উইকিশৈশব:বিখ্যাত ভারতীয়/আকবর
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/8/81/Kaiser_Akbar_b%C3%A4ndigt_einen_Elefanten.jpg/200px-Kaiser_Akbar_b%C3%A4ndigt_einen_Elefanten.jpg)
জালালুদ্দিন মহম্মদ আকবর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। তিনি কেবলমাত্র এক দিগ্বিজয়ী বীরই ছিলেন না, বরং তার অধীনস্থ হিন্দু প্রজাবর্গের বিশ্বাস ও সমর্থন অর্জনেও তিনি সফল হয়েছিলেন। ১৫৪২ সালে সিন্ধুর অমরকোটে এক রাজপুত দুর্গে তার জন্ম হয়েছিল। ১৫৫৬ সালে মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন তিনি। তার অভিভাবক বৈরাম খাঁ ছিলেন তার বিশ্বস্ত মন্ত্রী ও শিক্ষক। শের শাহের ভাগনে আদিল শাহের হিন্দু মন্ত্রী তথা সেনাপতি হিমু মুঘলদের পরাজিত করে আগ্রা ও দিল্লি দখল করে নিয়েছিলেন। ১৫৫৬ সালে বৈরাম খাঁর সাহায্যে আকবর পানিপথের যুদ্ধক্ষেত্রে হিমুকে পরাজিত ও নিহত করেন। এই যুদ্ধ দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ নামে ইতিহাসখ্যাত। এই জয়ের পর আকবর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পান। তিনি ভারতের নানা অঞ্চল জয় করে তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেন। জয় করেন মালোয়া ও চুনার। অম্বরের (জয়পুর) রাজা বিহারীমল্ল তার আনুগত্য স্বীকার করে নেন। এরপর রানি দুর্গাবতী শাসিত রাজপুত রাজ্য গন্ডোয়ানা জয় করেন আকবর। একে একে অধিকার করেন মেবার, রণথাম্বোর, কালিঞ্জর, বিকানের, জয়সলমীর ও যোধপুর। পূর্বে বাংলা ও বিহার এবং পশ্চিমে কাবুল, কাশ্মীর, সিন্ধু ও কান্দাহার তার সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এইভাবে পূর্বে বাংলা থেকে পশ্চিমে আফগানিস্তান এবং উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে গোলকোন্ডা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় আকবরের সাম্রাজ্য।
রাজপুতদের সাহস ও সততকে আকবর সম্মান করতেন। এই কারণে রাজপুতদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাকে তিনি বিশেষ মূল্য দিতেন। জয়পুরের রাজকুমারী যোধবাইকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। বিকানের ও জয়সলমীরের শাসকেরাও নিজ নিজ কন্যার সঙ্গে আকবরের বিয়ে দেন। রাজপুতদের সহায়তা অর্জন করার জন্য আকবর তাঁদের বিশ্বাস অর্জনে বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন। রাজা মানসিংহ, রাজা ভগবান দাস প্রমুখ রাজপুত নেতাদের তাই নিজ দরবারের উচ্চ পদে বসিয়েছিলেন তিনি। বীরবল ও রাজা টোডরমল্লের মতো হিন্দু নেতৃবর্গও তার রাজসভায় উচ্চ পদ অলংকৃত করতেন। হিন্দু ও অমুসলমানদের কাছ থেকে যে জিজিয়া ও অন্যান্য তীর্থকর আদায় করা হত, তা আকবর বিলুপ্ত করেন। অমুসলমানদের মন্দির নির্মাণ ও নিজ নিজ উৎসব পালনের অনুমতিও দেন তিনি। আকবরের বাবা ছিলেন সুন্নি মুসলমান, কিন্তু তার মা ছিলেন শিয়া। ছেলেবেলায় কিছুকাল তিনি এক হিন্দু পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেছিলেন। শেখ মুবারক নামে এক উদারপন্থী চিন্তাবিদের মতবাদ তাঁকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। এই সব কারণে ধর্ম ব্যাপারে আকবর ছিলেন পরমতসহিষ্ণু। ‘দিন-ই-ইলাহি’ নামে তিনি এক নতুন ধর্মমতও প্রবর্তন করেন। আকবর আবুল ফৈজি ও আবুল ফজলের মতো লেখকদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক বদাউনি, ফেরিস্তা ও নিজামুদ্দিন তার সমসাময়িক ছিলেন।
১৬০৫ সালে পঞ্চাশ বছরের গৌরবময় শাসনের শেষে আকবরের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার পুত্র সেলিমকে উত্তরসূরি নির্বাচিত করে যান। সেলিম ‘জাহাঙ্গির’ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেছিলেন।