গরু পালন/বাছুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

উইকিবই থেকে

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, "Prevention is better than cure." অর্থাৎ রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বাছুরের স্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ কয়েকটি নিয়মের প্রতি খেয়াল রাখলে ভবিষ্যতে অসুখ-বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

জন্মের পরপরই বাছুরকে শালদুধ খাওয়াতে হবে। যেহেতু শালদুধে প্রচুর পরিমাণে এন্টিবডি থাকে, সেহেতু শালদুধ খাওয়ালে বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আবার স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, সুষম খাদ্য, পরিষ্কার পানি, সেবা-যত্নর প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার। বাছুর গুলোকে পৃথক পৃথক রাখা উচিত। সুস্থ বাছুরকে কোনো অবস্থাতেই রোগাক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে যেতে দেয়া যাবে না। কারণ এতে রোগ সংক্রমণের ভয় থাকে।

বাছুরের শরীর নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। শুকনো খড় দ্বারা তাদের শরীর ঘসে পরিষ্কার করে গোসল করানো প্রয়োজন। সেইসাথে খাবার পাত্র ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। উকুন, আটালী, মশা-মাছি, পোকা-মাকড় এ সবের যেন উপদ্রব না থাকে তা খেয়াল রাখা উচিত।

বাছুরের কোনো রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া বা অসুস্থতা দেখা দেয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত বাছুরকে আলাদা করে দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। রোগে কোনো বাছুর মারা গেলে তা মাটিতে পুঁতে রাখা বা পুড়িয়ে ফেলা উচিত। বছরে দুইবার অর্থাৎ বর্ষার প্রারম্ভে ও শরতের শেষে নির্দিষ্ট মাত্রায় কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহার করলে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধি ভালো হয়। যে সব রোগের প্রতিষেধক টিকা আছে, সময়মত সে সব টিকা দিতে হবে।

বাছুরের রোগ ব্যাধি[সম্পাদনা]

বাছুরের নানাবিধ রোগ-ব্যাধি হতে পারে। বাছুরের জন্য যে কোনো রোগই মারাত্নক। কারণ বয়স্ক পশুর চেয়ে বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।

সংক্রামক রোগ[সম্পাদনা]

বাছুরের নানা ধরনের সংক্রামক রোগ হয়ে থাকে, যার মধ্যে মারাত্মক রোগগুলো হলো—

  • কাফ স্কাওয়ার
  • নেভালো ইল বা নাভীর রোগ
  • সালমোনেস্লোসিস
  • বাছুরের ডিপথেরিয়া
  • নিউমোনিয়া
  • বাদলা
  • তড়কা
  • গলাফুলা
  • ধনুস্টংকার
  • ক্ষুরারোগ
  • জলাতংক
  • গো-বসন্ত

কৃমি বা পরজীবীজনিত রোগ[সম্পাদনা]

পরজীবী অর্থ পরের উপর জীবনধারণকারী। বাছুরের উপর বিভিন্ন পরজীবী জীবনধারণ করে থাকে। যেগুলো বাছুরের কোনো উপকার না করে ক্ষতিসাধন করে থাকে।

পরজীবী সাধারণত দুই ধরনের হয়। যথা:

  1. দেহাভ্যন্তরের পরজীবী
  2. বহিঃদেহের পরজীবী

আমাদের দেশে বেশির ভাগ বাছুরই দেহাভ্যন্তরের পরজীবী অর্থাৎ‍ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। দেহাভ্যন্তরের পরজীবী সাধারণত তিন ধরনের হয়। যথা:

  1. গোল কৃমি
  2. ফিতা কৃমি
  3. পাতা কৃমি

দেহাভ্যন্তরের পরজীবী বাছুরের অনেক ক্ষতি করে। কেননা তারা বাছুরের শরীর হতে পুষ্টি গ্রহণ করে। তাই এসব পরজীবী দমনে বাছুরের বয়স দুমাস হলে কৃমিনাশক খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে।

বহিঃদেহের পরজীবীকে দেহের পোকা বলা হয়। বাছুরের ত্বকে বাস করে ত্বকের ক্ষতি করে থাকে। বহিঃদেহের পরজীবীর মধ্যে বাছুরে আঁঠালি, উকুন, মাছি, মাইটস বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বহিঃদেহের পরজীবী দমনে বাছুরের শরীর ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। বাছুরের বয়স ৬ মাস হলে বহিঃদেহের পরজীবী ধ্বংসকারী ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

প্রটোজোয়াজনিত রোগ[সম্পাদনা]

প্রোটোজোয়া এক প্রকার এককোষী জীব। বাছুর বিভিন্ন ধরনের প্রোটোজোয়া, যেমন- বেবেসিয়া, এনাপ্লাজমা, কক্সিডিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।

অন্যান্য সাধারণ রোগ-ব্যাধি[সম্পাদনা]

বাছুরের সাধারণ রোগ-ব্যাধির মধ্যে রয়েছে বিষক্রিয়াজনিত রোগ, অপুষ্টিজনিত রোগ, পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, যেমন- পেট ফাঁপা, উদারাময়, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বিপাকীয় রোগ।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

গবাদিপশু পালনে রোগবালাই অন্যতম প্রধান সমস্যা। এ সমস্যাকে কার্যকরীভাবে প্রতিহত করতে হবে। যে সকল রোগের টিকা পাওয়া যায় সে সকল রোগের টিকা সঠিক সময়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া বাছুর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে কেঁচো কৃমি বাছুরের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। মায়ের রক্ত প্রবাহের সাথে গর্ভস্থ বাচ্চা এবং মায়ের দুধের মাধ্যমেও বাছুর এ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। বাছুর জন্মের পর পরই এক সপ্তাহ বয়সের মধ্যেই বাছুরের ওজন অনুপাতে সুবিধাজনক কোনো কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।

হঠাৎ করে কোনো কারণে বাচ্চা যেন অসুস্থ হয়ে না পড়ে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

গাভীর খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকা প্রয়োজন। এতে করে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। বাচ্চা জন্ম নেয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে গাভীর শালদুধ খাওয়াতে হবে। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হবে। দুর্বল বাছুরকে প্রচুর দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়াও বাছুরকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুকনো স্থানে রাখতে হবে। খাবারের পাত্র ও পানির পাত্র সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হঠাৎ বাছুরের যেন ঠাণ্ডা বা গরম না লাগে সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আবার, কয়েক দিন পর পর পরিষ্কার করে বিছানা বদল করে নতুন করে শুকনা খড় দিয়ে বিছানা করে দিতে হবে।