কুরআনের বঙ্গানুবাদ/সূরা হাশর
আয়াতঃ ২৪ , রুকূঃ ৩, মাদানী
১. নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর গৌরব ও মহিমা ঘোষণা করে। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
২. কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফির, তাদেরকে আক্রমণের প্রথম ধাপেই তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বহিস্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। তিনি তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের নিজেদের হাত দিয়েই নিজেদের বাড়ী-ঘর ধ্বংস করল এবং মুমিনদের হাতেও (ধ্বংস করছিল)। অতএব, হে দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।
৩. আল্লাহ যদি তাদের জন্যে নির্বাসন অবধারিত না করতেন, তবে তাদেরকে দুনিয়াতেই শাস্তি দিতেন। আর পরকালে তাদের জন্যে তো জাহান্নামের শাস্তি আছেই।
৪. এটা এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রবল বিরুদ্ধাচরণ করেছে। যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
৫. তোমরা খেজুরের যে গাছগুলো কেটে দিয়েছ আর যেগুলোকে তাদের মূলকান্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছ, তা আল্লাহর অনুমতিক্রমেই করেছ। আর যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন।
৬. আল্লাহ তা’আলা যেসব সম্পদ তাদের দখলমুক্ত করে তাঁর রসূলকে দিয়েছেন, তজ্জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, বরং আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা তাঁর রসূলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
৭. আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, আর রসূলের আত্নীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত এবং মুসাফিরদের জন্য, যাতে তা কেবল তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়। রসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।
৮. (আর এ ধন-সম্পদ) সে সব দেশত্যাগী নিঃস্বদের জন্যে যারা নিজেদের ঘর-বাড়ী ও বিষয়-সম্পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। এসব লোক চায় আল্লাহর মেহেরবানী ও সন্তুষ্টি। আর তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে সাহায্য করে। এরাই সত্যবাদী।
৯. (আর এ ধন-সম্পদ তাদের জন্যও) যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। বস্তুতঃ যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।
১০. (আর এ ধন-সম্পদ তাদের জন্যও) যারা তাদের (অগ্রবর্তীদের) পরে আগমন করেছে। তারা বলে- 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর যারা ঈমানের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছে, আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি অতি দয়ালু, পরম করুণাময়।'
১১. তুমি কি তাদেরকে দেখ নি যারা মুনাফিকী করেছিল? তারা তাদের কিতাবধারী কাফের ভাইদেরকে বলে- তোমরা যদি বহিস্কৃত হও, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে দেশ থেকে বের হয়ে যাব এবং তোমাদের ব্যাপারে আমরা কক্ষণো কারো কথা মেনে নেব না। আর যদি তোমরা আক্রান্ত হও, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সাহায্য করব। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী।
১২. তারা বহিস্কৃত হলেও, এরা (মুনাফিকরা) তাদের সাথে দেশত্যাগ করবে না। আর তাদের উপর আক্রমণ করা হলেও, তারা তাদেরকে সাহায্য করবে না। এরা তাদেরকে সাহায্য করলেও, তারা (মুনাফিকরা) অবশ্যই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। অতঃপর কাফিররা কোন সাহায্যই পাবে না।
১৩. তাদের অন্তরে আল্লাহ অপেক্ষা তোমাদের ভয়ই বেশি প্রবল। এটা এ কারণে যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।
১৪. তারা সংঘবদ্ধভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সমর্থ নয়, সুরক্ষিত জনপদ কিংবা দুর্গ প্রাচীরের আড়ালে অবস্থান ছাড়া। তাদের নিজেদের মধ্যেই রয়েছে ভীষণ শত্রুতা। তুমি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে কর; কিন্তু তাদের অন্তরগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এটা এ কারণে যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।
১৫. তারা সেই লোকদের মত, যারা তাদের নিকট অতীতে নিজেদের কর্মের শাস্তিভোগ করেছে। তাদের জন্যে রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি।
১৬. এদের (মিত্রদের) উদাহরণ হলো শয়তানের মত। সে প্রথমে মানুষকে বলে- কুফরী কর। অতঃপর মানুষ যখন কুফরী করে বসে তখন সে বলে, আমি তোমার দায়িত্ব থেকে মুক্ত, আমি তো আল্লাহ রব্বুল আলআমীনকে ভয় পাই।
১৭. কাজেই তাদের উভয়ের পরিণতি হবে এই যে, তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে, আর এটাই জালিমদের প্রতিফল।
১৮. হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেকেই চিন্তা করে দেখুক, আগামীকালের জন্যে সে কি (পুণ্য কাজ) অগ্রে প্রেরণ করেছে। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন।
১৯. তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। এরাই পাপাচারী লোক।
২০. জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান হতে পারে না। যারা জান্নাতের অধিবাসী, তারাই সফলকাম।
২১. যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে আল্লাহর ভয়ে তা বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
২২. তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা।
২৩. তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই। তিনিই বাদশাহ, অতি পবিত্র, পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তাদানকারী, প্রতাপশালী, পর্যবেক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, অপ্রতিরোধ্য, প্রকৃত গর্বের অধিকারী। তারা যাকে (তাঁর) অংশীদার করে তার থেকে তিনি পবিত্র।
২৪. তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা। সমস্ত উত্তম নামসমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর গৌরব ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত, মহাপ্রজ্ঞাবান।