বিষয়বস্তুতে চলুন

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস/কোভিড-১৯ মহামারী এবং ২০২০ মন্দার সময়ে নিউজিল্যান্ড (২০১৯-?)

উইকিবই থেকে

নিউজিল্যান্ড এবং কোভিড-১৯ মহামারী[সম্পাদনা]

পটভূমি[সম্পাদনা]

২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'নভেল করোনাভাইরাস'কে একটি মহামারী হিসাবে ঘোষণা করে। এই করোনা ভাইরাস গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উহানের একটি ক্লাস্টারে প্রথম শনাক্ত করা হয় এবং ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে রিপোর্ট করা হয়। ১৪ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে করোনভাইরাসকে 'কোভিড -১৯' নাম দেয়, যদিও অনেক দেশ স্বাধীনভাবে এটিকে আগে মহামারী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ঘটনাক্রম[সম্পাদনা]

২০২০ সালের মার্চের শেষের দিকে ক্রাইস্টচার্চের নতুন রিজেন্ট স্ট্রিট। সুনসান খালি রাস্তা।

- ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০, নিউজিল্যান্ড প্রথম অফিসিয়াল কেস হিসাবে করোনভাইরাস, কোভিড-১৯ নিশ্চিত করে।

-১৭ই মার্চ ২০২০ জেসিন্ডা অ্যাডর্ন ঘোষণা করেন যে স্কুলগুলি হলো 'শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা', এবং সেই স্কুলগুলিকে ৫০০ জনের বেশি জনসমাগমের নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

- ২১ মার্চ ২০২০, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা অ্যাডর্ন 'অ্যালার্ট লেভেল' ব্যবস্থা চালু করেন। এটি নিউজিল্যান্ডের মধ্যে মহামারীর পরিস্থিতি নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। মহামারী ছড়িয়ে পড়ার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব 'অ্যালার্ট লেভেল' বা সতর্কতার স্তর তৈরি করা হয়। তবে এই সতর্কতার স্তর পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন করা হয়।

- ২৩শে মার্চ ২০২০, দুটি সন্দেহভাজন সম্প্রদায়ের মধ্যে করোনভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়। প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা অ্যাডর্ন ঘোষণা করেন যে, সমগ্র নিউজিল্যান্ড অবিলম্বে কার্যকরী লেভেল ৩-এ প্রবেশ করবে। যদিও প্রধানমন্ত্রী আগে বিবৃতি দিয়ে স্কুলগুলিকে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বলেছিলেন, তবুও প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির বিপরীতে গিয়ে স্কুলগুলি চার সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

- ২৫ মার্চ ২০২০, একটি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং ঐ দিন নিউজিল্যান্ড রাত্রি ১১:৫৯-এ করোনভাইরাস কোভিড-১৯ লেভেল ৪-এ প্রবেশ করে। কোন অপ্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং প্রত্যেককে বাড়ির ভিতরে থাকতে হয়। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে হলে ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এইসময় নিউজিল্যান্ডের স্কুলগুলি বন্ধ ছিল।

- ৪ এপ্রিল ২০২০, সরকার কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের উপর সাতটি নতুন নিয়ম কানুন চালু করে।

- ৫ এপ্রিল ২০২০, নিউজিল্যান্ডে ১০০০-এর বেশি করোনভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়।

- ৫ এপ্রিল ২০২০, যারা নিউজিল্যান্ডের জল নিষেধাজ্ঞার আইন মানতে অস্বীকার করে নিউজিল্যান্ড তাদের টিকিট দেওয়া শুরু করে।

নিউজিল্যান্ড সরকারের সাতটি নতুন নিয়ম জারি:[সম্পাদনা]

৪ এপ্রিল ২০২০ - নিউজিল্যান্ডের প্রত্যেককে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত চলাচলের অনুমতি ছাড়া তাদের বর্তমান আবাসস্থলে বিচ্ছিন্ন বা কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে;

• ব্যায়াম এমন একটি বহিরঙ্গন জায়গায় করতে হবে যা বাড়ি থেকে সহজেই সেই জায়গায় প্রবেশ করা যায় এবং ব্যায়ামের সময় দুই-মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে;

বিনোদন এবং ব্যায়ামের মধ্যে সাঁতার, জল-ভিত্তিক ক্রিয়াকলাপ (উদাহরণস্বরূপ, সার্ফিং বা বোটিং), শিকার করা, পদব্রজে ভ্রমণ করা বা এই ধরনের অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ জড়িত নয় যা অংশগ্রহণকারীদের বিপদে ফেলে বা অনুসন্ধান এবং উদ্ধার পরিষেবার প্রয়োজন হতে পারে;

• একটি শিশু একটি যৌথ যত্ন-দাতার বাসভবন ছেড়ে অন্য যৌথ যত্ন-দাতার বাসভবনে দেখা করতে বা থাকতে পারে যদি একটি ভাগ করা বাবল বা অস্থায়ী ব্যবস্থা থাকে;

• একজন ব্যক্তি একটি ভাগ করা বাবল বা অস্থায়ী ব্যবস্থার অধীনে অন্য বাসস্থান (এবং সেই বাসভবনে পরিদর্শন বা থাকতে) দেখতে বা থাকার জন্য তাদের বাসস্থান ছেড়ে যেতে পারেন যদি:

• একজন ব্যক্তি ঐ বাসভবনের একটিতে বা উভয় বাসভবনেই একা থাকেন; বা

• সেই আবাসগুলির মধ্যে একটিতে সবাই দুর্বল ব্যক্তি থাকেন।

সারসংক্ষেপ[সম্পাদনা]

নিউজিল্যান্ডে কোভিড-১৯ প্রথম আক্রান্তের খবর ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তে রিপোর্ট করা হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে প্রথম প্রাদুর্ভাবের প্রতিক্রিয়া হিসাবে, নিউজিল্যান্ড সরকার দেশের সীমানা বন্ধ করে দেয় এবং লকডাউন বিধিনিষেধ আরোপ করে। নিউজিল্যান্ডে এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে সরকার গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সরকার দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, যারা অবাধ্য তাদের শাস্তি দেয়। নিউজিল্যান্ড সরকার চীন, জাপান এবং কোরিয়ার মতের নেতৃত্ব অনুসরণ করে এবং এই রোগ নির্মূল করার চেষ্টা করে। নিউজিল্যান্ডের অনেক নাগরিককে এই সময় সার্ফিং, সাঁতার কাটা, শিকার এবং মাছ ধরার জন্য জরিমানা করা হয়। নিউজিল্যান্ড সরকার একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সমন্বয় কেন্দ্র (NHCC) প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীতে সাড়া দেয়।

২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর কারণে ৩,০০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে। নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নালে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র লিখেছিল যে, যদি নিউজিল্যান্ডের মৃত্যুর হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই থাকত, তবে এই কোভিড-১৯ মহামারীতে প্রায় ২০,০০০ মানুষ মারা যেত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নিউজিল্যান্ডের সাফল্য দুই বছর ধরে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের কারণে হয়েছিল যতক্ষণ না বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। এই বিরাট কর্মযজ্ঞে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব[সম্পাদনা]

কোভিড-১৯ মহামারীর বিস্তারকে ধীর করার জন্য সরকার কর্তৃক বিধিনিষেধের কারণে, কোনও অপ্রয়োজনীয় ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। মহামারীর কারণে নিউজিল্যান্ডের ব্যবসার একটি বড় অংশের ব্যবসায়ীরা অর্থ উপার্জন করতে অক্ষম ছিল। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে জনসাধারণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদানের প্রয়োজন হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল কার্যকরভাবে সর্বজনীন আয় করা। সরকারের নীতি ছিল মালিক পক্ষ যেন তাদের কর্মচারীদের বরখাস্ত করা থেকে বিরত থাকে। এর জন্য সরকারকে ব্যবসার মালিকদের আর্থিক অনুদান দিতে হয় যাতে তারা তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারে। যদিও তাদের কেউই কাজ করতে সক্ষম ছিল না।

সমস্ত নিউজিল্যান্ড জুড়ে উপাসনার স্থানগুলিতে মানুযের সমাবেশ যাতে না হয় তার জন্য বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। তাই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি অনেকেই তাদের পরিষেবা অনলাইনে চালু করে। অন্যদিকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠক্রম শিখতে হয়েছিল। এর জন্য ডিজিটাল শিক্ষার বিশাল পরিকাঠামো তৈরি করা হয়।

২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দার মধ্যে প্রবেশ করে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে জুন ত্রৈমাসিকে দেশের মোট দেশীয় পণ্য ১২.২% হ্রাস পায়। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং কঠোর দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে খুচরা, বাসস্থান, আতিথেয়তা এবং পরিবহন শাখা বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়।