বিষয়বস্তুতে চলুন

চীনের ইতিহাস/সিয়া রাজবংশ

উইকিবই থেকে

সিয়া রাজবংশ (夏朝) ছিল চীনের ইতিহাসে প্রথম রাজবংশ। সিয়া রাজবংশ প্রায় ৫০০ বছর স্থায়ী ছিল। খ্রীষ্টপুর্ব একবিংশ শতাব্দি থেকে খ্রীষ্টপুর্ব ষোড়শ শতাব্দি পর্যন্ত সিয়া রাজবংশ রাজত্ব ছিল। সিয়া রাজবংশের ১৪টি প্রজন্মের মধ্যে ১৭জন রাজা সিংহাসনে বসে ছিলেন। বর্তমান চীনের সানসি প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও হোনান প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল ছিল সিয়া রাজবংশের প্রধান শাসনাধীন অঞ্চল। সিয়া রাজবংশের প্রথম সম্রাট দা ইয়ু একজন ঐতিহাসিক বীর ছিলেন। চীনারা বিশ্বাস করে যে, তিনি হোয়াংহো নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য অর্জন করে উপজাতিদের সমর্থন পেয়েছিলেন এবং অবশেষে সিয়া রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।ব্যক্তি-মালিকানাধীন সমাজ যে দীর্ঘস্থায়ী আদিম সমাজের স্থলাভিষিক্ত হয়। এরপর চীনে দাস সমাজ চালু করে। সিয়া রাজবংশের শেষভাগে রাজপরিবারে রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করে। বিশেষ করে সিয়া রাজবংশের শেষ রাজা সিয়াজিয়ে সিংহাসনে বসার পর থেকে অতি বিলাসী জীবন যাপন করতেন। প্রতিদিন তাঁর আদুরে রক্ষিতাদের সঙ্গে মদ খেতে খেতে আনন্দ-ফুর্তি করতেন। তিনি রাজকীয়কার্যে মনোযোগ দিতেন না এবং প্রজাদের দু:খ দুর্দশার উপর নজর ছিলনা। তিনি ছিলেন অহংকারী, নিষ্ঠুর। মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ রাজ্যের শাসনে মন দেওয়ার কথার বললে সিয়াজিয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন। এই কারণে চীনে ছোট ছোট রাজ্য পর পর বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সাং নামক একটি ছোট রাজ্য এর সুযোগ নিয়ে সিয়াজিয়ের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায় এবং অবশেষে সিয়াজিয়ের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে। রাজা সিয়াজিয়ে রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যান এবং সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই সঙ্গে সিয়া রাজত্ব পতন ঘটে। সিয়া রাজবংশ সম্পর্কিত ঐতিহাসিক তথ্য অপ্রতুল বলে ইতিহাসে সিয়া রাজবংশের অস্তিত্ব নিয়েই চীনের জ্ঞানী পণ্ডিতদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু চীনের ঐতিহাসিক গ্রন্থ এ স্পষ্ট ভাষায় সিয়া রাজবংশের কুলজী বর্ণনা করা হয়েছে। ১৯৫৯ সালে চীনের সিয়া সুতেযে খনন কাজ আরম্ভ হয় , তাতে সিয়া সংস্কৃতি সন্ধানের সুত্রপাত ঘটে। বর্তমানে চীনের অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন যে, হো নান প্রদেশের ইয়ান শির “ এর লি থৌ” ধ্বংশাবশেষে সিয়া রাজত্বকালের সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে ,আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ১৯০০ সালে “ এর লি থৌ” সংস্কৃতির জন্ম এবং তা সিয়া-অব্দে পড়ে। “ এর লি থৌ” সংস্কৃতি যে সিয়া রাজত্বকালের সংস্কৃতির অংশ বিশেষ তার আসল প্রমান পাওয়া না যায় নি। “ এর লি থৌ” ধ্বংসাবশেষ থেকে উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হাতিয়ার পাওয়া গিয়েছে। এই হাতিয়ারগুলোর বেশীর ভাগ পাথর দিয়ে তৈরী। তবে হাড় ও ঝিনুকের খোল দিয়ে তৈরী হাতিয়ার পাওয়া গেছে। কিছু বাড়ির ভিত ,খাদ ও কবরের প্রাচীরে কাঠের কৃষিযন্ত্র দিয়ে মাটি খোঁড়ার চিহ্ন দৃষ্ট। তখনকার পরিশ্রমী মানুষ এই সব সহজ হাতিয়ার ব্যবহার করে জলসেচ আর কৃষি উত্পাদনে কঠোর পরিশ্রম ও বিজ্ঞতার পরিচয় রেখা দিয়েছিল। সিয়া রাজবংশের শাসনামলে তৈরী বড় তামার যন্ত্র এখনো আবিস্কৃত হয় নি , কিন্তু “ এর লি থৌ” ধ্বংসাবশেষ থেকে তামার চাকু, কুড়ালি , বাটালি , তীর,অস্ত্র আর পেয়ালা পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া মৃত পাত্র, তামার গুঁড়ো আর মুচির টুকরো, অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের জেড পাথরের পাত্র , সবুজ বল খোদিত অলংকার এবং পাথরের বাদ্যযন্ত্রও পাওয়া গিয়েছে। “তা তাই লি জি” নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থে সিয়া রাজত্বকালের যে পঞ্জিকা উল্লেখ করা হয়েছে , তা থেকে বোঝা যায় যে, তখনকার মানুষ ধ্রুব তারার অবস্থান অনুসারে এক এক মাস নির্ণয় করতে পারতেন। এটি চীনের প্রাচীনতম পঞ্জিকা। এই পঞ্জিকায় বারো মাসের প্রতিটি মাসে, তারকাপুঞ্জের অবস্থান, আবহাওয়া, উদ্ভিদ এবং করণীয় কৃষিকাজ আর রাজনৈতিক কাজকর্ম বিবৃত হয়েছে।