বাংলা ব্যাকরণ/বাগধারা
অবয়ব
বাগধারা বা বাক্যরীতি মানে কথার ধারা বা কথার ঢং।
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]যেসব শব্দগুচ্ছ তার আভিধানিক অর্থ ত্যাগ করে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে সেসব শব্দগুচ্ছকে বাগধারা বা বাগবিধি বলা হয়। বাগধারায় "আকাশ কুসুম" এর মতো বেশকিছু রূপক, পৌরাণিক ও কাব্যিক শব্দগুচ্ছ গৃহীত হয়েছে। বাগধারার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর শব্দ উপাদানগুলো যে ক্রমে সাজানো থাকে তার কোনো ব্যতিক্রম করা যায় না। যেমন: "অন্ধকারে ঢিল মারা" বাগধারাটিকে কখনো "ঢিল মারা অন্ধকারে" বলা যাবে না। নিম্নে কিছু বাগধারা ও এর মর্মার্থ দেখানো হলো:
- অ
- অকাল কুষ্মাণ্ড - অকেজো, অপদার্থ
- অকূল পাথার - ভীষণ বিপদ
- অক্কা পাওয়া - মারা যাওয়া
- অগাধ জলের মাছ - সুচতুর ব্যাক্তি
- অগ্নি পরীক্ষা - কঠিন পরীক্ষা
- অন্ধকারে ঢিল মারা - আন্দাজে কাজ করা
- অরণ্যে রোদন - নিষ্ফল আবেদন
- অহিনকুল সম্বন্ধ - ভীষণ শত্রুতা
- অমাবস্যার চাঁদ - দূর্লভ বস্তু
- আ
- আকাশ কুসুম - অসম্ভব কল্পনা
- আক্কেল সেলামী - বোকামির দণ্ড
- আকাশ ভেঙ্গে পড়া - ভীষণ বিপদে পড়া
- আষাঢ়ে গল্প - আজগুবি গল্প
- আলালের ঘরের দুলাল - অতি আদরের নষ্ট পুত্র
- ই
- ইঁচড়ে পাকা - অকালপক্ব
- উ
- উত্তম মধ্যম - পিটুনি
- উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে - একজনের দোষ অন্যের উপর চাপানো
- উভয় সংকট - দুদিকেই বিপদ
- উলুবনে মুক্তো ছড়ানো - অপাত্রে উত্তম জিনিস দান
- এ
- এসপার ওসপার - মীমাংসা
- এলাহি কাণ্ড - বিরাট আয়োজন
- একাদশে বৃহস্পতি - সৌভাগ্যের বিষয়
- ক
- কলুর বলদ - একটানা খাটুনি
- কেতাদুরস্ত - পরিপাটি
- কই মাছের প্রাণ - যা সহজে মরে না
- কেঁচো খুঁড়তে সাপ - সামান্য থেকে অসামান্য
- খ
- খয়ের খা - চাটুকার
- গ
- গড্ডলিকা প্রবাহ - অন্ধ অনুকরণ
- গোঁফখেজুরে - নিতান্ত অলস
- গোবর গণেশ - মুর্খ
- ঘ
- ঘাটের মড়া - অতি বৃদ্ধ
- ঘোড়া রোগ - সাধ্যের অতিরিক্ত সাধ
- চ
- চিনির বলদ - ভারবাহী কিন্তু ফললাভের অংশীদার নয়
- ছ
- ছা পোষা - অত্যন্ত গরীব
- ছিনিমিনি খেলা - নষ্ট করা
- ছেলের হাতের মোয়া - সহজলভ্য বস্তু
- জ
- জগদ্দল পাথর - গুরুভার
- জিলাপির প্যাঁচ - কুটিলতা
- ঝ
- ঝিকে মেরে বউকে শেখানো - পরোক্ষভাবে তিরস্কার করা
- ঝোপ বুঝে কোপ মারা - সুযোগ বুঝে কাজ করা
- ট
- টনক নড়া - চৈতন্যোদয় হওয়া
- টাকার কুমির - অন্যের টাকার মালিক
- ঠ
- ঠোঁটকাটা - স্পষ্টভাষী
- ড
- ডুমুরের ফুল - দূর্লভ বস্তু
- ঢ
- ঢাক পিটানো - প্রচার করা
- ত
- তামার বিষ - অর্থের কুপ্রভাব
- তাসের ঘর - ক্ষণস্থায়ী
- তীর্থের কাক - আশায় অপেক্ষমাণ
- দ
- দহরম মহরম - ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
- দা কুমড়ো - ভীষণ শত্রুতা
- দুধের মাছি - সুসময়ের বন্ধু
- ধ
- ধরাকে সরা জ্ঞান করা - সকলকে তুচ্ছ ভাবা
- ধরি মাছ না ছুঁই পানি - কৌশলে কার্যোদ্ধার
- ন
- ননীর পুতুল - শ্রম বিমুখ
- নয় ছয় - অপচয়
- প
- পটল তোলা - মারা যাওয়া
- পথের কাটা - প্রতিবন্ধকতা
- পদ্ম পাতার পানি - ক্ষণস্থায়ী
- ব
- বকধার্মিক - ভণ্ড সাধু
- বিড়াল তপস্বী - ভণ্ড সাধু
- বালির বাধ - ক্ষণস্থায়ী
- ভ
- ভূতের ব্যাগার - অযথা শ্রম
- ম
- মগের মুল্লুক - অরাজক দেশ
- মিছরির ছুরি - মুখে মধু অন্তরে বিষ
- র
- রাবণের চিতা - চির অশান্তি
- রাঘব বোয়াল - অত্যন্ত ক্ষমতাবান
- রুই কাৎলা - নেতৃস্থানীয়
- শ
- শাপে বর - অমঙ্গলে মঙ্গল কাটা
- স
- সাপে-নেউলে - ভীষণ শত্রুতা
- সাক্ষী গোপাল - নিষ্ক্রিয় দর্শক
- হ
- হাতে খড়ি - শিক্ষার সূচনা
- হাল ধরা - দায়িত্ব গ্রহণ
- হাড়ে হাড়ে - গভীরভাবে
- হযবরল - বিশৃঙ্খলা
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- বুলবুল আহমেদ রচিত বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি (একাদশ - দ্বাদশ শ্রেণী)