গোষ্ঠী ও দল পরিচালনা/বৈচিত্র্য
বৈচিত্র্য কি?
[সম্পাদনা]দল বৈচিত্র্য হলো একটি দলের প্রতিটি ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য স্বতন্ত্রতা। এর মধ্যে শুধুমাত্র ধর্ম, লিঙ্গ, বয়স এবং জাতি হিসাবে সাধারণ বৈচিত্র্যপূর্ণ নির্বাচনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক নয়, অতিরিক্ত অনন্য ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি যেমন অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী, উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই সমস্ত পার্থক্য দলের মিথস্ক্রিয়া এবং কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে সমস্ত পার্থক্যই দলের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে না। এই অধ্যায়ের উদ্দেশ্যে হলো সেইসব পার্থক্যগুলি নিয়ে আলোচনা করা, যেগুলি দলের বৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করে বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে সেগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে দলের কর্মক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে।
কিভাবে বিভিন্ন দল সমজাতীয় দলগুলির থেকে আলাদা?
[সম্পাদনা]বৈচিত্র্য তৈরি করে এমন প্রকৃত পার্থক্যগুলি ছাড়াও, বৈচিত্র্যময় দলগুলির সমজাতীয়দের তুলনায় বিভিন্ন ধরনের বাধা, সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। তবে প্রধান সুবিধা হলো যে একটি বৈচিত্র্যময় পটভূমি একটি সৃজনশীল পরিবেশকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। আবার প্রধান সমস্যা হলো যে দলের সদস্যদের মধ্যে পার্থক্য থাকলে সেটি ধ্বংসাত্মক সহিংসতার রূপ নিতে পারে।
যে পার্থক্যগুলিকে সাধারণত সমজাতীয় দলগুলি থেকে বিভিন্ন দলকে আলাদা করার কথা ভাবা হয় সেগুলির মধ্যে সহজেই গতানুগতিকতার ভাব লক্ষ্য করা যায়। নিম্নলিখিত তালিকাটি গঠন এবং সামাজিক পার্থক্যগুলিকে (প্রকৃত কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা ছাড়া) শ্রেণীবদ্ধ করে যা প্রায়শই একটি বৈচিত্র্যময় পরিবেশ তৈরি করে থাকে:
- লিঙ্গ
- লিঙ্গ যোগাযোগের সমস্যাগুলি দলের মিথস্ক্রিয়াকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। লিঙ্গ যোগাযোগের সমস্যাগুলি যোগাযোগের শৈলী এবং উপলব্ধি, সুযোগ থেকে শুরু করে এমনকি যৌন হয়রানি পর্যন্ত হতে পারে।
- বর্ণ
- বর্ণ বলতে বোঝায় শারীরিক ও সামাজিক গুণের মিল অনুযায়ী মানুষের শ্রেণীবিভাগকে। এটি সংজ্ঞায়িত করা হয় মানুষের একটি গোষ্ঠী হিসাবে, প্রায়শই একটি সাধারণ ভৌগলিক উৎস যা শারীরিক গঠনের মিল ও বৈশিষ্ট্যগুলি অনুযায়ী এই বর্ণ বিভাজন করে। বর্ণবাদ হলো সেই বিশ্বাস যা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলি একজন ব্যক্তির আচরণ বা ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
- সাংস্কৃতি
- সংস্কৃতি বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে সামাজিক মান এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে অভিব্যক্তি প্রকাশ। সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি যোগাযোগ বা পরিবারের বিভিন্ন বোঝাপড়ার মাধ্যমে দলের আদান-প্রদানকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার জন্য একটি অজুহাত হতে পারে।
- বয়স
- বয়স সমগ্র জাতি ও বর্ণ বরাবর একটি উদ্বেগ হতে পারে। একটি কাজ করার জন্য কেউ কি খুব কম বয়সী বা খুব বয়স্ক হতে পারে। বয়সের ফারাকের জন্য অভিজ্ঞতারও বিভিন্ন স্তর হয়। আর অভিজ্ঞতার বিভিন্ন স্তরের উপর ভিত্তি করে যোগাযোগের সমস্যার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এছাড়া বয়স কুসংস্কারমূলক সম্ভাবনাও তৈরি করে।
- যৌন অভিমুখীতা
- লেসবিয়ান, গে, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডারের মতো লিঙ্গ সংখ্যালঘুদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে সাথে কর্মক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ছে। লিঙ্গ পার্থক্য না বোঝার জন্য নৈতিকভাবে তাদের বিরোধিতা করা হয়। যৌন অভিমুখীতা উৎপাদনশীল দলের আদান-প্রদানে বাধা তৈরি করতে পারে।
- অক্ষমতা
- ক্ষমতার পার্থক্য প্রায়ই যোগাযোগ এবং মানসিক মিথস্ক্রিয়াতে অসুবিধার সৃষ্টি করে। একজন বধির ব্যক্তি শ্রবণশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে না পারা, বা একজন শ্রবণকারী ব্যক্তি ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেন না কীভাবে একজন বধির ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করবেন। প্রতিবন্ধীরা দলগত প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সমস্যা উপস্থাপন করে।
সংজ্ঞা অনুসারে, বৈচিত্র্যের অর্থ হলো একটি বৃহত্তর পরিসরে বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে এমন মতামতও রয়েছে যা দল এবং এর সংস্কৃতির ব্যাপকভাবে স্বীকৃত মতামতকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এই বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গির অস্তিত্ব সাংগঠনিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। উপরন্তু, যেহেতু দলগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে বিশ্বব্যাপী হয়ে উঠছে তাই বৈচিত্র্য একটি সংস্থা বা দলকে তার আশেপাশে তার অবস্থান বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
বিভিন্ন দলের পরিবেশের মধ্যে থাকা অন্তর্নিহিত পার্থক্যগুলিও চ্যালেঞ্জের কারণ হয়। বিভিন্ন পটভূমিতে থাকার সুবিধাগুলির সাফল্য ঘটে না যতক্ষণ না দলের সদস্যদের সাফল্যের জন্য নিবেদিত একটি সাধারণ লক্ষ্য থাকে। মানুষের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে পূর্বকল্পিত ধারণাগুলি যেমন বর্ণবাদ, লিঙ্গবাদ, বয়সবাদ, হোমোফোবিয়া ইত্যাদির মতো ধারণা কাজের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এইসব ধারণা দলগুলিকে তাদের লক্ষ্য অর্জনে বাধা দিতে পারে। মৌলিক সাংস্কৃতিক পার্থক্য, যোগাযোগের ধরন বা কাজের মনোভাব থেকেও সাধারণ ভুল বোঝাবুঝি দেখা দিতে পারে এবং চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
দলের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকার সুবিধা রয়েছে। এটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যাইহোক, এই চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সচেতন হয়ে এবং কীভাবে তাদের মোকাবেলা করা যায় সেই বিষয়ে অবহিত হলে দল এবং দলের ম্যানেজাররা সেগুলি অতিক্রম করতে এবং সাফল্যে পৌঁছাতে পারে।
দলগত সম্পর্ক
[সম্পাদনা]আজকের চাকরির বাজারে, নেতাদের অবশ্যই বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে এবং কীভাবে এটি সর্বোত্তমভাবে পরিচালনা করা যায় তাও ভাবতে হবে। নেতারা কিভাবে এটা করতে পারেন? প্রথমে তাদের প্রতিটি ব্যক্তির সাথে ন্যায্য এবং সম্মানের সাথে আচরণ করার দিকে মনোনিবেশ করা দরকার। ব্ল্যাক এন্টারপ্রাইজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত "হ্যান্ডলিং কনফ্লিক্ট ইন এ ডাইভার্স ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট"[১], প্রবন্ধে মার্সিয়া প্লেজার নিম্নলিখিত পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রথমত, নেতাদের তাদের কর্মীদের সাথে আস্থার সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। যদি একজন কর্মচারী তার নেতাকে বিশ্বাস না করে, তাহলে তারা প্রকৃত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারবে না। এরফলে নেতা এবং কর্মচারীর মধ্যে সর্বদা একটি প্রাচীর তৈরি হবে যার ফলে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পস সংস্থা ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। এই সমস্যার সমাধানে, মেরিন কর্পস "টিম মেরিন" শিরোনামে একটি নতুন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করে যা মেরিন নেতৃত্বকে তাদের অধীনস্থরা তাদের দলে কী নিয়ে এসেছে তার উপর চিন্তা করতে সাহায্য করে। মেরিন কর্পস সংস্থায় অন্তর্গত হওয়া মানে কি তা নিয়ে নেতৃত্বরা প্রত্যাশার একটি গুচ্ছ তৈরি করেন:
- আমরা সক্রিয়ভাবে দলে অবদান রাখার এবং আমাদের অবদানের জন্য স্বীকৃত হওয়ার প্রত্যাশা করি।
- আমরা আশা করি ন্যায্যভাবে আমাদের অবদান বিচার করা হবে এবং আমাদের কর্মক্ষমতার জন্য স্বীকৃত ও পুরস্কৃত হব।
- আমরা আমাদের ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ আশা করি।
- আমরা আশা করি যে আমাদের দলের অন্যান্য সদস্যরা পেশাদার এবং সম্মানের সাথে আচরণ করবে।
- আমরা অনন্য ব্যক্তি হিসাবে মূল্যবান আশা করি।
নীতির এই এক গুচ্ছ প্রত্যাশা অনুসরণ করে মেরিন কর্পস বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় কর্মশক্তিগুলির মধ্যে একটি সংস্থা হয়ে ওঠে। তারা অবদানকারী ব্যক্তিদের একটি সাধারণ লক্ষ্যে তাদের একীভূত করেতেও সক্ষম হয়।
নেতাদের তাদের কর্মীদের কাছ থেকে মতামত চাইতে হবে কিভাবে তারা পরিচালনা করতে পছন্দ করে। "ডিলিং উইথ দ্য নিউ ডাইভারসিটি"[২] নামক নিবন্ধে, লেখক মাইকেল ম্যাকোবি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির গল্প বর্ণনা করেছেন যেটির ফলাফল ছিল একটি জার্মান, সুইস এবং সুইডিশ ফার্মের মধ্যে একীভূতকরণ। সেখানে দেখা যায় প্রতিটি মূল কোম্পানির মধ্যে তাদের মূল দেশের উপর ভিত্তি করে পরিচালনার শৈলী আলাদা। এটি অনেক সমস্যার দিকে পরিচালিত করে কারণ সেখানে এক দেশের প্রকৌশলীদের অন্য দেশের নেতাদের অধীনে কাজ করতে বলা হয়েছিল। তারা তাদের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা না করা পর্যন্ত এবং পুরো কোম্পানির জন্য একটি সাধারণ ব্যবস্থাপনা শৈলী নির্ধারণ করতে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটি তাদের সেরা কাজ করতে সক্ষম হয়নি।
নেতাদের একটি সাধারণ লক্ষ্য গড়ে তুলতে হবে। বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারে যে তারা সবাই আলাদা। তাই হাতে থাকা কাজের উপর লক্ষ্য রেখে নেতারা উপস্থিত পার্থক্যগুলিকে দূরে সরিয়ে নিতে পারেন। দলগুলি সফল ফলাফল অর্জন করার সাথে সাথে তারা একটি বন্ধন তৈরি করে যা দলকে দৃঢ় করতে এবং পার্থক্যগুলি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে।
দলের গঠন
[সম্পাদনা]যেকোনো দলের মতো একটি বৈচিত্র্যময় দলে যোগাযোগ উন্মুক্ত এবং নিরাপদ হওয়া প্রয়োজন। এই নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব হলো দল নেতাদের। দল নেতাদের উচিত অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আস্থা জাগানো যে, তারা যা ভাবছে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে অন্তত "যতক্ষণ পর্যন্ত আলোচনা সম্মানের সাথে করা যায়।"[৩]
একটি "উন্মুক্ত এবং নিরাপদ" আলোচনা শুরু হওয়ার আগে আচরণ সম্পর্কে একমত হওয়া উচিত যাতে সমস্ত সদস্যরা বুঝতে পারে দল তাদের থেকে কী আশা করে এবং কীভাবে সম্মান রক্ষা করা যায়। এটি একটি দলগত চুক্তির মাধ্যমে করা যেতে পারে। দলগত চুক্তি একটি সম্মত নথি যাতে যোগাযোগ করার নিয়ম এবং চুক্তিতে না থাকার পরিণতিগুলির একটি রূপরেখা দেওয়া থাকে।
চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এমন একটি উপায়ের উপর একটি সম্মত হওয়া দরকার যাতে সদস্যরা সম্মানের সাথে চুক্তির অংশ মেনে চলে না এমন কাউকে থামাতে এবং কথোপকথনটি সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় কাজগুলির দিকে পুনঃনির্দেশিত করতে পারে। দলের যে কেউ চুক্তির নিয়মগুলি প্রয়োগ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা উচিত এবং আলোচনা সম্মানজনক থাকা নিশ্চিত করা উচিত।
একটি বৈচিত্র্যময় দলে কাজ করার সময় এমন সমস্যা হতে পারে যেগুলি আলোচনা করা কঠিন, তবুও কাজের সাথে এটি প্রাসঙ্গিক। যদি দল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি এড়িয়ে যায় তবে দলের নেতার সমস্যাগুলি সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কিছু বিবৃতি আপনাকে কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে তবে সেটির সমাধান হওয়া দরকার৷[৪] এটি করার মাধ্যমে বিষয়টি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পাবে, যখন বিষয়টি নিয়ে সম্মানজনকভাবে আলোকপাত করা হবে।
ব্যক্তি কোন ক্রিয়ার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটি অনেকাংশেই তার সংস্কৃতি এবং জীবনের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। যদি একটি উন্মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা হয় তবে এই সমস্যাগুলিকে উত্থাপন এবং পরীক্ষা করা যেতে পারে যাতে একজন ব্যক্তিকে সম্মানজনক এবং সর্বোত্তমভাবে মোকাবেলা করা যায়।[৫] সাংস্কৃতিক নিয়মকে সম্মান না করা হলে এর সম্ভাব্য পরিণতি হিসাবে একটি কম কার্যকর দলের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।[৬]
বৈচিত্র্যের সমস্যাগুলিকে সর্বোত্তমভাবে মোকাবেলা করার জন্য একটি দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপদ এবং উন্মুক্ত যোগাযোগের অনুমতি দেওয়া। এই প্রক্রিয়াটি সম্মানজনকভাবে করা যেতে পারে। একটি দলগত চুক্তি এই ধরনের আলোচনার জন্য নিয়মাবলী তৈরি করার একটি চমৎকার উপায়। বিশেষ করে যখন বৈচিত্র্য সম্পর্কিত সংবেদনশীল বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করা হয়। প্রত্যেক ব্যক্তি ও সেইসাথে উপস্থিত সমস্ত দলের সদস্যদের চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলার জন্য দায়ী।
বৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]একজন দলের নেতাকে বৈচিত্র্য বিষয়টিকে অবশ্যই অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য হিসাবে ভাবতে হবে, কেবল জাতি এবং লিঙ্গ হিসাবে নয়। একজন নেতাকে প্রতিটি দলের সদস্যের বৈচিত্র্যকে চিনতে হবে। কোনো ব্যক্তির স্বতন্ত্রতা যাতে নষ্ট না করে এমন সাধারণ লক্ষ্যগুলির ঐক্য অর্জন করতে হবে। দলের নেতাকে অবশ্যই দলের সদস্যের বৃদ্ধির সাপেক্ষে এবং সংস্থার সংস্থানের সুযোগের মধ্যে এটি করতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে বেশিরভাগ সমস্যা এমন নয় যে লোকেরা তাদের কাজ করতে পারে না। বরং এটা হলো যে মানুষ অন্যদের সাথে মিশতে পারে না। দলনেতাকে কার্যকরভাবে সফট স্কিল বা আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা প্রশিক্ষণের জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। এতে বৈচিত্র্য, যোগাযোগ এবং মানুষের দক্ষতার মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে যা লোকেদের একে অপরকে বুঝতে এবং ভাল করে দলের দক্ষতা বিকাশ করতে সাহায্য করে। দলের প্রতিটি সদস্য অবশ্যই দলের অন্যান্য সমস্ত সদস্যদেরকে বুঝতে এবং একসাথে কাজ করতে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করা একটি সত্যিকারের বৈচিত্র্যময় দল পরিচালনার প্রথম ধাপ। আর এটি সহজতর করার জন্য, দলের নেতাদের নিম্নলিখিত বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
- এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলুন যেখানে সমস্ত কর্মচারী যে কোন রকম সাহায্য চাওয়াকে নিরাপদ মনে করবে। লোকেরা সাহায্য চাইলে তাদের দুর্বল হিসাবে দেখা উচিত নয়। একটি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য শক্তির সাথে দুর্বলের যোগ দেওয়া দুর্দান্ত দল গঠনের একটি দিক। একজনের দুর্বলতা অন্য ব্যক্তির শক্তি হওয়া উচিত।
- একটি বিস্তৃত চিত্র বিকাশের জন্য বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং পটভূমির লোকেদের কাছ থেকে সক্রিয়ভাবে তথ্য সন্ধান করুন।
- সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করুন।
- লাঞ্চ, কফি বিরতি এবং কোন মুহূর্তকে মনে রাখার মতো অনানুষ্ঠানিক সমাবেশে আপনার সমকক্ষ নয় এমন ভিন্ন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
- একটি দলগত মনোভাব তৈরি করুন যেখানে প্রতিটি সদস্য যেন নিজেকে দলের অংশ হিসাবে অনুভব করে।
একজন দলের নেতা দলের অন্য সদস্যদের কাজ বন্টনের ক্ষমতার মধ্যে উদ্ভাবনী এবং স্ব-নির্দেশিত হতে সক্ষম হবার প্রেরণা দেয়। তারা যেন স্বতন্ত্রভাবে নিজের চেষ্টায় থেকে শিখতে পারে। সেইসাথে অন্যদের সাফল্য, ভুল এবং ব্যর্থতা থেকেও তারা যেন শেখে। এটা নিশ্চিত করা জরুরী যে দলের প্রতিটি ব্যক্তির কাজের ধরণের উপর ভর করে দলের সাফল্যে সর্বাধিক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। দলে প্রতিটি ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা এবং কৃতিত্বের সর্বাধিক সুযোগ রয়েছে।
দলের অন্যান্য সদস্যদের বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সদস্যদের বিভিন্ন ক্ষমতা এবং দক্ষতা ব্যবহার করার কাজটি নেতাদের রয়েছে। এর জন্য নেতাদের সক্রিয় ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন যাতে বিভিন্ন অনুসারীরা বিভিন্ন উপায়ে বা অন্যভাবে ভিন্ন অনুগামীদের সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা দেখায়।
যদি দলের সদস্যরা অন্যদের গ্রহণ না করে, তবে তারা তাদের নিজেদের দুর্বল ক্ষেত্রগুলি পূরণ করতে দলের সদস্যের ক্ষমতা ব্যবহার করতে অক্ষম হবে। সেক্ষেত্রে দলের প্রচেষ্টায় জ্ঞান এবং দক্ষতার ফাঁক তৈরি হয় যা প্রায়ই ব্যর্থতার দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। এইসব ক্ষেত্রে দল এবং সংস্থার চাহিদা উপেক্ষা করে তাদের একমাত্র লক্ষ্য ব্যক্তিগত এজেন্ডায় পরিণত হয়। বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা হলে দলের সদস্যদের কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। তখন তারা অনুধাবন করে যে সেরা হতে গেলে বিভিন্ন লোকের প্রয়োজন হয়। এই ধরনের পরিবেশ দলের মধ্যে প্রত্যেকে প্রত্যেকের উপর নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তি যতই আলাদা হোক না কেন। এই বৈশিষ্ট্য এবং অভিজ্ঞতা একজন কর্মীকে অনন্য করে তোলে। বৈচিত্র্য তখনই ঘটে যখন পুরো দল এই সমস্ত অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি ঠিকমত দেখে। তখন বোঝা যায় যে দলের সদস্যরা তাদের পার্থক্যের কারণেই আরও মূল্যবান।
বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাস
[সম্পাদনা]বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাসগুলি এমন হয় যে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্য একই বৈশিষ্ট্যগুলি ভাগ করে এবং একইভাবে আচরণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাসগুলি অবার শ্রেণীবিভাগ তৈরি করে এবং তারপর সেই শ্রেণীবিভাগের মধ্যে ব্যক্তিদের স্থান দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, বর্তমান পরিবেশের সাথে এটি একটি দরকারী অভিযোজন। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে, এমন সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে যা মানুষের বোঝার জন্য এবং একটি দলের গতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর। ব্যক্তিরা কখনই একটি সঠিক বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। তার কারণ হলো, একটি গোষ্ঠীতে স্বতন্ত্র পার্থক্যগুলি অন্যদের সাথে সাদৃশ্যকে ছাড়িয়ে যায়। পরবর্তীকালে, একটি দলের লোকেরা তাদের মিথস্ক্রিয়া পরিচালনার জন্য সীমিত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা অন্যদের উপলব্ধি ব্যবহার করতে পারে। বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাসগুলি লিঙ্গ, জাতি, ভাষা, অর্থ, ধর্ম এবং যৌন পছন্দ সহ বিভিন্ন যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
প্রায়শই লোকেরা বিশ্বাস করে যে ব্যবসায় পুরুষরা ভাল নেতা, কম্পিউটার বোঝে, অসংগঠিত, সমস্যা সমাধানকারী ইত্যাদি। মহিলারা প্রায়ই সংগঠিত, হিসাবরক্ষক এবং সম্পর্ক-ভিত্তিক হিসাবে বিবেচিত হয়। উপরন্তু, কিছু পেশা আছে যেগুলো বেশি বাঁধাধরা ধারণা থেকে পুরুষেরা করে থাকে। অন্যদিকে আবার কিছু বেশি বাঁধাধরা পেশা আছে সেগুলিতে নারীরা এগিয়ে থাকেন। অফিসের সেক্রেটারির পদটি সাধারণত মহিলাদের বলে মনে করা হয়। মহিলাদের আবার নার্স, বিমান সেবিকা এবং প্রায়শই অন্যান্য সহায়ক ভূমিকায় দেখা যায়। অন্যদিকে পরিচালক, ডাক্তার এবং পাইলটদের চাকরি সাধারণত পুরুষদের বলে মনে করা হয়। যদি একজন মহিলা কর্তৃত্বের আসনে থাকে তার কাজগুলিকে প্রায়শই তার পুরুষ প্রতিপক্ষের চেয়ে অযৌক্তিক বা নির্দয় বলে সমালোচনা করা হয়। এটি কখনই কাম্য নয়। পরিচালকবর্গরা পুরুষ ও মহিলা উভয় লিঙ্গের কর্মীদের নেতৃত্বের সুযোগ দিয়ে এই ধরনের বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাস এড়াতে পারেন।
বর্ণবাদ হলো আরেকটি ক্ষেত্র যেখানে বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাস সহজেই একটি শ্রেণীর গতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু বর্ণ উচ্চ সম্পাদনকারী হিসাবে বিবেচিত হয় হলেও অন্যান্য অনেক বর্ণের মধ্যে অনুপ্রেরণার অভাব দেখা যায়। এশিয়দেশ বা ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের প্রায়শই পরিশ্রমী, বুদ্ধিমান এবং প্রযুক্তিগত হিসাবে দেখা হয়। অন্যদিকে পলিনেশীয়, আমেরিকান ভারতীয় এবং হিস্পানিক বংশোদ্ভূতদের প্রায়শই অলস এবং কখনও কখনও গড় বুদ্ধিমত্তার নিচে দেখা হয়। আফ্রিকান আমেরিকান কর্মীদের মাঝে মাঝে তাদের এশীয় সমবয়সীদের তুলনায় দ্বন্দ্বমূলক এবং আক্রমণাত্মক বলে মনে করা হয়। ভাষার বাধাও বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাসের জন্য অনুঘটক হতে পারে। আমেরিকায় যে ব্যক্তি এখনও ইংরেজি ভাষার উপর সম্পূর্ণ জ্ঞান রাখেন না তাকে প্রায়শই বুদ্ধিহীন বা নিকৃষ্ট হিসাবে দেখা হয়। যদিও প্রকৃতপক্ষে তারা উচ্চ প্রশিক্ষিত বা দক্ষ কর্মীও হতে পারে। পরিচালকবর্গদের উচিত সমস্ত দলের সদস্যদের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করা এবং তারা যে বর্ণের অন্তর্গত তা অনুভূত হওয়ার পরিবর্তে ব্যক্তিগত শক্তি এবং দুর্বলতার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
শ্রেণীগত পার্থক্যের সাথে যুক্ত বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাস একটি অসফল দল তৈরি করতে পারে। নিম্ন আর্থ-সামাজিক শ্রেণীর লোকেদের প্রায়ই অলস, বুদ্ধিহীন এবং অপরিশোধিত হিসাবে দেখা হয়, যেখানে উচ্চতর আর্থ-সামাজিক শ্রেণীর লোকেরা শিক্ষিত, উজ্জ্বল, অনুপ্রাণিত এবং ভদ্র হিসাবে দেখা হয়। মানুষ ধর্মের দ্বারা গোষ্ঠীবদ্ধ এবং বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাসের বশবর্তী হতে পারে। ইহুদিদের প্রায়ই মিতব্যয়ী এবং ব্যবসায়িক মানসিকতার হিসাবে দেখা হয়। ক্যাথলিকদের ঐতিহ্যগত হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, যখন ইভানজেলিকালকে প্রগতিশীল হিসাবে দেখা হয়। একটি দলে এই পার্থক্যগুলি বিভাজনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। উপদলগুলিতে কাজের ভার অর্পণ করলে বাধা অতিক্রম করে এইসব অবস্থা এড়ানো যেতে পারে। এই রকম ব্যবস্থা লোকেদের মধ্যে কাজের সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ করে দেয়।
যৌন পছন্দও ক্ষতিকারক দলগত বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাস হতে পারে বলে মনে করা হয়।
এইসব বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাসগুলি দলে বিভিন্ন কারণে ক্ষতিকারক। এর ফলে যেকোন আদান-প্রদানের শুরুর দিকে একজন ব্যক্তির সাথে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাসের উপর ভর করে থাকলে কোন নির্দিষ্ট শক্তি বা প্রতিভা উপেক্ষিত হয়ে যেতে পারে কারণ সেগুলি প্রদত্ত বাঁধাধরা ধারণার শ্রেণীর মধ্যে বিশিষ্ট বলে মনে করা হয়নি। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তির মধ্যে খারাপ কর্মক্ষমতা প্রকাশ পেলে উপেক্ষা করা যেতে পারে কারণ তারা একটি বাঁধাধরা ধারণা নিয়ে একটি পছন্দসই গোষ্ঠীর অন্তর্গত। অবশেষে, বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাস নিয়ে থাকা গোষ্ঠীগুলিকে পরিচালনা করার অনুমতি দিয়ে দলের মধ্যে শেষ পর্যন্ত একটি সাধারণ লক্ষ্য স্থাপন করা উচিত। ম্যানেজাররা দলগুলিকে মিলিত করে দ্বন্দ্বযুদ্ধ এড়াতে পারেন। ছোটকাজের জন্য ছোট মিশ্র দল তৈরি করে, সমস্ত দলের সদস্যদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। ব্যক্তিদের তাদের বাঁধাধরা ধারণা বা বিশ্বাস এর উর্দ্ধে উঠে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার ভূমিকায় এগিয়ে আসতে হবে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Pledger, Marcia, "Handling Conflict in a Diverse Work Environment", Black Enterprise Magazine, April 2006
- ↑ Maccoby, Michael, "Dealing with the New Diversity", Research Technology Management, June 2006
- ↑ LaFasto, When Teams Work Best Pg. 109
- ↑ LaFasto, when Teams Work Best Pg 110
- ↑ http://www.socap.org/other/articles/C204.pdf#search='communication%20in%20a%20diverse%20environment'
- ↑ http://www.doctorholmes.net/Communication.html