উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/বিদ্যুৎ
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/41/Amber.pendants.800pix.050203.jpg/220px-Amber.pendants.800pix.050203.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/a0/Ohms_law_voltage_source.svg/200px-Ohms_law_voltage_source.svg.png)
বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটি শব্দটি একটি লাতিন শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ "অ্যাম্বারের মতো"। অ্যাম্বার হল প্রাচীন গাছের জীবাশ্ম রস, এটি মূলত গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ হল পরিবাহীতে আধান বা চার্জের প্রবাহ। যে বস্তুগুলি বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে (ধাতুর তারের মতো) এমন সব কিছুকেই পরিবাহী বলা হয়। আধান হল একটি বস্তুতে থাকা বিদ্যুতের পরিমাণ।
কে এটি আবিষ্কার করেছে?
[সম্পাদনা]১৬০০ সালে উইলিয়াম গিলবার্ট নামে একজন ইংরেজ চিকিৎসক বিদ্যুতের আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি বিদ্যুৎ এবং চুম্বকত্ব সম্পর্কে অধ্যয়ন করেছিলেন, খুব মনোযোগ দিয়ে। তিনি লোডস্টোন প্রভাব (লোডস্টোন হল একধরণের প্রাকৃতিক চৌম্বকীয় পাথর) এবং অ্যাম্বার ঘষে উৎপাদিত স্থির বিদ্যুতের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম আধুনিক অর্থে "বিদ্যুৎ" শব্দটিকে ব্যবহার করেন।
এটি কিভাবে ক্ষমতা পায়?
[সম্পাদনা]বিদ্যুৎ নিজেই এক প্রকার শক্তি। এটি বিভিন্ন বস্তুকে শক্তি সরবরাহ করে, তাদের কাজ করতে সাহায্য করার জন্য। উদাহরণ স্বরূপ:
একটি কম্পিউটারে শক্তি সরবরাহ করে বিদ্যুৎ এবং তার ফলে কম্পিউটার কাজ করতে পারে।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/9/92/Rutherford_atom.svg/220px-Rutherford_atom.svg.png)
এটি কিভাবে কাজ করে?
[সম্পাদনা]এই পৃথিবীর সবকিছুই পরমাণু দিয়ে তৈরি। একটি পরমাণুর মূল অংশ হল একটি নিউক্লিয়াস (পরমাণুর কেন্দ্রে ছোট একটি বলের মত)। যে কোন নিউক্লিয়াস প্রোটন এবং নিউট্রন দ্বারা গঠিত। প্রোটন এর ধনাত্মক আধান আছে এবং নিউট্রন এর কোন আধানই নেই। নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘুরতে থাকা ছোট বলগুলিকে ইলেকট্রন বলা হয় এবং তাদের আধান হল ঋণাত্মক। প্রতিটি ইলেকট্রনের ঋণাত্মক আধানের মান প্রতিটি প্রোটনের ধনাত্মক আধানের সমান। যেহেতু একটি পরমাণুতে সমান সংখ্যায় প্রোটন এবং ইলেকট্রন থাকে, তাই পরমাণুতে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আধানের মান সমান। সেইজন্য স্বাভাবিক অবস্থায় একটি পরমাণুর মোট বিদ্যুতের পরিমাণ শূন্য।
যখন অ্যাম্বার ঘষা হয়, পরমাণুর বাইরের ইলেকট্রনগুলি অপসারিত হয় এবং এটি পরমাণুর আধানকে ধনাত্মক করে তোলে (কারণ এখন ইলেকট্রনের চেয়ে প্রোটন বেশি রয়েছে)। এই ধনাত্মক আধানটি ঋণাত্মক আধান (বা অন্যান্য ইলেকট্রন যা অন্য পরমাণুর অংশ) সহ যে কোনও কিছুকে আকর্ষণ করে।
এটি কতটা বিপজ্জনক?
[সম্পাদনা]অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ বিপজ্জনক নয়। কিন্তু যদি বিদ্যুতের পরিমাণ বেশ বড় হয় তবে সেটি খুবই বিপজ্জনক কারণ সেক্ষেত্রে খুব খারাপ ধরণের বৈদ্যুতিক ধাক্কা লাগবে।
এটি কি কাজ করে?
[সম্পাদনা]বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করে, যা অনেক বস্তুকে কাজ করতে সাহায্য করে।
এটা কিভাবে পরিবর্তিত হয়?
[সম্পাদনা]তুমি বিভিন্ন ধরণের উৎস থেকে বিভিন্ন পরিমাণে বিদ্যুৎ পেতে পারো। উদাহরণস্বরূপ, একটি ছোট ব্যাটারিতে মাত্র কয়েক ভোল্ট বিদ্যুৎ থাকে, কিন্তু তোমার বাড়ির দেওয়ালে যে বৈদ্যুতিক সকেট লাগানো আছে, সেখানে ২০০ ভোল্টেরও বেশি বিদ্যুৎ থাকতে পারে! এর মানে হল যে সকেটগুলি অনেক বেশি বিপজ্জনক, কিন্তু এগুলি খুব দরকারীও বটে। তুমি একটি ছোট ব্যাটারির শক্তি দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক কেটলির জল ফোটাতে পারবে না, কিন্তু তুমি যদি কেটলিটিকে একটি বৈদ্যুতিক সকেটে সংযুক্ত করো তবে এই কাজটি হবে।
কিভাবে এটি বিশ্বের পরিবর্তন করেছে?
[সম্পাদনা]জ্বালানীর অনেক দূষিত ব্যবহারকে প্রতিস্থাপিত করেছে বিদ্যুৎ। যেমন, আগে মানুষ ঘর আলোকিত করার জন্য ঘরে গ্যাস জ্বালিয়ে দিত এবং তার ফলে দূষণ হত। কিন্তু বৈদ্যুতিক লাইটবাল্ব এসে তাদের প্রতিস্থাপন করেছে। সেগুলি সস্তা, নিরাপদ এবং এতে দূষিত এবং নোংরা কালি তৈরি হয় না। বৈদ্যুতিক মোটরগুলি এখন অনেক শিল্প প্রক্রিয়ায় চালানো হয়, আগে যেগুলি চালানোর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানী সহ ইঞ্জিনের প্রয়োজন হত।
এছাড়া বিদ্যুতের আরও অনেকগুলি ব্যবহার রয়েছে যা অন্য কোনও উপায়ে করা যাবে না, উদাহরণস্বরূপ কম্পিউটার এবং টিভির মতো যন্ত্র চালানো। বৈদ্যুতিক গাড়িতে অনেকেই দ্রুত চলাফেরা করতে পারেন। বিদ্যুৎ আবিষ্কৃত হওয়ার পর কম্পিউটার, টিভি, টোস্টার ইত্যাদি এবং মানুষের ব্যবহার্য আরও অনেক কিছু তৈরি করা হয়েছিল।
এটি তৈরি করার আগে কোন ধারণা(গুলি) এবং/অথবা উদ্ভাবনগুলি বিকাশ করতে হয়েছিল?
[সম্পাদনা]কিছুটা স্থির বিদ্যুৎ তৈরি করা সহজ, কিন্তু প্রচুর বিদ্যুৎ তৈরি করা অনেক কঠিন। আমাদের ধাতুর সন্ধান করতে হয়েছিল, তাদের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার জন্য। ভাল ব্যাটারি তৈরি করতে পারার আগে আমাদের পরমাণু এবং রসায়ন বুঝতে হয়েছে।
তথ্য
[সম্পাদনা]- তুমি যদি সিল্ক কাপড়ের সাথে অ্যাম্বার ঘষো, তুমি একটা চিনচিন করা সংবেদন অনুভব করতে পারো (একে স্থির তড়িৎও বলা হয়), এবং ছোট জিনিস অ্যাম্বারের গায়ে আটকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এটি সম্ভবত বিদ্যুতের সাথে প্রাচীন মানুষের প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল। ইলেকট্রন অপসারিত হওয়ার ফলে ধনাত্মক আকর্ষণই কাগজ বা কাপড়ের ছোট টুকরোগুলিকে অ্যাম্বারের গায়ে আটকে দেয়।
- ১৬৬৩ সালের দিকে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের একটি আদিম রূপ অটো ভন গুয়েরিক দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তিনি একটি সালফার গোলক ব্যবহার করেছিলেন, যা হাত দিয়ে ঘোরানো যায় এবং ঘষা যেতে পারে, যাতে করে যান্ত্রিকভাবে ইলেকট্রন অপসারিত হতে পারে। নিউক্লিয়াস থেকে ইলেক্ট্রনগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল রাসায়নিক ব্যবহার করে তাদের ভেঙে ফেলা। বা চুম্বকত্ব। আমরা এইভাবে তৈরি যন্ত্রগুলিকে "কোষ" (বা আরও সাধারণত ইংরেজিতে "ব্যাটারি") এবং জেনারেটর বলি।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/a0/Ohms_law_voltage_source.svg/200px-Ohms_law_voltage_source.svg.png)
- ১৯৭১ সালে, লুইগি গ্যালভানি একটি তারের ফ্রেমে কিছু ব্যাঙের পা ঝোলাচ্ছিলেন, এবং লক্ষ্য করেছিলেন যে যতবার তিনি তা করছেন, ততবার সেগুলি কেঁপে উঠছে। তিনি উপসংহারে এসেছিলেন যে বিদ্যুৎ প্রবাহ স্নায়ু কোষগুলিকে উদ্দীপিত করছে।
- আলেসান্দ্রো ভোল্টা আবিষ্কার করেছিলেন যে কোষগুলি একত্রে সংযুক্ত করলে মোট শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, এবং তিনি এটিকে ভোল্টীয় স্তূপ বা ব্যাটারি নাম দিয়েছিলেন। এটি প্রথম দিককার বৈদ্যুতিক বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের পূর্বে ব্যবহৃত স্থির তড়িৎ মেশিনের তুলনায় আরও নির্ভরযোগ্য বৈদ্যুতিক শক্তির উৎসের সন্ধান দিয়েছিল।
- ১৮২৭ সালে গেয়র্গ ওম বৈদ্যুতিক বর্তনী গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন।
- ১৮৩২ সালে হিপ্পোলাইট পিক্সি প্রথম চৌম্বক ম্যাগনেটো বা ডায়নামো নির্মাণ করেছিলেন, কিন্তু, বাইসাইকেলের মতো ছোট জিনিস ছাড়া অন্য আর কিছুতে এগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় না, কারণ এগুলির স্থির এবং ঘূর্ণায়মান কুণ্ডলীগুলির মধ্যে "কমিউটেটর" এর ঘূর্ণায়মান সংযোগগুলির আকারে বেশ বড় এবং গঠনে জটিল।
- মাইকেল ফ্যারাডে "ঘূর্ণায়মান আয়তক্ষেত্র" তৈরি করেছিলেন, এখানে বিপরীতমুখী চৌম্বক ক্ষেত্র আছে এমন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রতিটি সক্রিয় পরিবাহী পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করে। ১৮৮৬ সালে একটি আরও শক্তিশালী "অল্টারনেটর পদ্ধতি"র প্রথম প্রকাশ্য প্রদর্শন হয়েছিল, এবং পাওয়ার স্টেশনগুলিতে ব্যবহৃত পদ্ধতির এটি সবচেয়ে সাধারণ ব্যবস্থা থেকে গেছে।
- ১৮১৯ - ১৮২০ সালের মধ্যে কোন এক সময়ে, হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অরস্টেড এবং আন্দ্রে-মারি অ্যাম্পিয়ারের কারণে 'তড়িৎ চুম্বকত্ব', 'বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বকীয় ঘটনার একতা'র স্বীকৃতি এসেছিল।
- এই সমস্ত মানুষের নামে বৈদ্যুতিক একক বা যন্ত্রগুলির নাম রেখে তাঁদের সম্মানিত করা হয়েছে।