষষ্ঠ বর্ষ- ষষ্ঠ সংখ্যা-২০১৪ আমার নজরে পড়ল। কোন এক আত্মীয়ের হাত দিয়ে কলকাতায় আমার কাছে এসে পৌঁচেছে। আমি তা দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। আপনার এই পত্রিকায় ছাপানো "কোন এক গাঁয়ের কথা" পড়ে দেখলাম এবং পুটিয়াদহ গ্রাম সম্পর্কে অনেক কিছুই লেখা দেখতে পেলাম, বিশেষ করে আমার স্বর্গীয় দাদা রাইচরণ মহান্তির নাম দেখলাম ঐ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বলতে বাধা নেই যে পুটিয়াদহ আমার শ্বশুরবাড়ি যেখান থেকে আমি ১৯৫১ সালের মে মাসে মিস সবিতা মহান্তিকে (পিতা-স্বর্গীয় বিভূতি ভূষণ মহান্তি এবং জ্যাঠতেতো দাদা স্বর্গীয় রাইচরণ মহান্তি) আমার সহধর্মিনী হিসাবে গ্রহণ করেছিলাম। উল্লেখযোগ্য হিসাবে জানাই যে তখনকার দিনে গাড়ি ঘোড়ার যুগ ছিল না। আমি জামাই হিসাবে পালকিতে চেপে আমার গ্রাম থেকে পুটিয়াদহ গ্রামে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ষোলটি (১৬) গরুর গাড়িতে বর যাত্রীরা গিয়েছিলেন। আর ছিল ২০ জনের ব্যান্ডপার্টি। বিয়ে করে ফেরার সময় আমরা দুজন (বর এবং কনে) দুটি পালকিতে করে আলাদা ভাবে ফিরেছিলাম। তারপর যা অনুষ্ঠান হবার আমাদের দেশের বিধিমত হয়েছিল।

আমাদের চার কন্যা। তাদের জন্ম যথাক্রমে ১৯৫৫, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭১ সালে। প্রথম কন্যা লোপামুদ্রা (৬০) এখন হিউসটন (টেক্সাস) আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা। ওরা বর্তমানে মার্কিন নাগরিক। বিয়ে হয়েছে অশোক কুমার পণ্ডার সাথে (ইঞ্জিনিয়ার আই আই টি-খড়ঙ্গপুর) দ্বিতীয়া কন্যা ডাক্তার তপতী (৫৩) বর্তমানে ম্যাঞ্চেস্টারে (ইংল্যান্ড) বসবাস করছে এবং ওখানকার নাগরিক। স্বামী ডাক্তার দেবাশীষ চক্রবর্তী (অর্থোপেডিক সার্জন)। তৃতীয়া কন্যা পারমিতা (৫০) বর্তমানে ফিলাডেলফিয়া আমেরিকাতে বসবাস করছে। স্বামী সুভাস চক্রবর্তী এবং চতুর্থা কন্যা সঙ্ঘমিত্রা (৪৬), আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে আছে। স্বামী কৌশিক ধর ওরাও ওখানকার নাগরিক। বড় কন্যার দুই পুত্র। একজন ডাক্তার, একজন ইঞ্জিনিয়ার, বাকি তিন কন্যার একটি করে পুত্র সন্তান আছে। তারা সবাই স্কুল বা কলেজের ছাত্র। বলাবাহুল্য সংঘমিত্রা মেধাবী ছাত্রী স্কুলে বা কলেজে ও কখনও প্রথম ছাড়া দ্বিতীয়হয়নি। কলকাতার যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশনে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট গোল্ড মেডালিষ্ট। তারপর আমেরিকাতে যায় এবং সেখানে হাবার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার ডিগ্রি নেয়। বর্তমানে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে ওরাকোল ফিনান্স কোম্পানীতে ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত।

উল্লেখ্য, আমি ১৯৪৪ সালে সিমলাপাল মদন মোহন হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় এসে পড়াশোনা করি। আমার একান্ত ইচ্ছা ছিল যে আমি মেডিক্যাল পড়ি এবং ডাক্তার হই। কিন্তু ভাগ্যচক্রে তা হয়ে ওঠেনি। ডাক্তারী পড়ার জন্য আর্থিক সহায়তাদানে আমার বাবার অসুবিধা ছিল। তিনি আমাকে দুই বছর অপেক্ষা করতে বলেন কারণ তখন টাকা পয়সার সংস্থান করা তাঁর পক্ষে অসুবিধা ছিল। আমার খুব অভিমান হ'ল। আমার সেজো মামা স্বর্গীয় কৃষ্ণচন্দ্র নায়ক (গ্রাম- রাধানগর, পাঁচমুড়া) হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে থাকতেন এবং ওখানে একটা কোম্পানীতে চাকরী করতেন। আমি ওনাকে লিখলাম যে আমি কলকাতাতে আসতে চাই এবং ওখানে সুবিধা মতো পড়াশোনা করতে চাই।

তারপর অনেক কষ্ট করে চাকুরি করতে করতে আমি আই কম, বি কম এবং এম.এ কমার্স (১৯৫১) পাশ করি। সব গুলিই ইভিনিং সেকশান এ পড়াশুনা। এরপর লণ্ডনে অবস্থিত চাটার্ড এন্ড জেনারেল ম্যানেজম্যান্ট ইনস্টিটিউট (CGMA) থেকে ফাইনাল পরীক্ষা পাশ করে বর্তমানে এস.সি.এম এ (Associated Member) এছাড়া আমি Indian Institute of Cost and Management Accountant (ICWA) Fellow Member। তারপর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং চাকুরীর প্রয়োজনে ৫৬ বছর বয়সে কলিকাতা ইউনির্ভাসিটি থেকে এল.এল. বি. ডিগ্রীর (Law Degree) প্রয়োজন অনুভব করি। এর পিছনেও একটা ইতিহাস আছে। তখন আমি ইউনিয়ন কাবইিডে কাজ করি। আমাদের কোম্পানীর বোম্বাইয়ে অবস্থিত Chemicals and Plastic Factory এর একটি কেস গড়াতে গড়াতে সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত চলে যায়। যেহেতু আমি এই ব্যাপারটা সারা ভারতব্যাপী দেখতাম সেই হেতু আমাকে আগাগোড়া কেসটা দেখতে হয়েছে। সিনিয়র এডভোকেট শ্রদ্ধেয় সোলি সোরাজি মহাশয় সুপ্রীমকোর্টে আমাদের কোম্পানীর হয়ে কেসটা করেছিলেন আর আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন কারণ আমি ঘটনাটি বিস্তারিত জানতাম। কোর্ট রুমে যখন ওনার পিছনে পিছনে আমি ঢুকতে যাচ্ছি তখন গেটে দাঁড়িয়ে থাকা এক দীর্ঘাকার দারোয়ান আমাকে ঢুকতে দেয়নি কারণ আমি তখন Advocate ছিলাম না। এই ঘটনায় আমি ও আমাদের সিনিয়র এডভোকেট অত্যন্ত অপমানিত ও লজ্জিত বোধ করি। অবশেষে আমি Visitor's Gallery তে বসতে বাধ্য হই। এই ঘটনা থেকে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি যে আমি Law Degree নেব। কলকাতাতে ফিরে এসে আমি Calcutta University Law College, Hazra Branch থেকে আমার এক অধীনস্থ কর্মীর মারফত একটি ফর্ম সংগ্রহ করি। উল্লেখ্য ঐ একই সময়ে আমার দ্বিতীয়া কন্যা তপতীও ডাক্তারী ডিগ্রীর জন্য M.B.B.S পড়ছিল। এই ভাবে আমি Law Degree অর্জন করি এবং আমি Bar Council of India এর সদস্য হয়ে যাই। তারপর থেকে আমি সারা ভারতবর্ষে কালো কোর্ট চড়িয়ে কেস করতে পারছি।আমি ১৯৬৪ সালে ইউনিয়ন কারবাইডে চিফ ওয়াক্স একাউনট্যান্ট হিসাবে যোগদান করেছিলাম। প্রথমে কয়েক বছর ফ্যাক্টরীতে ছিলাম তারপর হেড অফিস (জীবনদীপ কোলকাতা-৭০০ ০৭১) থেকে ১৯৮৭ তে অবসর গ্রহণ করি। যখন আমি জীবনদীপে ছিলাম তখন আমাকে সারা ভারতবর্ষে ঘুরে বেড়াতে হোত কারণ আমাদের কোম্পানীর ১১টি ফ্যাক্টরী ছিল বোম্বাই, কোলকাতা, মাদ্রাজ, হাইদ্রাবাদ, লখনৌতে আর ১৮টি সেলস অফিস ছিল এবং ৪টি ডিভিশন অফিস ছিল (ডিভিশন গুলি হল- Agricultural Products Divn. Battery Products Divn. Carbon and Metal Divn. and Chemicals and Plastic Divn.) আর আমি তার ইনডিরেক্ট ট্যাক্স ম্যাটার দেখাশোনা করতাম। এবং প্রয়োজন মতো যে সমস্ত মামলা হোত Revenue Department (Both State & Central Govt.) এর সাথে, আমাকে সেই গুলির তত্ত্বাবধান করতে হোত।

আমি M/s Union Carbide Ltd. থেকে ১৯৮৭ সালে ৬০বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করি। তারপর থেকে আমি এডভোকেট হিসাবে ইনডিরেক্ট ট্যাক্স কনসালট্যান্ট (INDIRECT TAX CON- SULTANT) হিসাবে প্রাক্টিস করছি। আমি দাক্ষিণাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ জনকল্যাণ সমিতির সঙ্গে বহুবছর ধরে জড়ত এবং বর্তমানে ঐ সমিতির সভাপতি। বিশেষ ভাবে জানাচ্ছি যে আমাদের ফ্যামিলিতে কতকগুলি প্রথম স্থানের অধিকারী ঘটনা আছে, যেমন-

১। আমার স্বর্গীয়া স্ত্রী আমাদের দাক্ষিণাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ সমাজে প্রথম মহিলা ম্যাট্রিকুলেট এবংপ্রথম গ্রাজুয়েট।

২।আমার তৃতীয়া কন্যা ডাঃ তপতী প্রথম মহিলা ডাক্তার।

৩। কনিষ্ঠা কন্যা সঙ্ঘমিত্রা প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েট।

আমি M.A. (COM), ACMA (U.K) বর্তমানে আমার বয়স ৮৯ বছর। শারীরিক ও মানসিক ভাবে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ ও আমার পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এছাড়া আমি রোটারি ক্লাব অফ সাউথ ক্যালকাটা এর সাথে জড়িত।

আপনার পত্রিকার লেখাগুলি আমাকে খুবই আনন্দ দিয়েছে। সেই সঙ্গে আমি একটি আমার -লেখা (Article- MY FIRST VISIT TO CALCUTTA IN 1940) পাঠাচ্ছি। যদি সম্ভব হয় এটি আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করবেন। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নমস্কার, প্রীতি ও ভালোবাসা আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি। সত্যনারায়ণ সিংহমহাপাত্র ২৭/৩৩ কে. এম. নস্কর রোড পোস্ট অফিস ও থানা-রিজেন্ট পার্ক কলকাতা-৭০০ ০৪০

কয়েকটি কবিতা

[সম্পাদনা]

।।মানুষ আছে ।।

তুষারকান্তি যন্নিগ্রহী (উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি)

মানুষ আছে সুধী সফল, জ্ঞান সমন্বিত আবার কেহ দিশাহীন অজ্ঞ ও ঘৃণিত।

মানুষ আছে পরম সুখী দুঃখ নাই ঘরে আবার কেহ দুঃখে মরে মনের অন্তরে।

মানুষ আছে সম্পন্ন সে, সুস্থ ও সবল আবার কেহ পায় না খাবার হয় অতি দূর্বল।

মানুষ আছে আনন্দতে টাকায় গড়াগড়ি আবার কেহ পায় না টাকা কাঁদে জীবন ভরি। মানুষ আছে বীরের মতো খুবই বলবান আবার কেহ ভিতু অতি ত্রাসিত তার প্রাণ। মানুষ আছে বিদ্বান অতি পূণ্য পুঁথি হাতে আবার কেহ তাড়ি খেয়ে ঘুমায় দিন রাতে। মানুষ আছে সৎ প্রকৃতির সাধু সমাহারে আবার কেহ ডুব দেয় দুষ্কৃত-সাগরে। মানুষ আছে ভাগ্যবান সৌভাগ্য নিয়ে আবার কেহ ভাগ্যহীন সারা জীবন দিয়ে। ভালো মন্দে দোষে গুণে সত্য ও মিথ্যায় মানুষের বিচরণ এই যে ধরায়।

কবিতা তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী


কবিতায় আছে প্রেম আছে ভালোবাসা সুখ আছে দুঃখ আছে মনের ভরসা।

কবিতায় ছন্দ আছে কিংবা ছন্দহীন নীড়হারা পাখি যেন আকাশে উড্ডিন।

কবিতা কুরে খায় বুকের ভেতর সমুদ্রের ঢেউ যেন প্লাবিত অন্তর।

কবিতায় শুরু আছে নেই এর শেষ জীবন প্রবাহে আনে নতুন আবেশ।

কবিতায় জন্ম কথা মৃত্যু কথা থাকে জীবনের লুকোচুরি লেখনীর ফাঁকে।

কবিতায় সুর থাকে আর থাকে গান জীবন প্রবাহে তাই কবিতা মহান।

কবিতা কখনো হয় সহজ সরল আবার কখনো সে যে জটিল - গরল!

ভালো-মন্দ আলো-ছায়া তোমার শরীরে

জন্ম থেকে মৃত্যু তুমি থাকো যে অন্তরে।

।।আমার বিশ্বাস।।

তুষারকান্তি যগ্নিগ্রহী উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি

আমার বিশ্বাস-

টুকরো টুকরো আলোর কণায়

সত্যের সূর্য উঠবে!

প্রেম ও ভালোবাসার নতুন মেঘ

নীল আকাশে ভাসবে।

আমার বিশ্বাস-

ধরণীর তলে, গগনের গায়ে,

আলোর বন্যা ঝরবে। ছায়া

সুশীতল কাননের মাঝে সবুজের

ঢেউ পড়বে।

আমার বিশ্বাস-

ধরার মাঝে মনের বনের সব

ফুল আজ ফুটবে।

হৃদয় মাঝে মনের গাঙে

সব আশা আজ জুটবে।

।।খসে পড়ে।।

তুষারকান্তি যন্নিগ্রহী

উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি

মাধবীলতার ফুল খসে পড়ে

জীবনের আশা আকাঙ্খার

একটি একটি কুঁড়ি খসে যায়।

শীতের হিমেল হাওয়ায় খসে

পড়ে বনানীর পাতা।


জীবনের আয়ু একটু একটু করে

খসে যায়।

খসে পড়ে মরচে পড়া সেতারের

তার

খসে যায় নীল আকাশ, উদার

হৃদয় পাখির পালক।

ফুল থেকে খসে যায় রেণু

বাতাসের উত্তালে।

মন খসে চলে যায় অন্যলোকে,

চলে যায় হারিয়ে যায় বলেই

বার বার শুনি আগমনীর গান।

সুখের সবুজ হাসি, চোখের

চিরন্তন পলক-

করি নতুনের আরাধনা।

নিবন্ধ

[সম্পাদনা]

।। বয়ঃসন্ধিকালে প্রয়োজন জীবনশৈলী শিক্ষা ।।

তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

বয়ঃসন্ধি কালে বালকের চেহারা হয়ে ওঠে পুরুষ সুলভ। গলার স্বর পরিবর্তিত হয়। দেহ লম্বা হয়, পেশী হয় সুগঠিত ও শক্তিশালী। দেহের ওজন বাড়ে। গোঁফ দাড়ি গজায়, বুকে বগলে যৌনাঙ্গে কেশোদগম হয়। শুক্রাণু উৎপন্ন হয় শরীরে। এই সময়ে বালিকাও ওজনে বাড়ে, লম্বা হয়, যৌনাঙ্গ বৃদ্ধি পায়। গলার স্বরের পরিবর্তন ঘটে। স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়। বগলে, যৌনাঙ্গে কেশোদগম হয়। শরীরে ডিম্বাণু উৎপন্ন শুরু হয়। জরায়ু প্রাচীরে বিরাট পরিবর্তন-ভাঙা গড়ার কাজ চলে। মাসে মাসে রক্তস্রাব হয়। বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে এই সময়ে এক ধরণের উদ্দীপনা কাজ করে যা যৌনাবেগ। এর লক্ষণ; • বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। • যৌন মিলনের বাসনা। • বিশেষ ব্যক্তির প্রতি আকর্ষণ বা অনীহা। • গভীর সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্খা।

বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক পরিবর্তন গুলো কি হতে পারে? আমাদের দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণে যা ধরা পড়ে তা এই রকম; • ছেলে মেয়েরা বাবা-মায়ের সব কথা সব সময় শোনে না। বন্ধু বান্ধবদের কথা বেশি শুনতে ভালোবাসে। • নিজে যেটা ভালো বোঝে সেটাই করার চেষ্টা করে। • মন চঞ্চল হয়। অনেক সময় সামান্য কথাতেও উত্তেজিত হয়। • সাজ গোজ ও অন্যকে অনুকরণ করতে ভালোবাসে। • সব বিষয়েই কৌতূহল থাকে। • অনেক সময় বিমূর্ত চিন্তা করে।

বিমূর্ত চিন্তা করতে করতেই সৃষ্টিশীল হয়ে ওঠে বয়ঃ সন্ধিকালের তরুণ তরুণীরা। তারা হয়ে ওঠে সমাজের চালিকা শক্তি। এই শক্তিকে ঠিক ভাবে কাজে লাগালে সমাজেরই উপকার।

এই সময়ে শরীরের প্রতি আরও বেশি যত্ন নেওয়া দরকার। সাধারণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা দরকার। শরীর ও মনকে সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত করা প্রয়োজন।

ছেলে মেয়েরা ভুল পথে পরিচালিত হলে সমূহ বিপদ। সমাজের কুপ্রভাব, সমাজের প্রলোভন, মিডিয়ার দর্শন ও প্রচার পথভ্রষ্ট করে অনেককে। অসুস্থ ভাবনা বাসা বাঁধে কিশোর কিশোরীর মনে। সুযোগ বুঝে বাঁধন হারা হতে পারে। তাই সাবধান! মুক্তি দিতে পারে উপযুক্ত শিক্ষা। জীবনের ছন্দ ঠিক রাখতে পারে 'জীবন শৈলী'। সমাজের শৃঙ্খলাকে বজায় রাখতে পারে এই শিক্ষা। সৃজনশীল কাজ, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি পারস্পরিক সম্মানবোধ, সঠিক পথ নির্দেশেই সুস্থ সবল করতে পারে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুণীকে। শরীরে সমস্যা থাকলে তা গোপন করা উচিত নয়। যৌন চেতনার ক্ষেত্রেও অযথা লজ্জা বা অপরাধ বোধের কিছু নেই। সবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এজন্য আরোও একটু সচেতন হওয়া দরকার। চিরাচরিত প্রথা ভেঙে একটু বেরিয়ে আসা দরকার। প্রতি পদক্ষেপে প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা জীবন শৈলী শিখন। শরীরের পরিবর্তন সহজ-ভাবে বোঝানো দরকার। খুব সমস্যা হলে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মানসিক, শারীরিক এমনকি সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হলে বাবা, মা, আত্মীয় স্বজন, স্কুলের শিক্ষক সবাইকেই বিষয়টি ভাবতে হবে। সমস্যা গুলো বুঝতে হবে। বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে।

কিশোর কিশোরীর অস্বাভাবিক আচরণ ঘটলে তিরস্কার না করে তাদের মনের কাছাকাছি যেতে হবে। ব্যক্তিত্ব গড়ার জন্য তাদের দিয়ে স্বাধীন কাজকর্ম করাতে হবে। আলোচনা, সভা সমিতি, দলগত কাজ, খেলাধূলা, কোন পরীক্ষা পরিকল্পনা, বিতর্ক সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ ও বিশেষ দায়িত্ব দিলে তারা উৎসাহ পারে। সৃজন মূলক কাজে ব্যস্ত থাকলে মানসিক ও সামাজিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

আমাদের ছেলে মেয়েরা চায় সমান অধিকার। চায় ভালোবাসা। চায় নিরাপত্তা। আশা করে স্বীকৃতি ও প্রশংসার। এরা চায় নতুন দায়িত্ব। এরা অর্জন করতে চায় নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। এসব প্রয়োজন মেটাবেন কে? অবশ্যই বাবা, মা, আত্মীয় পরিজন, শিক্ষক আর সমগ্র সমাজ। চাই সুস্বাস্থ্য। চাই সঠিক পরিবেশ। চাই জীবন শৈলীর শিক্ষা। চাই আলোকময় ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা। তাহলেই মুক্তি হবে সংকটের। কিশোর কিশোরীরা পরিচালিত হবে সঠিক পথে। সমাজ হবে কলুষ মুক্ত। দেশ পাবে উপযুক্ত নাগরিক।

লোকসাহিত্য

[সম্পাদনা]

তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি

এই বাংলার বুকে নদী যেমন শত ধারায় উৎসারিত সেই রকম লোক সাহিত্য শতধারায় বিরাজমান । চিত্তের অন্দরমহলে গাঁথা হয়ে আছে লোকসাহিত্য। মানুষের সুখ দুঃখ, আশা-আকাঙ্খা, কামনা-বাসনা, প্রতিফলিত হয়েছে লোকসাহিত্যে। কখনও গীত, কখনও ছড়া, কখনও আবৃত্তি কখনও বা গল্পরূপে লোকমুখে প্রচলিত লোকসাহিত্য। লোকসাহিত্যের মাধ্যমেই মানুষের চিরাচরিত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অভিব্যক্তি ঘটে। সমাজের রীতিনীতি, আচার ব্যবহার, শিল্প সাহিত্য সভ্যতাজনিত উৎকর্ষ সবকিছুর মধ্যেই মানবজাতির যে পরিচয় তাই তো সংস্কৃতি। সংস্কৃতির বিকাশে লোকসাহিত্যের ভূমিকাও কম নয়।

লোকসাহিত্য সবসময় হয়তো ঠিক শিল্পসম্মত বা ছন্দোবদ্ধ হয়নি। তা না হোক, মানুষের মনের অন্দরমহলের গোপন দরজা খুলে দিয়েছে লোকসাহিত্য।

দোলায়িত করেছে মানুষের প্রাণ ও মনকে।

লোকসাহিত্য কোন একক সাহিত্যিকের সৃষ্টি নয়। অসংখ্য মানুষের সম্মিলিত সাধনার ফসল। লোকসাহিত্যের ধারা বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হয়। মানুষের জীবনপ্রবাহের বার্তা বহন করে। রঙীন কল্পলোকের দ্বার উন্মুক্ত করে।

বাংলার ঘরে ঘরে লিখিত অলিখিত প্রচলিত অপ্রচলিত লোকসাহিত্যের যে কত নিদর্শন আছে তার ইয়ত্তা নেই। শিশুসাহিত্য, মেয়েলি ব্রতকথা, ধর্মসাহিত্য, সভাসাহিত্য, পল্লীসাহিত্য, প্রবচনসাহিত্য, ইতিবৃত্তিমূলকসাহিত্যে ভরপুর লোকসাহিত্য। ছেলে ভুলানো ছড়া, ঘুমপাড়ানি গান, রূপকথা, উপ কথা এসব নিয়েই শিশু সাহিত্য। শিশুসাহিত্যের ছড়া ও গানকে রবীন্দ্রনাথ তুলনা করেছেন নানা রঙের ভাসমান মেঘের সাথে । এই মেঘ শিশুমন ও হৃদয়কে উর্বর করে।

ছেলেভুলানো ছড়া এই রকম:

ইকিড় মিকিড়, চাম চিকিড়

চামের কৌটা, মকদ্দোমা হাঁড়িকুড়ি।

দুয়ারে বসে চাল কাড়ি।

চাল কাড়তে হল বেলা

ভাত খেয়ে যা দুপুর বেলা।

ভাতে পড়ল মাছি

কোদাল দিয়ে চাঁছি।

কোদাল হল ভোঁতা

খা কামারের মাথা।

খোকার চোখে ঘুম নেই। মা ধরেছেন ঘুম পাড়ানি গান:

ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি

মোদের বাড়ি এসো।

খাট নেই পালঙ্ক নেই

চাটাই পেতে বসো।

বাটা ভরে পান দেব

গাল ভরে খাও।

খোকার চোখে ঘুম নেই

ঘুম দিয়ে যাও।

নগরায়ণ ও সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে লোক সাহিত্যের অনুশীলন ও সংরক্ষণ এক বড় প্রশ্ন চিহ্নের উপর দাঁড়িয়ে। বাংলার ঘরে ঘরে আগের মতো আর লোক সাহিত্যের চর্চা হয় না। অনুশীলন হয় না। মানুষের অবসরের সময় কেড়ে নিয়েছে কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন। লোকসাহিত্যের কথা শোনাবার লোক কমে যাচ্ছে। ধুঁকতে ধুঁকতে কোন ক্রমে বেঁচে আছে আমাদের লোকসাহিত্য। তবে এখনো সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন লোকসাহিত্য চর্চাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। উৎসাহিত করছে। অনুষ্ঠানও হচ্ছে। মা ঠাকুমার কাছ থেকে যে শিশু গল্প শুনত এখন তা শুনছে রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটারের কাছ থেকে। বাংলার লোকসাহিত্য শুধু মানুষের মনে নয় এখন গাঁথা হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রের শরীরেও। সভ্যতার অগ্রগতি ও যান্ত্রিক যুগের যন্ত্রে ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছে কি লোকসাহিত্য? অকালেই সে চলে যাবে না তো?

তথ্য সূত্র: পরম পরশ, পৃঃ ৪৫,৪৬

চাণক্য শ্লোক ও শিক্ষা

[সম্পাদনা]

ভারতবর্ষের মধ্যে চাণক্য ছিলেন একজন অসাধারণ পণ্ডিত। মানুষের কর্তব্য, সঠিক ধর্মপথে চালনা, সমাজকল্যাণ, উপযুক্ত বিদ্যা ও শিক্ষা বিষয়ে তিনি অনেক শ্লোক রচনা করেছেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, চণকের পুত্র বা চণক বংশীয় সন্তান বলে তাঁর নাম চাণক্য। তিনি আবার কৌটিল্য, বিষ্ণুগুপ্ত এমনকি বিষ্ণু শর্মা নামেই পরিচিত ছিলেন। অবশ্য এই বিষয়ে অনেক মতভেদ আছে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে চাণক্যের আর্বিভাব।

চন্দ্রগুপ্তকে মগধের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে চাণকোর অবদান খুবই উল্লেখযোগ্য। খ্রিস্টপূর্ব ৩২১-এ চন্দ্রগুপ্ত রাজা ধননন্দকে যুদ্ধে হারিয়ে রাজধানী পাটলিপুত্র দখল করেন। চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন চাণক্য।

মহামতি চাণক্য তাঁর প্রতিভা বলে যে শ্লোক রচনা করেছেন তার সামাজিক মূল্য বিরাট। চাণক্য শ্লোক বর্তমানেও মনে হয় খুবই প্রাসঙ্গিক। চাণক্য শ্লোকের ভাববস্তু আমাদের জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। চাণক্যের শ্লোকগুলি অধিকাংশই বাস্তবধর্মী।

শিক্ষা ও বিদ্যা বিষয়ে চাণক্য শ্লোক আমাদের জীবনে কতটা অপরিহার্য তা শ্লোকের বিষয়বস্তুর মধ্যে পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছে। আমাদের জীবন প্রবাহে চাণক্য শ্লোকের উপদেশ ঠিকমতো গ্রহণ করলে মানব সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। বিদ্যা ও শিক্ষা বিষয়ে কয়েকটি শ্লোক উল্লেখ করলাম।

শ্লোক-১

অলসস্য কুতো বিদ্যা অবিদ্যস্যকুতোধনম্। অধনস্য কুতো মিত্রম্ অমিত্রস্য কুতঃ সুখম্।।

যারা অলস তাদের বিদ্যা হয় না। বিদ্যা না থাকলে ধন হয় না। যার ধন নেই তার বন্ধু জোটে না, যার বন্ধু নেই তার সুখ নেই।

শ্লোক-২: অনভ্যাসে বিষং বিদ্যা বৃদ্ধস্য

তরুণী বিষম্।

আরোগে তু বিষং বৈদ্যঃ অজীর্ণে ভোজনং

বিষম্।।

ঠিকমতো অভ্যাস না করলে বিদ্য বিষ তুল্য বুড়োমানুষের তরুণী স্ত্রী বিষতুল্য, রোগ দূর হলে চিকিৎসক বিষতুল্য,

খাবার ঠিকমতো হজম না হলে ভোজন বিষবৎ হয়।

শ্লোক-৩:

অবিদ্যঃ পুরুষঃ শোচ্যঃ শোচ্যা নারী চানপত্যা।

নিরাহারাঃ প্রজাঃ শোচ্যাঃ শোচ্যং রাষ্ট্রমরাজকম্।।

যে পুরুষের বিদ্যা নেই, যে নারীর সন্তান নেই, যে প্রজা অনাহারে থাকে, যে রাষ্ট্র রাজাহীন-এগুলোর জন্য শোক করা উচিত।


শ্লোক-৪: ন চ বিদ্যসমো বন্ধু র্ন চ ব্যাধিসম রিপুঃ।

ন চাপত্য সম স্নেহো র্ন চ দৈবাং পরং বলম্।।

বিদ্যার মতো তুল্য বন্ধু নেই, ব্যাধির মতো শত্রু নেই, সন্তান স্নেহের তুল্য স্নেহ নেই, দৈব অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কোনো বল নেই।

শ্লোক-৫: বিদ্যা মিত্রং প্রবাসেষু, মাতা মিত্রং গৃহেসু চ।

ব্যাধিত সৌষধং মিত্রং ধর্মে মিত্রং মৃতস্য চ।।

প্রবাসে বিদ্যা হল বন্ধু, বাড়িতে মা বন্ধু, ব্যাধিগ্রস্থ ব্যক্তির ঔষধ হল বন্ধু, ধর্ম হল মৃতের বন্ধু।


শ্লোক-৬: ধনং ক্ষীণং ভবেদানাদ বিদ্যাদানাদ্বিবর্ধতে। তস্মান্মান্যে ধ্রুবং বিদ্যা ধনাদপি গরিয়সী।।

ধন দান করলে তা কমে যায়, বিদ্যা দান করলে তা বাড়ে, সেইজন্য নিশ্চিন্ত মনে করি-ধনের থেকে বিদ্যাই শ্রেষ্ঠ।

শ্লোক-৭: জ্ঞাতিভির্বণ্টা নৈব চৌরেনাপি ন নীয়তে।

দানেন ন ক্ষয়ং যাতি বিদ্যারত্বং মহাধনম।।

বিদ্যা হল এমন রত্ন বা মূল্যবান ধন যার ভাগ জ্ঞাতিরা নিতে পারে না, চোরে যাকে চুরি করতে পারে না। দান করলে যার ক্ষয় হয় না।

শ্লোক-৮: কামং ক্রোধং তথা লোভং স্বাদং শৃঙ্খার কৌতুকম্। অতি নিদ্রাতি সেবা বিদ্যার্থী হাষ্ট বর্জয়েৎ।।

বিদ্যার্থী তথা ছাত্রের কাম, ক্রোধ, লোভ, সুস্বাদু খাবার, শৃঙ্গার, কৌতুক, অতিরিক্ত ঘুম, অতিরিক্ত ভোজন এট আটটি বর্জন করা উচিত

শ্লোক-৯: অবিদ্যং জীবনং শূন্যং দিক্ শূন্যা চেদবান্ধবাঃ। পুত্রহীনং গৃহং শূন্যং সর্বশূন্যা দরিদ্রতা।।

বিদ্যা না থাকলে জীবন শূন্য, বন্ধুবান্ধব না থাকলে সবদিক শূন্য, গৃহে পুত্র না থাকলে তা শূন্য, দরিদ্র ব্যক্তির সবকিছুই শূন্য।

শ্লোক-১০: রূপযৌবনসম্পন্না বিশাল কুলসম্ভবাঃ। বিদ্যাহীনা ন, শোভন্তে নির্গন্ধা ইব কিংশুকাঃ।।

রূপ যৌবন সম্পন্ন হলেও, উচ্চকুলে জন্ম নিলেও বিদ্যাহীন ব্যক্তি গন্ধহীন পলাশ ফুলের মতো।

শ্লোক-১১: ক্ষময়া দয়য়া প্রেমা সুনুতেনার্জবেন চ। বশী কুযাৎ জগৎ সবং বিনয়েন চ সেবয়া।।

, দয়া, প্রেম, সত্য, সরলতা, বিনয় এবং সেবা দ্বারা সকল জগৎকে বশীভূত করবে।

ক্ষমা সিংহাদেকং বকাদেকং যশুনন্ত্রীণি গর্দভাৎ।

শ্লোক-১২: বায়সাৎ পঞ্জ শিক্ষেৎ চত্বারি কুকুটাদপি।।

সিংহের কাছ থেকে একটি, বকের কাছ থেকে একটি, কুকুরের কাছ থেকে ছয়টি, গর্দভের কাছ থেকে তিনটি, কাকের কাছ থেকে পাঁচটি, মোরগের কাছ থেকে চারটি গুণ শিক্ষা করা উচিত।

সিংহ বীর বিক্রমে শিকার ধরে। কাজ সহজ বা কঠিন হোক তা বীর বিক্রমে করা দরকার। বকের কাছ থেকে যে শিক্ষা আমরা নিতে পারি তা হল, সকল ইন্দ্রিয়কে সংযত করার শিক্ষা।

কুকুরের কাছ থেকে যে ছয়রকম শিক্ষা আমরা নিতে পারি। তা হল, বিভিন্ন আহার, অল্পে সন্তোষ, শীঘ্র ঘুম, সামান্য শব্দে জেগে ওঠা, প্রভুভক্তি এবং শত্রুকে আক্রমণ।

গর্দভের কাছ থেকে যে তিনটি শিক্ষা আমরা পাই সেগুলি হল, ভার বহন, শীত গ্রীষ্ম উপেক্ষা, সবসময় সন্তোষ।

কাকের কাছ থেকে পাঁচটি শিক্ষা হল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, আচরণ, সময়ে আহার, পরিশ্রম ও সতর্কতা। মোরগের কাছ থেকে আমরা চার রকম শিক্ষা পাই-ভোরে ওঠা, যুদ্ধবিদ্যা, একসাথে ভাগ করে খাওয়া, বিপদে স্ত্রীকে রক্ষা করা।

চাণক্যের শ্লোকে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছে তা সর্বকালীন ও যুগজয়ী। আমাদের জীবনে চলার পথে যদি চাণক্যের উপদেশ কিছুটা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের অশেষ উপকার হবে বলেই মনে হয় তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী []

  1. স্মরণিকা,রাজ্য সম্মেলন,২০২৩, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি, লেখক- তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, পাতা=৩১,৩২