ছাগল পালন/ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
ছাগলের খাদ্যাভ্যাস
[সম্পাদনা]ছাগল রোমন্থক প্রাণি। গরু মহিষের মতো ছাগলও সেলুলোজ বা আঁশ জাতীয় খাবার হজম করতে পারে। এ ছাড়া ছাগল সংকটকালে নাইট্রোজেন ও পানি অধিকতর ভালোভাবে শরীরের কাজে লাগাতে পারে। প্রাকৃতি দুর্যোগ বা খাদ্যের অভাব হলে ছাগল অত্যন্ত নিম্ন পুষ্টিমানযুক্ত খাদ্য খেতে পারে যা সচরাচর অন্যান্য গৃহপালিত পশু খায় না। এরা সাধারণ বা নিম্নমানের খাদ্য খেয়েই প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। ছাগল সাধারণত কাঁঠাল, আম, কলা, তুত, গামারী, মেহগিনি, বট, বরই, ভুট্টা, সূর্যমুখী প্রভৃতি গাছের পাতা খেয়ে থাকে। এ ছাড়া রাস্তা ঘাটের দুর্ব ঘাস, লতা, গুল্ম, কাটা ঝোপ এবং বাড়ির শাকসবজি ও ফলমূলের উচ্ছিষ্টাংশ ও খোসা খেয়ে ছাগল তার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। ছাগলকে সুস্থ ও সবল রাখতে হলে এবং অধিক উৎপাদন পেতে হলে একে নিয়মিত সুষম খাদ্য খাওয়ানো উচিত। অধিক দুধ ও মাংস এবং উন্নতমানের চামড়া উৎপাদনের জন্য ছাগলকে সম্পূরক দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
খাদ্যের সুস্বাদুতা
[সম্পাদনা]ছাগল অন্যান্য প্রাণির খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। আবার ছাগলের সামনে গাছের ডালপালা ও কাণ্ডসহ পাতা দিলে ছাগল কাণ্ড বাদে শুধু পাতা খেয়ে থাকে। ছাগল সাধারণত বেছে বেছে খাদ্য খেয়ে থাকে। ছাগল মিষ্টি, তিক্ততা এবং টকা স্বাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। এরা তিক্ত স্বাদ বেশি সহ্য করতে পারে। ছাগল লিগুম ফডার বেশি পছন্দ করে। ছাগল শালগম, ভুট্টা, জোয়ার ইত্যাদি কাঁচা ঘাস পছন্দ করলেও সাইলেজ পছন্দ করে না। নিতান্ত বাধ্য না হলে এরা সাইলেজ খেতে চায় না।
খাদ্যের সুষমিকরণ
[সম্পাদনা]বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে, ছাগল দুধ উৎপাদনের জন্য তার ওজন অনুপাতে ৭-৮ ভাগ বেশি খায়। ৪.৫ লিটার দুধ দেয় এমন একটি ছাগলের দৈনিক গড়ে ১.৮ কেজি শুষ্ক বস্তু (ড্রাই ম্যাটার) বিশিষ্ট খাদ্য প্রয়োজন যদিও ঐ ছাগল স্বাধীনভাবে চরে দৈনিক সর্বাধিক ৩.১৮ কেজি পরিমাণ শুষ্ক বস্তু (ড্রাই ম্যাটার) বিশিষ্ট খাদ্য খেয়ে থাকে। ছাগলের দেহের তুলনায় পেটের ক্ষিতি বড় হওয়ায় তার পেট পরিপূর্ণতার দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। পেটের স্ফিতি পূর্ণ করার জন্য দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ছাগলকে সেলুলোজ বা আঁশ জাতীয় খাদ্য খাওয়ানো প্রয়োজন।
ছাগলের ওজন (কেজি) | দৈনিক দানাদার খাদ্য সরবরাহ (গ্রাম) | দৈনিক ঘাস সরবরাহ (কেজি) |
---|---|---|
৪ | ১০০ | ০.৪ |
৬ | ১৫০ | ০.৬ |
৮ | ২০০ | ০.৮ |
১০ | ২৫০ | ১.০ |
১২ | ৩০০ | ১.০ |
১৪ | ৩৫০ | ১.৫ |
>১৮ | ৩৫০ | ২.০ |
খাদ্যের পুষ্টিমান
[সম্পাদনা]বয়স্ক ছাগলের তুলনায় ছাগল ছানার দানাদার খাদ্য মিশ্রণে কম আঁশ, উচ্চ আমিষ ও উচ্চ বিপাকীয় শক্তি থাকতে হবে। ৪-১৫ বয়সী ছাগল (বাড়ন্তকালীন সময়) কে পর্যাপ্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ দানাদার ও আঁশজাতীয় খাদ্য প্রদান করা প্রয়োজন। স্মরণ রাখা দরকার যে, ছাগল খামারের খাদ্য ব্যয় মোট ব্যয়ের ৬০-৭০ ভাগ। তাই খামারের লাভ লোকসান খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ের উপর নির্ভরশীল। দানাদার খাদ্যের মূল্য আঁশ জাতীয় খাবারের চেয়ে বেশি। তাই আঁশ জাতীয় খাবার খেয়ে যত বেশি পুষ্টি চাহিদা মেটানো যাবে তত ব্যয় কমানো যাবে। বিভিন্ন বয়সী ছাগলের দৈনিক খাদ্য সরবরাহের তালিকা উপরে ও নিচের ছকগুলোতে দেখানো হলো।
ছাগীর ওজন (কেজি) | দুধের পরিমাণ | দানাদার খাদ্য (গ্রাম) | ঘাস/পাতা (কেজি) | খড় (গ্রাম) | ভাতের মাড় (কেজি) |
---|---|---|---|---|---|
২০ | ০.৫০ | ৩০০ | ১.৫ | - | ১.০ |
২৫ | ০.৮০ | ৪০০ | ১.৫ | - | ১.২ |
৩০ | ১.০০ | ৪০০ | ২.০ | ৩০০ | ১.৫ |
৩৫ | ১.০০ | ৪০০ | ২.৫ | ৫০০ | ২.০ |
৪০ | ১.০০ | ৪০০ | ২.৫ | ৬৫০ | ২.০ |
বয়স (মাস) | ওজন (কেজি) | ঘাস/পাতা (কেজি) | ইউরিয়া মিশ্রিত খড় (কেজি) | দানাদার খাদ্য (গ্রাম) | ভাতের মাড় (কেজি) |
---|---|---|---|---|---|
৩ | ৬.০ | ০.৪০ | ০.০২ | ১০০ | ৪০০ |
৪ | ৭.৮ | ০.৪৫ | ০.০৫ | ২০০ | |
৫ | ৯.৬ | ০.৫০ | |||
৬ | ১১.৫ | ০.৬০ | ০.১০ | ২৫০ | |
৭ | ১৩.২ | ০.৮০ | ০.১৫ | ||
৮ | ১৫.০ | ১.০০ | ০.২০ | ৩০০ | |
৯ | ১৬.৮ | ১.০০ | |||
১০ | ১৮.৬ | ১.২০ | |||
১১ | ২০.৫ | ১.৩০ | |||
১২ | ২২.২ | ১.৩০ | |||
১৩ | ২৪.০ | ১.৫০ | |||
১৪ | ২৫.৮ | ১.৬০ | |||
১৫ | ২৬.৫ | ১.৮০ |
খাদ্যের উপাদান | বাচ্চা ছাগলের খাদ্য | বড় ছাগলের খাদ্য |
---|---|---|
ছোলা ভাঙা | ২০ ভাগ | ১৫ ভাগ |
গম ভাঙা | ২০ ভাগ | ৩৫ ভাগ |
তিলের খৈল | ৩৫ ভাগ | ২৫ ভাগ |
গমের ভূষি | ২০ ভাগ | ২০ ভাগ |
খনিজ মিশ্রণ | ০৪ ভাগ | ০৪ ভাগ |
লবণ | ০১ ভাগ | ০১ ভাগ |
মোট | ১০০ ভাগ | ১০০ ভাগ |