বিষয়বস্তুতে চলুন

চীনের ইতিহাস/সাং রাজবংশ

উইকিবই থেকে

চীনের অধিকাংশ পন্ডিতেরা সিয়া রাজবংশকে চীনের প্রাচীনতম রাজবংশ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু সিয়া রাজবংশ সম্পর্কিত ঐতিহাসিক তথ্য এর বেশির ভাগ পরবর্তী যুগের দলিল থেকে সংগৃহীত। এখনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান পাওয়া যায় নি। সাং রাজবংশই প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যের উপর নির্ভর করে প্রমানিত চীনের প্রাচীনকালের প্রথম রাজবংশ। সাং রাজবংশ আনুমানিক খ্রীষ্টপুর্ব ষোড়শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং খ্রীষ্টপুর্ব একাদশ শতাব্দীতে এদের পতন ঘটে। সাং রাজবংশের শাসন প্রায় ছয় শো বছর স্থায়ী ছিল। সাং রাজত্বকালের প্রথম যুগে রাজধানী একাধিকবার স্থানান্তরিত হয়। অবশেষে রাজধানী ইনশু (বর্তমান হোনান প্রদেশের আনইয়াং শহরের কাছে ) স্থানান্তরিত করা হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদদের খননকাজে প্রাপ্ত পুরাকীর্তি থেকে প্রমান পাওয়া গেছে যে , সাং রাজত্বকালের প্রথম যুগে চীনের সভ্যতা বেশ উন্নত ছিল। কচ্ছপের খোলের উপরে খোদিত চীনা শব্দ এবং তামার পাত্রের উপরে খোদিত চীনা শব্দ তদানীন্দন চীনা সভ্যতার প্রধান নিদর্শন। চীনা শব্দ সংবলিত কচ্ছপের খোলের আবিস্কার একটি দৈব ব্যাপার। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে হোনান প্রদেশের আন ইয়াং শহরের উত্তর পশ্চিম দিকে সিয়া তুন গ্রামের কৃষকরা কুড়িয়ে আনা কচ্ছপের খোল ও বন্যপশুর হাড় চীনা ভেষজ ওষুধ হিসেবে হাট-বাজারে বিক্রি করেন। একজন পন্ডিত টের পান , কচ্ছপের খোল ও বন্যপশুর হাড়ের উপরে প্রাচীনকালের শব্দ খোদিত আছে। এর পর বিস্তীর্ন অঞ্চলে খননকাজ শুরু হয়। এরপর চীনের প্রাচীনকালের ভাষা বিষযক বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে , কচ্ছপের খোল ও বন্যপশুর হাড়ের উপরে খোদিত শব্দগুলো সাং রাজত্বকালের ব্যবহৃত শব্দ। এরপর তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নেন যে,সিয়া তুন গ্রামই প্রাচীন গ্রন্থে উল্লেখিত সাং রাজবংশের রাজধানী ইনশু। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে খননকাজ শুরু হওয়ার পর সেখানে চীনা শব্দ সংবলিত কচ্ছপের খোল ও তামার জিনিষপত্র সহ প্রচুর মুল্যবান পুরাকীর্তি আবিস্কৃত হয়েছে। সাং রাজত্বকালে রাজা কোনো কাজ করার আগে ভাগ্যপরীক্ষা করতেন। কচ্ছপের খোল ছিল তাদের ভাগ্যপরীক্ষার হাতিয়ার। কচ্ছপের খোল ব্যবহারের আগে খোলে লেগে থাকা কচ্ছপের রক্ তমাংস সাফ করতে হবে এবং ঘষে মসৃন করে নিতে হবে। অত:পর ছুরি দিয়ে কচ্ছপের খোল বা বন্যপশুর হাড়ে মিয়মমাফিক অবতল কাটতে হবে। জ্যোতিষী বা ইন্দ্রজালিক নিজের নাম,গননার তারিখ ও প্রশ্ন কচ্ছপের খোলে খোদাই করার পর আগুন দিয়ে কচ্ছপের খোলের অবতল সেঁকে দিতেন। তপ্ত অবতল ফেটে যে ফাটল দেখা দেয় তাকে লক্ষণ বলা হয়। ইন্দ্রজালিক ফাটলের আকৃতি বিচার বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতবাণী করেন। ভবিষ্যতবাণী সফল হয় কিনা তাও কচ্ছপের খোলে খোদাই করা হয়। ভবিষ্যতবাণী সফল হলে কচ্ছপের খোল সরকারি দলিল হিসেবে সংরক্ষণ করা হত। ইনশু থেকে এক লক্ষ ষাট হাজার কচ্ছপের খোল পাওয়া গেছে। এগুলের মধ্যে কোন কোন খোল অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে কোন কোন খোলের উপরে কোনো শব্দ খোদাই করা হয় নি। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী আবিস্কৃত কচ্ছপের খোলগুলোর উপরে চার হাজারেরও বেশি শব্দ খোদাই করা হয়েছে।বচীনের পন্ডিতরা প্রায় তিন হাজার শব্দ নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এক হাজারেরও বেশি শব্দের অর্থবুঝতে পেরেছেন। বাকী শব্দগুলোর অর্থ হয় বোধগম্যনয় ,নয় এদের অর্থ নিয়ে পন্ডিতদেরমধ্যে বিরাট মতববিরোধ রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই এক হাজারেরও বেশি শব্দের অর্থ বুঝলে সাং রাজত্বকালের রাজনীতি, অর্থনীতি , সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রের অবস্থা মোটামুটি জানা যাবে। ১৯১৩ সালে কচ্ছপের খোলগুলোর উপরে খোদিত শব্দ সম্বন্ধে পন্ডিত লিউ এ থিয়ে ইয়ুন জানগুই নামে চীনের প্রথম গবেষণা-গ্রন্থ প্রকাশ করেন। চীনের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক কু মো রো ১৯২৯ সালে কচ্ছপের খোলগুলোর উপরে খোদিত শব্দের গবেষণা নামে যে পুস্তক প্রকাশ করেন। বর্তমানে কচ্ছপের খোলগুলোর উপরে খোদিত শব্দের গবেষনার ক্ষেত্রে সর্বজনস্বীকৃত দুজন প্রতিষ্ঠিত পন্ডিত হচ্ছেন পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিউ সি গুই ও চীনের ইতিহাস গবেষণাগারের অধ্যাপক লি সিয়ে জিন। কচ্ছপের খোলগুলোর উপরে খোদিত শব্দের মত তামার বাসনও সাং রাজত্বকালের প্রতিনিধিত্বকারী জিনিস। তখনকার তামার বাসন তৈরীর প্রযুক্তি বেশ উন্নত ছিল। ইনশু থেকে যে কয়েক হাজার তামার জিনিস আবিস্কৃত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ১৯৩৯ সালে আবিস্কৃত দু’ কর্ণ আর তিন পদ বিশিষ্ট রন্ধনপাত্রটি চীনের প্রাচীন তামার জিনিস বিষয়ক সংস্কৃতির শীর্ষযুগের অন্যতম প্রতিনিধিত্বকারী কীর্তি। রন্ধনপাত্রটি ১৩৩ সেন্টিমিটার উঁচু ,১১০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৭৮ সেন্টিমিটার চওড়া। এর ওজন ৮৭৫ কিলোগ্রাম।