বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিশৈশব:মানবদেহ/রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

উইকিবই থেকে
শ্বেত রক্ত ​​কণিকা এবং লোহিত রক্ত ​​কণিকার ছবি।

এই বইয়ে আলোচিত অন্যান্য অঙ্গগুলির মতো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোন একক অঙ্গ নয়, বরঞ্চ অনেকগুলি বিশেষ ধরণের কোষের কার্যক্ষমতা। এই বিশেষ ধরণের কোষগুলি আমাদের সারা শরীরে ছড়িয়ে আছে এবং আমাদের অনেক ধরনের অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে যাচ্ছে।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দেখতে কেমন?

[সম্পাদনা]

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এমন কোন ব্যবস্থা নয় যা তুমি অণুবীক্ষণ যন্ত্র (মাইক্রোস্কোপ) ছাড়া দেখতে পাবে, কারণ এই ব্যবস্থার মধ্যে অনেকগুলি একক কোষ আছে যারা সারা শরীরে ঘুরে বেড়ায় এবং টহল দেয়। এইসঙ্গে তারা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস এবং শরীরের অসুস্থ কোষগুলিকে দূর করতে সহযোগিতা করে। এই কারণেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অঙ্গ না বলে ব্যবস্থা বলা হয়। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একমাত্র যে কাঠামোগুলিকে কখনও কখনও দেখা যায় এবং অনুভব করা যায় সেগুলি হল লিম্ফ নোড এবং থাইমাস। লিম্ফ নোডগুলি হল ছোট গোলাকার অঙ্গ যেখানে রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলি এসে জড়ো হয় এবং তথ্য আদান-প্রদান করে। শরীরে কোথাও সংক্রমণ দেখা দিলে তারা পুনরুৎপাদন করে। লিম্ফ নোডে রোগ প্রতিরোধকারী কোষের সমাবেশ হলে এটি ফুলে যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশগুলি কী কী?

[সম্পাদনা]

শ্বেত রক্তকণিকা, লিম্ফ নোড, অস্থি মজ্জা এবং থাইমাস দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি গড়ে ওঠে।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাজ কি?

[সম্পাদনা]

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বলা যায় শরীরের পুলিশ বাহিনী। এর অন্তর্গত কোষগুলি শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষ এবং ফাঁকা স্থানে টহল দেয়, কোথাও কোন অসুস্থতা অথবা সংক্রমণ লুকিয়ে আছে কিনা খুঁজে দেখে। কয়েকটি বিভিন্ন ধরণের কোষ দিয়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

  1. এক ধরণের শ্বেত রক্ত কণিকা, যাদের বলা হয় ম্যাক্রোফেজ, তারা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অস্বাভাবিক কোষ এবং বর্জিত অংশ খেয়ে শেষ করে ফেলে। তারা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে টি-কোষকে সতর্ক করে দেয়।
  2. টি-কোষ শরীরের কোষের আশেপাশে টহল দেয় এবং নিশ্চিত করে যে তারা ঠিক আছে। তারা ম্যাক্রোফেজ থেকে সংকেত পায়। টি-কোষগুলি অনেকগুলি রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। তারা বি-কোষকে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে বলে এবং অস্বাভাবিক কোষগুলিকে হত্যা করে ফেলে। এরপরে যা ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকে সেগুলি ম্যাক্রোফেজ শোষণ করে নেয়।
  3. বি-কোষ শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। অ্যান্টিবডিগুলি ছোট অণু যারা ব্যাকটেরিয়া বা তাদের মতো অন্যান্য কোষের নির্দিষ্ট কাঠামোর সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার উপরিভাগ জমাট বাঁধে এবং সেগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এরপর ম্যাক্রোফেজ তাদের খেয়ে ফেলে। প্রতিটি বি-কোষ একটি বিশেষ ধরণের অ্যান্টিবডি তৈরি করে যারা একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে। একবার একটি বি-কোষ সক্রিয় হয়ে গেলে সেটি সতর্ক অবস্থায় থাকে। এই কারণেই তুমি কোন একটি বিশেষ শিশুদের রোগে শুধুমাত্র একবারই ভুগবে এবং এর জন্যই তুমি শীতকালে একটি সাধারণ সর্দিতে আক্রান্ত হলে তারপরে আর সেই ধরণের সর্দিতে আক্রান্ত হবেনা, তোমার মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতে তৈরি হয়ে যাবে।

তিন ধরনের অঙ্গ, যেগুলি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ, সেগুলি হল:

  1. অস্থি মজ্জা- যেখানে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্ত রক্ত ​​কোষগুলি তৈরি হয়।
  2. থাইমাস- এটি টি-কোষের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে, টি-কোষগুলি বিভিন্ন কাঠামোর মধ্যে পার্থক্য করতে শেখে। তারা শেখে কোনটি দেহকোষের অন্তর্গত কাঠামো এবং কোনটি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের মত বিদেশী কোষের কাঠামো।
  3. লিম্ফ নোড- এগুলি রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলির যোগাযোগ কেন্দ্র। এখানে ম্যাক্রোফেজগুলি টি-কোষগুলিকে সংক্রমণ সম্বন্ধে অবহিত করে, তখন টী-কোষগুলি বি-কোষকে অ্যান্টিবডি তৈরি করার জন্য উত্তেজিত করে। মানবদেহে একাধিক লিম্ফ নোড রয়েছে, শরীরের প্রতিটি অংশের কাছাকাছি এমন একটি যোগাযোগ কেন্দ্র রয়েছে।

কোন অঙ্গ ব্যবস্থার সাথে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সংযুক্ত?

[সম্পাদনা]

রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলির বিশেষ ক্ষমতা আছে, যার ফলে এরা শরীরের প্রায় যে কোন অংশ পরিদর্শন করার সুযোগ পায়। পুলিশের মতো তাদেরও বিশেষ অধিকার আছে। রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলি রক্তবাহী নালীতে ভ্রমণ করতে থাকে। কিন্তু যদি তারা কোন সংক্রমণের জায়গার কাছাকাছি আসে তবে তারা রক্তবাহী নালী ছেড়ে বেরিয়ে সংক্রমণ স্থলে চলে আসে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইতে অংশ নেয়।

শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিভাবে যোগাযোগ করে?

[সম্পাদনা]

টি-কোষগুলি মানুষের সাধারণ কোষগুলিতে টহল দেয়। তারা একটি কোষের কাছে গিয়ে তার ভিতরে কি আছে দেখাতে বলে। তুমি এই কাজকে পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ হিসাবে ভাবতে পারো। পাসপোর্টটি সঠিক কি না টি-সেল সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তার পরে সে নির্ধারণ করে কোষটি স্বাভাবিক কিনা। এছাড়াও, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বেশিরভাগ সময়েই বাইরে থেকে আসা আক্রমণকারীদের সাথে লড়াই করে। প্রথমে এই সব আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করা হয় এবং এর পরে তাদের নির্মূল করার কাজে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বেশ কঠোর। কিছু টি-কোষ এইসব অনুপ্রবেশ নথিবদ্ধ করে রাখে যাতে পরের বার একই অনুপ্রবেশকারীকে আরও দ্রুত বহিষ্কার করা যায়, কখনও কখনও আমরা লক্ষ্য করার আগেই তারা বহিষ্কৃত হয়ে যায়।

কিভাবে তুমি তোমার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখতে পারো?

[সম্পাদনা]

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর। তুমি যদি দুঃখী থাকো বা অসুখী হও, তাহলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। প্রতি রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন এবং এমন কিছু করবে না যার ফলে তুমি ভয় পাও বা অসুখী থাকো। বন্ধুদের সাথে সময় কাটাও এবং বন্ধুত্বপূর্ণ, নিরাপদ পরিবেশে থাকো।