বাংলা ব্যাকরণ/বাগধারা

উইকিবই থেকে

বাগধারা বা বাক্যরীতি মানে কথার ধারা বা কথার ঢং।

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

যেসব শব্দগুচ্ছ তার আভিধানিক অর্থ ত্যাগ করে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে সেসব শব্দগুচ্ছকে বাগধারা বা বাগবিধি বলা হয়। বাগধারায় "আকাশ কুসুম" এর মতো বেশকিছু রূপক, পৌরাণিক ও কাব্যিক শব্দগুচ্ছ গৃহীত হয়েছে। বাগধারার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর শব্দ উপাদানগুলো যে ক্রমে সাজানো থাকে তার কোনো ব্যতিক্রম করা যায় না। যেমন: "অন্ধকারে ঢিল মারা" বাগধারাটিকে কখনো "ঢিল মারা অন্ধকারে" বলা যাবে না। নিম্নে কিছু বাগধারা ও এর মর্মার্থ দেখানো হলো:

  1. অকাল কুষ্মাণ্ড - অকেজো, অপদার্থ
  2. অকূল পাথার - ভীষণ বিপদ
  3. অক্কা পাওয়া - মারা যাওয়া
  4. অগাধ জলের মাছ - সুচতুর ব্যাক্তি
  5. অগ্নি পরীক্ষা - কঠিন পরীক্ষা
  6. অন্ধকারে ঢিল মারা - আন্দাজে কাজ করা
  7. অরণ্যে রোদন - নিষ্ফল আবেদন
  8. অহিনকুল সম্বন্ধ - ভীষণ শত্রুতা
  9. অমাবস্যার চাঁদ - দূর্লভ বস্তু
  1. আকাশ কুসুম - অসম্ভব কল্পনা
  2. আক্কেল সেলামী - বোকামির দণ্ড
  3. আকাশ ভেঙ্গে পড়া - ভীষণ বিপদে পড়া
  4. আষাঢ়ে গল্প - আজগুবি গল্প
  5. আলালের ঘরের দুলাল - অতি আদরের নষ্ট পুত্র
  1. ইঁচড়ে পাকা - অকালপক্ব
  1. উত্তম মধ্যম - পিটুনি
  2. উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে - একজনের দোষ অন্যের উপর চাপানো
  3. উভয় সংকট - দুদিকেই বিপদ
  4. উলুবনে মুক্তো ছড়ানো - অপাত্রে উত্তম জিনিস দান
  1. এসপার ওসপার - মীমাংসা
  2. এলাহি কাণ্ড - বিরাট আয়োজন
  3. একাদশে বৃহস্পতি - সৌভাগ্যের বিষয়
  1. কলুর বলদ - একটানা খাটুনি
  2. কেতাদুরস্ত - পরিপাটি
  3. কই মাছের প্রাণ - যা সহজে মরে না
  4. কেঁচো খুঁড়তে সাপ - সামান্য থেকে অসামান্য
  1. খয়ের খা - চাটুকার
  1. গড্ডলিকা প্রবাহ - অন্ধ অনুকরণ
  2. গোঁফখেজুরে - নিতান্ত অলস
  3. গোবর গণেশ - মুর্খ
  1. ঘাটের মড়া - অতি বৃদ্ধ
  2. ঘোড়া রোগ - সাধ্যের অতিরিক্ত সাধ
  1. চিনির বলদ - ভারবাহী কিন্তু ফললাভের অংশীদার নয়
  1. ছা পোষা - অত্যন্ত গরীব
  2. ছিনিমিনি খেলা - নষ্ট করা
  3. ছেলের হাতের মোয়া - সহজলভ্য বস্তু
  1. জগদ্দল পাথর - গুরুভার
  2. জিলাপির প্যাঁচ - কুটিলতা
  1. ঝিকে মেরে বউকে শেখানো - পরোক্ষভাবে তিরস্কার করা
  2. ঝোপ বুঝে কোপ মারা - সুযোগ বুঝে কাজ করা
  1. টনক নড়া - চৈতন্যোদয় হওয়া
  2. টাকার কুমির - অন্যের টাকার মালিক
  1. ঠোঁটকাটা - স্পষ্টভাষী
  1. ডুমুরের ফুল - দূর্লভ বস্তু
  1. ঢাক পিটানো - প্রচার করা
  1. তামার বিষ - অর্থের কুপ্রভাব
  2. তাসের ঘর - ক্ষণস্থায়ী
  3. তীর্থের কাক - আশায় অপেক্ষমাণ
  1. দহরম মহরম - ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
  2. দা কুমড়ো - ভীষণ শত্রুতা
  3. দুধের মাছি - সুসময়ের বন্ধু
  1. ধরাকে সরা জ্ঞান করা - সকলকে তুচ্ছ ভাবা
  2. ধরি মাছ না ছুঁই পানি - কৌশলে কার্যোদ্ধার
  1. ননীর পুতুল - শ্রম বিমুখ
  2. নয় ছয় - অপচয়
  1. পটল তোলা - মারা যাওয়া
  2. পথের কাটা - প্রতিবন্ধকতা
  3. পদ্ম পাতার পানি - ক্ষণস্থায়ী
  1. বকধার্মিক - ভণ্ড সাধু
  2. বিড়াল তপস্বী - ভণ্ড সাধু
  3. বালির বাধ - ক্ষণস্থায়ী
  1. ভূতের ব্যাগার - অযথা শ্রম
  1. মগের মুল্লুক - অরাজক দেশ
  2. মিছরির ছুরি - মুখে মধু অন্তরে বিষ
  1. রাবণের চিতা - চির অশান্তি
  2. রাঘব বোয়াল - অত্যন্ত ক্ষমতাবান
  3. রুই কাৎলা - নেতৃস্থানীয়
  1. শাপে বর - অমঙ্গলে মঙ্গল কাটা
  1. সাপে-নেউলে - ভীষণ শত্রুতা
  2. সাক্ষী গোপাল - নিষ্ক্রিয় দর্শক
  1. হাতে খড়ি - শিক্ষার সূচনা
  2. হাল ধরা - দায়িত্ব গ্রহণ
  3. হাড়ে হাড়ে - গভীরভাবে
  4. হযবরল - বিশৃঙ্খলা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • বুলবুল আহমেদ রচিত বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি (একাদশ - দ্বাদশ শ্রেণী)