উইকিশৈশব:মানবদেহ/শারীরস্থান
শারীরস্থান বা অ্যানাটমি আমাদের শরীরের অংশগুলির গঠন এবং সম্পর্ক বর্ণনা করে। আমাদের দেহ কিভাবে অনেক অংশের সমন্বয়ে গঠিত তা বর্ণনা করলে আমাদের দেহের কার্যকারিতা অনুমান করতে এবং বুঝতে সুবিধা হয়। এই বইটি বেশিরভাগই অ্যানাটমি বা শারীরস্থান সম্পর্কে। বিষয়টি বেশ আকর্ষণীয় যে, আমাদের শরীর কতটা সমন্বয় পূর্ণভাবে সুপরিকল্পিত নকশা গঠন করা হয়েছে। শারীরস্থান বিদ্যার মূল কাজ একটি অঙ্গ বা অঙ্গসমষ্টি নিয়ে কাজ করে। এক একটি অঙ্গ আমাদের শরীরের এক একটি স্বতন্ত্র ও নির্ধারিত কাজ করে থাকে, উদাহরণস্বরূপ আমাদের হৃৎপিণ্ড। প্রতিনিয়ত সঞ্চরণশীল (যে সমস্ত অঙ্গ অধিকাংশ সময় বা সম্পূর্ণভাবে নড়াচড়া করছে) অঙ্গগুলি পেশী, হাড় এবং টেন্ডন বা পেশীবটী সংলগ্ন হয়ে কাজ করে। এই জাতীয় অঙ্গের সমষ্টিকে অঙ্গতন্ত্র বলা হয়।
কিভাবে একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের নাগাল পাওয়া যাবে?
[সম্পাদনা]যদি কেউ একটি অঙ্গ বা একটি অঙ্গতন্ত্রের শারীরস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে পারেন, তবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তিনি একটি অঙ্গের অবস্থান দূর থেকে বা খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারছেন। অঙ্গ এবং তন্ত্র থেকে আরও ভেতরে যদি তার কোষীয় স্তরের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে হয় তবে আবশ্যিকভাবে একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন। প্রতিটি অঙ্গই একাধিক কোষের সমন্বয়ে তৈরি। কোন একটি অঙ্গ কে খুব ভালোভাবে জানার জন্য, সেটিকে বাইরে থেকে খালি চোখে দেখে বুঝতে পারতে হবে, যা ম্যাক্রোস্কোপিক ভিউ বা উপরি দৃশ্য নামে পরিচিত এবং কোষীয় স্তরে, যা মাইক্রোস্কোপিক ভিউ বা আণুবীক্ষণিক দৃশ্য উভয় বিষয়কেই ভালোভাবে শিখতে হবে। ফলে কোন একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের বৈশিষ্ট্যের বর্ণনায় উপরি দৃশ্য ও আণুবীক্ষণিক দৃশ্য উভয় প্রকার শনাক্তকরণ পদ্ধতিই থাকে।
আমরা এখন শারীরস্থানের কিছু উপ-বিষয়কে তালিকাভুক্ত করি যেখানে এই বইটিতে সেই অঙ্গগুলি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে৷
শরীরে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ রয়েছে যেমন হৃৎপিণ্ড, যকৃত, মস্তিষ্ক ইত্যাদি।
সঞ্চারণশীল অঙ্গ
[সম্পাদনা]সঞ্চারণশীল বা ঐচ্ছিক অঙ্গ বলতে যে সমস্ত অঙ্গ নাড়াচাড়া করার প্রয়োজন পড়ে তাদেরকে বোঝায় যেমন হাড় বা অস্থি, পেশী এবং টেন্ডন। যখন আমরা হাঁটা, লাফানো, ওঠানামা বা কথা বলতে গিয়ে মুখভঙ্গি বদল এধরনের কাজগুলোকে মুভমেন্ট বলে আখ্যায়িত করছি তখন আমাদের দেহের ভেতরে ঐরকম একাধিক মুভমেন্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে হয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের পরিপাকতন্ত্র হজম প্রক্রিয়ার কাজে খাদ্য পরিবহনের জন্য তন্ত্রের অঙ্গগুলির পেশী ব্যবহার করে। আবার একই রকম ভাবে আমাদের দেহের ভেতরে ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদার আন্দোলনের ফলে আমরা প্রশ্বাস নিতে এবং নিঃশ্বাস ছাড়তে পারি।
সংবহনতন্ত্র
[সম্পাদনা]তথাকথিত সংবহনতন্ত্রে এমন সব কিছু জড়িত যা আমাদের রক্তকে সুশৃঙ্খল এবং সর্বদা প্রবহমান রাখে। অন্তর্ভুক্ত অঙ্গগুলি হল রক্তনালী, হৃদপিণ্ড, অস্থি মজ্জা এবং প্লীহা। যকৃতও আমাদের শরীরে রক্তকে স্বাভাবিক রাখতে অংশ নেয়, তবে এর আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। ফুসফুস রক্ত পরিশোধন ও অক্সিজেনেশনে সাহায্য করে।
শ্বসনতন্ত্র
[সম্পাদনা]শ্বসনতন্ত্র আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে অক্সিজেন প্রবেশ করতে ও তার চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। এই তন্ত্রের সাথে জড়িত অঙ্গগুলি হল মুখ, আলজিহ্বা, শ্বাসনালী এবং ফুসফুস। শ্বসনতন্ত্র সংবহনতন্ত্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, কারণ রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল দেহে অক্সিজেন পরিবহন করা। হৃৎপিণ্ড একটি পাম্পের মতো কাজ করে যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন যুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করে এবং অশুদ্ধ রক্ত পরিশোধনের জন্য ফুসফুসের দিকে সঞ্চালন করে। ফুসফুসের প্রধান কাজ হল গ্যাস বিনিময় অর্থাৎ কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অক্সিজেনের ব্যাপন পরিবহন। পালমোনারি কৈশিকগুলির একটি বিশেষ নেটওয়ার্ক রয়েছে যা অ্যালভিওলি জুড়ে গ্যাসের আদান প্রদান করে। ফুসফুসে ফুসফুসীয় রক্তজালকের একটি বিশেষ প্রকার জাল গঠন করা থাকে যা বায়ুথলি থেকে অক্সিজেন কৈশিকাগুলিতে (জালক) প্রবেশ করতে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুথলিতে প্রেরণ করতে সাহায্য করে। বায়ুথলি ও ফুসফুসীয় রক্তজালক জুড়ে চাপের নতিমাত্রা তৈরীর কারণে গ্যাসের এই বিনিময় ঘটে। বায়ুথলি হল ফুসফুসের কার্যকরী একক।
পৌষ্টিকতন্ত্র
[সম্পাদনা]তুমি কি এখন ক্ষুধার্ত? আমাদের পৌষ্টিক তন্ত্রের কাজ হয় আমরা যে সমস্ত খাবার খাই তা একাধিক প্রক্রিয়ায় পাচিত করা। গৃহীত খাদ্য মুখ থেকে গলবিল, গ্রাসনালী বা ইসোফেগাস হয়ে পাকস্থলী বা স্টমাকে গিয়ে জমা হয়। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর খাদ্য ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্রের দিকে এগিয়ে যায় যেখানে খাওয়ার থেকে পুষ্টি (গৃহীত খাদ্যে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কণা যা আমাদের দেহ কাজে লাগাতে সক্ষম) ও জল শোষিত হয়। পরিশেষে অপাচ্য অংশ মল হয়ে পায়ু পথে নির্গত হয়।
রেচনতন্ত্র
[সম্পাদনা]রেচনতন্ত্র বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা হল মূত্রত্যাগ করা বা যখন বেগ পায় তখন তা করা। আমাদের দেহের একজোড়া বৃক্ক রয়েছে যা রক্তকে পরিশোধিত করে। এর সাথে সাথে বলার জরুরি যদি আমরা অতিরিক্ত তরল পান করি, তবে তা রেচনতন্ত্রের পথে বাহিত হয়ে বৃক্ক থেকে মূত্র রূপে মূত্রথলিতে গিয়ে জমা হয়। যেহেতু রেচনতন্ত্রের মাধ্যমে দেহে তৈরি হওয়া একাধিক অস্বাস্থ্যকর বস্তু কণার দেহের বাইরে রেচিত হয়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করা প্রয়োজনীয়, তবে অত্যধিক হারে নয়।
জননতন্ত্র
[সম্পাদনা]পুরুষ এবং নারীর ক্ষেত্রে জননতন্ত্র পৃথক পৃথক হয়। উভয়ের পৃথক এই অঙ্গগুলি যুগলের সন্তান গ্রহণের সহায়ক। নারী দেহের জরায়ুতে একটি শিশু বাহিত তথা পালিত হয়। গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা বা অমরা নামে একটি বিশেষ এবং অস্থায়ী অঙ্গ তৈরি হয় মাতৃ দেহ থেকে শিশুর দেহের পুষ্টি সঞ্চারনে সাহায্য করে।
স্নায়ুতন্ত্র
[সম্পাদনা]স্নায়ুতন্ত্র তৈরি মস্তিষ্ক, মেডুলা এবং স্নায়ু কোষ নিয়ে। স্নায়ুতন্ত্র আমাদের চেতনা ধারণ করে এবং আমরা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে আমাদের শরীরের বাকি অংশকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করি। স্নায়ু তন্ত্র প্রাণীদেহের ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক কাজগুলি সমন্বয় করে এবং দেহের বিভিন্ন অংশে সংকেত প্রদান করে।
অন্যান্য অঙ্গসমূহ
[সম্পাদনা]যকৃত দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, এটি এমন কিছু উপাদান তৈরি করে যা অন্য কোষের পক্ষে কার্যকরী। যকৃৎ থেকে নির্গত পিত্ত পৌষ্টিকতন্ত্রের পক্ষে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, যা স্নেহ জাতীয় পদার্থ শরীরের শোষণ করাতে সহায়ক। এটি শরীরে গ্লাইকোজেন রূপে শক্তি সঞ্চিত করে রাখে যা আপদকালীন সময়ে গ্লুকোজে পরিণত হয়ে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে। এইভাবে এই অঙ্গটি অন্যান্য অঙ্গ কে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এটি জেনে রাখা দরকার যে মস্তিষ্কে নিরবিচ্ছিন্ন তিন মিনিট গ্লুকোজ এবং অক্সিজেন না গেলে ওই ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়বে।
থাইমাস, প্লীহা এবং টনসিল শিশুদের ক্ষেত্রে অনাক্রম্যতা তৈরি করতে সাহায্য করে যা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিহত করে।
শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ হয়েও এপিডার্মিস যা আমাদের কাছে সহজভাবে ত্বক নামে পরিচিত।
অঙ্গ তন্ত্রের তালিকা
[সম্পাদনা]অঙ্গতন্ত্র | উপরি দৃশ্য | আণুবীক্ষণিক দৃশ্য | আণুবীক্ষণিক রেখাচিত্র |
---|---|---|---|
সঞ্চালনশীল অঙ্গ - ধরনের অঙ্গ নাড়াচাড়া বা চলন-গমনের সহায়ক যেমন: অস্থি, পেশী ও টেন্ডন | রেখাচিত্র |