উইকিশৈশব:মানবদেহ/ত্বক

উইকিবই থেকে

আমাদের দেহ পাতলা একটি স্তর দ্বারা আবৃত, যা আমাদের কাছে ত্বক নামে পরিচিত। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবেছেন, একটি অঙ্গ হিসাবে এটিরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ আছে? বা আপনি কি জানেন যে এই ত্বকের একাধিক স্তর রয়েছে এবং আমরা কেবল এর সবচেয়ে বাইরের অংশ দেখতে পাই? আমাদের ত্বক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং এটি প্রায় পুরো শরীর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। এটি আপনাকে যেমন বাইরে থেকে রক্ষা করে তেমনই এর সাথে আপনাকে সংযুক্ত করে।

ত্বকের তিনটি স্তর রয়েছে যথা, এপিডার্মিস, ডার্মিস ও হাইপোডার্মিস।

এপিডার্মিসে কোনো রক্তনালী থাকে না। গভীরতম স্তরের কোষগুলি পুরোপুরি ভাবে আশেপাশের কোশের অক্সিজেন দ্বারা ব্যাপনের মাধ্যমে পুষ্ট হয়। এপিডার্মিসের নিম্নোক্ত পাঁচটি উপস্তর আছে, যথা -স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম, স্ট্র্যাটাম লুসিডাম, স্ট্র্যাটাম গ্র্যানুলোসাম, স্ট্র্যাটাম স্পিনোসাম, স্ট্র্যাটাম বেসাল। ত্বকে এপিডার্মিসের নিচে যোগকলা সমৃদ্ধ স্তরটি হলো ডার্মিস, তা নীচে রয়েছে হাইপোডার্মিস।

রোমশ ও রোমহীন ত্বকের স্তর

ত্বক কিরকম দেখতে?[সম্পাদনা]

বর্ণ[সম্পাদনা]

আমাদের ত্বক বিভিন্ন রঙের হয়, যাকে স্কিনশেড বলা হয়ে থাকে। এই রং জিনবস্তুর ওপর নির্ধারিত হয় এছাড়াও ত্বক আপনার শরীরের কোন অংশটি ঢেকে রাখছে তার ওপরও এটি নির্ভর। অঙ্গভেদে ত্বকের রঙের বদল হয় পিগমেন্টেশন এর জন্য। সাধারণত সূর্যের আলোর সংস্পর্শে অনাবৃত থাকা অংশে ত্বকের বর্ণ গাঢ় হয়। এটি ঘটে কারণ আপনার ত্বক আপনাকে রোদে পোড়া ও তার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে থেকে রক্ষা করতে মেলানিন সংশ্লেষ করে। আপনার ত্বকে তৈরি মেলানিনের পরিমাণও বংশগতভাবে নির্ধারিত এবং মানুষ ভেদে পরিবর্তিত হয়।

রোম[সম্পাদনা]

আপনার ত্বকে বিভিন্ন স্থান আলাদা ঘনত্বের রোম দিয়ে আচ্ছাদিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনার মাথা চুল বা রোমে ভরা থাকে, আবার আপনার হাতের তালুতে কোন রোম থাকে না। আপনি যদি আপনার পরিচিত অন্যান্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে চিন্তা করেন তবে আপনি লক্ষ্য করবেন যে তাদের কারও কম এবং কারও শরীরে রোম বেশি। এটি লিঙ্গ, বয়স এবং বংশগতির (জিনবস্তু) উপর যেমন নির্ভর করে তেমনি তাদের অনুকূল পরিস্থিতির উপরও নির্ভর। মাথার চুল, ভ্রু এবং চোখের পাতায় আপনার জন্মের মুহূর্ত থেকে রোম উপস্থিত থাকে, যেখানে আপনার বগলের নীচে, দেহে এবং আরও অন্যান্য স্থানের রোমগুলি বয়ঃসন্ধির পরে বাড়তে শুরু করে। মুখের চুল তথা গোঁফ, দাড়ি নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি থাকে। বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে মাঝেই চুল পড়তে দেখা যায়।

রন্ধ্র ও গ্রন্থি[সম্পাদনা]

ত্বক সিবাম নামক তেল উৎপাদনকারী গ্রন্থি দ্বারা আবৃত। সিবাম ত্বককে নরম করে এবং ফাটল থেকে রক্ষা করে। এটি এটিকে জলরোধীও করে তোলে। স্নানের সময় খুব বেশি সাবান ব্যবহার করলে এই তেল ধুয়ে যায়। এর ফলস্বরূপ ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যাবে। তবে ময়শ্চারাইজার হিসাবে বডি লোশন ব্যবহার করতে পারেন বা কম সাবান ব্যবহার করতে পারেন যেন আপনার ত্বক পর্যাপ্ত পরিমাণে সিবাম তৈরি করে। আপনার শরীরে ত্বকের বাইরের দিকে ঘামের গ্রন্থি রয়েছে। গরম লাগলে অথবা আপনি অত্যধিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করলে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঘাম আপনার ত্বকের উপরি তলে বাষ্পীভূত হবে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময় কিশোর কিশোরীদের মুখে পিম্পল এবং ব্ল্যাকহেডস দেখা যায়। ব্ল্যাকহেডস হলো ছিদ্রে আটকে থাকা কোশ যা খুব বেশি সিবাম তৈরি ও সঞ্চয় করে। ব্যাকটেরিয়া, জমে থাকা ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করলে ব্রন হয়। শরীরকে ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করার ফলস্বরূপ লালভাব এবং পুঁজভর্তি তরল তৈরি হয়।

কড়া[সম্পাদনা]

আপনার ত্বকও কিছু জায়গায় শক্ত এবং পুরু। আপনার পায়ের পাতার তলা এবং বিশেষ করে আপনার গোঁড়ালি যে শক্ত এবং মোটা তা সবাই অনুভব করতে পারে। এই সব জায়গার ত্বকে একটি হলুদ বা সাদা এবং শুষ্ক স্তর গঠন করে যাকে কড়া বা ক্যালাস বলে। চাপ এবং ঘর্ষণে আপনার ত্বকের প্রতিক্রিয়ায় এটি আরও শক্ত হঠে ওঠে। আপনি আরও লক্ষ্য করবেন যে শক্ত চামড়ায় বাকি অংশের তুলনায় চেয়ে কম সংবেদনশীলতা রয়েছে, এর ফলে অমসৃণ জায়গা দিয়ে খালি পায়ে চললে অতটা ব্যথা অনুভূত হয় না॥

ত্বকের গভীরে[সম্পাদনা]

এখন পর্যন্ত, আমরা এমন জিনিসগুলি দেখেছি যা আপনি বাইরে থেকে দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু ত্বকে তিনটি স্তর রয়েছে: এপিডার্মিস, ডার্মিস এবং সাবকিউটিস বা হাইপোডার্মিস। তাদের প্রত্যেকের ভিন্ন কলা এবং কোষের ধরন এবং বিভিন্ন কাজ রয়েছে। এখানে আমরা শুধুমাত্র এপিডার্মিসকে দেখব, যার অন্যতম কাজ দেহকে প্রতিরক্ষা দেওয়া।

এপিডার্মিস বা বহিস্তক: এপিডার্মিসের নীচের অংশটি ডার্মিস লাগোয়া। এটি সব সময় নতুন কোষ স্তর তৈরি করে। পুরানো কোষগুলি সময়ের সাথে সাথে ডার্মিস থেকে আরও বাইরের দিকে দূরে সরে যায়। বাইরের এই কোষগুলি মারা যায় এবং শক্ত হয়ে যায়। এপিডার্মিসের উপরিতলে মৃত কোষগুলি সময়ের সাথে সাথে খসে যায়। এপিডার্মিসে, আপনি এমন কোষও থাকে যা মেলানিন তৈরি করে আপনাকে সূর্যরশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

ত্বকের কাজ কি?[সম্পাদনা]

দেহের প্রতিরক্ষা দান[সম্পাদনা]

ত্বকের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছোট বাইরের পরিবেশের সাথে আমাদের দেহের ভেতরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আলাদা করা ও আঘাত থেকে প্রতিরক্ষা দেওয়া। ইটিং বাইরে থেকে দেহের ভেতরে কোন কিছু প্রবেশ করতে বাধা দেয়। ‌এর অর্থ ত্বক দৈহিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ এটি বাইরের ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। অন্যভাবে এটি নিশ্চিত করে যেন আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং তার সমস্ত তরল হারিয়ে না যায়, তরল আদান প্রদানে এটি বাধা হিসেবে কাজ করে।

মস্তিষ্কের একজন তথ্যদাতা হিসাবে ত্বক আপনার বাহ্যিক সংবেদন পাঠায়[সম্পাদনা]

যেহেতু তো আমাদের দেহের সবচেয়ে বাইরের অংশ তাই এটি আমাদের শরীরের সাথে আমাদের পারিপার্শ্বিককে সংযুক্ত করে। কোন বস্তু স্পর্শ করে সেই সম্পর্কে তথ্য আমরা পাই। এই কার্যকারিতা অন্ধ লোকদের জন্য খুব উপকারী, তারা ছাড়াও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে স্পর্শ অনুভূতি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে রাখে। সোর্স ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে না দেখে আমরা সহজেই স্পোর্টস শু বের করে আনতে পারি সম্ভবত এই স্পর্শ অভিজ্ঞতার কারণে। ত্বকে অবস্থিত সেন্সর আমাদের মস্তিষ্কে কোন বস্তুর আকার আকৃতি এবং টেক্সচার সম্পর্কে তথ্য প্রেরণ করে।

ত্বক শুধু স্পর্শ চাপ এবং কম্পন অনুভব করে না এটি ঠাণ্ডা গরম বিচার করতে এবং ব্যথা অনুভব করতে সক্ষম। এই অনুভূতি গুলির প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা সেনসর ত্বকে উপস্থিত। বাইরের অনুভূতির মাধ্যমে এই সেন্সর গুলি সক্রিয় হলে তা মস্তিষ্কে সিগনাল দেয়। এই সিগনাল নির্দিষ্ট স্নায়ু রজ্জু বরাবর সুষুম্নাকাণ্ড অবধি পৌঁছায় এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিষ্কে যায়। এই সিগনাল একবার মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে মস্তিষ্ক জানান দেয় যে সেটি কোথা থেকে আসছে এবং এর তীব্রতা কত। এর ফলে আমরা জানতে পারি যে আমাদের ত্বকের ওপর কি ঘটছে। তবে তোমাকে এর প্রত্যেকটি জায়গার জন্য এই অনুভূতির মূল উৎস বিচার করা সমান নয়। হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ পিঠের থেকে তুলনামূলক বেশি স্পর্শকাতর বা সেনসিটিভ। এর কারণ আঙ্গুলের অগ্রভাগে সংবেদী স্নায়ু ঘনত্ব তুলনামূলক বেশি। এতে অবাক হওয়ার কি আছে? খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার পিঠের কোন নির্দিষ্ট স্থানে কি হচ্ছে সেটি জানা আমার জন্য অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যভাবে বলা যেতে পারে সুঁই সুতো নিয়ে সেলাই করার সময় কিভাবে কোথায় কত পরিমাণ চাপ অনুভব হচ্ছে বা ব্যথা লাগছে কিনা সেটা জানা, গাছ থেকে ফল পাড়ার সময় হাতের অনুভব কথা বলা যায় যে কোন কাজ করতে গিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া বেশি জরুরি। একটি সিস্টেম তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সর্বদা আপনার শরীরের শক্তি খরচ হয় এবং সেইজন্য আপনার কাছে এমন একটি সিস্টেম রয়েছে যা সর্বনিম্ন শক্তির খরচ সহ সর্বাধিক সুবিধা রয়েছে।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক হিসেবে ত্বক[সম্পাদনা]

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে তকের ভূমিকা রয়েছে। যদি দেহ তাপ মোচনকারী চায় তবে ত্বক থেকে ঘর্ম ক্ষরণ হবে ওতাবা সীমিত হওয়ার কারণে দেহ শীতল হবে সাথে সাথে ত্বকে রক্ত পরিবহন উন্নত হবে। শীতকালে বাইরে থাকা কালীন অবস্থায় দেহের লোম খাড়া হয়ে যায় এবং ত্বকে রক্ত পরিবহন এর পরিমাণ সীমিত হয়ে যায় যেন দেহের উষ্ণতা কমে না যায়। মনে রাখতে হবে তোকে যদি রক্ত সঞ্চালন বেশি হয় তবে তর্কের মাধ্যমে দেহের তাপ মোচিত হবে।

ত্বকের অন্যান্য কাজ[সম্পাদনা]

ত্বক ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করে, যার শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপে একাধিক কাজ থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো দেহের অস্থি তন্ত্রের দৃঢ়তা বজায় রাখা। ভিটামিন ডি সংশ্লেষণ জন্য ত্বককে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আনা জরুরি। যদি কারো ত্বক শ্যামলা বর্নের হয় এবং সূর্য রশ্মির বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষা গঠিত হয় তবে তার ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করা কঠিন।