নাক্ষত্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞান/হায়াশি রেখায় বিবর্তন

উইকিবই থেকে

হায়াশি রেখার উপর রাসায়নিক গঠনের প্রভাব[সম্পাদনা]

  • তারার ধাতবতা বেশি হলে হায়াশি রেখা অপেক্ষাকৃত শীতল হয়ে যাবে তথা কম কার্যকরী তাপমাত্রার দিকে সরে যাবে। কারণ ধাতবতা বৃদ্ধি করলে অনচ্ছতা বেড়ে যায়, বেড়ে যায় তাপমাত্রা গ্র্যাডিয়েন্ট। যার ফলে উচ্চ ব্যসার্ধ্যের দিকে তাপমাত্রার মান যায় কমে।
  • হিলিয়াম প্রাচুর্য বাড়লে ঘটবে ঠিক তার উল্টো, হায়াশি রেখা বেশি তাপমাত্রার দিকে সরে যাবে। কারণ হিলিয়াম প্রাচুর্য বাড়ালে অনচ্ছতা কমে যায়। আশপাশে অতিনবতারা বিস্ফোরিত হলে হিলিয়াম প্রাচুর্য বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে হিলিয়াম বাড়বে এবং হাইড্রোজেন কমবে। হাইড্রোজেনের তুলনায় হিলিয়াম কম অনচ্ছ বলে অনচ্ছতা কমে যাবে।
  • রাসায়নিক গঠন স্থির রেখে ভর কমালে শীতলতর তাপমাত্রার দিকে সরে যাবে।
  • এবার মিশ্রণ দৈর্ঘ্যের কথা বলা যাক। মিশ্রণ দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করলে পরিচলন আরও সক্রিয় হবে, এতে করে অতি-রুদ্ধতাপীয় নতি রুদ্ধতাপীয় নতির সমান হতে থাকবে। এর ফলে অতি-রুদ্ধতাপীয় অঞ্চলে নতির মান যাবে কমে, অর্থাৎ তা অপেক্ষাকৃত সমতল হয়ে যাবে। এতে উচ্চ ব্যসার্ধ্য অঞ্চলে তাপমাত্রার মান যাবে বেড়ে।

হাইড্রোজেন দহনের পূর্বে বিবর্তন[সম্পাদনা]

হায়াশি রেখা হচ্ছে হেরডে তারার বিবর্তনের নিম্নতম তাপমাত্রা সীমা। কোন তারা বিবর্তনের কোন দশায় এর ডানে যেতে পারে না। মহাকর্ষীয় সংকোচনের কারণে হায়াশি রেখায় তারার ব্যসার্ধ্য কমতে থাকে, ফলে প্রভা কমে কিন্তু তাপমাত্রা স্থির থাকে। কেন্দ্রের তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় একসময় কোরটি পরিচলনীয় থেকে বিকিরণীয় হয়ে পড়ে। ফলে এনভেলপ এবং কোর পৃথক হয়ে যায় এবং তারাটি হায়াশি রেখা ছেড়ে বামে যাত্রা শুরু করে, অর্থাৎ তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এ সময় তারার কেন্দ্রে কিছু নিউক্লীয় বিক্রিয়া সংঘটিত হয় যদিও শক্তি উৎপাদনের বিচারে তারা খুবই নগণ্য। এ সময় ডিউটেরিয়াম, লিথিয়াম এবং বেরিলিয়ামের বিভিন্ন আইসোটোপ বিক্রিয়া করে।

এসব মৌলের আদি প্রাচুর্য খুব কম এবং বিক্রিয়াগুলো সক্রিয়া হলে প্রাচুর্য প্রায় শূন্য হয়ে যায়। এই প্রাথমিক নিউক্লীয় দহনের সময় যদি তারাটি সম্পূর্ণ পরিচলনীয় থাকতো তাহলে, পৃষ্ঠ থেকেও সব ডিউটেরিয়াম এবং লিথিয়াম কোরে চলে যেতো পোড়ার জন্য। এভাবে সব লিথিয়াম ও ডিউটেরিয়াম শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, সব লিথিয়াম ও ডিউটেরিয়াম পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই কোর বিকিরণীয় হয়ে পড়ে এবং এনভেলপের অবশিষ্ট মৌল আর কোরে আসতে পারে না। এভাবে কিছু লিথিয়াম এনভেলপে থেকে যায়। এজন্যই লিথিয়াম তারার বয়স নির্ণয়ের মাপকাঠি হতে পারে। এনভেলপে লিথিয়ামের প্রাচুর্য নির্ভর করে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর:

  1. মহাকর্ষীয় সংকোচনের কারণে তারার কেন্দ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার
  2. এর ফলে যে নিউক্লীয় বিক্রিয়া শুরু হয় তাদের কর্যক্ষমতা
  3. বিকিরণীয় কোর এবং পরিচলনীয় এনভেলপের পৃথক হয়ে যাওয়ার সময়

রাসায়নিক গঠন স্থির থাকলে পৃষ্ঠে এসব মৌলের জমে থাকার পরিমাণ নির্ভর করে যেসব বিষয়ের উপর তারা হল:

  1. ভর বেশি হলে এনভেলপে বেশি লিথিয়াম ও ডিউটেরিয়াম জমা থাকতে পারে।
  2. ভর স্থির রেখে ধাতবতা কমালে এনভেলপে বেশি পদার্থ জমা থাকে।

এই দুটি ঘটনার কারণ হচ্ছে, ভর বেশি এবং ধাতবতা কম থাকার অর্থ কোর এবং এনভেলপ অপেক্ষাকৃত আগে পৃথক হয়েছিল।