বিষয়বস্তুতে চলুন

নাক্ষত্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞান/মূলধারা-উত্তর বিবর্তন

উইকিবই থেকে

উচ্চ এবং মধ্যবর্তী ভরের তারা

[সম্পাদনা]

এসব তারায় কোরে হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাওয়ার পর সার্বিক সংকোচনের মাধ্যমে শেলে হাইড্রোজেন দহন শুরু হয়। শোনবার্গ-চন্দ্রশেখর সীমার কারণে এক সময় হিলিয়াম কোর সংকুচিত হতে শুরু করে।

হিলিয়াম কোর থাকে পরিচলনীয় এবং এই কোরের আকার নির্ধারণে শোয়ারৎসশিল্ড নীতির বদলে লেদু নীতি ব্যবহার করতে হয়। কারণ কোর সংকুচিত হওয়ায় রাসায়নিক পদার্থের বণ্টন আর সুষম থাকে না। কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে একটি রাসায়নিক নতি দেখা যায়। এই নতি হিসাব করে লেদু নীতি বলে, পরিবেশের নতি রুদ্ধতাপীয় নতি এবং রাসায়নিত নতির যোগফলের চেয়ে বেশি হলেই কেবল কোর পরিচলনীয় থাকবে:

যেখানে

তারার ভর ১০ সৌর ভরের বেশি হলেই কেবল লেদু নীতি প্রয়োগ করতে হয়। লেদু নতির কারণে হিলিয়াম কোরের সংকোচন খুব দ্রুত হয়।

পরিচলনীয় কোর এবং বিকিরণীয় এনভেলপ পৃথক হয়ে যায়। কোর সংকুচিত হতে থাকে কিন্তু এনভেলপ প্রসারিত ও শীতল হতে থাকে। শীতল হওয়ায় এনভেলপের অনচ্ছতা বেড়ে যায় যা বহির্গামী বিকিরণকে আটকে ফেলে, এতে প্রসারণ হার আরও বেড়ে যায়। এ সময় তারাটি প্রায় ধ্রুব প্রভা নিয়ে হেরাডের শীতলতর অঞ্চলের দিকে যেতে থাকে। একেই বলে উপ-দানব শাখা বা সাবজায়ান্ট ব্রাঞ্চ। এই শাখায় বেশ কম সময়ের জন্য থাকে: ৩ সৌর ভরের তারার জন্য ১২ মিলিয়ন বছর আর ৬ সৌর ভরের তারার ক্ষেত্রে মাত্র ১ মিলিয়ন বছর। এজন্য এই শাখার কোন তারা আমরা দেখতে পারি না যা হেরডের উচ্চ ভরের অঞ্চলে একটি শূন্যস্থানের সৃষ্টি করে। একেই বলা হয় হের্ডসব্রং শূন্যস্থান বা গ্যাপ।

এনভেলপের অনচ্ছতা বাড়তে থাকায় এক সময় তা পরিচলনীয় হয়ে পড়ে। এতে করে তারাটি সম্প্রসারিত হতে হতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। পরিচলনীয় হয়ে যাওয়ার পর তাপমাত্রা আর বাড়ে না। প্রায় ধ্রুব তাপমাত্রায় তারাটির প্রভাব বাড়তে থাকে যেহেতু তখনও তারার সম্প্রসারণ চলতে থাকে। এটিই লোহিত দানব শাখা। এ পর্যায়ে তারায় দুটি পরিচলন অঞ্চল থাকে, কোর এবং বহিঃএনভেলপ।

এ ধরণের তারার কোরের ঘনত্ব কম থাকায় ইলেকট্রন অপজাত্যের সৃষ্টি হয় না। এতে কোরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা হিলিয়াম দহনের উপযোগী হয়। তাপমাত্রা কেলভিন হলে হিলিয়াম দহন শুরু হয় এবং তারাটি লোহিত দানব শাখা ছেড়ে যায়।

ভর বাড়লে হিলিয়াম কোর আরও দ্রুত সংকুচিত হয় এবং তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ে। এতে হিলিয়াম দহন আরও আগে শুরু হয়, অর্থাৎ লোহিত দানব শাখার অপেক্ষাকৃত ছোট হয়ে যায়। ভর অনেক বেড়ে গেলে এমনটি লোহিত দানব শাখা অদৃশ্যও হয়ে যেতে পারে, হিলিয়াম দহন শুরু হতে পারে মূলধারার একেবারে কাছে।

নিম্ন ভরের তারা

[সম্পাদনা]

উপদানব শাখা

[সম্পাদনা]
  • কোর থেকে শেল দহনে রূপান্তর দ্রুত ঘটে না। প্রথমে একেবারে কেন্দ্রে হাইড্রোজেন শেষ হয়, ফলে দহন এলাকা একটু বাইরের দিকে সরে যায়। সময়ের সাথে দহন অঞ্চল ধীরে ধীরে বাইরের দিকে যেতে থাকে। কিন্তু উচ্চ ভরের তারায় এটা সম্ভব ছিল না, কারণ কোর ছিল পরিচলনীয়।
  • শেল দহন যখন শুরু হয় তখন হিলিয়াম কোরের ভর শোনবার্গ-চন্দ্রশেখর সীমার চেয়ে কম থাকে। শেলে দহন হওয়ায় এই ভর বাড়তে বাড়তে এক সময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। তারপরও সংকোচন ঘটে না কারণ কোর অপজাত। আসলে শেল দহনের মাধ্যমে মূলধারা থেকে বিচ্যুত হওয়ার পরপরই কোর অপজাত হয়ে যায়।
  • মূলধারা বিচ্যুতির সময়টিতে সর্বোচ্চ শক্তি উৎপাদিত হয় ০.১ সৌর ভরের স্থানটিতে, অর্থাৎ কেন্দ্রের বাইরে। আর ৯০% শক্তি উৎপাদিত হয় ০.২ সৌর ভরের একটি অঞ্চল থেকে।
  • এ সময় তারার প্রভা স্থির থাকে, কিন্তু তাপমাত্রা কমতে থাকে। তারাটি উপ-দানব শাখা ধরে এগোতে থাকে লোহিত দানব শাখার দিকে। তাপমাত্রা হ্রাসের কারণ হচ্ছে দিনদিন হাইড্রোজেন দহন কমতে থাকে এবং হাইড্রোজেন দহনের শেলটি সরু থেকে সরুতর হতে থাকে। কিন্তু হিলিয়াম কোরের ভর বাড়তে থাকে। মনে রাখতে হবে:
কোরে নিউক্লীয় বিক্রিয়া হলে প্রভা বৃদ্ধি পায়
শেলে বিক্রিয়া হলে প্রভা হ্রাস পায় বা স্থির থাকে, কারণ শেলের প্রভাবে এনভেলপ প্রসারিত হয়ে শীতল হতে থাকে, অনচ্ছতা বাড়ে এবং অনচ্ছ পদার্থগুলো ফোটনকে পালাতে দেয় না।