উইকিশৈশব:মানবদেহ/হৃৎপিণ্ড
একটি হৃৎপিণ্ড দেখতে কেমন হয়?
[সম্পাদনা]হৃৎপিণ্ড একজন ব্যক্তির হাতের মুষ্ঠির সমান আকারের হয়ে থাকে। এটি হৃদপেশি দিয়ে তৈরি। এটি একটি পেশীবহুল অঙ্গ।
হৃৎপিণ্ডের অংশগুলো কি কি?
[সম্পাদনা]হৃৎপিণ্ডের দুটি অংশ রয়েছে: বাম অংশ এবং ডান অংশ। হৃৎপিণ্ডের প্রতিটি অংশ আরও দুটি অংশে বিভক্ত, যাদেরকে বলা হয় অলিন্দ এবং নিলয়। অলিন্দ হৃৎপিণ্ডের উপরের দিকে এবং নিলয় হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকে।
হৃদপিন্ডের উভয় পাশে একটি রক্তনালী (একটি শিরা) রয়েছে, যার মাধ্যমে রক্ত অলিন্দে প্রবাহিত হয়। কপাটিকা হল দরজার মত, যা রক্ত কোথায় যায় তা নিয়ন্ত্রণ করে। কপাটিকাগুলি নিলয় ও অলিন্দকে আলাদা করে। আবার কিছু কপাটিকা নিলয় থেকে ধমনীতে শরীরে ফেরত পাঠানো রক্তের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
হার্ট একটি বড় পেশী যা সংকোচনের মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়ায়। যখন হৃৎপিণ্ড সংকুচিত হয়, তখন এটি সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে বা পাম্প করে। এটিকেই বলা হয় "হৃদস্পন্দন"।
ডান হৃৎপিণ্ড
[সম্পাদনা]ডান অলিন্দের দিকে পরিবাহী শিরাকে ভেনাক্যাভা বা মহাশিরা বলে। এটি দিয়ে শরীরের সমস্ত অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফিরে আসে। ডান নিলয় ফুসফুসীয় ধমনীর মাধ্যমে রক্তকে অক্সিজেনযুক্ত করতে ফুসফুসে পাঠায়। শিরা হৃৎপিণ্ডে রক্ত নিয়ে আসে।
বাম হৃৎপিণ্ড
[সম্পাদনা]অক্সিজেনসহ রক্ত ফুসফুস থেকে ফুসফুসীয় শিরা দিয়ে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে এবং বাম অলিন্দে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্তকে এওর্টা বা মহাধমনীতে পাম্প করে। এটি ফুসফুস ছাড়া পুরো শরীরে রক্ত সরবরাহ করে।
হৃদপিন্ডের কাজ কি?
[সম্পাদনা]হৃৎপিণ্ড শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী পেশী। হৃৎপিণ্ড শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ করে।
রক্ত সারা শরীরে গ্যাস, তরল, পুষ্টি এবং বর্জ্যপদার্থ পরিবহন করে। লোহিত রক্তকণিকার উপস্থিতির কারণে রক্তের রং লাল হয়। রক্তে শ্বেত রক্তকণিকাও থাকে যা শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে রক্ষা করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুকে ঠিক করে।
হৃদপিণ্ড রক্তকে (অক্সিজেন, পুষ্টি, পানি এবং বর্জ্যসহ) শরীরের সব অংশে পরিবহন করে।
কীভাবে হৃদস্পন্দন হয়?
[সম্পাদনা]প্রতিটি হৃদস্পন্দনের আগে, হৃদপিণ্ড রক্তপূর্ণ হয়। তারপর এর পেশী সংকুচিত হয়ে রক্ত বের করে দেয়। যখন হৃৎপিণ্ড সংকুচিত হয়, এটি চেপে ধরে - আপনার হাতটি মুষ্টিবদ্ধ করে চেপে ধরার চেষ্টা করুন। এভাবে করে হৃদপিণ্ড রক্ত বের করতে পারে। হৃদপিণ্ড সবসময় এই কাজ করতে থাকে।
হৃদপিণ্ড কোন অঙ্গের সাথে যুক্ত?
[সম্পাদনা]হৃৎপিণ্ড সংবহনতন্ত্রের একটি অংশ। এর প্রধান কাজ হল ফুসফুস থেকে শরীরের অন্য সব অংশে রক্ত নিয়ে যাওয়া। ফুসফুস শ্বাস নেওয়ার ফলে বাতাস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পায় এবং শ্বাস ত্যাগের সময় গ্যাসীয় বর্জ্যকে বাইরে বের করে দেয়।
হৃদপিণ্ড কীভাবে শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে যোগাযোগ করে?
[সম্পাদনা]অক্সিজেনযুক্ত রক্তকে শরীরে ধমনী নামক রক্তনালীর মাধ্যমে পাম্প করা হয়। ধমনীগুলি কৈশিকজালিকা নামক ছোট রক্তনালীতে বিভক্ত হয়। অবশেষে, কৈশিকজালিকা শরীরের কোষগুলিতে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। তারপর কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বর্জ্যপদার্থ রক্তে শোষিত হয়। রক্ত তখন শিরা নামক রক্তনালীর মাধ্যমে ডান অলিন্দে ফিরে আসে। ডান অলিন্দ থেকে, ফুসফুসীয় ধমনীর মাধ্যমে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয় যেখানে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় এবং অক্সিজেন শোষিত হয়, যা রক্তকে পুনরায় অক্সিজেনযুক্ত করে। ফুসফুস থেকে, রক্ত বাম অলিন্দে ফিরে আসে যেখানে পুনরায় এই চক্র সম্পন্ন হয়।
টীকা:
- হৃৎপিণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া রক্তনালীকে ধমনী বলে।
- হৃদপিন্ডে প্রবেশকারী রক্তনালীগুলিকে শিরা বলা হয়।
- ফুসফুসে রক্ত প্রেরণকারী পালমোনারি ধমনী ছাড়া সমস্ত ধমনী অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পরিবহন থাকে।
- ফুসফুসের শিরা ছাড়া সব শিরাতে অক্সিজেন মুক্ত (কার্বন ডাই অক্সাইডযুক্ত) রক্ত থাকে।
কীভাবে হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখা যায়?
[সম্পাদনা]একটি সুস্থ মন পেতে:
- উপযুক্ত ব্যায়াম করতে হবে
- স্বাস্থ্যকর খাবার (সুষম খাদ্য) গ্রহণ করতে হবে
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
- ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে