নাক্ষত্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞান/উর্দ্ধ মূলধারার তারায় হাইড্রোজেন দহন

উইকিবই থেকে

যেসব তারার ভর সূর্যের ভরের ১.২ থেকে ১.৩ গুণের বেশি তাদেরকে উর্দ্ধ মূলধারার তারা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এসব তারায় সিএনও চক্রের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হাইড্রোজেন পুড়ে হিলিয়াম তৈরি হয়। ১.৫ সৌর ভরের তারায় ৭০% শক্তি উৎপাদিত হয় সিএনও চক্রের মাধ্যমে। সিএনও চক্রের তাপমাত্রা নির্ভরতা অনেক বেশি:

এই উচ্চ নির্ভরতার প্রভাব দুটি:

  1. হাইড্রোজেন দহন কেন্দ্রের খুব ছোট একটি অঞ্চলে ঘটে। সূর্যের মোট শক্তির ৯০% যেখানে মোট ভরের ৭০% অঞ্চলে ঘটে সেখানে ১০ সৌর ভরের তারায় ৯০% শক্তি উৎপাদিত হয় কেন্দ্রের একটি ছোট অঞ্চলে যার ভর মোট ভরের মাত্র ১০%।
  2. কেন্দ্রে অনেক বেশি ফ্লাক্স থাকায় তাপমাত্রা নতি অনেক বেশি হয় এবং কোর পরিচলনীয় হয়ে পড়ে। কারণ শোয়ারৎসশিল্ড নীতি। এনভেলপ পরিচলনীয় হতে পারে না কারণ আংশিক আয়নিত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম তারার একেবারে বাইরের একটি স্তরে থাকে যা এনভেলপের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্যকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে না। উল্লেখ্য, আংশিক আয়নিত অঞ্চলেই অনচ্ছতা বেশি থাকে বলে পরিচলন দেখা যায়।

কেন্দ্র পরিচলনীয় হওয়ায় কোরে হাইড্রোজেন এবং উৎপাদিত হিলিয়ামের বণ্টন থাকে সুষম। কারণ পরিচলনের মাধ্যমে পদার্থের মিশ্রণ ঘটে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারার ভর যত বেশি হয় সিএনও চক্রের সময় বিকিরণ চাপের প্রভাব তত বাড়তে থাকে। সূর্যের মত তারায় বিকিরণ চাপ মোট চাপের ১০০০০ ভাগের ১ ভাগ। কিন্তু উর্দ্ধ মূলধারায় ৫০ সৌর ভরের একটি তারায় এই বিকিরণ চাপ মোট চাপের ১০ ভাগের ৩ ভাগ। এর কারণ চাপ তাপমাত্রার উপর বেশ ভালভাবেই নির্ভর করে:

এছাড়া সময়ের সাথে সাথে এ ধরণের তারার পরিচলনীয় কেন্দ্রের আকার ছোট হতে থাকে। কোর সংকুচিত হয় না, বলা উচিত পরিচলনীয় কোরের সীমানা কেন্দ্রের দিকে সরে যেতে থাকে। এর কারণ দুটি:

  1. কেন্দ্রে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং সেইসাথে ফ্লাক্সও বাড়তে থাকে।
  2. বিকিরণ চাপের প্রভাব বাড়ায় রুদ্ধতাপীয় নতি কমে যায়।

ওভারশুটিং[সম্পাদনা]

ওভারশুটিং এর কারণে পরিচলনীয় কোরের ভর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।

সার্বিক সংকোচন[সম্পাদনা]

কোরে হাইড্রোজেনের পরিমাণ কমতে কমতে যখন ৫% এ পৌঁছায় তখন তারা বুঝতে পারে: ওহ হো... এত কম হাইড্রোজেন পুড়িয়ে তো আমি জলস্থৈতিক সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে পারব না। তখন উদ্ধারের একমাত্র উপায় থাকে শেলের হাইড্রোজেন পোড়ানো। কিন্তু শেলের তাপমাত্রা তখনও হাইড্রোজেন দহনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় পৌঁছায়নি। সুতরাং শেলের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য এ সময় তারাটি হঠাৎ করেই সংকুচিত হতে শুরু করে। একে বলা হয় সার্বিক সংকোচন। সার্বিক সংকোচন মুক্তভাবে পতনশীল বস্তুর সময়কালের মত, অর্থাৎ খুব কম। এজন্য এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এমন কোন তারা দেখা যায় না। যে কারণে হেরডে একটি ফাঁক থেকে যায়।

সার্বিক সংকোচনের পর কোর দহন বন্ধ হয়ে শেল দহন শুরু হয়। হিলিয়াম কোরের চারদিকে একটি হাইড্রোজেন শেলে হাইড্রোজেন দহন চলতে থাকে।