বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/দোতারা

উইকিবই থেকে
দোতারা বাজিয়ে গান করছেন একজন লোক সংগীতশিল্পী

দোতারা বাংলার লোকজ বাদ্যযন্ত্র। এর আক্ষরিক অর্থ দুটি তার বিশিষ্ট কোন যন্ত্র। এটি বাংলা লোকগীতির সাথে বহুল ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র। মূলত দুইটি তার বা চারটি তারের বা কখনো কখনো পাঁচটি তারের সমন্বয়ে এটি তৈরী করা হয়। দুই বাংলায় এর বেশি ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের সময় থেকেই বাঙলার বাউল ফকিররা তাদের গানের সাথে এই বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে আসছেন। এছাড়াও আসাম এবং বিহার রাজ্যে এর ব্যবহার দেখা যায়। চতুর্দশ শতাব্দীতে লিখিত সপ্তকাণ্ড রামায়ণ বইতে দোতারার প্রথম উল্লেখ রয়েছে।

দোতারার অন্য নাম স্বরাজ৷ দুটি তারের সাহায্যেই এতে এক সপ্তকের সকল সুর বাজানো যায় বলে একে দোতারা বলা হয়৷ তবে কোনো কোনো গুণী ওস্তাদ এতে পছন্দমতো চারটি বা পাঁচটি তার লাগিয়ে থাকেন৷ যেমন বাউল শাহ আবদুল করিম চারটি এবং ওস্তাদ পাগলা বাবু শাহজাদপুরী তার দোতারায় পাঁচটি তার ব্যবহার করে থাকেন৷ দোতারার অগ্রভাগে কাঠখোদাই ভষ্কর্যে ময়ূর, টিয়াপাখি প্রভৃতি থাকে৷ এগুলো যথাক্রমে নবীজি সঃ এবং বড়পীর রহঃ এর প্রতীকি রুপ৷

দোতারা টিউনিং

[সম্পাদনা]

দোতারাতে দুই থেকে চারটি তার থাকে। উপরের মোটা তারটি টিউন হবে ‘পা’-তে। মাঝখানের দু’টি হবে ‘সা’ আর শেষের তারটি হবে ’মা’। এইভাবে ‘পা সা সা মা’-তে দোতারা বাধতে হবে। দোতারা টিউনিং করার ক্ষেত্রে একজন কোন হারমোনিয়াম বা ক্রোম্যাটিক টিউনার ব্যবহার করতে পারেন। ক্রোম্যাটিক টিউনার বাদ্যযন্ত্রের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। তবে ক্ষেত্র বিশেষজ্ঞ বা এক্সপার্টদের জন্য কান সবচেয়ে বড় টিউনার।

প্রকারভেদ

[সম্পাদনা]

সাধারণত তিন ধরনের দোতারা দেখতে পাওয়া যায়। রাঢ় বাংলায় পাওয়া দোতারার সঙ্গে ভাওয়াইয়া দোতারা এবং গোয়ালপাড়া দোতারার বিশেষ মিল পাওয়া যায় না।

দোতারা বাজানোর পদ্ধতি

[সম্পাদনা]

দোতারা বাজাতে হলে দোতারা বাজানোর পদ্ধতি ও নিয়ম রপ্ত করতে হবে। আনুমানিক দেড়-দুই হাত লম্বা এ বাদ্যযন্ত্রটি বসা অবস্থায় পায়ের ওপর রেখে এবং দাঁড়ানো অবস্থায় গলার সঙ্গে ঝুলিয়ে বাম হাতে আড়াআড়িভাবে ধরে ডান হাতে কটির ঘর্ষণ দিয়ে বাজানো হয়।[] সাধারণত সুরের সাথে তালের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দোতারা বাঁজাতে হয় যা অতি সহজে মানুষের মন কেড়ে নেয়। দোতারাতে অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের মত সা রে গা মা অনুসরণ করে সুর তুলতে হয় এবং একই সাথে ঐ গানটির তালও বাঁজাতে হয়। সুতরাং দোতারা বাঁজাতে হলে স্বরলিপি ও তাল সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

যারা দোতারার রিদম বা তাল নিয়ে সমস্যায় আছেন তাদের মনে রাখতে হবে তালের একটা সেন্স থাকে যা কারো কারো আপনা-আপনি তৈরি হয় আবার কারো বা অনেক অনুশীলন করে এ দক্ষতা আনতে হয়। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন তালের সাথে ঝংকার দিয়ে আপনারা কিভাবে দোতারা বাজাবেন। তাদেরকে বলছি চিন্তা করবেন না। এটি সহজেই হয়ে যায়। এর জন্য আপনাদের কোন গান বা রাগ কোন তালে বা রিদমে হচ্ছে তা জানা প্রয়োজন। সাধারণত বাংলা গান গুলোতে দ্রুত দাদ্রা (ঝুমুর) ৬ মাত্রা বিশিষ্ট, কাহার্বা (৮ মাত্রা), দাদ্রা (৬ মাত্রা), ঝাপতাল (১০ মাত্রা), এবং বিষমপদী তাল তেওরা (৭ মাত্রা) ব্যবহৃত হয়। এই তাল গুলোর আবার বিভিন্ন রকম চলন বা ঢং আছে। এগুলো সম্পর্কে আপনাদের অবহিত হওয়া দরকার। যে গান যে তালে ও যে চলনে এবং লয়ে (গতি) আপনাদের সেই ভাবেই বাজাতে হবে। এই লেখাটি পরে এ প্রোসেসটি জটিল মনে করকর কোন অবকাশ নেই। আপনাদের রিদমের সাথে ঝংকার দিয়ে গান প্লে করতে চাইলে সর্বপ্রথমে দরকার ফিঙ্গারিং ক্লিয়ার করা। প্রথমে সা রে গা মা রিদমের সাথে প্লে করতে হবে। যেমন মনে করেন আপনি দ্রুত দাদ্রা তালে সারগাম বাজাবেন। সেক্ষেত্রে বাজাতে হবে- স এর সময় সা পা সা সা, রে এর সময়ে রে পা রে রে; একই ভাবে গা পা গা গা, মা সা মা মা, পা সা পা পা, ধা সা ধা ধা, নি সা নি নি, র্সা সা র্সা র্সা। এভাবে অবরোহী বাজাতে হবে। এইভাবে হাতের জড়তা কেটে গেলে অন্যান্য তালেও প্রাক্টিস করতে হবে। আর যারা গান বাজাচ্ছেন তারা রিদমের সাথে প্লে করতে না পারলেও পারফেক্ট লয়ে বাজাতে থাকুন। প্রথমে সিঙ্গেল প্লে করে জড়তা কাটান তাহলে একসময়ে তালে বাজাতে পারবেন।

দোতারার তাল

[সম্পাদনা]

দোতারা শিখতে চাইলে প্রথম ধাপে তালগুলো শিখে নিতে হবে। কিছু উল্লেখযোগ্য তাল হল:

  1. দ্রুত দাদরা অপর নাম ঝুমুর (৬ মাত্রা), ছন্দ: ৩+৩, বোল: সাসা পা সাসা সাসা পা সাসা

Style:DU D DU (এখানে D=down strock U=Up)

  1. দাদরা (৬ মাত্রা), ছন্দ: ৩+৩, পা সা সা পা সা সা
  2. কাহারবা (৮মাত্রা), ছন্দ: ৪+৪, সা সা সা পা সা সারে সা পা
  3. ঝাপতাল (১০ মাত্রা), ছন্দ: ২+৩+২+৩, পা সা পা সা সা পা সা পা সা সা
  4. তেওরা (৭ মাত্রা), ছন্দ: ৩+২+২, পা সা সা পা সা পা সা

দোতারাতে স্বরলিপি অভ্যাসের জন্য তিনটি আঙ্গুল (তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকা) অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। তবে কনিষ্ঠা আঙ্গুলও ব্যবহার করতে পারলে ভাল বাঁজানো যাবে। কখনই এক আঙ্গুল দিয়ে বা দুটি আঙ্গুল দিয়ে দোতারা বাঁজানো উচিত নয় এতে প্রাথমিক বাবে কিছুটা বাঁজানো রপ্ত হলেও কিছুদিন পর বিভিন্ন গান বাঁজাতে সমস্যা হয়।

  1. আরোহী: সা রে গা মা পা ধা নি র্সা; অবরোহী: র্সা নি ধা পা মা গা রে সা।
  2. আরোহী: সাসা রেরে গাগা মামা পাপা ধাধা নিনি র্সার্সা; অবরোহী: র্সার্সা নিনি ধাধা পাপা মামা গাগা রেরে সাসা।
  3. আরোহী: সারেগা রেগামা গামাপা মাপাধা পাধানি ধানির্সা; অবরোহী: র্সানিধা নিধাপা ধাপামা পামাগা মাগারে গারেসা।
  4. আরোহী: সারেগামা রেগামাপা গামাপাধা মাপাধানি পাধানির্সা; অবরোহী: র্সানিধাপা নিধাপামা ধাপামাগা পামাগারে মাগারেসা।
  5. আরোহী: সারেগামাপা রেগামাপাধা গামাপাধানি মাপাধানির্সা; র্সানিধাপামা নিধাপামাগা ধাপামাগারে পামাগারেসা।

স্বরলিপি গুলো উপরে উল্লেখিত দোতারার তাল গুলোর সাথে মিলিয়ে প্রাক্টিস করতে হবে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "দোতারা - বাংলাপিডিয়া"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১৯