উইকিশৈশব:হিন্দুধর্ম শিক্ষা/দুর্গাপূজা
আমাদের সবচেয়ে বড়ো উৎসবটি যে দুর্গাপূজা, সেটা বোধহয় আর বলে দিতে হবে না। আমরা এই উৎসবটিকে দুর্গোৎসব বা শারদোৎসবও বলে থাকি। তাছাড়া শুধু পুজো বলতে আমরা দুর্গাপূজাকেই বুঝি। এই উৎসব যে দেবী দুর্গার পূজা, সেটা তো উৎসবের নামটিই বলে দিচ্ছে। দুর্গাপূজা অবশ্য অবাঙালি হিন্দুরাও পালন করেন। কিন্তু বাঙালিদের মতো উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নয়। বছরে দু'বার দুর্গাপূজা হয়ে থাকে। চৈত্র মাসে আর আশ্বিন মাসে। চৈত্র মাসের দুর্গাপূজাকে বলে বাসন্তী দুর্গাপূজা এবং আশ্বিন মাসের পূজাটিকে বলে শারদীয়া দুর্গাপূজা। বাসন্তী দুর্গাপূজা কম লোকেই করে। দুর্গাপূজার যা কিছু আনন্দ-উৎসব, সব শারদীয়া পূজাটিকে ঘিরেই হয়ে থাকে।
আগেই বলেছি যে, দুর্গাপূজা বাঙালি ও অবাঙালি সব হিন্দুরাই পালন করেন। তাই শুধু পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে আর বিশ্বের অন্য অনেক দেশে দুর্গাপূজা পালিত হয়ে থাকে। আর যেখানে বাঙালি হিন্দুরা থাকেন, সেখানে তো দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়। জানো তো, ২০০৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনে রাজধানী লন্ডন শহরে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হলে "ভয়েসেস অফ বেঙ্গল" নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীতে স্থানীয় প্রবাসী বাঙালিরা আর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ মিলে বিশাল এক দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন।
দুর্গাপূজা সবচেয়ে বড়ো উৎসব কেন?
[সম্পাদনা]তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পারো, দুর্গাপূজাকে আমরা বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড়ো উৎসব কেন বলি? আসলে এই উৎসবে যে ঝাঁকজমক হয়, তা আর কোনও উৎসবে হয় না। কয়েক মাস ধরে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পুজো উপলক্ষ্যে বাড়ির বড়োরা তোমাদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেন। স্কুল, কলেজ, অফিসে দশ-পনেরো দিন ছুটি থাকে।
তোমরা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছো, পুজো এলেই পাড়ায় কেমন সাজো-সাজো রব পড়ে যায়। প্যান্ডেল তৈরি হয়। সারা পাড়া আলো দিয়ে সাজানো হয়। দুর্গা ঠাকুরের বড়ো প্রতিমা আসে। ষষ্ঠী থেকে পুজো শুরু হয়, শেষ হয় সেই দশমীতে - পুরো পাঁচ দিন ধরে পুজো চলে। পাড়ায় পুজো দেখে, প্রসাদ পেয়ে, সন্ধ্যেবেলা নতুন জামা পরে অন্যান্য পাড়ার ঠাকুর দেখতে যাও তোমরা।
পুজোর সময় অনেকগুলি পুজোসংখ্যা বই বের হয়। সেই সব বই তোমরা পড়েছ। আনন্দমেলা, শুকতারা - আরও কত সব বই। তাতে অনেক গল্প, উপন্যাস, কমিকস কত কি থাকে।
এত সব কি আর অন্য কোনও উৎসবে হয়? হয় না। সেই জন্যই দুর্গাপূজা আমাদের সবচেয়ে বড়ো উৎসব।