বিষয়বস্তুতে চলুন

গরু পালন/গাভীর বাসস্থান ব্যবস্থাপনা

উইকিবই থেকে

বাসস্থান বলতে বিভিন্ন প্রতিকূলতা (যেমন- ঝড়ঝাপটা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোদ, বৃষ্টি ইত্যাদি) বিভিন্ন প্রকার হিংস্র প্রাণির আক্রমণ, পোকামাকড়, চোর ও সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা করে গৃহপালিত পশু বা পাখির সঠিক উৎকর্ষ সাধন, উপযুক্ত খাদ্য ব্যবস্থা ও প্রজননে সুযোগ-সুবিধা এবং যাবতীয় পরিচর্যার সুবন্দোবস্ত করে নিরাপদ আশ্রয় দেয়াকে বুঝায়।

বাসস্থানের শ্রেণীবিন্যাস

[সম্পাদনা]
  • বাসস্থান
    • উন্মুক্ত/উদাম ঘর
    • বাঁধা ঘর
      • এক সারি বিশিষ্ট বাঁধা ঘর
      • দু’সারি বিশিষ্ট বাঁধা ঘর
        • ভিতরমুখী ঘর/মুখোমুখি ঘর
        • বাহিরমুখী ঘর

উন্মুক্ত বাসস্থান

[সম্পাদনা]

এ ধরনের বাসস্থানে গবাদি পশুকে ছেড়ে পালন করা যায়। এর ভিতরে আশ্রয়, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, প্রজনন ব্যবস্থা থাকবে। এখানে দুধ দোহন, বাছুর থাকা, বাচ্চা প্রসবের ঘর, খাদ্য পাত্র, পানির পাত্র ইত্যাদির সুব্যবস্থা থাকবে। মলমূত্র ও ঘর-ধোয়ার পানি যাতে সহজে নিষ্কাশিত হতে পারে তার জন্য ঢালু পাকা ড্রেন থাকবে। ঘরের ছাউনি ঢেউটিন বা অন্য কিছু দিয়ে তৈরি হবে। ঘরের সাথেই পশুর মুক্তভাবে চলার জন্য ইটের সোলিং যুক্ত স্থান থাকবে। এখানে পশুর জন্য খাদ্য পাত্র ২-২.৫ ফুট এবং খাদ্যের পাত্রের সাথে ১ ফুট চওড়া পানির পাত্র থাকবে। গাভীর ঘরের সাথে একপাশে বাছুরের জন্য পৃথক জায়গা এবং সাথে মুক্তভাবে বিচরণের জন্য খোলা স্থানও থাকবে। এরূপ বাসস্থানে জায়গা বেশি দরকার হয়, ব্যবস্থাপনাও কষ্টকর এবং ব্যয়বহুল।

বাঁধা ঘর

[সম্পাদনা]

এ ধরনের বাসস্থানে গরু বাঁধা অবস্থায় থাকে। আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনায় এরূপ বাসস্থান তৈরি করা হয়। সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক খামারে সাধারণত দুগ্ধবতী গাভীর বাচ্চা প্রসবের, অসুস্থ পশুর, বাছুরের ও ষাঁড় বা বলদের জন্য আলাদা আলাদা ঘর থাকা দরকার। এছাড়াও অফিস, গুদাম, স্টোর রুম, গরুর গোবর ও নোংরা আবর্জনা জমানোর স্থান ইত্যাদি থাকে।

দুগ্ধবতী গাভীর জন্য বাঁধা ঘর

[সম্পাদনা]

এক্ষেত্রে গাভীর জন্য অন্তত ৩-৪ ব.মি. জায়গা দরকার। ৪/৫ টি গাভীর জন্য এক সারিতে এক চালা ঘর এবং ১০ টির বেশি হলে দুই সারিতে দোচালা ঘর তৈরি করতে হবে। সারি করে গরু রাখার ক্ষেত্রে পাশাপাশি প্রতিটির জন্য ১-১.৫ মি. জায়গা লাগে। প্রতিটি গাভীর জন্য আলাদা করে ইট বা কংক্রিটের তৈরি খাদ্য ও পানির পাত্র থাকবে। খাদ্য ও পানির পাত্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন গরু পাত্রের মধ্যে পা ঢুকিয়ে দিতে না পারে। খাদ্য পাত্র রোজ পরিষ্কার করতে হবে। এক সারি ঘরে গাভীর পিছনে অগভীর ৫-৭.৫ সে.মি. চওড়া ড্রেন রাখতে হবে। গাভীর ঘরের সকল আবর্জনা ড্রেন দিয়ে বাইরে প্রধান নর্দমায় পড়ার জন্য ঘরের মেঝে পিছনের দিকে সামান্য ঢালু হবে।

দুই সারি মুখোমুখি ঘর তৈরি করতে মাঝ বরাবর ১.৫ মি. চওড়া যাতায়াতের বা খাদ্য সরবরাহের পথ রাখতে হবে। এরপর দুসারিতে ৭৫ সে. মি. চওড়া করে খাদ্য পাত্র, তারপর ১.৫ মি. চওড়া গাভী দাঁড়ানোর স্থান, এরপরে ৩০ সে. মি. চওড়া নর্দমা তৈরি করতে হবে। বহির্মুখী ঘরের উভয় প্রান্তে ৯০ সে. মি. চওড়া করে চলাচল বা খাদ্য সরবরাহের পথ থাকবে।

এরপর ভিতরের উভয় দিকে ৭৫ সে. মি. চওড়া করে খাদ্য ও পানির পাত্র থাকবে। এরপর পাশে দুই সারি গাভীর জন্য ১.২ মি. পার্শ্বে এবং ১.৫ মি. লম্বা করে স্টল তৈরি করতে হবে। গাভীর পিছনে দুই সারিতে ৩০ সে. মি. চওড়া নর্দমা থাকবে। দুদিকের নর্দমার মাঝখানে ১ মি. চওড়া সাধারণ চলাচলের পথ থাকবে। গাভীর ঘরের মেঝে ও খাদ্য পাত্র ইত্যাদি পাকা হওয়ায় ভালো, তবে গাভী যাতে না পড়ে সে জন্য মেঝে অমসৃণ রাখতে হয়। ঘরের মেঝে মজবুত ও ক্রমশ ঢালু হবে।