উইকিশৈশব:রাসায়নিক মৌল/সীসা

উইকিবই থেকে
পর্যায়ক্রমিক চার্টে সীসার অবস্থান।
পর্যায় সারণীতে সীসার প্রতীক

ধাতুটি দেখতে, স্পর্শে, স্বাদে, অথবা গন্ধে কেমন লাগে?[সম্পাদনা]

গলিত অবস্থা থেকে কঠিন হওয়া সীসার একটি নমুনা

সীসা একটি নরম, ভারী ধাতু। সদ্য কাটা হলে এটি দেখতে উজ্জ্বল রূপালী রঙের হয়। তবে বাতাসের সংস্পর্শে সীসা বিবর্ণ ধূসর রঙের হয়ে যায়। সীসা নমনীয় ধাতু। এতে কোনো গন্ধ নেই।

ধাতুটি কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল?[সম্পাদনা]

সীসা কমপক্ষে সাত হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। রোমান আমলের সীসার পাইপের নিদর্শন প্রত্নতত্ত্ববিদরা খুঁজে পেয়েছেন। ব্যাবিলনে যখন হামুরাবি রাজত্ব করেছিলেন, তখন প্রচুর সীসার আকরিক খনি থেকে তোলা হয়েছিল।

ধাতুটির নাম কোথা থেকে এসেছে?[সম্পাদনা]

লাতিন ভাষায় সীসাকে বলা হতো প্লাম্বাম (plumbum)। রোমে জিনিসপত্র নির্মাণের কাজে সীসা ব্যবহৃত হতো। সেইসব কাজকে বলা হতো প্লাম্বিং (plumbing)। এই কারণেই সীসার রাসাায়নিক প্রতীক রাখা হয় Pb। ইংরেজি শব্দ লেড (lead) এসেছে জার্মান শব্দ লট (lot) থেকে। যার অর্থ "ওজন"। সীসা খুব ভারী এবং সাধারণত ওজন পরিমাপে ব্যবহৃত হয়।

ধাতুটি কোথায় পাওয়া যায়?[সম্পাদনা]

তুমি কি জান?

  • লেড পেন্সিলের শিস কখনও সীসার থেকে তৈরি হয়না। পেন্সিলের শিস তৈরি হয় গ্রাফাইট খনিজের সঙ্গে মাটি মিশিয়ে।
  • মহাবিশ্বে সীসার পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ বেশির ভাগ ভারী অস্থির পরমাণু ধীরে ধীরে সীসায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
  • রোমান সাম্রাজ্যে জলের পাইপ তৈরিতে সীসা ব্যবহার করা হতো।

বিশুদ্ধ অবস্থায় সীসা পাওয়া খুবই শক্ত। সীসা সাধারণত খনিজে পাওয়া যায়। সীসার একটি পরিচিত খনিজ হলো গ্যালেনা। এই খনিজটি সীসার একটি সালফাইড যৌগ।

এর ব্যবহার কোথায়?[সম্পাদনা]

তেজস্ক্রিয় বিকিরণ আটকাতে সীসার ব্লক

সীসার ঘনত্ব বেশি অর্থাৎ সম আয়তনের অন্য ধাতুর থেকে এটি ভারী এবং মোটামুটি দামে সস্তা। তাই এটি সাধারণত মাছ ধরার সরঞ্জাম এবং ডাম্বেলের মতো ওজন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। বুলেট এবং অন্যান্য গোলাবারুদ তৈরিতেও সীসা ব্যবহার রয়েছে। সীসার উচ্চ ঘনত্ব থাকায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ আটকাতে এর ব্লক ব্যবহৃত হয়। এক্ষত্রে এটি একটি কার্যকর প্রাচীর তৈরি করে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ এই প্রাচীর ভেদ করে বাইরে আসতে পারে না। দাঁতের এক্স-রে নেওয়ার আগে অপ্রয়োজনীয় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ আটকাতে রোগীর শরীরে একটি অ্যাপ্রোন পরানো হয়। তাতে সীসা থাকে।

যেহেতু সীসা মোটামুটি কম তাপমাত্রায় গলে যায়, তাই একে অন্যান্য ধাতুর সাথে মিশ্রিত করে ঝালাই তৈরি করা হয়। পাইপ বা বৈদ্যুতিক তার জোড়া দিতে ঝালাই ব্যবহার করা হয়। তবে পরিবেশ দূষণের জন্য আজকাল সীসার পরিবর্তে অন্য ধাতু মিশ্রণও ঝালাই তৈরিতে ব্যবহার করা হয়, যা পরিবেশের জন্য নিরাপদ এবং ভালো।

আগে রেড লেড নামে সীসার যৌগটি লাল রঙ করতে খুব ব্যবহার করা হতো। যেহেতু এটি দ্রুত শুকানো যায় এবং রঙ দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে পরিবেশ দূষণের জন্য আজকাল এর ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে আসছে।

গ্যাসোলিনের সাথে সীসার জৈব যৌগ যোগ করে অকটেন নম্বর বাড়ানো যায়। অর্থাৎ অন্তর্দহ ইঞ্জিনের অবাঞ্ছিত শব্দ প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ দেশে পর্যায়ক্রমে সীসার জৈব যৌগ যোগ করা বন্ধ করা হয়েছে। এর কারণ হলো এটি অনুঘটক রূপান্তরকারীকে (গাড়ির ধোঁয়া-কমানোর ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ) ধ্বংস করে এবং পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি হল সবচেয়ে পুরানো ধরনের রিচার্জেবল ব্যাটারি। গাড়ি, নৌকা প্রভৃতি যানবাহনে সাধারণভবে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় সেটি লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি থেকে উৎপন্ন হয়। এই ব্যাটারিগুলি অন্যান্য ব্যাটারির চেয়ে ভারী, তবে উচ্চ মাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা।

টাইপ ধাতু তৈরি করতে সীসা ব্যবহার করা হয়। এতে সীসা আর অ্যান্টিমনি থাকে। সালফিউরিক অ্যাসিড শিল্পে বিভিন্ন টাওয়ার ও ট্যাঙ্কের ভিতর রাসায়নিক ক্ষয় রোধ করতে সীসার পাত ব্যবহৃত হয়।

ধাতুটি কি বিপজ্জনক?[সম্পাদনা]

সীসার যৌগগুলি মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকর। তার কারণ এটি লোহা এবং অন্যান্য ধাতুর পরিবর্তে আমাদের শরীরের অন্যান্য পরমাণুর সাথে আবদ্ধ হয়। এর ফলে আমাদের শরীর অসুস্থ হতে পারে। সময়ে যদি চিকিৎসা না করানো হয় তবে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি প্রাণঘাতী না হলেও, সীসা অনেক সময় আমাদের আচরণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটায়। যার মধ্যে রয়েছে নতুন কিছু শেখার অক্ষমতা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।