নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস/নিউজিল্যান্ড যুদ্ধসমূহ
‹ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিউজিল্যান্ডে ফিরে যান
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকের প্রধান ঘটনা
[সম্পাদনা]১৯৪৭ - ওয়েস্টমিনস্টার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আইন ১৯৪৭-এর সংবিধি
[সম্পাদনা]১৯৪৭ সালের ওয়েস্টমিনস্টার স্বায়ত্তশাসন আইনের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড ব্রিটেনের কাছ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। নিউজিল্যান্ড আজ ব্রিটিশ কমনওয়েলথের একটি স্বাধীন সদস্য দেশ।
ব্রিটিশ রাজা হলেন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান, যদিও তিনি নিউজিল্যান্ডের পরিচালনায় কোনো ভূমিকা পালন করেন না। একজন গভর্নর জেনারেল, যিনি সাধারণত নিউজিল্যান্ডের একজন নাগরিক, তিনি নিউজিল্যান্ডের সংসদে রাজার প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৫৩ - টাঙ্গিওয়াই রেল বিপর্যয়
[সম্পাদনা]১৯৫৩ সালের বড়দিনের প্রাক্কালে রাত ১০:২১-এ, টাঙ্গিওয়াইয়ের ওয়াংগেহু নদীর ওপর থাকা রেল সেতুটিকে ওয়েলিংটন-অকল্যান্ড রাতের এক্সপ্রেস ট্রেনটি অতিক্রম করার ঠিক আগে, কাছাকাছি একটি আগ্নেয়গিরি থেকে আসা লাহার সেতুটিকে ভেঙে দেয়। ট্রেনটি প্রবল গতিতে এসে প্লাবিত নদীতে ডুবে যায়, এতে ট্রেনে থাকা ২৮৫ জন যাত্রীর মধ্যে ১৫১ জনের মৃত্যু হয়। সেই সময়ে, এটি বিশ্বের দেখা অষ্টম বৃহত্তম রেল বিপর্যয় ছিল। মাত্র ২০ লক্ষের (২ মিলিয়ন) কিছু বেশি জনসংখ্যার পুরো জাতি দুর্ঘটনার গভীরতায় স্তব্ধ হয়ে যায়। আর্থার সিরিল এলিস ট্রেন থামানোর চেষ্টা করে একটি টর্চ নেড়ে লাইন ধরে ছুটেছিলেন, এই সাহসিকতার জন্য তাঁকে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার জর্জ মেডেল প্রদান করা হয়।
১৯৬৭ - দশমিক মুদ্রার প্রবর্তন
[সম্পাদনা]পাউণ্ড, শিলিং এবং পেন্সের পুরানো ব্যবস্থার পরিবর্তে নিউজিল্যান্ডে দশমিক মুদ্রা (দশ বা একশ দ্বারা ভাগ করে যে মুদ্রাকে ছোট এককে আনা যায়) চালু করা হয়েছিল।
প্রথম দশমিক মুদ্রা ১৯৬৭ সালের ১০ই জুলাই চালু হয়েছিল।
১৯৮১ - স্প্রিংবক্স রাগবি ট্যুর
[সম্পাদনা]দক্ষিণ আফ্রিকার স্প্রিংবক্স রাগবি দলের বিতর্কিত নিউজিল্যান্ডের সফরের সময়, অনেক নিউজিল্যান্ডবাসী অসন্তুষ্ট ছিল কারণ দক্ষিণ আফ্রিকানরা তখনও বর্ণবাদে জড়িত ছিল। নিউজিল্যান্ড রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন সফরটিকে অনুমোদন করেছিল, এবং সরকার এতে হস্তক্ষেপ করেনি, কারণ প্রধানমন্ত্রী রবার্ট মুলডুনের একটি নীতি ছিল যে খেলাধুলায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
এই সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে সহিংস আন্দোলন হয়েছিল। যেসব স্টেডিয়ামে গেমগুলি খেলা হচ্ছিল, বিক্ষোভকারীরা সেগুলির বাইরের রাস্তায় জমায়েত করে এবং কিছু কিছু খেলার পিচ নষ্ট করে দেয়, যেকারণে সেই খেলাগুলি বন্ধ করে দিতে হয়।
সফরের পর, নিউজিল্যান্ডে রাগবি ইউনিয়নের জনপ্রিয়তা কমে যায়। এরপর ১৯৮৭ সালে নিউজিল্যান্ড জাতীয় রাগবি ইউনিয়ন দল (সাধারণভাবে অল ব্ল্যাকস নামে পরিচিত) রাগবি বিশ্বকাপ জয় করলে অবস্থা স্বাভাবিক হয়।
১৯৮৫ - রেইনবো ওয়ারিয়র ডুবে যাওয়া
[সম্পাদনা]১৯৮৫ সালে, নিউজিল্যান্ড সরকার গ্রিনপিস 'রেইনবো ওয়ারিয়র'-এর সমুদ্রযাত্রায় অর্থায়ন করেছিল। এই সমুদ্রযাত্রাগুলি মুরুরা প্রবালপ্রাচীরে ফরাসি পারমাণবিক পরীক্ষার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ফরাসি সরকার, ডিজিএসই (ডিরেক্টরেট-জেনারেল ফর এক্সটার্নাল সিকিউরিটি)-এর সাথে মিলিত হয়ে, বেসামরিক জাহাজে বোমা ফেলার পরিকল্পনা করেছিল। বর্তমানে, এই রকম কাজ করলে তাকে সন্ত্রাসী আক্রমণ বা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস হিসাবে নিন্দা করা হবে। ১৯৮৫ সালের ১০ই জুলাই, ফরাসি এজেন্টরা, স্কুবা সরঞ্জাম ব্যবহার করে, বেসামরিক জাহাজের হালে লিম্পেট মাইন বসাতে শুরু করে। প্রথম বোমাটি ২৩:৪৮ -এ বিস্ফোরিত হয়। রেইনবো ওয়ারিয়রের নাবিকদের প্রাথমিকভাবে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কিছু নাবিক আবার ফিরে আসে ক্ষয়ক্ষতির পর্যবেক্ষণ করার জন্য। একজন আলোকচিত্রী ফার্নান্দো পেরেইরা তাঁর কেবিনে গিয়েছিলেন ফটোগ্রাফিক সরঞ্জাম নিয়ে আসার জন্য। তারপর, প্রায় ২৩:৫১-তে দ্বিতীয় বোমাটি বিস্ফোরিত হয় এবং জাহাজে দ্রুত জল ঢুকে ফার্নান্দো পেরেরার মৃত্যু হয়।
প্রাথমিকভাবে, ফরাসি সরকার বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিল। নিউজিল্যান্ডের ফরাসি দূতাবাস থেকে বিবৃতি এসেছিল "ফরাসি সরকার তার বিরোধীদের সাথে এই ধরনের আচরণ করে না"। যখন বিচার করা হয়, তখন দুই ফরাসী এজেন্ট, ডমিনিক প্রিউর ও অ্যালাইন মারফার্ট, হত্যা এবং ইচ্ছাকৃত ক্ষতির জন্য দোষ স্বীকার করেন। তাঁদের শাস্তি হয়েছিল যথাক্রমে ১০ বছর এবং ৭ বছরের জন্য, কিন্তু শাস্তি আরও কম করার জন্য তাঁদের হাও অ্যাটল নামক একটি ফরাসি ঘাঁটিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
তারপর সেখানে দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
১৯৮৭ - মাওরি ভাষা আইন
[সম্পাদনা]১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত, মাওরি ভাষা আইন, মাওরি ভাষাকে (তে রিও মাওরি বা মাওরির ভাষা) সরকারি আইনি মর্যাদা দেয়। এটি ছিল নিউজিল্যান্ডে মাওরি সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং ওয়াইটাঙ্গি বিচারসভার (ট্রাইব্যুনাল) প্রতিক্রিয়া। ওয়াইটাঙ্গি চুক্তির অনুমিত লঙ্ঘন সংশোধন করার জন্য এটি করা হয়েছিল। এই বিচারসভা ক্রাউন এবং মাওরি উভয় পক্ষের লঙ্ঘন খুঁজে পেয়েছিল এবং ভূমির একটি বড় অংশ বিভিন্ন মাওরি আইউইকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই আইনের বলে নিউজিল্যান্ডের নাগরিকেরা আদালতে তে রিও মাওরি ভাষা ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছেন।