গরু পালন/বাছুরের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
বাছুরের জন্মের পর থেকে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত বাছুরকে যতটুকু পুষ্টিসাধন করা হবে পরবর্তী জীবনকালের বৃদ্ধি ও উৎপাদন তার উপর সিংহভাগ নির্ভর করবে। জন্মের প্রথম দিন থেকে সাধারণত ৩ মাস বয়স পর্যন্ত বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধি ও ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। এ সময় যদি শরীরে পুষ্টির অভাব হয় তবে এর যৌনাঙ্গের বিকাশ, যৌবন প্রাপ্তি দেরিতে আসবে। যার ফলে গর্ভ ধারণ ও বাচ্চা উৎপাদন কম হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাছুর পুষ্টির অভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে মারাও যেতে পারে। এসব কারণে জন্মের পর থেকেই পরিমিত খাদ্য সরবরাহের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিত।
কলোস্ট্রাম বা কাচলা বা শালদুধ বাচ্চা জন্মের প্রথম দুই ঘণ্টার মধ্যে খাওয়ানো প্রয়োজন। এই দুধ বাছুরের জন্য অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য। কেননা এই দুধে এমন কতগুলি উপাদান ও এন্টিবডি রয়েছে যা বাছুরকে বিভিন্ন রোগ বালাই হতে রক্ষা করে। অথচ গ্রামে অনেকেই গাভী প্রসবের পর এই শালদুধ বাছুরকে না খাওয়ায়ে পানিতে ফেলে দেয়। শালদুধ বাছুরকে একদিকে খাদ্য সরবরাহ করে অন্যদিকে বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শালদুধে প্রোটিনের ভাগ অত্যন্ত বেশি। এছাড়া এই দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ যা বাছুরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ শালদুধ বাছুরের রেচন কার্যের জন্য পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে এবং উপযুক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
জন্মের পর থেকে ৪-৬ মাস বয়স পর্যন্তবাছুরকে দুধ খাওয়ানো উচিত। তবে ১ম মাসে ৩-৪ লিটারের বেশি দুধ না খাওয়ানোই ভালো। এরপর দুধ না খাওয়ালেও বাছুরের সুষম বর্ধন এবং স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না। বাচ্চাকে গাভী থেকে দুধ চুষে খেতে দিতে হবে। এতে গাভী বেশি দুধ দিবে এবং গাভী দেরীতে দুগ্ধহীনা হবে। সাধারণত বাছুরকে দুবেলা দুধ খেতে দিতে হবে এবং নিয়মিত একই সময়ে দুধ খাওয়াতে হবে। দেড় মাস বয়স পর্যন্ত শারীরিক ওজনের শতকরা ১০ ভাগ হারে দুধ খাওয়াতে হবে। দুই সপ্তাহ পর বাচ্চকে দুধ সরবরাহের সাথে সাথে অল্প পরিমাণ কচি ঘাস ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানো উচিত। নতুবা এর হজম ক্ষমতা কমে যাবে এবং পাকস্থলির পরিপক্কপতা দেরিতে আসবে।
বয়স | দৈনিক | মন্তব্য |
---|---|---|
০-৭ দিন (১ম সপ্তাহ পর্যন্ত) | ২ লিটার শালদুধ | ১-২ ঘন্টা বয়স থেকে ৭ দিন পর্যন্ত শালদুধ খাওয়াতে হবে। দানাদার ও খড় ঘাসের প্রয়োজন নেই। (শরীরের ওজনের ১০% হারে দুধ খাওয়াতে হবে।) |
২য় সপ্তাহ | ৩ লিটার | ২ সপ্তাহ পর থেকে দানাদার খাদ্য অর্থাৎ কাফ স্টার্টার (২০% আমি সমৃদ্ধ) এবং কিছু কচি সবুজ ঘাস বাছুরকে সরবরাহ করতে হবে। |
৩য়-১২ সপ্তাহ | ৪ লিটার | ৮ সপ্তাহ বয়স থেকে দৈনিক ০.৫ কেজি দানা খাদ্য এবং ১ কেজি হারে উচ্চমানের কচি নরম সবুজ ঘাস দিতে হবে। |
১৩-১৬ সপ্তাহ (৪ মাস) | ৩ লিটার | ৪ মাস বয়সের বাছুরকে দৈনিক ০.৭৫ কেজি দানা খাদ্য এবং ৩ কেজি সবুজ কাঁচা নরম ঘাস দিতে হবে। |
১৭-২০ সপ্তাহ (৫ মাস) | ২ লিটার | ৫-৬ মাস বয়সের বাছুরকে দৈনিক ১.০-১.৫ কেজি দানা খাদ্য এবং ৭ কেজি কাঁচা নরম সবুজ ঘাস সরবরাহ করা উচিত। দানা খাদ্যে আমিষের ভাগ ২০%-এর কম এবং আঁশের ভাগ ১০%-এর উপরে থাকবে না। |
২১-২৪ সপ্তাহ | ১ লিটার | ঐ |
বয়স | খাদ্য |
---|---|
১ম সপ্তাহ | গাভীর বাট চুষে বাছুরকে দৈনিক সকাল বিকাল শালদুধ খাওয়াতে হবে (২-৩ বার)। |
২য় সপ্তাহ | গাভীর স্বাভাবিক দুধ সকালে এবং বিকালে প্রয়োজন মতো খাওয়াতে হবে। |
৩-২৪ সপ্তাহ | সকালে এবং বিকেলে প্রয়োজন মতো দুধ খাওয়াতে হব। সবুজ কচি নরম ঘাস ও দানা খাদ্য খাওয়াতে হবে। |
২৫-৫০ সপ্তাহ | দুধের সাথে দৈনিক ১-১.৫ কেজি দানা খাদ্য, ৮ কেজি সবুজ নরম ঘাস অথবা ২-২.৫ কেজি খড় খাওয়াতে হবে। |
১২ মাস (উর্ধ্বে) | দৈনিক ১.৫-২ কেজি দানা খাদ্য, ১২-১৫ কেজি কচি সবুজ নরম ঘাস অথবা ৩-৪ কেজি শুকনা খড় দরকার। |
সংকর জাতের বাছুরকে বালতিতে দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করালেও স্বাস্থ্যের তেমন ক্ষতি হয় না। তবে খাওয়ানোর বাসনপত্র সব সময় জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে এবং শরীরের তাপমাত্রায় দুধ গরম করে খাওয়াতে হবে। তাপমাত্রার গরমিল হলে বদহজম বা পীড়া দেখা দিতে পারে।