গণমাধ্যমের পরিচিতি/বিজ্ঞাপন
১. ভূমিকা
২. বিজ্ঞাপন শিল্পের ইতিহাস
৩. বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য জনগোষ্ঠী
৪. বিজ্ঞাপনের পরিকল্পনা ও উদ্ভাবনা
৫. যোগাযোগ
৬. সহযোগীতা
ভূমিকা
[সম্পাদনা]বিজ্ঞাপন হল তথ্য সম্প্রচারের এক বিশেষ পদ্ধতি যা’তে কোনো পণ্য, পরিষেবা এবং ধারণার গুণাবলী সম্পর্কিত তথ্য নির্দিষ্ট পৃষ্ঠপোষকের সহায়তায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের দ্বারা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর অ্যালবার্ট লাস্কর, যাঁকে আধুনিক বিজ্ঞাপন শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়, বলেন, শুধু তথ্যপ্রচারই বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য নয়, এটি বিক্রয়কর্মকেও সহায়তা করে (সেলসম্যানশিপ ইন প্রিন্ট)। তিনি আরও বলেন বিজ্ঞাপন কোনো ব্যক্তিবিশেষের উদ্দেশ্যে প্রচারিত হয় না, বরং বহুজনের সমষ্টি এর লক্ষ্য। এটি একটি নৈর্ব্যক্তিক মাধ্যম। সেই ব্যক্তিরা সরাসরি ভোক্তা বা ক্রেতা হতে পারেন, অথবা ব্যবসায়ী, যাঁরা পণ্যটির বেসাতি করতে আগ্রহী। বিজ্ঞাপনে গণযোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিজ্ঞাপনের পুরো উদ্দেশ্যই হবে বার্তাটি এদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি নানাবিধ গণমাধ্যম বিজ্ঞাপনের সহায়ক। এভাবে বিজ্ঞাপন কোনো বিশেষ ধারণা বা পরিষেবাকেও জনগণের মধ্যে প্রচার করতে সক্ষম, যেমন সরকারী বিজ্ঞপ্তি।
বাণিজ্যজগতে বাজার(মার্কেট)-এর গুরুত্ব অপরিসীম। বাজারকে প্রভাবিত করার জন্য এবং ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগরক্ষার জন্য বিবিধ উপায় গ্রহণ করা হয়। বিজ্ঞাপন তার অন্যতম। বিজ্ঞাপনমাধ্যম পণ্যের গুণাবলী এমনভাবে তুলে ধরে যা ক্রেতাদের সন্তুষ্টিবিধানের পক্ষে অনুকূল ও বাজারে পণ্যটির চাহিদা বাড়ায়।
== ' বিজ্ঞাপনের ইতিহাস' ==
প্রাচীনকালে, যান্ত্রিক সভ্যতার আগমনের বহুপূর্বে, বিজ্ঞাপনের প্রচলন ছিল। ঢোল-শোহরত, তাম্রফলক, প্যাপাইরাস লিখন প্রভৃতি সেযুগের বিজ্ঞাপনমাধ্যমের নিদর্শন। তবে এসব মাধ্যমের প্রচার ক্ষমতা ছিল খুবই সীমিত এবং মাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য, যথা জমি, ক্রীতদাস ইত্যাদি কেনাবেচার কাজে বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা হত। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপে মুদ্রণযোগ্য কাগজের ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয়। তৎসহ ১৪৫০ খৃষ্টাব্দে ইন্জিনীয়ার গুটেনবার্গের আধুনিক ছাপাখানার আবিষ্কার বিজ্ঞাপন জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। ছাপাখানার সাহায্যে এসময় থেকে পোস্টার, হ্যান্ডবিল,পুস্তিকা প্রভৃতি প্রচুরসংখ্যায় বানানো সম্ভব হতে লাগল। সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লবের ফলে ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বহুমাত্রায় বেড়ে যায় এবং সেইসংগে বিজ্ঞাপনের চাহিদাও বাড়তে থাকে। শিল্পবিপ্লব জনগণের আর্থসামাজিক জীবনে প্রভূত প্রভাব ফেলে। পূর্বের গ্রাম ও কৃষিভিত্তিক সভ্যতা ক্রমেই নগরায়ণের দিকে ঝুঁকতে থাকে। বিজ্ঞাপনের চরিত্রও সেই অনুযায়ী বদলাতে থাকে। স্থান-কালের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সে বৃহত্তর বাজারকে লক্ষ্য করে অগ্রসর হতে থাকে।
সপ্তদশ শতাব্দীর আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল সংবাদপত্র প্রকাশনার শুরু। সংবাদপত্রগুলি বহুসংখ্যায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের সুরাহা করে দিল এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা অনেক সহজে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে যেতে পারলেন। পরিবর্তে বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রদত্ত মূল্য সংবাদপত্র বিকাশের সহায়তা করল।