উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/কোষ
কোষ
[সম্পাদনা]সমস্ত সজীব বস্তু কোষ দিয়ে তৈরি। এগুলি জীবনের উপাদান এবং শরীর নির্মানের একক।
কোষ কি?
[সম্পাদনা]একটি কোষ হল তরল পূর্ণ একটি পাত্র যেটি জীবন গঠনের সামগ্রী ধারণ করে।
একটি কোষ হল একটি সজীব (বস্তু) শরীরের ক্ষুদ্রতম কাঠামোগত এবং কার্যকরী একক। কোষ বা ইংরেজিতে "সেল" কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ সেলা থেকে, যার অর্থ ছোট ঘর। তুমি যদি একটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র বা "মাইক্রোস্কোপে"র নীচে সজীব বস্তুকে রেখে দেখ, তুমি দেখতে পাবে যে সেগুলি ছোট বর্গক্ষেত্র বা বল দিয়ে তৈরি। ইংল্যান্ডের একজন জীববিজ্ঞানী রবার্ট হুক, অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে একটি কর্ক রেখে তাতে ছোট ছোট বর্গক্ষেত্র দেখতে পেয়েছিলেন। সেগুলো দেখতে ছিল ঘরের মতো। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মৃত কোষ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
কোন কোন ধরনের কোষ দেখতে পাওয়া যায়?
[সম্পাদনা]দুই ধরনের কোষ আছে: ইউক্যারিওট, যাদের মধ্যে একটি বড় বল রয়েছে, যাকে বলা হয় নিউক্লিয়াস, এবং প্রোক্যারিওট, যাদের মধ্যে নিউক্লিয়াস থাকেনা।
বেশিরভাগ প্রোক্যারিওট খুব ছোট হয়। জীবজগতের দুটি মাত্র সাম্রাজ্যে প্রোক্যারিওট দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলি হল: ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিয়া। বাকি সব জীবদেহই ইউক্যারিওট দিয়ে তৈরি, তাদের মধ্যে আছে: পশুসমাজ , উদ্ভিদ, ছত্রাক বা ফাঙ্গাস, এবং এক কোষী জীব বা প্রোটিস্ট।
কোষগুলি দেখতে কেমন?
[সম্পাদনা]কোষগুলি কোষ ঝিল্লি নামক একটি পাতলা তেলের স্তর দ্বারা বেষ্টিত। এটি কোষের ভিতরের অংশকে বাইরের থেকে আলাদা করে। কিছু কোষের চারপাশে একটি দৃঢ় বাক্সের মত ঘেরা অংশ থাকে তাকে কোষ প্রাচীর বলা হয়, এটি কোষকে বাইরের আঘাত থেকে বাঁচায়। কোষের মধ্যস্থিত তরল অংশকে সাইটোপ্লাজম বলে। একটি কোষের ভিতরে, ক্রোমোজোম নামক একটি পদার্থের মধ্যে জ্ঞান সঞ্চয় করা থাকে। একটি বইয়ে যেমন ধাপে ধাপে কার্য প্রণালী লেখা থাকে, এটি তেমনি কোষকে বলে দেয় কিভাবে কাজ করতে হবে।
ইউক্যারিওটিক কোষের ক্রোমোজোমগুলি নিউক্লিয়াস নামে একটি কাঠামোতে ধরা থাকে, যার চারপাশে তার নিজস্ব তৈলাক্ত ঝিল্লি রয়েছে। কোষের মধ্যে আরও অনেক ঝিল্লি-আবদ্ধ পদার্থ থাকে যাদের নাম অর্গানেল, যার অর্থ "ছোট অঙ্গ"। ইউক্যারিওটিক কোষে পাওয়া কিছু অর্গানেলের নাম রাইবোসোম, ভ্যাকুওল, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং ক্লোরোপ্লাস্ট।
যেসব কোষগুলি বিভিন্ন কাজ করে তাদের আকৃতিও বিভিন্ন হয়। একটি উদ্ভিদের পাতার কোষ সূর্যকিরণ নেয় এবং সেটি শর্করা তৈরিতে ব্যবহার করে। এইটি করার জন্য, এটিতে ক্লোরোপ্লাস্ট নামক সবুজ অর্গানেল রয়েছে। সর্বাধিক আলো পাবার জন্য, কোষের কেন্দ্রে ভ্যাকুওল নামে জলের ফাঁপা যে বুদবুদ আছে, এটি তাকে ঘিরে বৃত্তের মধ্যে সাইটোপ্লাজমকে ধাক্কা দেয়।
একটি মানব শুক্রাণু কোষ, নিউক্লিয়াসে থাকা তার ক্রোমোজোমকে একটি ডিম্বাণু কোষে নিয়ে যায়, যাতে একটি নতুন শিশুর জন্ম হয়। শুক্রাণুর একটি বড় লেজের মত অংশ আছে যার নাম ফ্ল্যাজেলা। এটি শুক্রাণুকে তরলে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে। এটিতে মাইটোকন্ড্রিয়া নামে অনেকগুলি অর্গানেলও রয়েছে। পেট্রল যেমন মোটরকে শক্তি দেয়, এই মাইটোকন্ড্রিয়াও শুক্রাণুকে শক্তি প্রদান করে।
শব্দসমূহ
[সম্পাদনা]- নিউক্লিয়াস - কোষের মাঝখানে ঝিল্লির একটি বল যেটি ক্রোমোজোমকে ধারণ করে থাকে।
- ক্রোমোজোম - যার মধ্যে কোষের জ্ঞান সঞ্চিত থাকে।
- প্রোক্যারিওট - নিউক্লিয়াসবিহীন একটি কোষ।
- ইউক্যারিওট - নিউক্লিয়াস সহ একটি কোষ।
- অর্গানেল - একটি কোষের ভিতরে ছোট ছোট জিনিস।
- সাইটোপ্লাজম - কোষের অভ্যন্তরে জেলির মত থকথকে পদার্থ।
- মেমব্রেন - একটি তেলের থলি যাতে জল সঞ্চিত থাকে।
- ভ্যাকুওল - একটি কোষের ভিতরে জল এবং বর্জ্যে পূর্ণ একটি অর্গানেল।
- মাইটোকন্ড্রিয়া - একটি অর্গানেল যে একটি কোষের জন্য শক্তি সৃষ্টি করে।
- ক্লোরোপ্লাস্ট - একটি অর্গানেল যে উদ্ভিদ বা প্রোটিস্টে পাওয়া শর্করা তৈরি করে।
- ফ্ল্যাজেলা - একটি কোষ সংলগ্ন লেজ যা তাকে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে।
- গলগি বডি - একটি অর্গানেল যে নিঃসরণে সাহায্য করে।
- রাইবোজোম - একটি অর্গানেল যে প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে।