উইকিশৈশব:মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/পাকস্থলী

উইকিবই থেকে

পাকস্থলী হল পাচনতন্ত্রের একটি অংশ। খাদ্য মুখে নিয়ে চিবোনো এবং গ্রাস করার পরে এখানেই খাদ্য সঞ্চয় হয় এবং তারপরে এখানে পাচন কার্য চলতে থাকে।

পাকস্থলী কেমন দেখতে?[সম্পাদনা]

অনেকে মনে করেন পাকস্থলী পেটের নিচের অংশে নাভিমূলের কাছে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি তার থেকে অনেক ওপরে অবস্থিত। পাকস্থলীর প্রকৃত অবস্থান পাঁজরের নিচের অংশের পেছনের দিকে।

পাকস্থলীকে বলা যায় একটি থলি, এটি তৈরি হয় অনেকগুলি পেশী দিয়ে। পাকস্থলীর আকৃতি অনেকটা ইংরেজি 'জে' অক্ষরের মতো। এটি আকারে হাতের মুষ্টির সমান কিন্তু খাবার বেশি থাকলে পাকস্থলী প্রসারিত হয়ে খাবারের জন্য জায়গা করে দিতে পারে। এটিতে একটি প্রবেশ এবং প্রস্থান দ্বারও রয়েছে।

পাকস্থলীর অংশগুলি কি কি?[সম্পাদনা]

পাকস্থলীর ওপরের অংশে আছে একটি নল যার নাম খাদ্যনালী বা ইসোফেগাস। যখন তুমি চিবোনো খাবার গিলে ফেলো তখন এই নালিকাটির মুখ খুলে যায় যাতে খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছোতে পারে। পাকস্থলী অনেক পেশী দিয়ে তৈরি। এই পেশীগুলি খাদ্যকে ছোট ছোট টুকরো করে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। পেশীগুলি এমন তরঙ্গ সৃষ্টি করে, যাতে খাদ্য পাচনতন্ত্রের আরও নিচের দিকে নেমে যায়। একে বলা হয় পেরিস্টলসিস। এই প্রক্রিয়া খাদ্যনালী থেকে শুরু করে বৃহদন্ত্র পর্যন্ত সমস্ত পথেই ঘটে।

পাকস্থলীর সঙ্গে সারি দিয়ে থাকে কিছু গ্রন্থি। এই বিশেষ গ্রন্থিগুলি কিছু তরল পদার্থ তৈরি করে যেগুলি পাকস্থলীতে এসে পড়ে। এই তরলকে পাচক রস বলা হয়। এই পাচক রসে অম্ল বা অ্যাসিড থাকে এবং সেটি খাবার ভাঙতে বা হজম করতে সাহায্য করে।

পাকস্থলীর নিচের অংশকে বলা হয় পাইলোরিক অঞ্চল। এই অঞ্চলের নিচের দিকে একটি প্রস্থান দ্বার রয়েছে। এই ছিদ্র দিয়ে খাদ্যাংশ ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে।

পাকস্থলীর (এবং সাধারণত পাচনতন্ত্রের) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলির মধ্যে একটি হল ব্যাকটেরিয়া প্রাণী যা এইখানেই বাস করে। নির্দিষ্ট পরিবেশের মধ্যে একদম আলাদা ধরণের এই ব্যাকটেরিয়া পাচনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উৎসেচক তৈরি করে। সেগুলি কিছু খাদ্যের পাচনের জন্য প্রয়োজন হয়। এছাড়াও আমরা যা আহার করি তার সর্বাধিক পুষ্টি অংশ যাতে নিষ্কাশিত করা যায়, তাতেও সহায়তা করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলির সঙ্গে আমাদের একটি মিথোজীবী (পারস্পরিক উপকারী) সম্পর্ক থাকে যা শুরু হয় জন্ম থেকেই, মায়ের কাছ থেকে শিশু যে দুধ পায় তার মাধ্যমে এগুলি শিশুর শরীরে চলে আসে এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার আধুনিকীকরণও হতে থাকে।

পাকস্থলীর কাজ কি?[সম্পাদনা]

গ্রহণ করা খাদ্য পাকস্থলীতে এসে সঞ্চিত হয় এবং সেখানে এর পাচন ক্রিয়া শুরু হয়। পাকস্থলী তার পেশীগুলির সংকোচন ও প্রসারণ করে খাদ্যকে ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে এই কাজ করে। এছাড়াও খাদ্যকে ভেঙ্গে দিতে পাকস্থলী পাচক উৎসেচক এবং অম্লরস ব্যবহার করে।

পাকস্থলী কিভাবে শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে যোগাযোগ রাখে?[সম্পাদনা]

তুমি কিছু চিন্তা করার আগেই পাকস্থলী তার নিজের কাজ করে ফেলে। এই কাজটি স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পাকস্থলী খালি হয়ে গেলে স্নায়ু তোমার মধ্যে ক্ষিদের অনুভূতি আনতে সাহায্য করে। তারা তোমার পাকস্থলীকেও সংকেত পাঠায় যে কখন পাচক ক্রিয়া শুরু করার জন্য সে আরও রাসায়নিক তৈরি করা শুরু করবে।

পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণে রক্তবাহী নালী থাকে। এই নালীর মাধ্যমে রক্ত পাকস্থলীতে অক্সিজেন সরবরাহ করে যাতে এটি নিজের কাজ করতে পারে।

পাকস্থলীর পেশীগুলি খাদ্য স্থানান্তর করতে সহায়তা করে। পাকস্থলী তার কাজ সম্পন্ন করার পর, খাদ্য ক্ষুদ্রান্ত্রে চলে যায়।

কিভাবে তুমি তোমার পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে পারো?[সম্পাদনা]

ভাল পাচন ক্রিয়া শুরু হয় চিবোনোর মাধ্যমে। খাবার ভালোভাবে চিবোনো এবং ধীরে ধীরে খাওয়া তোমার পাকস্থলীর জন্য ভাল।

ক্ষিদে পেলে তবে তুমি খাও। খুব বেশি বা খুব কম খাবার খাবে না। খুব বেশি চর্বি বা চিনি নেই এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করো। তোমার খাদ্যতালিকায় শাকসবজি এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করো। যদি কোন খাদ্য থেকে প্রায়শই তোমার পেটে ব্যথা করে বা খারাপ লাগে এবং হজমের সমস্যা হয়, তাহলে সেই খাবার এড়িয়ে চলো।