উইকিশৈশব:রাসায়নিক মৌল/মৌলসমূহের পরিচিতি
রাসায়নিক মৌলের পরিচিতি
[সম্পাদনা]পুরো মহাবিশ্বই অনেকগুলো পদার্থ নিয়ে তৈরী। ঠিক এই মুহুর্তেই, আমাদের চারপাশের অনেকগুলো পদার্থ আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে। আমরা যে বায়ু শ্বাস এর সময় গ্রহণ করি তাও পদার্থ। আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখতে পারি সবই এক-একটা পদার্থ।
যে সব জিনিস জায়গা দখল করে এবং যাদের ওজন আছে, তার সবই পদার্থ। বিজ্ঞানীরা বলেন, পদার্থের ভর এবং আয়তন আছে। প্রতিটি পদার্থই খুব ছোট ছোট পরমাণু দিয়ে তৈরী। যে পরমাণুগুলোই সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ অবস্থায় আছে, তারাই হল মৌল। আর এই মৌলগুলোই বিভিন্ন পদার্থ কে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দান করে।
এখন আমরা ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র নামের একটা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে পরমাণু দেখতে পারি। শক্তিশালী আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আমরা যে সব জিনিস দেখতে পারি, ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র আমাদের তার চেয়েও লক্ষগুণ ছোট জিনিস দেখাতে পারে।
আমাদের চারপাশের অধিকাংশ পদার্থের মধ্যেই একের বেশি মৌল আছে। কিন্তু কিছু কিছু পদার্থ কেবল একটা মৌল দিয়ে তৈরী। যেমন, হীরা(ডায়মণ্ড) একটা মাত্র মৌল, কার্বন, দিয়ে তৈরী। আশ্চর্যজনকভাবে, আমরা আঁকার বা লেখার কাজে যে পেন্সিলের শীষ(গ্রাফাইট) ব্যবহার করি, তাও শুধু কার্বন দিয়ে তৈরী। এদের মধ্যে পার্থক্য হল, হীরাতে কার্বন সাজানো থাকে একভাবে আর গ্রাফাইটে ভিন্নভাবে।
আরও কিছু পদার্থ আছে, যারা শুধু একটা মৌল দিয়ে তৈরী। যেমনঃ
- কোক বা স্প্রাইটের ক্যান বোতলগুলি শুধু এলুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি
- ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ
- যে সব বেলুন উপরের দিকে উড়ে যায় সেগুলোর ভেতর যে হিলিয়াম গ্যাস থাকে
- ঘরের ছাদ তৈরিতে যে সীসার পাত ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই উদাহরণগুলো মৌলের পুরোপুরি নির্ভেজাল উদাহরণ নয়, কারন ধাতুগুলোর মধ্যে সবসময়ই অন্য এক বা একাধিক মৌল ভেজাল হিসেবে মিশে থাকে।
খুব কম মৌলই বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। স্বর্ণ আর সালফার স্বাভাবিকভাবে বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়, ঠিক যেমনি কার্বন বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় হীরায়। কিন্তু বিভিন্ন মৌল একসাথে যুক্ত থেকে অধিকাংশ বস্তু গঠন করে। যেমন, পানির রাসায়নিক সংকেত, H2O এর অর্থ হল দুটি হাইড্রোজেন(H) পরমাণু আর একটা অক্সিজেন(O) পরমাণু যুক্ত হয়েই একটা পানির অণু তৈরি করে।
কিভাবে আয়রন অক্সাইড(লোহার অক্সাইড - এটি খনিতে মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায়) থেকে লোহা মৌলটিকে বিশুদ্ধ করা যায় তা প্রাচীন মানুষেরা জানত। তারা আয়রন অক্সাইড কে কাঠকয়লা এর সাথে তাপ দিত। আসলে আয়রন অক্সাইড হল দুটি মৌল, আয়রন(লোহা) আর অক্সিজেন, দিয়ে তৈরী একটা যৌগ। তাপ দিলে অক্সিজেনগুলো কাঠকয়লার কার্বনের সাথে যুক্ত হয়ে যায় আর বিশুদ্ধ লোহা অবশিষ্ট থাকে।
ভিন্ন ভিন্ন মৌলগুলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে একটা ছক তৈরী করা হয়েছে, যাকে বলা হয় মৌলসমূহের পর্যায় সারণী। এই সারণীর অধিকাংশ অনেক বছর আগেই তৈরী হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় ৯০টি মৌল চিহ্নিত করতে পেরেছেন, যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে তৈরী হয়। আরও প্রায় ২৫টি মৌল আছে যেগুলো বিজ্ঞানীরা তৈরী করতে পারেন।