বাংলা ব্যাকরণ/ণত্ব বিধান

উইকিবই থেকে

ণত্ব বিধান[সম্পাদনা]

বাংলা ভাষার শব্দের বানানের ক্ষেত্রে দন্ত্য-ন এর মূর্ধন্য-ণ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহকে ণত্ব বিধান বলা হয়।

দন্ত্য-ন এর মূর্ধন্য-ণ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহ[সম্পাদনা]

  • ঋ, র, ষ বর্ণের পরে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- ঋণ, বর্ণ, বিষ্ণু, বরণ, ঘৃণা।
  • যদি ঋ, র, ষ বর্ণের পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ অথবা অনুস্বার (ং) থাকে, তার পরবর্তী দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়। যেমন- কৃপণ, নির্বাণ, গ্রহণ।
  • ট-বর্গের পূর্বের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- বণ্টন, লুণ্ঠন, খণ্ড।
  • প্র, পরা, পরি, নির্‌- উপসর্গের এবং 'অন্তর' শব্দের পরে নদ্‌, নম্‌, নশ্‌, নহ্‌, নী, নুদ্‌, অন্‌, হন্‌- কয়েকটি ধাতুর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ নয়। যেমন- প্রণাম, পরিণাম, প্রণাশ, পরিণতি, নির্ণয় ইত্যাদি।
  • প্র, পরা ইত্যাদির পর 'নি' উপসর্গের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- প্রণিপাত, প্রণিধান ইত্যাদি।
  • কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- কণা, গৌণ, নিপুণ, বাণিজ্য ইত্যাদি।

কোথায় কোথায় ণত্ব বিধান নিষেধ বা খাটে না[সম্পাদনা]

  • ত-বর্গযুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- বৃন্ত, বৃন্দ, গ্রন্থ।
  • বাংলা ক্রিয়াপদের অন্তঃস্থিত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- ধরেন , মারেন, করেন, যাবেন, খাবেন, হবেন, নিবেন, দিবেন।
  • বিদেশী শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- কোরআন, জার্মান, জবান, নিশান, ফরমান, রিপন।
  • পূর্বপদে ঋ, র, ষ থাকলে পরপদে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- মৃগনাভি, দুর্নাম, ত্রিনেত্র, মৃন্ময়।

ণত্ব বিধান-এর প্রয়োজনীয়তা[সম্পাদনা]

বাংলা ভাষার যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছে সে সব শব্দে সংস্কৃত ভাষার বানানরীতি অবিকৃত রাখা হয়েছে। সংস্কৃত ভাষার বানান ও উচ্চারণ রীতি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিতেরা কোনো শব্দের উচ্চারণকে অনায়াস করার জন্য একটি শব্দে পরপর দুইটি ধ্বনিকে কাছাকাছি উচ্চারণস্থলের রাখার চেষ্টা করেছেন। মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য-ন-এর উচ্চারণ আপাতশ্রবণে কাছাকাছি মনে হলেও মূর্ধন্য-ণ উচ্চারণ করতে হয় মূর্ধা থেকে আর দন্ত্য-ন উচ্চারণ করতে হয় দন্ত্য থেকে। তাই, যে সব ধ্বনি উচ্চারণ করতে জিহবার অগ্রভাগ দাঁতকে স্পর্শ করে অর্থাৎ 'ত'-বর্গীয় ধ্বনিগুলো (যেমন ত, থ, দ, ধ) উচ্চারণ করার সময় কাছাকাছি আরেকটি ধ্বনি মূর্ধা থেকে উচ্চারণ না করে দন্ত্য থেকে উচ্চারণ করা সহজসাধ্য। সেকারণে সাধারণভাবে 'ত'-বর্গীয় ধ্বনির সাথে যুক্ত ধ্বনি দন্ত্য-ন হয়। একই নিয়ম অনুসারে, যেসব ধ্বনি উচ্চারণ করতে জিহবার অগ্রভাগ মূর্ধাকে স্পর্শ করে অর্থাৎ 'ট'-বর্গীয় ধ্বনিগুলো (যেমন ট, ঠ, ড, ঢ)-র সাথে যুক্ত ধ্বনি মূর্ধন্য-ণ হয়। ঋ, র, ষ উচ্চারণ করতে হয় মূর্ধা থেকে আর তাই এই ধ্বনিগুলোর সাথে যুক্ত ধ্বনি হয় মূর্ধন্য-ণ। এখানে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ্য যে, "বণ্টন, লুণ্ঠন"-এই শব্দগুলোর প্রথম মূর্ধন্য-ণ টি 'ট'-বর্গীয় ধ্বনির সাথে যুক্ত হয়ে উচ্চারিত হচ্ছে, তাই এখানে ণত্ব বিধান ব্যবহৃত হবে, কিন্তু পরের দন্ত্য-ন এর আগে বিরতি থাকায় মূর্ধন্য-ণ হচ্ছে না। ষত্ব বিধান-এর জন্যও একই রকম নিয়ম প্রযোজ্য।