ছাগল পালন/ছাগল ছানার মৃত্যু রোধে করণীয়
ধারণা করা হয় যে বর্তমানে বাংলাদেশে ছাগলের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। দেশের মোট ছাগলের শতকরা ৪৫ ভাগ ছাগীই বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষম। প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ ছাগলের বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে থাকে তার প্রায় ৩০ ভাগই বিভিন্ন কারণে মারা যায়। এতে দেশ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ ছাগল ছানার উপযুক্ত খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বাসস্থান ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চা মৃত্যুর হার রোধ করা সম্ভব। ছাগল ছানার জন্মকালীন ওজন, মৃত্যুর হার এবং বিভিন্ন সংক্রামক ও বিপাকীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ছাগী ও প্রজননকালে ব্যবহৃত পাঁঠার প্রজনন ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।
প্রজননকালীন ছাগীর দৈহিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের একটি ছাগী সাধারণত ৪-৫ মাস বয়সের মধ্যে গরম হয়। এসময় প্রজনন না করানো ভালো। ছাগীর দৈহিক ওজন কমপক্ষে ১২-১৩ কেজি হলে তাকে প্রজনন করানো উচিত। অন্যথায় কম দৈহিক ওজনের ছাগীকে প্রজনন করালে প্রসবকৃত বাচ্চার ওজন কম হয়ে থাকে যা বাচ্চা মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ। এ ছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় বা কম ওজনের সময় গর্ভধারণ করলে ছাগীর দুধ উৎপাদন কম হয়, যা বাচ্চার বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে পারে না। ফলে জন্মের কয়েকদিন পরেই ছাগল ছানার মৃত্যু ঘটে।
আবার ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের একটি ছাগী এক সাথে ৩-৪টি বাচ্চা প্রসব করে। কিন্তু স্থাগীর দুধের বাট দুটি হওয়ায় সবগুলো বাচ্চা একসাথে মায়ের দুধ খেতে পায় না। ফলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বাচ্চা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। বাচ্চা মৃত্যুর হার রোধ করতে হলে ছাগীর গর্ভকালীন সময় হতে প্রসব পরবর্তী সময় পর্যন্ত মা ও ছাগল ছানার বিশেষ যত্ন নিতে হবে। নিম্নে ছাগল ছানার মৃত্যু হার রোধে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।
ছাগীর গর্ভকালীন ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের একটি ছাগী সাধারণত প্রতিবারে ২-৪ টি বাচ্চা প্রসব করে। তাই গর্ভবর্তী ছাগীকে পর্যাপ্ত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে। এতে বাচ্চা ও ছাগীর রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস পাবে এবং ছাগল ছানার জন্মকালীন ওজন বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় জন্মের সময় বাচ্চা ওজনে কম ও দুর্বল হতে পারে; ফলে বাচ্চা মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে ছাগীকে যে খাদ্য সরবরাহ করা হয় তা গর্ভস্থ ভ্রূণের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায় এবং ছাগীর স্তন টিস্যুর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। গর্ভের শেষ দুই মাসে ছাগী ও বাচ্চার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচা ঘাস, দানাদার খাদ্য, ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা উচিত। এতে গর্ভস্থ বাচ্চার সুক্ষ্ম বৃদ্ধি ঘটবে এবং প্রসবকৃত বাচ্চার মৃত্যুর হার কমে যাবে।
যে সব ছাগীকে পূর্বে পিপিআর, গোটপক্স, একথাইমা, ব্রুডসেলোসিস প্রভৃতি রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয় নি তাদেরকে গর্ভের ৫ম মাসে উক্ত টিকাসমূহ প্রদান করতে হবে। এতে বাচ্চা তার মা থেকে উক্ত রোগসমূহের প্রতিষেধক পাবে।
গর্ভের শেষ ১-২ সপ্তাহে ছাগীকে ব্রড স্পেকট্রাম কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। গর্ভকালীন অপুষ্টিতে আক্রান্ত বা ক্ষীণ স্বাস্থ্যের ছাগীকে সুষম খাবার সরবরাহের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে একটি করে কাঁচা বা সিদ্ধ ডিম খাওয়ানো যেতে পারে। এতে ছাগীর আমিষের চাহিদা কিছুটা পূরণ হবে এবং গর্ভস্থ বাচ্চাও সবল হবে।
ছাগীর ওজন (কেজি) | দানাদার খাদ্য (গ্রাম/দিন) | ঘাস (কেজি/দিন) | পানি (লিটার/দিন) |
---|---|---|---|
১৫ | ৮০০ | ২.২৫ | ১.৫ |
২০ | ৯০০ | ২.৪ | ১.৫ |
২৫ | ১০০০ | ২.৬ | ১.৫ |
৩০ | ১১০০ | ২.৮ | ২.০ |
৩৫ | ১২০০ | ৩.০ | ২.০০ |
৪০ | ১২৫০ | ৩.৫ | ২.০০ |
প্রসব পূর্ববর্তী ও প্রসবকালীন ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]আসন্ন প্রসবা ছাগীকে প্রসবের কমপক্ষে ১-২ সপ্তাহ পূর্বে দলের অন্যান্য ছাগল হতে আলাদা করে একটি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, জীবাণুমুক্ত ঘরে (প্রসূতি ঘর) রাখতে হবে। প্রসূতি ঘরের মেঝে শুকনো, পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত খড়-বিচালী বা চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম হতে ছাগীকে রক্ষা করতে হবে। আবার মশা-মাছি ও অন্যান্য কীট পতঙ্গের উৎপাত হতে ছাগীকে রক্ষা করতে হবে। এছাড়াও ছাগীকে যথারীতি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে।
প্রসবের লক্ষণ প্রকাশ পেলে ছাগীর পিছনের অংশ ও ওলান পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর ০.৫-১.০% দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে-মুছে দিতে হবে। এসময় ছাগীর পাশে উপস্থিত থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রসবে সহায়তা করতে হবে (যেমন-বাচ্চার পা টেনে বের করা)।
প্রসবের সাথে সাথে বাচ্চাকে মায়ের সামনে দিতে হবে যাতে ছাগী বাচ্চার শরীর চেটে পরিষ্কার করতে পারে। বাচ্চার নাক শ্লেষ্মাতে আটকে থাকার কারণে দম বন্ধ হয়ে বাচ্চা মারা যেতে পারে তাই প্রসবের সাথে সাথে বাচ্চার সমস্ত শরীর ও নাকের শ্লেষ্মা সরিয়ে নাকের মধ্যে ফু দিয়ে বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাসে সহযোগিতা করতে হবে।
শীতের সময় দ্রুত বাচ্চার শরীর মুছে না দিলে শীতে বাচ্চার শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা দ্রুত হারাতে থাকে এবং বাচ্চা কাঁপতে কাঁপতে মারা যায়। এজন্য বাচ্চাকে উষ্ণ স্থানে অর্থ্যাৎ খড় বা চটের উপর রেখে চারদিক চট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে অথবা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাচ্চা প্রসবের পরপরই বাচ্চার নাভি ২-৩ সে.মি. রেখে বাকি অংশ কেটে দিতে হবে এবং উক্ত স্থানে টিংচার অব আয়োডিন লাগিয়ে দিতে হবে। প্রসবের পর ছাগীকে স্যালাইন খেতে দেয়া ভালো। ছাগীর জরায়ুতে যাতে ইনফেকশন না হয় সেজন্য জননাঙ্গকে ০.৫-১.০% পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে জরায়ুতে এন্টিবায়োটিক বোলাস প্রয়োগ করতে হবে।
ছাগল ছানার খাদ্য ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]সদ্য প্রসূত বাচ্চার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন শক্তি। নবজাত ছাগল ছানা শক্তি পায় মায়ের দুধ হতে। তাই প্রসবের ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে ছাগল ছানাকে মায়ের শাল দুধ খেতে সাহায্য করতে হবে। শাল দুধ দোহন করে বোতলে খাওয়ানো যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যে সকল বাচ্চা যেন সমভাবে দুধ পায়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল বাচ্চাকে নিজের হাতে ধরে মায়ের দুধ খাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। জন্মের পর ১ম ৪-৫ দিন বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
জন্মের সময় বাচ্চার ওজন ১ কেজির কম হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি এক সপ্তাহ পর্যন্ত চিনির সিরা/ডেক্সট্রোজ দিনে ৩-৪ বার খাওয়ানো যেতে পারে। এতে বাচ্চার শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বাচ্চা মৃত্যুর হার কমে যায়।
ছাগীর দুধ উৎপাদন কম কিন্তু বাচ্চার সংখ্যা যদি বেশি হয় তাহলে তিন মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের দুধের পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে গাভীর দুধ, বার্লি, পাউডার মিল্ক, ভাতের মাড় প্রভৃতি খাওয়ানো যেতে পারে। গরুর দুধ পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে ছাগল ছানাকে মিল্ক রিপ্লেসার তৈরি করে দিনে ৩-৪ বার খাওয়ানো মা যেতে পারে। এতে ননীমুক্ত গুড়া দুধ (স্কিম মিল্ক) ৭০ ভাগ; চাল, গম বা ভূট্টার গুড়া ২০ ভাগ, সয়াবিন তেল ৭ ভাগ, লবণ ১ ভাগ, ডাইক্যালসিয়াম ফসফেট ১.৫ ভাগ এবং ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ০.৫ ভাগ থাকে। উক্ত মিশ্রণের একভাগ, নয়ভাগ পানির সাথে মিশিয়ে ভালমত ফুটানোর পর ঠাণ্ডা করে ছাগল ছানাকে খাওয়াতে হবে।
ছাগল ছানার ১৫ দিন বয়স হতে অল্প অল্প করে দানাদার খাদ্য এবং আঁশ জাতীয় খাবার (কাঁচা ঘাস, গাছের পাতা প্রভৃতি) খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। যে সকল ছাগল ছানা দীর্ঘ সময় ধরে মায়ের অপর্যাপ্ত দুধ পাওয়ার কারণে দুর্বল হয় তাদেরকে অন্যান্য সুষম খাবার সরবরাহের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একটি করে কাঁচা বা সিদ্ধ ডিম খাওয়ানো যেতে পারে। এতে ছাগল ছানার আমিষের চাহিদা কিছুটা পূরণ হবে এবং বাচ্চা সুস্থ ও সবল হবে।
বয়স | প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ছাগলের দুধ খাওয়ানোর পরিমাণ | প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পরিমাণ | কাঁচা ঘাস |
---|---|---|---|
০-১৪ দিন | ১৫০ গ্রাম | — | — |
১৫-৩০ দিন | ১৫০ গ্রাম | সামান্য পরিমাণ | সামান্য পরিমাণ |
৩১-৪২ দিন | ১৫০ গ্রাম | ২০ গ্রাম | সামান্য পরিমাণ |
৪৩-৫৬ দিন | ১৩০ গ্রাম | ৪০ গ্রাম | চাহিদা অনুযায়ী |
৫৭-৭০ দিন | ১১০ গ্রাম | ৬০ গ্রাম | চাহিদা অনুযায়ী |
৭১-৯০ দিন | ১০০ গ্রাম | ১০০ গ্রাম | চাহিদা অনুযায়ী |
ছাগল ছানার বাসস্থান ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]ছাগল ছানার মৃত্যু হার রোধের জন্য বাসস্থান ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সদ্য প্রসূত ছাগল ছানাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন ও শুষ্ক জায়গায় (ব্রুডডিং পেন) রাখতে হবে। শীতের সময় মেঝেতে ছালা বা খড় বিছিয়ে মার সাথে ছাগল ছানাকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ছাগল ছানার শরীর গরম কাপড়া বা ছালা দিয়ে ঢেকে দেয়া যেতে পারে। ছাগলের ঘরের বেড়া বা দেয়াল চট দিয়ে ঢেকে দেয়া দেতে পারে যাতে ঘর উষ্ণ থাকে। প্রতিদিন খাদ্য ও পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘর ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে না হয়। শীতে বা বৃষ্টির সময় ছাগর ছানাকে ঘরের বাইরে যেতে দেয়া উচিৎ নয়। এতে ঠাণ্ডা লেগে ছাগল ছানার নিউমোনিয়া হতে পারে। বড় প্রাণির আক্রমণ হতে ছাগল ছানাকে রক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ছাগল ছানার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]বিভিন্ন কারণে ছাগল ছানার শরীরে উকুন, আঠালী, মাইট প্রভৃতি পরজীবির সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে বাচ্চা রক্তশূন্যতায় ভুগে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। এ সব পরজীবির আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ছাগল ছানাকে উকুন নাশক সাবান দিয়ে অথবা ০.৫% ম্যালাথিয়নের পানিতে গোসল করাতে হবে। ছাগল ছানার বয়স ২ মাস হলেই প্রতি সপ্তাহে দুইবার একে সাধারণ পানিতে গোসল করাতে হবে। শরীরে উকুন, আঠালী, মাইট প্রভৃতি পরজীবির সংক্রমণ দেখা দিলে মাসে দুইবার ০.৫% ম্যালাথিয়নের পানিতে বাচ্চাকে গোসল করাতে হবে। গোসলের পরপরই ছাগল ছানার শরীর কাপড় বা ছালা দিয়ে মুছে দিতে হবে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছাগল ছানার পেটে গোল কৃমি, ফিতা কৃমি এবং যকৃত কৃমিসহ বিভিন্ন ধরনের কৃমি হতে থাকে। এর ফলে ছাগলের খাদ্য হজম কমে যায় এবং হজমকৃত খাদ্য শোষণে ব্যাঘাত ঘটে। এক পর্যায়ে বাচ্চা অপুষ্টিতে দুর্বল হয়ে মারা যেতে পারে। তাই বাচ্চার বয়স একমাসের অধিক হলে প্রতি চার মাস পরপর পায়খানা পরীক্ষা করে ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হবে।
ছাগল ছানার নিউমোনিয়া নিয়ন্ত্রণ
[সম্পাদনা]ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস প্রভৃতি জীবাণু দ্বারা বিভিন্ন সময়ে ছাগল ছানার নিউমোনিয়া হতে পারে। প্রচণ্ড শীত, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতকালীন সময় এবং ভেজা স্যাঁতসেঁতে ও অপরিষ্কার বাসস্থান এ রোগের সংক্রমণ ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া শ্বাস নালীতে খাবার বা ঔষধ জাতীয় কোনো পদার্থ ঢুকে গেলে এসপিরেশন নিউমোনিয়া হতে পারে। নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে-
- ঘন ঘন নিঃশ্বাস ও অল্প জ্বর (প্রধান লক্ষণ)
- শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হওয়া (ঘড়ঘড় শব্দ)
- রোগের শেষ পর্যায়ে শ্বাস কষ্ট
- ঘন ঘন কাশি এবং কাশির সময় বুকে ব্যাথা
- নাক দিয়ে সাদা ফেনাযুক্ত সর্দি বের হওয়া
- খাদ্য গ্রহণে অরুচি ও অনীহা
- বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা এক পর্যায়ে কমে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্টে মৃত্যুবরণ
ছাগল ছানার নিউমোনিয়া রোগ হলে একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী এর চিকিৎসা করাতে হবে।
নিউমোনিয়া রোগ কোনো একক সুনির্দিষ্ট জীবাণু দ্বারা হয় না বলে টিকা দিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় না। খামারের উন্নত ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং অতিরিক্ত শীত, বৃষ্টি ইত্যাদি হতে ছাগল ছানাকে রক্ষার মাধ্যমে নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ঠাণ্ডা এড়ানোর জন্য শীতকালে গরম কাপড় বা চট নিয়ে ছাগল ছানাকে ঢেকে নিতে হবে এবং মেঝেতে খড়/চট বিছিয়ে তার উপর বাচ্চাকে রাখতে হবে।
ছাগল ছানার ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া নিয়ন্ত্রণ
[সম্পাদনা]ছাগল ছানা জন্মের ১২-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ই. কোলাই নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পেটের পীড়া রোগ হয়। বাচ্চার জন্মের পরপরই শাল দুধ খাওয়ালে এই রোগ হয় না।
পেটের পীড়ার লক্ষণ:
- সাদা বা হলুদ বর্ণের পাতলা পায়খানা হয়
- মুখ দিয়ে অত্যধিক লালা পড়ে
- বাচ্চার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়
- বাচ্চা নিস্তেজ হয়ে যায়
- শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়
- পেটে গ্যাস জমে যেতে পারে, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়
- সময় মতো চিকিৎসা না করালে ১২-১৪ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চা মারা যায়
ছাগল ছানার পেটের পীড়া হলে একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী এর চিকিৎসা করাতে হবে। দেহের পানি শূন্যতা পূরণের জন্য আক্রান্ত ছাগল ছানাকে ঘন ঘন স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
ছাগল ছানার টিকা প্রদান
[সম্পাদনা]রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে উত্তম। ছাগল ছানার কয়েকটি মারাত্নক রোগ টিকা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। ছাগল ছানার মৃত্যুহার রোধ করতে হলে সময়মত এসব টিকা প্রয়োগ করতে হবে। নিম্নে বিভিন্ন বয়সে ছাগল ছানার টিকার বিবরণ ছক আকারে দেখানো হলো:
টিকার নাম | প্রয়োগের বয়স | ||
---|---|---|---|
১ম ডোজ | ২য় ডোজ | ৩য় ডোজ | |
পিপিআর টিকা | ৪ মাস | — | — |
ক্ষুরারোগ টিকা | ৩ মাস | — | — |
গোট পক্স টিকা | ৫ মাস | — | — |
এন্টারো টক্সিমিয়া টিকা | ৬ মাস | — | — |
কন্টাজিয়াস একথাইমা টিকা | ১-৩ দিন | ১০-১৪ দিন | ৩ মাস |