বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিশৈশব:বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ/সরকার গঠন

উইকিবই থেকে

মধুমতি আর ঘাগোর নদীর তীরে এবং হাওড়-বাঁওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে টুঙ্গিপাড়া গ্রামটি অবস্থিত।আজ থেকে ছয়'শ বছর আগে কবিরত্ন বিজয় গুপ্ত তাঁর পদ্মাপুরাণ কাব্যে এই ঘাগোর নদীর ঐতিহাসিক বর্ণনা দিয়ে গেছেন। টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সারি সারি গাছগুলো ছিল ছবির মতো সাজানো।১৯২০ সালের ১৭ মার্চ,এদিন শেখ লুত্ফর রহমান ও তার সহধর্মিনী সায়রা খাতুনের ঘরে জন্ম নিলো একটি ফুটফুটে চেহারার শিশু।বাবা-মা আদর করে নাম রাখলেন খোকা।খোকা নামের সেই আশ্চর্য বালকটি দিনে দিনে হয়ে উঠেন সমগ্র বাঙালির প্রিয় মানুষ।খোকার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুষমামণ্ডিত টুঙ্গিপাড়ায় যেখানে বানর ও কুকুর পুষতেন বোনদের নিয়ে।পাখি আর জীবজন্তুর প্রতি ছিল যার গভীর মমতা।ফুটবল ছিল তার প্রিয় খেলা।এভাবে তার শৈশব কেটেছে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে আর বর্ষার কাঁদা পানিতে ভিজে। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো।শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করা ছেলেটিকে দেখে কেই বা জানত যে একদিন সে হয়ে উঠবে বাংলার সংগ্রামী নেতা? তখনকার সময় গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র খোকা, স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও শিল্প ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।স্কুল পরিদর্শন শেষে তারা বেরিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু পথ আগলিয়ে দাঁড়িয়ে গেল এই খোকা, সবাই হতবাক! শেরেবাংলা জিজ্ঞেস করলেন তাঁর কি কথা?সে বললেন, ছাত্রাবাসের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে বহুদিন থেকে, মেরামতের ব্যবস্থা করে তবেই তাঁরা যেতে পারবেন।খরচটাও তাঁর নখদর্পণে, শেরেবাংলা খরচ জানতে চাওয়ার প্রতিউত্তরে সে বলল, ১২০০ টাকা লাগবে।তাঁর অকপট আচরণে নিতান্তই হতবাক বাংলার দুই মহান নেতা। সহসাই তাঁরা আবিষ্কার করতে পারলেন তাঁদের সামনে আরেক ভবিষ্যৎ নেতা দাঁড়িয়ে।অসীম সাহসিকতা আর অকপট আচরণই খোকাকে মানুষের খুব কাছে টেনে এনেছিল।একবার গোপালগঞ্জ এলাকায় বেশ খরা হয়েছিল। ক্ষেতে ফসল হয়নি।কৃষকের ভাগ্যও পুড়েছিল। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে খোকা ক’জন হতভাগ্য কৃষককে নিয়ে বাড়ি ফিরল।সে প্রত্যেককে দিয়ে দিল কিছু ধান ও চাল, বাড়ির কাউকে কিছু না বলেই। খোকার বাবা বাড়ি ফিরে ব্যাপারটি জেনে তাকে গালমন্দ করলেন। কিন্তু খোকার বেশ দৃঢ় উত্তর ছিল ‘আমাদের তো ধান ও চাল ভালোই আছে, তা থেকে ওদের সামান্য দিলাম। কারণ ওদেরও পেট আছে, ওদেরও ক্ষিদে আছে।’ দরিদ্র মানুষের প্রতি বা মানুষের প্রতি এই মমত্ববোধই জনতালগ্ন নেতার বড় গুণ। আর এই গুণই খোকাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ

বাঙালিতে উন্নীত করেছে।১৯৪৭ দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি হয় এক অযাচিত অদ্ভুত আবেগে। সেই আবেগের নাম ধর্ম। ৫৮, '৬২র পথ পেরিয়ে খোকা ঘোষণা করলো বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা। বাঙালীর জাগরণের নেতা হয়ে দেখালো কিভাবে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। রাজনীতি করতে গিয়ে কখনও পরিবার বা স্ত্রীর কাছ থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়নি খোকা । ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এই সময়টুকু ছিল খোকা নামের এক বিস্ময় বালকের জীবনচিত্র যা আমাদের চোখের সামনে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বাংলাদেশ নামের একটি দেশের জন্মের জন্য কত খোকা নামের বিস্ময় বালকের প্রয়োজন আছে যাদের আত্মত্যাগেই আসবে স্বাধীনতা দেশ পাবে খোকার মত এক জাতির পিতা।