গরু পালন/কৃত্রিম প্রজনন

উইকিবই থেকে

বর্তমানে সারা বিশ্বে গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের জন্য কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি বহুলভাবে প্রচলিত। গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ছাড়া তার উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগতমান পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। বংশগত কারণে গাভী ও বলদ যথাক্রমে নির্দিষ্ট মাত্রায় দুধ উৎপাদন করে এবং আকারে বড় হয়। খাদ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে চারিত্রিক বৈশিষ্ট পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। বেশি উৎপাদনশীল জাতের ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহ করে গাভীকে প্রজনন করানো হলে উন্নত গুণাবলী তার বাচ্চার দেহে সঞ্চালিত হয়। উন্নত দেশ থেকে ষাঁড়ের পরিবর্তে উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহ করে এদেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন করার একমাত্র মাধ্যম কৃত্রিম প্রজনন।

কৃত্রিম প্রজননের সুবিধা[সম্পাদনা]

কৃত্রিম প্রজননে একটি ষাঁড় থেকে একবার সংগৃহীত সিমেন দ্বারা ১০০-৪০০ গাভী প্রজনন করানো যায়; ফলে ষাঁড়ের গ্রহন যোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। একটি ষাঁড়ের সারাজীবনের সংগৃহীত সিমেন দ্বারা প্রায় এক থেকে দেড় লক্ষ গাভী প্রজনন করানো সম্ভব। আবার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উন্নত জাতের ষাঁড় নির্বাচন করতে সুবিধা হয়। উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন দ্বারা অতি দ্রুত এবং ব্যাপক ভিত্তিতে উন্নত জাতের গবাদিপশু উৎপাদন করা সম্ভব।

এ পদ্ধতিতে শুক্রাণুর গুণাগুণ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। এছাড়াও, অনুন্নত ষাঁড় এবং অপ্রয়োজনীয় ষাঁড় বাছাই করতে সুবিধা হয়। ফলে ষাঁড়ের জন্মগত ও বংশগত রোগ বিস্তার প্রতিরোধ করা যায়। প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড়ের পরিবর্তে অল্প খরচে তার সিমেন আমদানী করা যায়।

কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহারের জন্য বাড়তি ষাঁড় পালনের প্রয়োজন হয় না। যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে কৃত্রিম প্রজনন করা যায়। নির্বাচিত ষাঁড়ের সিমেন সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনমতো যে কোনো সময় ব্যবহার করা যায়। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে কম খরচে অনেক বেশি গাভীকে পাল দেয়া যায়।

এছাড়াও যৌন রোগ সংক্রমণ রোধ করা যায়। প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজননের সময় বিভিন্ন যৌন রোগ, যেমন- ব্রুসেলোসিস, ভিব্রিওসিস ট্রাইকোমনিয়াসিস জাতীয় মারাত্নক যৌন রোগসমূহ ষাঁড়ের মাধ্যমে আক্রান্ত গাভী থেকে অন্যান্য গাভীর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। গাভীর জন্মগত ত্রুটি কিংবা রোগ ব্যাধি থাকলে নির্ণয় করা সম্ভব ও সহজ হয়। তাছাড়াও সঙ্গমে অক্ষম উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করা যায়।

কৃত্রিম প্রজননের সীমাবদ্ধতা[সম্পাদনা]

কৃত্রিম প্রজনন করতে হলে সুষ্ঠুভাবে প্রজনন করানো, সিমেন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহরের জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হয়। গাভীর উত্তেজনা কাল সুষ্ঠুভাবে নির্ণয় করতে হয় এবং প্রজননের জন্য রক্ষিত ষাঁড়ের জন্য বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।

এ পদ্ধতিতে গর্ভবতী গাভীকে ভুলক্রমে জরায়ুর গভীরে প্রজনন করালে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

আবার, কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি। এছাড়াও, কৃত্রিম প্রজনন কাজের জন্য সহায়ক গবেষণাগারের প্রয়োজন হয়।

কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণ[সম্পাদনা]

গাভী[সম্পাদনা]

  • সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া।
  • যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
  • জনন অঙ্গে যে কোনো ধরনের প্রদাহ।
  • অনিয়মিত ঋতুচক্র।
  • বারবার গরম হওয়া ও ভুল বা ফসল গরম হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
  • হরমোন নিঃসরণের অভাব।
  • হরমোন নিঃসরণে ভারসাম্যহীনতা।
  • নীরব ইস্ট্রাস।
  • অধিক বয়স।
  • পুষ্টির অভাব।

সিমেন[সম্পাদনা]

  • মৃত শুক্রাণুযুক্ত সিমেন ব্যবহার।
  • দুর্বল শুক্রাণুযুক্ত সিমেন ব্যবহার।
  • সিমেনের মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকা।
  • অনুর্বর ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার।
  • বয়স্ক অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার।

সিমেন স্ট্র[সম্পাদনা]

  • ত্রুটিপূর্ণভাবে স্ট্র পরিবহন।
  • ত্রুটিপূর্ণ স্ট্র সংরক্ষণ।
  • ত্রুটিপূর্ণভাবে সিমেন ক্যান থেকে স্ট্র বের করা।
  • সিমেন ক্যানে নাইট্রোজনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
  • সিমেন ক্যানের ঢাকনির সাথে সংলগ্ন লাল সিলের ত্রুটি।
  • ত্রুটিপূর্ণ থোইং পদ্ধতি।

প্রজননকারী[সম্পাদনা]

  • প্রজননকারীর অনভিজ্ঞতা।
  • ত্রুটিপূর্ণ ও অদক্ষভাবে প্রজনন করানো।
  • প্রজনন অঙ্গের ভিতর ভুল স্থানে শুক্রাণু স্থাপন।
  • গাভীর ইস্ট্রাস সম্বন্ধে ভুল ধারণা।
  • সঠিক সময়ে প্রজনন না করা।
  • জীবাণু দ্বারা শুক্রাণু সংক্রমিত হওয়া।
  • সিমেনের গুণগত মান সঠিক না থাকা।
  • প্রজননের সরঞ্জাম জীবাণুমক্ত না থাকা।
  • প্রজননের পর গাভীকে বিশ্রাম না দেয়া।

গাভীর মালিক[সম্পাদনা]

  • গাভীর ডাকে আসা বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান না করতে পারা।
  • ডাকে আসার লক্ষণ সঠিকভাবে যাচাই না করতে পারা।
  • গাভীকে সঠিকভাবে পরিচর্যা না করা।
  • সুষম খাদ্য প্রদান না করা।